শিশুর দাঁত উঠতে দেরি হলে কী করবেন- দাঁত ওঠার লক্ষণ কী?

শিশুর দাঁত উঠতে দেরি হলে কী করবেন? দাঁত ওঠার লক্ষণ গুলো কী? এ সম্পর্কে  জানতে চান,  ভালো কোন উত্তর পাচ্ছেন না? তাহলে বলবো আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


শিশুদের দাঁত ওঠার বয়স, শিশুদের দাঁত না ওঠার কারণ, কোনটির অভাবে শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হয় সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ জানতে আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
দাঁত দুই ধরনের একটি দুধ দাঁত অন্যটি স্থায়ী দাঁত। একটি শিশুর জন্মের পর যে দাঁত উঠে তাকে দুধ দাঁত বলে। পরবর্তীতে দুধ দাঁত পরে শিশুদের আবার নতুন করে দাঁত উঠে সেই দাঁতগুলোকে স্থায়ী দাঁত বলে। দাঁত মানুষের সৌন্দর্য তৈরি করে। তাই শিশুর দাঁতের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। প্রত্যেক মা-বাবার শিশুদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি দাঁতের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে যত্ন নিতে হবে।

শিশুর দাঁত উঠতে দেরি হলে কী করবেন

কোনটির অভাবে শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হয় এই বিষয়গুলোও জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত একটি শিশুর প্রায় ছয় মাস থেকে দাঁত উঠতে শুরু করে। তবে এর থেকে একটু দেরিতে উঠতে পারে চিন্তার কোন কারণ নেই। শিশুর মুখে বয়সভেদে দুই ধরনের দাঁত দেখতে পাওয়া যায়—দুধ দাঁত এবং স্থায়ী দাঁত। আজকে আমরা কোনটির অভাবে শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হয় সেসব বিষয়গুলো জানবো। আপনি যদি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে পড়তে থাকুন।

  • ধৈর্য ধরুনঃ অনেক শিশুর দাঁত উঠতে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। ১৮ মাস পর্যন্ত দাঁত না উঠলে এটি সাধারণত চিন্তার কিছু নয়।
  • বংশগতঃ মা-বাবার কিংবা পরিবারের কারো ছেলেবেলায় দাঁত দেরিতে ওঠার সমস্যা থেকে শিশুরও দেরিতে দাঁত উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • পুষ্টির উপর নজর দিনঃ নিশ্চিত করুন যে শিশুর খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি আছে। এগুলো দাঁত ও হাড়ের বিকাশে সহায়ক।
  • চোয়াল ও মাড়ির সমস্যাঃ মাড়ি ও চোয়ালের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণেও অনেক সময় দাঁত মাড়ি থেকে বেরোতে দেরি হয়। এ ক্ষেত্রে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • পারিবারিক ইতিহাস সম্পর্কে জানুনঃ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে দাঁত ওঠার সময় সম্পর্কে জানুন। যদি পরিবারের কারও দাঁত উঠতে দেরি হয়ে থাকে, তবে শিশুর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
  • জন্মগতঃ যেসব শিশু ৩৭ সপ্তাহের আগে অর্থাৎ প্রিবার্থ শিশু জন্মগ্রহণ করে, তাদের দাঁত দেরিতে উঠতে পারে এবং দাঁতের গঠনগত দুর্বলতা থাকতে পারে।
  • দাঁতের ডাক্তার বা শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিনঃ যদি ১৮ মাস বয়সের পরও শিশুর কোনো দাঁত না ওঠে, তাহলে একজন পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট বা শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন। তারা শিশুর মাড়ি এবং মুখ পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার কারণ নির্ধারণ করতে পারবেন।
  • প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানঃ দাঁত উঠতে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে হরমোনের সমস্যা (যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম), জন্মগত কোনো সমস্যা বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকতে পারে। চিকিৎসক যদি মনে করেন, তবে তিনি কিছু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন।
  • পর্যাপ্ত সূর্যালোক নিনঃ ভিটামিন D এর জন্য শিশুকে কিছু সময়ের জন্য সূর্যালোকে থাকতে দিন। এটি ক্যালসিয়ামের শোষণ এবং দাঁতের বিকাশে সহায়ক।
  • সামগ্রিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিনঃ শিশুর সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং বিকাশ নিশ্চিত করুন। নিয়মিত চেক-আপ, পুষ্টিকর খাবার, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর দাঁত দেরিতে উঠলে দাঁতের সৌন্দর্যের মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এ জন্য মা-বাবা ও অভিভাবকদের সব সময় দাঁত ওঠার সময় জানা অত্যন্ত জরুরি। যদি কোনো সমস্যা ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং থেরাপি প্রদান করবেন।

দাঁত ওঠার লক্ষণ কী

দাঁত ওঠার লক্ষণ কী? কোনটির অভাবে শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হয়তা জানার পাশাপাশি বাচ্চাদের দাঁত উঠার লক্ষণ গুলো জানতে হবে। শিশুরা যখন হাসে,দারুণ মিষ্টি ও আকর্ষণীয় লাগে,আর সেই আকর্ষণীয়তা আরও বেশি মাত্রায় বেড়ে ওঠে যখন তাদের মুখের ভিতরে ছোট্ট দুধেল সাদা একটা দাঁত উঁকি দিতে শুরু করে।
যখন কোনও শিশুর প্রথম দাঁতটি তার মাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে আসা শুরু করে, তখন সেই প্রক্রিয়াটিই দন্তোদ্গম বা দাঁত ওঠা নামে অভিহিত হয়ে থাকে। এর সঠিক লক্ষণগুলি একবার আপনি জেনে গেলে,পরবর্তী যা হবে তা সামাল দেওয়ার ব্যাপারে আপনি প্রস্তুত থাকতে পারেন। আপনার যদি বাচ্চাদের দাঁত ওঠার লক্ষণ গুলো না জানা থাকে তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি ধৈর্য ধরে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে পারেন। আসুন জেনে নেই বাচ্চাদের হাত উঠার লক্ষণ গুলো কি কি।

মাড়িতে ব্যথা ও অস্বস্তি

শিশুর মাড়ি ফুলে যেতে পারে এবং মাড়িতে ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। এটি সাধারণত দাঁত ওঠার প্রধান লক্ষণ। ব্যথা,যন্ত্রণা এবং ঠিক মত ঘুম না হওয়ায় আপনার ছোট্টটি অস্থির ও বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে,আর তাই আপনার ভালবাসা দিয়ে তাকে শান্ত করে তোলার চেষ্টা করুন।
 
লালা ঝরানো

দাঁত ওঠার সময় শিশুর লালা উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে অতিরিক্ত লালা ঝরতে পারে। বেশিরভাগ শিশুর ১০ সপ্তাহ থেকে ৪ মাস বয়সের মধ্যে লালা পড়া শুরু হয় এবং যতদিন পর্যন্ত দাঁত না ওঠে ততদিন পর্যন্ত লালা পড়ে। সারাদিন আলতো করে বারবার তার থুতনি মুছে দিন যেন ঘা না হয়ে যায়।

কাশি এবং/অথবা গ্যাগ রিফ্লেক্স

শিশুর মুখে ক্রমাগত থুথু আসলে, গলা আটকে যেতে পারে ও কাশি হতে পারে। আপনার শিশুর সর্দি, ফ্লু বা অ‍্যালার্জির অন্য কোন লক্ষণ না থাকলে এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই ।

কামড়ানোর স্বভাবটি বৃদ্ধি পায়

মাড়ি থেকে দাঁত বেরিয়ে আসতে শুরু করায় যে চাপ পড়ে তা মাড়ির পৃষ্ঠে একটা অস্বস্তির সৃষ্টি করতে পারে,আর সেটিকে সামলে উঠার চেষ্টায় শিশু পাল্লা দিয়ে তার প্রিয় খেলনাগুলিকে কামড়ানো শুরু করে অথবা তার নিজের হাতের আঙ্গুলগুলির উপরেই কামড় দিয়ে চিবানোর চেষ্টা শুরু করে।

মাড়ির হেমাটোমা

শিশুর মাড়ির নিচে যদি নীল রঙের কোন মাংসপিণ্ড দেখা দেয়, তবে হতে পারে সেটা মাড়ির হেমাটোমা বা দাঁত বের হওয়ার কারণে মাড়ির নিচে রক্ত আটকে আছে। মাড়িতে ঠাণ্ডা কাপড় ব্যথা কমাতে পারে এবং হেমাটোমা হলে দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। যদি হেমাটোমা বাড়তে থাকে তবে দ্রুত পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্ট এর কাছে যান।

কিছু খাবার খেতে ইচ্ছা না থাকা

দাঁত ওঠার সময় শিশুদের খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে, কারণ কিছু খাবার তাদের মাড়ির অস্বস্তি বাড়াতে পারে। না খাওয়ার কারণে পেটে ক্ষুধা এবং দাঁত ওঠার সময়ের অস্বস্তি, শিশুকে আরো বেশি খিটখিটে করে তোলে। যার পরিণতিতে শিশু একেবারেই কোনও কিছু খেতে বা পান করতে অস্বীকার করে। যেসব শিশুরা সলিড খাবার খায় তারাও টিথিং এর সময় খেতে চায় না।

ঘুমের সমস্যা

মাড়ির ব্যথার কারণে শিশুর ঘুমে সমস্যা হতে পারে। তারা রাতে ঘুমাতে অসুবিধা অনুভব করতে পারে এবং বেশি ঘুমের প্রয়োজন হতে পারে। যে শিশুরা সারা রাত নির্বিঘ্নে ঘুমিয়ে কাটাতো, টিথিং এর সময় তাদের ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

চিৎকার বা বিরক্তি

মাড়ির ব্যথার কারণে শিশুরা বেশি চিৎকার বা বিরক্ত হতে পারে। তারা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে এবং বেশি ক্রুদ্ধ বা অস্থির হতে পারে। কিছু শিশু হয়তো কয়েক ঘন্টা খিটখিটে মেজাজে থাকে এরপর ঠিক হয়ে যায়, আর কারো কারো ক্ষেত্রে এই খিটখিটে মেজাজ টানা কয়েক দিন বা সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে।

মাড়ির ফুলে যাওয়া

দাঁত ওঠার সময় মাড়ি ফুলে যেতে পারে এবং তা কিছুটা রঙিনও হতে পারে।

দাঁত ওঠার কারণে জ্বর

যখন শিশুর দাঁত ওঠার লক্ষণের প্রসঙ্গ আসে,জ্বর হল সেগুলির মধ্যে এমন এক লক্ষণ যা বাবা–মায়েরা সচারচারই লক্ষ্য করে থাকেন তাদের সন্তানের দাঁত ওঠার ক্ষেত্রে। শিশুর দেহের তাপমাত্রা নিরাপদ সীমার মধ্যে আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে একটি থার্মোমিটার ব্যবহার করে দেখে নিতে পারেন।

ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ

শিশুর টিথিং এর সময় যদি ক্রমাগত লালা পড়ে তাহলে তার মুখ, থুতনি, ঘাড় এমনকি বুকের চারপাশে রেশ, ঘা, লালাভাব এবং ফুসকুড়ি হতে পারে। কাপড় দিয়ে বারবার আলতো করে মুছে দিলে শিশুর জ্বালাপোড়া কম হবে।

কান টানা এবং গাল ঘষা

শিশুর দাঁত ওঠার সময় অনেক বেশি কান ধরে টানাটানি বা গাল ও থুতনি ঘষাঘষি করতে পারে। এ সময় শিশু শুধু যে মাড়িতেই ব্যথা অনুভব করবে তেমনটা নয়। তাদের মাড়িতে বেশ ভালমত একটা যন্ত্রণা অনুভব করে,যা আবার মাঝেমধ্যে তাদের কানের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করে। আর এর ফল হিসেবে তারা অনবরতই তাদের কানগুলি ধরে টানতে চেষ্টা করে।

চোষণ প্রবণতার বৃদ্ধি

কামড়ানোর সাথে সাথে আবার অনেক শিশুরই প্রবণতা থাকে তাদের হাতের নাগালে যা কিছুই পায় সেগুলি নিয়ে চোষার।শুধু একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন যে আপনার ছোট্টটি যা কিছুই মুখে দিক না কেন সেটা যেন পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয়ে থাকে।
দাঁত ওঠার লক্ষণগুলো একেক শিশুর একেক রকম হতে পারে। যদিও কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো সব শিশুর মধ্যেই দেখা যায়। সেগুলো খেয়াল করুন। কিছু শিশুর দাঁত ওঠার সময় হালকা জ্বর, বমি, বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। তবে, এগুলি দাঁত ওঠার সরাসরি লক্ষণ নয় বরং অন্যান্য কারণে হতে পারে। যদি কোনো লক্ষণ অত্যন্ত গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, অথবা যদি আপনার শিশুর দাঁত ওঠার সাথে সাথে অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

শিশুদের দাঁত ওঠার বয়স

সব শিশুর এক বয়সে দাঁত ওঠে না। ৬ মাস বয়সে বেশিরভাগ শিশুর প্রথম দাঁত ওঠা শুরু হয়। যদিও এর লক্ষণগুলো আরো অনেক আগে থেকেই দেখা দেয়। বাচ্চাদের দাঁত ওঠা সাধারণত ৬ মাস থেকে ১২ মাস বয়সের মধ্যে শুরু হয়। প্রথমে সাধারণত নিচের সামনের দুটি দাঁত ওঠে, যাকে "সেন্ট্রাল ইনসাইজর" বলা হয়। এরপরে ধীরে ধীরে উপরের সামনের দাঁত এবং তারপর অন্যান্য দাঁত ওঠে। প্রথম অবস্থায় ২০ টি দাঁত থাকে অস্থায়ী ভাবে।

দাঁত ওঠার সাধারণ সময়সূচিঃ
  • ৬-১০ মাসঃ নিচের সেন্ট্রাল ইনসাইজর (সামনের দুটি দাঁত)
  • ৮-১২ মাস: উপরের সেন্ট্রাল ইনসাইজর
  • ৯-১৩ মাসঃ উপরের ল্যাটেরাল ইনসাইজর (সেন্ট্রাল ইনসাইজরের পাশের দাঁত)
  • ১০-১৬ মাসঃ নিচের ল্যাটেরাল ইনসাইজর
  • ১৩-১৯ মাসঃ প্রথম মোলার দাঁত
  • ১৬-২৩ মাসঃ ক্যানাইন দাঁত (ক্যানাইন দাঁতগুলিকে "কুকুর দাঁত" বলা হয়)
  • ২৩-৩১ মাসঃ দ্বিতীয় মোলার দাঁত
বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় ভিন্ন হতে পারে, এবং কিছু বাচ্চার দাঁত একটু দেরিতে উঠতে পারে, যা স্বাভাবিক।

শিশুদের দাঁত ওঠার সময় জ্বর

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় হালকা জ্বর হওয়া সাধারণ ঘটনা হলেও, এটি সাধারণত ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর বেশি হওয়া উচিত নয়। দাঁত ওঠার সময় কিছু বাচ্চা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে, যার ফলে হালকা জ্বর, লালা ঝরানো, এবং মাড়িতে অস্বস্তি হতে পারে। 

তবে উচ্চ জ্বর, ডায়রিয়া, বমি বা অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে তা দাঁত ওঠার কারণে নয় বরং অন্য কোনো সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এ ধরনের ক্ষেত্রে, যদি জ্বর বেশি হয় বা অন্য কোনো গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শিশুর দাঁত ওঠার সময় বমি

শিশুর দাঁত ওঠার সময় বমি হওয়া সাধারণত দাঁত ওঠার সরাসরি লক্ষণ নয়। দাঁত ওঠার সময় শিশুরা কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে এবং মাড়িতে অস্বস্তির কারণে তারা মুখে বিভিন্ন জিনিস রাখতে চায়। এর ফলে অতিরিক্ত লালা ঝরে এবং মাঝে মাঝে হালকা বমি হতে পারে। তবে, যদি বমি অনেক বেশি হয় বা 
তার সাথে অন্য কোনো লক্ষণ যেমন উচ্চ জ্বর, ডায়রিয়া, বা খাওয়াতে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে এটি দাঁত ওঠার কারণে নয় বরং অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

শিশুদের দাঁত না ওঠার কারণ

শিশুর দুধ দাঁত ২০টি হয়ে থাকে। এই ২০টি দাঁত বের হতে প্রায় তিন বছরের মতো লেগে যায়। কোন শিশুর আঠারো মাস বয়সের মধ্যে যদি দাঁত না বের হয় তাহলে চিকিৎসার পরামর্শ নিতে হবে। বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ কিংবা দেরিতে দাঁত ওঠার কারণ রয়েছে। আসুন জেনে নেই বাচ্চাদের দাঁত না ওঠার কারণ গুলোর পিছনে কি সমস্যা রয়েছে।
  • জেনেটিক্সঃ বাচ্চার পরিবারে যদি দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া দেরিতে শুরু হয়ে থাকে, তবে বাচ্চার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
  • প্রি-ম্যাচিউরিটিঃ প্রি-ম্যাচিউর বা সময়ের আগে জন্ম নেয়া বাচ্চাদের দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া দেরিতে শুরু হতে পারে।
  • পুষ্টির অভাবঃ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, এবং ভিটামিন D এর মতো পুষ্টির অভাব থাকলে দাঁত ওঠার প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হতে পারে।
  • থাইরয়েড বা প্যারাথাইরয়েড সমস্যার কারণেঃ হরমোনের সমস্যা যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম দাঁত ওঠার প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিতে পারে।
  • ক্রনিক স্বাস্থ্য সমস্যাঃ কোনো দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন ক্রনিক অসুস্থতা বা জন্মগত কিছু সমস্যা, দাঁত ওঠার সময়কে প্রভাবিত করতে পারে।
  • ক্লিয়েডোক্রেনিয়াল ডিসপ্লাসিয়াঃ এটি একটি বিরল জেনেটিক সমস্যা যেখানে মাথার হাড় এবং দাঁতের বিকাশে বিলম্ব ঘটে।
  • বংশগতঃ মা-বাবা কিংবা বংশগত কারণে হয়ে থাকে। বংশে যদি কারো দেরিতে দাঁত উঠে থাকে তাহলে বাচ্চার ওপর প্রভাব পড়তে পারে। এমন ইতিহাস থাকলে শিশুর সঠিক সময়ে দাঁত না ওঠার পিছোনে চিন্তা করার কারন নাই।

যদি একটি বাচ্চার ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত কোনো দাঁত না ওঠে, তবে একজন দাঁতের ডাক্তার বা শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত। তারা বাচ্চার অবস্থা মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবেন।

শিশুদের দাঁত না উঠলে করণীয়

যদি একটি শিশুর ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত কোনো দাঁত না ওঠে, তাহলে এটি চিকিৎসা পরামর্শ নেওয়ার সময় হতে পারে। এখানে কিছু করণীয়ঃ
  • একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বা পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্টের (শিশুদের দাঁতের ডাক্তার) সাথে পরামর্শ করুন। তারা শিশুর মাড়ি এবং দাঁতের অবস্থা পরীক্ষা করে দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যার কারণ নির্ধারণ করতে পারেন।
  • বাচ্চার খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, ভিটামিন D, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করুন। ভিটামিন D হাড় ও দাঁতের সঠিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে দাঁত ওঠার সময় সম্পর্কে জানুন। যদি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দাঁত ওঠার প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটে থাকে, তবে শিশুর ক্ষেত্রেও দেরি হওয়া স্বাভাবিক হতে পারে।
  • অনেক সময় কিছু বাচ্চার দাঁত ওঠা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু দেরিতে শুরু হয়, কিন্তু তাতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, বাচ্চার দাঁত নিজে থেকেই উঠবে।
  • যদি পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো বিশেষ সমস্যা পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা বা থেরাপি শুরু করুন।
যতই দেরি হোক না কেন, শিশুর দাঁত ওঠা শুরু হলে তাকে পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত মাড়ি ও দাঁতের যত্ন নেওয়া জরুরি।

কোনটির অভাবে শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হয়

শিশুদের দাঁত উঠতে দেরি হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি পুষ্টির অভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এগুলোর মধ্যে প্রধান হলোঃ
  • ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতের গঠনে মূল উপাদান। এর অভাব হলে দাঁতের বিকাশে বিলম্ব হতে পারে।
  • ভিটামিন D শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণকে সহায়তা করে। এর অভাবে ক্যালসিয়াম শরীরে ঠিকমতো শোষিত হয় না, যা দাঁতের বিকাশে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  • ফসফরাসও দাঁত এবং হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অভাবে দাঁত ওঠা দেরি হতে পারে।
  • ভিটামিন A এবং C এই ভিটামিনগুলোও দাঁতের স্বাস্থ্য এবং বিকাশে সহায়ক। তবে ভিটামিন D এবং ক্যালসিয়ামের অভাবই সাধারণত দাঁত ওঠার ক্ষেত্রে বেশি প্রভাব ফেলে।
এছাড়া শিশুর সামগ্রিক পুষ্টি এবং স্বাস্থ্য অবস্থাও দাঁত ওঠার সময় প্রভাবিত করতে পারে। পুষ্টিকর খাদ্য এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো এড়ানো সম্ভব।

শিশুদের মাড়ির দাঁত ওঠার বয়স কত

বাচ্চাদের মাড়ির দাঁত, যাকে মোলার (molar) দাঁত বলা হয়, সাধারণত নিম্নলিখিত বয়সে ওঠেঃ

প্রথম মোলার দাঁতঃ
  • উপরের মাড়িতেঃ ১৩ থেকে ১৯ মাস বয়সে।
  • নিচের মাড়িতেঃ ১৪ থেকে ১৮ মাস বয়সে।
দ্বিতীয় মোলার দাঁতঃ
  • উপরের মাড়িতেঃ ২৫ থেকে ৩৩ মাস বয়সে।
  • নিচের মাড়িতেঃ ২৩ থেকে ৩১ মাস বয়সে।
এই মোলার দাঁতগুলো খাবার চিবানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এগুলো শিশুর মুখের পিছনের দিকে ওঠে। মোলার দাঁত ওঠার সময় বাচ্চারা কিছুটা অস্বস্তি, মাড়িতে ব্যথা, এবং কখনও কখনও হালকা জ্বর বা লালা ঝরানো অনুভব করতে পারে।

শিশুদের দাঁত ওঠার সময় পায়খানা

বাচ্চাদের দাঁত ওঠার সময় পায়খানার স্বাভাবিক ধরণে কিছু পরিবর্তন হতে পারে, তবে এটি সাধারণত দাঁত ওঠার সরাসরি ফল নয়। দাঁত ওঠার সময় বাচ্চাদের মধ্যে লালা ঝরানোর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং তারা মাড়ির অস্বস্তি কমাতে মুখে বিভিন্ন জিনিস রাখতে চায়, যা পরোক্ষভাবে হজমের প্রভাব ফেলতে পারে।

দাঁত ওঠার সময় পায়খানার সাথে সম্পর্কিত কিছু বিষয়ঃ
  • লালা গিলার কারণেঃ দাঁত ওঠার সময় অতিরিক্ত লালা ঝরাতে গিয়ে বাচ্চারা অনেক লালা গিলে ফেলে, যা পায়খানার ধরণে পরিবর্তন আনতে পারে। এর ফলে কখনও কখনও পায়খানা একটু নরম হতে পারে।
  • মাড়ির অস্বস্তিঃ দাঁত ওঠার সময় মাড়িতে চাপ বা ব্যথার কারণে শিশুরা কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করতে পারে, যা তাদের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি অনীহা তৈরি করতে পারে এবং পরোক্ষভাবে পায়খানার ধরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
  • খাবারের পরিবর্তনঃ দাঁত ওঠার সময় নতুন নতুন খাবার দেওয়া শুরু করলে, শিশুর হজমের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে, যা পায়খানার ধরণে পরিবর্তন আনতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: যদি বাচ্চার পায়খানা খুব বেশি পাতলা হয়, প্রায়ই হয়, অথবা তার সাথে ডিহাইড্রেশন, জ্বর, বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ থাকে, তবে এটি দাঁত ওঠার কারণে নয় বরং অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শিশুর দাঁত ওঠার সময় যা করতে হবে

শিশুর দাঁত ওঠার সময় তাদের কিছু অস্বস্তি এবং ব্যথা হতে পারে। এ সময়টাতে তাদের মধ্যে ভীষণভাবে বিরক্তভাব লক্ষ্য করা যায়। নতুন দাঁত গজানোর সময়ে অনেক শিশুরই নানা সমস্যা হয়। এসময় শিশুর আরাম নিশ্চিত করতে এবং দাঁত ওঠার প্রক্রিয়াকে সহজ করতে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারেঃ

  • আপনার পরিষ্কার আঙুল বা একটি ঠান্ডা, ভেজা কাপড় দিয়ে শিশুর মাড়িতে আলতো করে মালিশ করুন। এটি মাড়ির ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
  • ঠান্ডা দাঁত ওঠানোর খেলনা বা টিথার শিশুর মাড়িতে আরাম দিতে পারে। তবে এটি অত্যন্ত ঠান্ডা (যেমন জমে যাওয়া) হওয়া উচিত নয়, কারণ তা মাড়িতে ক্ষতি করতে পারে।
  • দাঁত ওঠার সময় শিশুদের লালা বেশি ঝরে। নিয়মিত লালা মুছে দিন এবং শিশুর মুখ এবং গলা পরিষ্কার রাখুন যাতে চামড়ার জ্বালা না হয়।
  • কোনো ধরনের বেদনানাশক জেল প্রয়োগের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিছু জেল মাড়িতে অ্যালার্জি বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • শিশুকে নরম এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার দিন। এই সময়ে কঠিন বা গরম খাবার এড়িয়ে চলা ভালো, যা মাড়িতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। 
  • এই সময়ে শিশুদের মধ্যে কামড়ানোর প্রবণতা বাড়ে। সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে চিকিৎসকের পরামর্শে কামড়ানোর খেলনা দিন। তাতে দাঁতের ক্ষতি হবে না। এগুলি শিশুকে দেওয়ার আগে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিতে পারেন। তাতে শিশুর আরাম লাগবে।
  • শিশুর অস্বস্তি কমানোর জন্য তাকে আদর দিন এবং কাছাকাছি রাখুন। দাঁত ওঠা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে শিশুর অস্বস্তি কমে যাবে।
  • যদি শিশুর উচ্চ জ্বর, ডায়রিয়া, বমি, বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দাঁত ওঠার কারণ নয় বরং অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
  • নতুন দাঁত ওঠার সময়ে শিশুদের মিষ্টি খাবার কম দেওয়া উচিত। বিশেষ করে রাতে একেবারেই দেওয়া উচিত নয় বলেই জানিয়েছেন শিশু চিকিৎসকরা।
  • দাঁত উঠতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর দাঁতের যত্ন নেওয়া জরুরি। প্রথম দাঁত ওঠার পর থেকেই একটি নরম ব্রাশ দিয়ে দিনে অন্তত একবার দাঁত ব্রাশ করুন।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক ব্শা করি আপনি  শিশুর দাঁত উঠতে দেরি হলে কী করবেন? দাঁত ওঠার লক্ষণ কী? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। শিশুর শুধু দাঁত না যে কোন বিষয়ে কোন সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এতক্ষণ আমার আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত জানতে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন। কারণ আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে আপনার পরিচিত বন্ধু মহলে শেয়ার করে দিবেন।    আপনি ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং সুন্দর থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url