ডাটা এন্ট্রি কী? ডাটা এন্ট্রি করে ইনকাম করার ১৫টি সহজ উপায়


আপনি যদি সহজ কোনো কাজের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে চান তাহলে ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে আপনার জন্য বেস্ট অপশন। আজ ডাটা এন্ট্রি কী? ডাটা এন্ট্রি করে ইনকাম করার ১৫টি সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরের একটি জনপ্রিয় কাজের নাম হচ্ছে ডাটা এন্ট্রি। ফ্রিল্যান্সিং এর অন্যান্য কাজের তুলনায় ডাটা এন্ট্রির কাজ  অনেক সহজ। ডাটা এন্ট্রির চাকরি কেন করবেন? ডাটা এন্ট্রি করতে কি কি যোগ্যতা এবং দক্ষতা থাকতে হবে সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

ডাটা এন্ট্রি (Data Entry) হল একটি প্রক্রিয়া যেখানে তথ্য বা ডাটা ম্যানুয়ালি বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার সিস্টেমে ইনপুট করা হয়। এটি সাধারণত ডিজিটাল ফর্মে বিভিন্ন উৎস থেকে ডাটা সংগৃহীত করে একটি নির্দিষ্ট সফটওয়্যার বা ডাটাবেসে সন্নিবেশ করার কাজ। 

যেমন-ম্যানুয়ালি কাগজপত্রের তথ্য কম্পিউটারে প্রবেশ করানো, অনলাইন ফর্ম পূরণ করা, স্প্রেডশীট বা ডাটাবেস আপডেট করা, স্ক্যান করা ডকুমেন্ট থেকে ডাটা সংগৃহীত করে ইনপুট করা। এই ধরনের কাজ সাধারণত অ্যাকুরেসি এবং দ্রুতগতির উপর ভিত্তি করে করা হয়, যাতে ডাটা সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকে।

ডাটা এন্ট্রি কত প্রকার ও কি কি

ডাটা এন্ট্রি সাধারণত বিভিন্ন ধরণের হতে পারে এবং কাজের প্রকারভেদ অনুসারে এগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। প্রধানত ডাটা এন্ট্রির প্রকারগুলো হলোঃ

ম্যানুয়াল ডাটা এন্ট্রি

এখানে ব্যবহারকারী সরাসরি কীবোর্ড ব্যবহার করে কম্পিউটারে ডাটা ইনপুট করা হয়। যেমন-টেক্সট টাইপ করা, অ্যাড্রেস, নাম, ইমেইল ইত্যাদি ইনপুট করা।

অনলাইন ডাটা এন্ট্রি

অনলাইনে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ডাটা এন্ট্রি করা হয়। যেমন ওয়েব ফর্ম পূরণ করা, ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণ, অনলাইন সার্ভে ইনপুট করা।

এমএস এক্সেল (MS-Excel)

বিশ্বের সব কোম্পানিই তাদের কোম্পানির সেলস, কাস্টমার রিভিউ, ফিডব্যাক, এবং হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে প্রতিদিনই মাইক্রোসফট এক্সেল ব্যবহার করে থাকে। কারণ মাইক্রোসফট এক্সেল এর সাহায্যে Data Entry কাজ অনেক সহজে করা যায়। মাইক্রোসফট এক্সেলে একটি বিশাল স্প্রেডশিট থাকে যেখানে অনেকগুলো ঘর করা থাকে। সেখানে অনেক সহজেই Data Entry করা যায় এবং প্রয়োজন অনুসারে এডিট করা যায়। বর্তমানে এই ধরনের ডাটা এন্ট্রির কাজের চাহিদা বেড়েই চলেছে।

অফলাইন ডাটা এন্ট্রি

ডাটা সংরক্ষণ করা হয় স্থানীয় ফাইল বা ডাটাবেসে, যেটা ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই করা যায়। যেমন-মাইক্রোসফট এক্সেল বা অন্য কোনো স্প্রেডশীটে ডাটা এন্ট্রি করা।

কপিপেস্ট ডাটা এন্ট্রি

একটি উৎস থেকে ডাটা কপি করে অন্য একটি স্থানে পেস্ট করা। যেমন-ডকুমেন্ট থেকে টেক্সট কপি করে ডাটাবেসে পেস্ট করা।

ইমেজ টু টেক্সট ডাটা এন্ট্রি

ইমেজে থাকা তথ্য ম্যানুয়ালি টাইপ করে ডাটাবেস বা টেক্সট ফাইলে ইনপুট করা। যেমন-স্ক্যান করা ডকুমেন্ট বা ছবি থেকে ডাটা সংগ্রহ করে ইনপুট করা।

অডিও/ভিডিও ট্রান্সক্রিপশন

অডিও বা ভিডিও ফাইল থেকে শোনা তথ্য লিখে ডাটাবেসে ইনপুট করা। যেমন-ইন্টারভিউ বা মিটিং-এর অডিও ট্রান্সক্রাইব করে ডাটা এন্ট্রি করা।

OCR (Optical Character Recognition) ডাটা এন্ট্রি

OCR সফটওয়্যার ব্যবহার করে স্ক্যান করা ইমেজ বা পিডিএফ থেকে ডাটা সংগ্রহ করা হয়। যেমন-কাগজপত্র থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটা স্ক্যান করে ইনপুট করা।

সার্ভে বা প্রশ্নাবলীর ডাটা এন্ট্রি

বিভিন্ন প্রশ্নাবলীর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ডাটাবেসে ইনপুট করা হয়। যেমন-বাজার গবেষণার জন্য প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহ করা ও তা ডাটাবেসে প্রবেশ করানো।

ক্যাপচা এন্ট্রি (Captcha Entry)

ক্যাপচা এন্ট্রি এবং ইমেজ টু টেক্সট একই রকম মনে হলেও এই দুটো বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। ক্যাপচা এন্ট্রির ক্ষেত্রে আপনার সামনে কিছু সাংকেতিক চিহ্ন বা সংখ্যার প্রদর্শিত হবে। ঐ সাংকেতিক চিহ্নগুলোকে সঠিকভাবে এন্ট্রি করাই হলো ক্যাপচা এন্ট্রির কাজ। ক্যাপচা এন্ট্রির কাজটি তুলনামূলক সময় সাপেক্ষ। কারণ ক্যাপচা এন্ট্রি করে ১০০ টাকা ইনকাম করতে হলে ১০০০ টি ক্যাপচা পূরণ করতে হবে।
স্পেল চেকিং (Spell Checking)

স্পেল চেকিং (Spell Checking) বিষয়টি হলো এমন যে, আগে থেকেই লেখা কোনো একটি আর্টিকেল, উপন্যাস, বা কোনো টেক্সট ফাইল চেক করে ভুলগুলো সঠিক করা। মূলত লেখাটিতে কোনোবানান, শব্দ, অথবা ব্যাকরণগত কোনোসমস্যা রয়েছে কিনা সে বিষয়টি চেক করে সঠিক করাই হলো স্পেল চেকিং।

সব ধরনের ডাটা এন্ট্রি কাজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যেমন ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে।

ডাটা এন্ট্রি করতে কি কি যোগ্যতা এবং দক্ষতা থাকতে হবে?

ডাটা এন্ট্রি কাজ করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। যেহেতু এটি একটি নির্ভুলতা ও সময়নিষ্ঠ কাজ, তাই কিছু বিশেষ দক্ষতা থাকা জরুরি। এখানে ডাটা এন্ট্রির জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা এবং দক্ষতাগুলো তুলে ধরা হলোঃ

টাইপিং দক্ষতা

দ্রুত এবং সঠিকভাবে টাইপ করতে জানতে হবে। সাধারণত, একটি ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য ৩০-৪০ WPM (Words Per Minute) টাইপিং স্পীড থাকা প্রয়োজন। সঠিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে ভুল তথ্য প্রবেশ করানো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

মাইক্রোসফট অফিস এবং অন্যান্য সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষতা

Microsoft Excel, Word, এবং Google Sheets এর মতো সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়া ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার যেমন Access, বা ERP (Enterprise Resource Planning) সফটওয়্যারেও দক্ষতা থাকতে পারে।

মনোযোগ ও নির্ভুলতা

ডাটা এন্ট্রির কাজের সময় ছোট ছোট ভুল এড়ানো খুবই জরুরি। এজন্য মনোযোগী ও সতর্ক থাকতে হবে, কারণ ডাটা ভুল হলে পুরো ডাটাবেস বা রেকর্ডে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সংগঠিত ও সময় ব্যবস্থাপনা দক্ষতা

কাজের সময়সীমা মেনে কাজ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। সংগঠিত হয়ে কাজ করলে বড় প্রজেক্টও সহজে এবং দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব। মাল্টিটাস্কিং করার দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত যখন একাধিক ফাইল বা উৎস থেকে ডাটা সংগ্রহ করতে হয়।

ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

ইন্টারনেট ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ করার দক্ষতা থাকতে হবে, কারণ অনেক সময় ডাটা এন্ট্রি কাজ অনলাইনে করতে হয়। ক্লাউড স্টোরেজ (যেমন Google Drive) এবং ইমেইল ব্যবহারে দক্ষতা থাকলে কাজের গতিশীলতা বাড়বে।

ডাটা এন্ট্রি টুলসের জ্ঞান

বিভিন্ন ডাটা এন্ট্রি টুল যেমন OCR (Optical Character Recognition) সফটওয়্যার, ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ইত্যাদি ব্যবহার করতে জানতে হবে।

যোগাযোগ দক্ষতা

ভালো লিখিত ও মৌখিক যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে, কারণ অনেক সময় ক্লায়েন্টের সাথে তথ্যের বিষয়ে আলোচনা করতে হয়।

ব্যাসিক ইংরেজি ও ভাষাজ্ঞান

ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য সাধারণত ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা প্রয়োজন হয়, কারণ অনেক সময় ইংরেজিতে ডকুমেন্ট বা ফর্ম পূরণ করতে হয়। অন্যান্য ভাষার দক্ষতা থাকলে (যেমন বাংলা, হিন্দি, স্প্যানিশ) সেটি অতিরিক্ত সুবিধা হতে পারে, বিশেষ করে বিভিন্ন ভাষার ডাটা এন্ট্রি কাজ করার সময়।

ধৈর্য ও অধ্যবসায়

ডাটা এন্ট্রি একটি নির্দিষ্ট ও পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ, তাই ধৈর্য ও একাগ্রতার প্রয়োজন।

ব্যাকআপ ও তথ্য সুরক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান

ডাটার ব্যাকআপ রাখা এবং তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দক্ষতা থাকতে হবে, যাতে কোন তথ্য হারিয়ে না যায় বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

টিমওয়ার্ক স্কিল বৃদ্ধি করা

যে কোনো চাকরি ক্ষেত্রেই টিমওয়ার্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। টিমওয়ার্ক স্কিল ভালো না হলে যে কোনো কোম্পানিতে চাকরি করা আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। কারণ একটি কোম্পানিতে পাঁচজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর থাকতে পারে যাদের সাথে মিলে মিশে আপনাকে কাজ করতে হবে। তাই টিমওয়ার্ক স্কিল যদি বৃদ্ধি না করতে পারেন তাহলে আপনি পিছনে পড়ে থাকবেন।

মেশিন রিডিং বা স্ক্যানিং সফটওয়্যারের ব্যবহার

অনেক ডাটা এন্ট্রি কাজ মেশিন দ্বারা স্ক্যান বা পড়ে ইনপুট করা হয় (যেমন OCR সফটওয়্যার)। এই ধরনের টুলস ব্যবহারে দক্ষতা থাকলে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। এই দক্ষতাগুলো অর্জন করলে ডাটা এন্ট্রির কাজে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, যা আপনাকে এই ক্ষেত্রে আরও সফল করে তুলতে সাহায্য করবে।

ডাটা এন্ট্রির চাকরি কেন করবেন?

ডাটা এন্ট্রির চাকরি করার অনেক কারণ থাকতে পারে। এটি একটি জনপ্রিয় কাজ, বিশেষত যারা দ্রুত আয় করতে চান বা সহজে কাজ শুরু করতে চান। নিচে কিছু কারণ তুলে ধরা হলো কেন ডাটা এন্ট্রির চাকরি করা যেতে পারে-
১. সহজে শেখা যায়

ডাটা এন্ট্রির কাজ তুলনামূলকভাবে সহজ এবং দ্রুত শিখে নেওয়া যায়। এতে প্রযুক্তি বা বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন নেই, তাই নতুনরা সহজেই এই কাজ শুরু করতে পারেন।

২. ফ্রিল্যান্স ও ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ

ডাটা এন্ট্রির অনেক কাজ অনলাইনে করা যায়, তাই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ঘরে বসে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যাদের ফ্রিল্যান্সিং বা দূর থেকে কাজ করার ইচ্ছা, তারা সহজেই ডাটা এন্ট্রি জব বেছে নিতে পারেন।

৩. কোনো বিশেষ শিক্ষা বা ডিগ্রির প্রয়োজন নেই

ডাটা এন্ট্রির কাজের জন্য খুব বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা বা ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। তাই এটি শুরু করার জন্য বিশেষ কোনো শিক্ষাগত প্রয়োজনীয়তা নেই, যা অনেকের জন্য সুবিধাজনক।

৪. প্রথম ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য উপযুক্ত

যারা কর্মজীবন শুরু করতে চান বা নতুন কোনো ক্ষেত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য ডাটা এন্ট্রি একটি ভালো সূচনা হতে পারে। কাজের মাধ্যমেই বিভিন্ন ধরনের দক্ষতা অর্জিত হয়, যেমন টাইম ম্যানেজমেন্ট, ডেটা প্রসেসিং, এবং সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা।

৫. অস্থায়ী বা পার্ট-টাইম কাজ হিসেবে আদর্শ

ডাটা এন্ট্রি কাজ অস্থায়ী বা পার্ট-টাইম হিসেবে করা যায়। যারা মূলত অন্য কাজের সাথে এক্সট্রা ইনকাম করতে চান, তারা ডাটা এন্ট্রির পার্ট-টাইম কাজ বেছে নিতে পারেন।

৬. স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ

অনেক ডাটা এন্ট্রি কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ থাকে। আপনি নিজের সময় অনুযায়ী কাজ করতে পারেন এবং কাজের চাপও তুলনামূলকভাবে কম থাকে।

৭. দ্রুত আয় করার উপায়

ডাটা এন্ট্রি কাজের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে দ্রুত আয় করা সম্ভব। বিশেষ করে যারা ফ্রিল্যান্স কাজ করতে চান, তারা ছোট ছোট ডাটা এন্ট্রির কাজ করে সহজে ইনকাম শুরু করতে পারেন।

৮. কোনো বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই

সাধারণত ডাটা এন্ট্রির কাজ করার জন্য একটি কম্পিউটার ও ইন্টারনেট কানেকশনই যথেষ্ট। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো যন্ত্রপাতি বা সফটওয়্যার প্রয়োজন হয় না।

৯. দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ

ডাটা এন্ট্রির মাধ্যমে আপনি টাইপিং স্পিড, সফটওয়্যার ব্যবহারের দক্ষতা, এবং ডেটা ম্যানেজমেন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্কিল শিখতে ও বাড়াতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে অন্য কাজের জন্যও সহায়ক হতে পারে।

১০. বিভিন্ন খাতে কাজের সুযোগ

ডাটা এন্ট্রি বিভিন্ন খাতে প্রয়োজন হয়, যেমন ব্যবসা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, প্রশাসন, গবেষণা ইত্যাদি। তাই আপনি বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন, যা আপনার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

১১. স্থায়ী চাকরির সম্ভাবনা

অনেক সময় ডাটা এন্ট্রির কাজ থেকে আপনি স্থায়ী চাকরির সুযোগও পেতে পারেন, বিশেষত যদি আপনি কোনো কোম্পানিতে ভালো পারফরম্যান্স দেখান। এটি ক্যারিয়ারের উন্নতির জন্য ভালো সুযোগ হতে পারে।

ডাটা এন্ট্রি কিভাবে শিখবেন

ডাটা এন্ট্রি শিখতে হলে কিছু নির্দিষ্ট দক্ষতা ও সরঞ্জাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া, এবং শিখতে খুব বেশি সময় লাগে না। নিচে ধাপে ধাপে কিভাবে ডাটা এন্ট্রি শিখতে পারেন তা তুলে ধরা হলোঃ

 টাইপিং দক্ষতা উন্নয়ন

টাইপিং স্পীড এবং সঠিকতা ডাটা এন্ট্রির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত টাইপ করতে শেখার জন্য অনলাইন টাইপিং টিউটোরিয়াল ব্যবহার করতে পারেন।

অনলাইন টাইপিং প্ল্যাটফর্ম যেমন-

Typing.com

10fastfingers.com

Ratatype

এই ধরনের সাইটগুলো ব্যবহার করে নিয়মিত অনুশীলন করলে টাইপিং স্পীড এবং সঠিকতা বৃদ্ধি পাবে।

মাইক্রোসফট অফিস বা গুগল ডকস, শিটস শিখুন
  • Microsoft Excel, Word, এবং Google Sheets ডাটা এন্ট্রির জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এই সফটওয়্যারগুলোতে দক্ষ হতে হবে।
  • ইউটিউব বা অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে মাইক্রোসফট অফিসের বেসিক ফাংশন শিখতে পারেন।
কিছু জনপ্রিয় অনলাইন কোর্স প্ল্যাটফর্মঃ

Udemy

Coursera

LinkedIn Learning

ডাটা এন্ট্রি টুলস এবং সফটওয়্যার শিখুন

কিছু সময়ে ডাটা এন্ট্রির জন্য বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার যেমন OCR (Optical Character Recognition) বা ডাটাবেস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। OCR সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন এবং কিভাবে এটি কাজ করে তা অনুশীলন করতে পারেন।

অনলাইন টিউটোরিয়াল ও কোর্স নিন

অনলাইনে অনেক ডাটা এন্ট্রি শেখার কোর্স আছে যা আপনাকে শূন্য থেকে দক্ষ করে তুলতে পারে। বিভিন্ন কোর্সে ডাটা এন্ট্রির বেসিক থেকে এডভান্স লেভেলের শিক্ষা দেওয়া হয়।

Udemy: ডাটা এন্ট্রি বিষয়ে অনেক কোর্স আছে যা সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়।

Coursera: এখানে ডাটা এন্ট্রি এবং ডেটা ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন কোর্স আছে।

স্প্রেডশিট ও ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট শিখুন

ডাটা এন্ট্রির কাজের একটি বড় অংশ স্প্রেডশিট এবং ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট। Excel বা Google Sheets-এ কাজের দক্ষতা উন্নত করুন। ফরমুলা, চার্ট তৈরি, এবং ডেটা ফিল্টারিংয়ের মতো কাজ শিখুন, কারণ এসব কাজ ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।

টাইম ম্যানেজমেন্ট শিখুন

ডাটা এন্ট্রি কাজের সময় নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা অর্জন করুন, যাতে কাজ দ্রুত ও সঠিকভাবে শেষ করতে পারেন।

ডাটা এন্ট্রি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা প্রতিষ্ঠান

আপনার এলাকায় যদি কোনো আইটি ট্রেনিং সেন্টার থাকে, সেখান থেকে সরাসরি ডাটা এন্ট্রি শেখা যেতে পারে। অনেক প্রতিষ্ঠান ডাটা এন্ট্রি ও অফিস ম্যানেজমেন্টের প্রশিক্ষণ প্রদান করে।

ইন্টার্নশিপ বা প্র্যাকটিস জব নিন

শিখে নেওয়ার পর, বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য ইন্টার্নশিপ বা ছোট কাজের মাধ্যমে প্র্যাকটিস শুরু করতে পারেন। কিছু ফ্রিল্যান্স সাইট বা ছোট প্রতিষ্ঠানে স্বল্পমেয়াদি ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে ছোট কাজ নিন

যখন আপনি ডাটা এন্ট্রি শেখা শেষ করবেন, তখন ফ্রিল্যান্সিং সাইট যেমন Upwork, Freelancer, Fiverr-এ ছোট ছোট কাজের জন্য বিড করতে পারেন। এতে আপনার বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা বাড়বে।

নিজেকে আপডেট রাখুন

ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে সময়ের সাথে সাথে নতুন টুলস এবং প্রযুক্তি আসতে পারে, তাই নিজেকে নিয়মিত আপডেট রাখুন এবং নতুন সফটওয়্যার বা টুলস শেখার চেষ্টা করুন।

ডাটা এন্ট্রি করে ইনকাম করার ১৫টি সহজ উপায়

ডাটা এন্ট্রি কাজ করে আয় করার অনেক উপায় রয়েছে, বিশেষ করে অনলাইনে। এখানে কিছু কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো, যেগুলো অনুসরণ করে আপনি ডাটা এন্ট্রি করে আয় করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজ করা
  • ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে ডাটা এন্ট্রির জন্য প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। আপনি কাজের জন্য বিড করতে পারেন এবং কাজ পেলে ইনকাম শুরু করতে পারেন।
  • কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইটঃ
  • Upwork
  • Freelancer
  • Fiverr
  • PeoplePerHour

মাইক্রো জব সাইটে কাজ করা
  • মাইক্রো জব সাইটগুলোতে ছোট ছোট ডাটা এন্ট্রির কাজ পাওয়া যায়, যেগুলো কম সময়ে করা যায় এবং সহজে ইনকাম শুরু করা যায়।
  • মাইক্রো জব সাইটগুলোঃ
  • Amazon Mechanical Turk
  • Clickworker
  • Microworkers
অনলাইন সার্ভে ও ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আয়
  • অনেক সংস্থা মার্কেট রিসার্চের জন্য ডাটা এন্ট্রি কাজের পাশাপাশি অনলাইন সার্ভে ফর্ম পূরণের কাজ দেয়। সার্ভে ফর্ম পূরণের মাধ্যমে সহজে ইনকাম করতে পারেন।
  • সাইটগুলোঃ
  • Swagbucks
  • InboxDollars
  • Survey Junkie
ক্যাপচা এন্ট্রি সাইটে কাজ
  • ডাটা এন্ট্রি কাজের মধ্যে ক্যাপচা এন্ট্রি বেশ জনপ্রিয়। এখানে সহজ কিছু কাজের মাধ্যমে ইনকাম করা যায়। তবে আয় তুলনামূলকভাবে কম।
ক্যাপচা এন্ট্রি সাইটঃ
  • 2Captcha
  • Kolotibablo
  • CaptchaTypers
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ
  • ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট (VA) হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে আপনি ডাটা এন্ট্রি, ইমেইল ম্যানেজমেন্ট, ক্যালেন্ডার ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি কাজ করতে পারেন।
  • ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্ল্যাটফর্মঃ
  • Fancy Hands
  • Time Etc
  • Belay
অনলাইন ফ্রিল্যান্স কাজের মাধ্যমে ডেটা এন্ট্রি আয়
  • বেশ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আছে যারা ডাটা এন্ট্রির জন্য ফ্রিল্যান্স কাজ প্রদান করে।
    উদাহরণঃ
  • Appen
  • Lionbridge
  • Clickworker
অনলাইন ট্রান্সক্রিপশন কাজ

  • অডিও বা ভিডিও ফাইল থেকে শোনা তথ্য লিখে ডাটা এন্ট্রি করার কাজেরও অনেক চাহিদা রয়েছে। এ ধরনের কাজগুলোতে ভালো আয় করা সম্ভব।এতে আপনার ইংরেজি বা অন্য ভাষা ভালো বুঝার দক্ষতা থাকলে আপনি ভালো ইনকাম করতে পারেন
  • ট্রান্সক্রিপশন সাইটঃ
  • Rev
  • TranscribeMe
  • GoTranscript
ডাটা এন্ট্রি চাকরি খোঁজা (Full-time, Part-time)
  • বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ডাটা এন্ট্রি কাজের জন্য ফুল-টাইম বা পার্ট-টাইম লোক নিয়োগ করে। LinkedIn, Indeed, এবং অন্যান্য জব পোর্টালে এই ধরনের চাকরি খুঁজতে পারেন।
ব্লগিং বা কন্টেন্ট মডারেশন
  • কিছু সাইটে ব্লগ বা কন্টেন্ট মডারেশনের কাজ করে ডাটা এন্ট্রি করা যায়। এখানে কন্টেন্টের সঠিকতা যাচাই এবং তথ্য ইনপুট করতে হয়। অনেক সংস্থা কন্টেন্ট মডারেশন বা ডেটাবেস ম্যানেজমেন্টের জন্য লোক নিয়োগ করে, যেখানে ডাটা এন্ট্রির কাজ থাকে। এ ধরনের কাজের জন্য LinkedIn বা Indeed-এ চাকরি খোঁজা যেতে পারে।
  • কন্টেন্ট মডারেশন সাইটঃ
  • Content Moderator
  • Appen
ইমেজ বা ডকুমেন্ট থেকে ডাটা ইনপুট
  • অনেক কোম্পানি ইমেজ বা স্ক্যান করা ডকুমেন্ট থেকে ডাটা সংগ্রহ করে ডাটাবেসে ইনপুট করার কাজ প্রদান করে। OCR টুল ব্যবহার করে বা ম্যানুয়ালি ডাটা ইনপুট করতে পারেন।
এজেন্সির মাধ্যমে কাজ
  • কিছু প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সি ডাটা এন্ট্রি ফ্রিল্যান্সারদের নিয়ে কাজ করে। আপনি তাদের সাথে কাজ করতে পারেন এবং দীর্ঘমেয়াদি বা বড় প্রজেক্টের কাজ পেতে পারেন।
ফেসবুক গ্রুপ ও পেজ অনুসরণ করুন
  • ফেসবুকে অনেক ডাটা এন্ট্রি কাজ সম্পর্কিত গ্রুপ এবং পেজ রয়েছে যেখানে নিয়মিত কাজের বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। সেগুলোতে অংশ নিয়ে কাজ খুঁজে ইনকাম করতে পারেন।
নিজস্ব ডাটা এন্ট্রি সেবা প্রদান
  • যদি আপনার ডাটা এন্ট্রির দক্ষতা থাকে, তবে আপনি নিজের সেবা শুরু করতে পারেন এবং সরাসরি ক্লায়েন্টদের জন্য কাজ করতে পারেন।
অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে অংশ নিন
  • কিছু অনলাইন মার্কেটপ্লেস, যেমন Appen, Lionbridge, ও iSoftStone, বিভিন্ন ধরনের ডাটা এন্ট্রি ও রিসার্চ সম্পর্কিত কাজ প্রদান করে।
ইন্টার্নশিপ ও অস্থায়ী কাজ
  • বিভিন্ন কোম্পানি ইন্টার্ন বা অস্থায়ী কর্মী হিসেবে ডাটা এন্ট্রির কাজ দেয়, যেখানে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি ইনকামও করতে পারেন।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ঃ
  • বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য সাইট নির্বাচন করুন, কারণ অনেক স্ক্যাম সাইটও থাকতে পারে।
  • পেমেন্ট মেথড (PayPal, Payoneer ইত্যাদি) সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
  • দক্ষতা উন্নয়ন করুন এবং কাজের সঠিকতা বজায় রাখুন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি ডাটা এন্ট্রি কী? ডাটা এন্ট্রি করে ইনকাম করার ১৫টি সহজ উপায় সম্পর্কে পুরো বিষয় বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আজকের এই পোষ্টটি আপনার কেমন লাগলো। আর হ্যাঁ যদি ভালো লেগেই থাকে তাহলে আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ডস সহ সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্টটি শেয়ার করে দিন। আজকের মত আমি এখানেই বিদায় নিচ্ছি আবারো পরবর্তী কোন আর্টিকেলে দেখা হবে আপনাদের সঙ্গে, সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।









এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url