শীতে যেসব শিশুর জন্ম তাদের যত্ন এবং মেয়ে নবজাতকের যত্ন

 নবজাতকের শরীর অল্পতেই কাবু হয়ে পড়ে। শীত হলে তো কথাই নেই, বিশেষ করে সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের পরিবর্তিত এমন আবহাওয়ায় জন্ম নেয়া শিশুদের প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। 


শীতে যেন  সদ্য জন্ম নেয়া শিশুরা বেশি ক্ষতির শিকার না হয় তার জন্য মায়েরা বিশেষ খেয়াল রাখুন সন্তানদের প্রতি। ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি-কাশি কোনোটাই যেন আপনার শিশুকে স্পর্শ করতে না পারে তার জন্য মেনে চলুন বিশেষ কিছু টিপস।

শীতে যেসব শিশুর জন্ম তাদের যত্ন 

নবজাতকের শরীর অল্পতেই কাবু হয়ে পড়ে। শীত হলে তো কথাই নেই, বিশেষ করে সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে। শীতে জন্মানো নবজাতকদের সঠিক যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ সময়ে ঠান্ডা আবহাওয়া তাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। নিচে শীতে নবজাতকের যত্ন নেওয়ার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি দেওয়া হলো।

গরম কাপড় পরানো
  • গরম জামাকাপড়: শিশুকে আরামদায়ক উলের বা সুতির গরম জামাকাপড় পরান। তবে বেশি গরম পোশাক পরানো উচিত নয়, কারণ এটি শিশুর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা করতে পারে।
  • লেয়ারিং: শিশুকে একাধিক স্তরের কাপড় পরানো ভালো। এতে বেশি গরম অনুভব করলে স্তর সরানো যায় এবং ঠান্ডা অনুভব করলে আবার বাড়ানো যায়।
  • হাত, পা ও কান ঢেকে রাখা: শিশুর হাত, পা, এবং কান সবসময় গরম রাখা উচিত, কারণ ঠান্ডা শরীরের এ অংশগুলোতে সবচেয়ে দ্রুত লাগে।
ঘর গরম রাখা
  • গরম পরিবেশ: নবজাতককে এমন ঘরে রাখতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো এবং শীতল বাতাস প্রবেশ করতে না পারে। প্রয়োজনে হিটার বা গরম পানি ব্যাগ ব্যবহার করে ঘর গরম রাখা যেতে পারে, তবে নবজাতক থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
  • ধোঁয়া ও দূষণমুক্ত রাখা: শীতকালে ঘর বেশি বন্ধ রাখলে বাতাসে ধোঁয়া বা দূষণের পরিমাণ বাড়ে, তাই মাঝে মাঝে জানালা খুলে ঘর বাতাসে চলাচল করাতে হবে।
গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
  • নিয়মিত গোসল না করানো: শীতে নবজাতককে প্রতিদিন গোসল না করিয়ে বরং কয়েকদিন পর পর গরম পানি দিয়ে মুছে দেওয়া উচিত। গোসল করালে অবশ্যই উষ্ণ পানি ব্যবহার করতে হবে এবং দ্রুত শিশুকে তোয়ালে দিয়ে মুছে গরম কাপড় পরিয়ে দিতে হবে।
  • ত্বকের যত্ন: শীতকালে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাই ত্বকে শিশুর জন্য বিশেষ ময়েশ্চারাইজার বা তেল লাগানো যেতে পারে। তবে, প্রোডাক্ট ব্যবহারের আগে শিশুর ত্বকে উপযুক্ত কিনা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
বুকের দুধ খাওয়ানো
  • শীতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত বুকের দুধ খাওয়ানো জরুরি।
ঘুমের সঠিক পরিবেশ
  • শীতে শিশুর ঘুমানোর সময় তাকে উষ্ণ রাখতে হবে। নরম কম্বল বা সোয়েটার দিয়ে শিশুকে ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে। তবে এমন কিছু ব্যবহার করবেন না যাতে শিশুর শ্বাস নিতে সমস্যা হয় বা দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ও সতর্কতা
  • হাত ধোয়া: নবজাতকের সংস্পর্শে আসার আগে এবং শিশুকে ধরার পর অবশ্যই হাত ধুয়ে নিতে হবে, কারণ শীতে ঠান্ডা ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
  • বাইরের লোকের সংস্পর্শে কম আসা: শীতে বেশি ঠান্ডাজনিত রোগ ছড়ায়, তাই নবজাতককে কম লোকের সংস্পর্শে রাখুন এবং অসুস্থ কেউ যেন নবজাতকের কাছে না আসে তা নিশ্চিত করুন।
ভ্যাকসিন ও নিয়মিত চেকআপ
  • শীতে শিশুদের রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই নবজাতকের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় টিকা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এতে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে।
সাদা আবরণ তোলা যাবে না
  • শিশু জন্মের পর গায়ে এক ধরনের সাদা আবরণ দেখা যায়। নোংরা ভেবে অনেকেই তা মুছে দেন বা গোসলের সময় ধুয়ে ফেলেন। এই আবরণ নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে। জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ত্বককে সুরক্ষা দেয়। এটা সঙ্গে সঙ্গে মোছা উচিত নয়। শিশু জন্মের পর তিন দিন গোসল করানো যাবে না। এই সময়ের মধ্যে শিশু বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখবে।
প্রথমেই চুল কামানোর প্রয়োজন নেই
  • শিশু জন্ম নেওয়ার পর অনেকেই দ্রুত শিশুর চুল কামিয়ে ফেলেন। এটা করার দরকার নেই। কারণ চুল নবজাতকের মাথার তাপমাত্রা ধরে রাখে। চুল কামিয়ে দিলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। এই চুল নিজ থেকেই পড়ে পরিণত চুল গজায়। চুল বেশি বড় মনে হলে এবং সমস্যা তৈরি করলে ছেঁটে দিতে হবে।
সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা
  • শিশুকে সবসময় পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত স্থানে রাখতে হবে।
  • নবজাতকের সংস্পর্শে আসার আগে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত।
  • শিশুর ঘুমানোর স্থানে ধূমপান এবং অতিরিক্ত শব্দ না করার চেষ্টা করতে হবে।

নবজাতক শিশুর যত্ন প্রথম মাস

নবজাতক শিশুর প্রথম মাসে সঠিক যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ সময়ে শিশুর শরীর এবং মন উন্নয়নের শুরু হয়। প্রথম মাসে শিশুর যত্ন নিতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর ওপর বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা সহজেই পরিবর্তিত হতে পারে। তাদের সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে গরম বা শীতল পরিবেশে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা স্থান থেকে নবজাতককে দূরে রাখা জরুরি।

স্তন্যপান করানো

প্রথম ছয় মাস নবজাতকের জন্য মায়ের বুকের দুধই একমাত্র ও পরিপূর্ণ খাদ্য। এতে শিশুর বৃদ্ধি, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সহায়ক উপাদান থাকে। সাধারণত প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো দরকার।

ঘুম

প্রথম মাসে নবজাতক শিশুর দৈনিক ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। তাদের ঘুমের পরিবেশ আরামদায়ক এবং শান্ত হতে হবে। ঘুম শিশুদের মস্তিষ্ক এবং শরীরের বিকাশে সহায়তা করে।

নাভির যত্ন

নবজাতকের নাভি পড়ে যাওয়ার পর এটি কিছু দিন শুকনো রাখা দরকার। এটি পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে যাতে কোনো সংক্রমণ না ঘটে। ডাক্তার যদি বিশেষ কোনো যত্নের পরামর্শ দেন, তা মেনে চলতে হবে।

ত্বকের যত্ন

নবজাতকের ত্বক খুবই সংবেদনশীল, তাই মৃদু এবং বেবি-ফ্রেন্ডলি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত। যেকোনো ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া দরকার যে তা নবজাতকের জন্য উপযুক্ত কিনা।

পরিচ্ছন্নতা

নবজাতকের আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা জরুরি। তাকে ধরার আগে হাত ধুয়ে নেওয়া উচিত। পরিষ্কার পোশাক পরানো এবং নিয়মিত নরম কাপড়ে গোসল করানো যেতে পারে, তবে বেশি জল ব্যবহার না করাই ভালো।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

প্রথম মাসে নবজাতকের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত। ডাক্তারের কাছে ওজন, উচ্চতা, এবং স্বাস্থ্যের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো পর্যবেক্ষণ করানো উচিত। এটি শিশুর স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

 সুরক্ষা ব্যবস্থা

নবজাতকের ঘুমের সময় তার পাশে নরম খেলনা বা অতিরিক্ত বালিশ রাখবেন না, এতে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হতে পারে।

ঘরের আশেপাশে ধোঁয়া বা দূষণ যেন না থাকে, কারণ নবজাতকের শ্বাসযন্ত্র অনেক সংবেদনশীল।
নবজাতকের প্রথম মাসটি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে শিশু ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যবান এবং সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে।

মেয়ে নবজাতকের যত্ন

মেয়ে নবজাতকের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ যত্নের পাশাপাশি কিছু বিশেষ বিষয় লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। নবজাতকের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে এ সময়ে সঠিক যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে মেয়ে নবজাতকের যত্নের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আলোচনা করা হলো:

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ
  • মেয়ে হোক বা ছেলে, নবজাতকের জন্য আরামদায়ক তাপমাত্রা রাখা জরুরি। তাদের শরীরের তাপমাত্রা খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে, তাই সবসময় আরামদায়ক তাপমাত্রায় রাখা উচিত। শীতকালে নরম ও আরামদায়ক পোশাক পরান এবং গরমকালে হালকা ও সুতির পোশাক পরানো ভালো।
নাভির যত্ন
  • নবজাতকের নাভি পড়ে যাওয়ার পর কিছুদিন শুকনো ও পরিষ্কার রাখা দরকার, যাতে সংক্রমণ না হয়। প্রতিদিন হালকা ওষুধি বা ফুটানো ঠান্ডা পানি দিয়ে নাভি পরিষ্কার করা যেতে পারে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে যত্ন নেওয়া সবসময়ই ভালো।
ত্বকের যত্ন
  • মেয়ে নবজাতকের ত্বক খুবই কোমল ও সংবেদনশীল। প্রতিদিন হালকা ময়েশ্চারাইজার বা তেলের মাধ্যমে ত্বক নরম ও মসৃণ রাখা উচিত। বাজারে শিশুর জন্য তৈরি তেল ও লোশন পাওয়া যায়, তবে খুব মৃদু এবং প্রাকৃতিক উপাদান যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করাই ভালো।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
  • প্রস্রাব ও পায়খানার পর পরিষ্কার করা: মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রস্রাব ও পায়খানার পর সামনে থেকে পেছনের দিকে মুছা উচিত, যাতে কোনো ধরনের সংক্রমণ না হয়।
  • ডায়াপার বদলানো: মেয়ের ত্বক ডায়াপার থেকে সহজেই সংবেদনশীল হতে পারে। তাই নিয়মিত ডায়াপার বদলানো, এবং ডায়াপার পরিবর্তনের সময় ত্বক পরিষ্কার রাখা জরুরি।
  • প্রস্রাবের পথ ও আশপাশের অংশ পরিষ্কার রাখা: নবজাতকের এই অংশে সংবেদনশীলতা বেশি থাকে, তাই এ অংশটি পরিষ্কার রাখতে আলাদা মনোযোগ প্রয়োজন।
বুকের দুধ ও খাদ্য
  • প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধই মেয়ে নবজাতকের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট খাবার। এতে প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। ছয় মাস পর বুকের দুধের পাশাপাশি ধীরে ধীরে সলিড খাবারের সঙ্গে পরিচিত করা যায়।
ঘুমের যত্ন
  • মেয়ে নবজাতক শিশুদেরও পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন। ঘুম শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিশু যাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারে, তার জন্য একটি নিরিবিলি ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন
  • মেয়ে নবজাতকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং তার সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। প্রয়োজনীয় টিকা সময়ে দেওয়া এবং ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিত।
সংবেদনশীলতার খেয়াল রাখা
  • মেয়ে নবজাতক শিশুদের অনেক সময় স্নেহ এবং মনোযোগের প্রয়োজন হয়। তাদের নরমভাবে ধরুন এবং তাদের মনের স্থিরতা ও সুস্থতার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দিন।
মানসিক যত্ন
  • মেয়ে নবজাতক শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং মৃদু স্পর্শে আদর ও ভালোবাসা দেখানো তাদের মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সঙ্গে মৃদু কথা বলুন, গান গাইতে পারেন, যাতে তারা আপনজনের উপস্থিতি ও সুরক্ষার অনুভূতি পায়।
এই যত্নগুলো সঠিকভাবে পালন করলে মেয়ে নবজাতক শিশু সুস্থ, সুন্দর এবং সুরক্ষিতভাবে বড় হতে পারে।

বাচ্চাদের যত্ন

বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া তাদের সুস্থ ও সুখী বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি বাচ্চার বিকাশে বয়স অনুযায়ী কিছু বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। নিচে বয়সভিত্তিক শিশুদের যত্নের কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় তুলে ধরা হলো।

নবজাতক থেকে এক বছর বয়সী শিশুদের যত্ন

  • পুষ্টিকর খাদ্য: প্রথম ছয় মাস মায়ের বুকের দুধই শিশুর জন্য সবচেয়ে উপকারী। ছয় মাস পর থেকে ক্রমে শক্ত খাবারের সঙ্গে বুকের দুধ দিতে পারেন।
  • ঘুম: নবজাতক শিশুদের প্রতিদিন ১৬-১৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। ঘুমের অভ্যাস এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য নরম বিছানা ও শান্ত পরিবেশ খুব জরুরি।
  • নিরাপদ পরিবেশ: শিশুদের বাড়ির ঝুঁকিপূর্ণ জিনিস যেমন বিদ্যুৎ সংযোগ, ধারালো বস্তু, এবং ছোট খেলনা থেকে দূরে রাখতে হবে। হাঁটতে শেখার সময় তারা সহজেই পড়ে যেতে পারে, তাই তাদের কাছাকাছি থাকা উচিত।
  • স্নান এবং পরিচ্ছন্নতা: শিশুদের ত্বক খুবই সংবেদনশীল হয়, তাই নিয়মিত পরিষ্কার করা ও হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।
  • এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের যত্ন
  • ব্যালান্সড ডায়েট: শিশুর খাবারে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, শর্করা ও প্রোটিন নিশ্চিত করতে হবে। মিষ্টি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করে তাজা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো উচিত।
  • ভ্যাকসিন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: প্রয়োজনীয় টিকা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিত করুন যাতে বাচ্চা বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকে।
  • শারীরিক সক্রিয়তা: শিশুরা এই বয়সে অত্যন্ত চঞ্চল হয় এবং অনেক কিছু শেখার আগ্রহী থাকে। তাই তাদের খেলাধুলা ও দৌড়ঝাঁপ করার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
  • ব্যক্তিগত যত্ন শেখানো: এ সময় থেকে তাদের হাত ধোয়া, টয়লেট ট্রেনিং, দাঁত ব্রাশ করা ইত্যাদি শেখানো গুরুত্বপূর্ণ।
  • পাঁচ থেকে দশ বছর বয়সী শিশুদের যত্ন
  • শিক্ষা ও মস্তিষ্কের বিকাশ: এই বয়সে শিশুদের কৌতূহল বাড়ে এবং নতুন জিনিস শেখার আগ্রহ দেখা যায়। তাদের মনোযোগ বাড়ানোর জন্য শিক্ষামূলক খেলনা এবং পাজল দেওয়া যেতে পারে।
  • শৃঙ্খলা ও সামাজিক আচরণ শেখানো: এই বয়সে শিশুরা দ্রুত অনুকরণ করে। তাদের সম্মান, সহানুভূতি, এবং সামাজিক আচরণ শেখানোর এটাই সঠিক সময়।
  • শারীরিক সক্রিয়তা: ব্যায়াম, খেলাধুলা বা বাইরের খেলাধুলায় অংশ নিতে উৎসাহিত করুন যাতে তাদের শারীরিক বিকাশ সঠিকভাবে হয়।
  • মনের যত্ন: শিশুর আবেগ বুঝতে ও তাকে সময় দিয়ে কথা বলুন। এই বয়সে স্কুলের চাপ বা বন্ধুত্বজনিত কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই খোলামেলা পরিবেশে তাদের সাথে কথা বলুন।

    সবার জন্য জরুরি কিছু সাধারণ যত্ন

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত যাতে তারা কোনো অসুখ বা অপুষ্টিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত না হয়।
  • নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শিশুদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। সংক্রমণ বা রোগ এড়াতে পরিষ্কার জামাকাপড় পরানো, নিয়মিত গোসল করানো ও তাদের আশেপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখা জরুরি।
  • মানসিক সাপোর্ট: শিশুরা যদি খারাপ কিছু অনুভব করে বা ভয় পায়, তাহলে তাদের সঙ্গে কথা বলুন ও তাদের নিরাপদ অনুভব করান। শিশুর মানসিক বিকাশে সঠিক মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিক যত্ন, পুষ্টি, এবং ভালোবাসায় প্রতিটি শিশু স্বাস্থ্যকর ও সুখী জীবনযাপন করতে পারে।

নবজাতকের নাভি কোথায় ফেলতে হয়

নবজাতকের নাভি পড়ে গেলে সেটি কোথায় ফেলতে হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন সংস্কার বা আঞ্চলিক প্রথা রয়েছে। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং মূলত পরিচ্ছন্ন ও সুরক্ষিত পদ্ধতিতে এটি নিষ্পত্তি করা উচিত। কিছু জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী বিশ্বাস ও ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো:

মাটিতে পুঁতে ফেলা: অনেকেই বিশ্বাস করেন নাভিটি মাটিতে পুঁতে দিলে শিশু সুস্থ ও মাটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এ কারণে অনেকেই এটি গাছের নিচে পুঁতে রাখেন।

পানিতে ফেলা: কেউ কেউ নাভি পানিতে ফেলে দেন। এটি করা হলে পরিস্কার জায়গায় ফেলা উচিত যাতে এটি কোনো অস্বাস্থ্যকর স্থানে না যায়।

আবর্জনায় ফেলা: নাভি পড়ে যাওয়ার পর এটি সঠিকভাবে প্যাকেট বা আবর্জনার জন্য নির্ধারিত জায়গায় ফেলা যায়। তবে এই পদ্ধতিতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেওয়া উচিত।

প্রকৃতপক্ষে, নবজাতকের নাভি পড়ে গেলে সেটি সঠিকভাবে পরিষ্কার করে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে নিষ্পত্তি করলেই যথেষ্ট।

নবজাতকের চোখে দুধ গেলে করণীয়

নবজাতকের চোখে ভুলবশত দুধ গেলে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ অনুসরণ করে তার চোখ পরিষ্কার করা উচিত। নবজাতকের চোখ খুবই সংবেদনশীল হয়, তাই নিচের পদক্ষেপগুলো খুব সতর্কতার সঙ্গে অনুসরণ করতে হবে-
  • মৃদু ও বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পরিষ্কার করা: প্রথমে পরিষ্কার বা ফুটানো ঠান্ডা পানি দিয়ে তুলার বল ভিজিয়ে নিন। এরপর ধীরে ধীরে চোখের বাইরের অংশ থেকে ভেতরের দিকে মুছুন। একবারে চোখের সব দুধ পরিষ্কার না হলে কয়েকবার আলতো করে মুছে নিন।
  • পানি দিয়ে চোখ ধোয়া: যদি চোখে অনেক বেশি দুধ চলে যায়, তবে চোখের পাতাটি আলতোভাবে খোলার চেষ্টা করুন এবং ঠান্ডা, পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • চোখে হাত না দেওয়া: শিশুর চোখে বারবার হাত দেবেন না বা বেশি ঘষবেন না, কারণ এতে চোখের সংবেদনশীলতা নষ্ট হতে পারে।
  • চোখ লাল বা ফোলা থাকলে: যদি নবজাতকের চোখে দুধ যাওয়ার পর লালচে বা ফোলাভাব দেখা যায়, বা চোখে পানি পড়া বন্ধ না হয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার: শিশুর জন্য ব্যবহৃত যেকোনো কাপড় বা তোয়ালে যেন পরিষ্কার ও নরম হয়, তা নিশ্চিত করুন।
প্রথম থেকেই এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করলে নবজাতকের চোখ সুস্থ থাকবে এবং যেকোনো সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url