বাদামের ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ
বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি।
কিন্তু ভালো ভাবে তেমন কেউ জানি না। তাই যারা বাদাম খেতে পছন্দ করেন বা অনেকে
বাদাম খেতে চান না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটির লেখা।
আজকের এই পোষ্টটি পড়লে আপনারা বাদাম কত প্রকার ও কি কি, ওজন বাড়াতে
বাদাম খাবেন যেভাবে সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন।
প্রাচীন মিশরের সময় থেকে বাদাম খাদ্যের অংশ ছিল। গ্রিক এবং রোমান সভ্যতায়
বাদামকে অত্যন্ত মূল্যবান খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বাদাম ব্যবহার করা হত
বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও খাদ্যপ্রস্তুতিতে। মধ্যযুগের ইউরোপে বাদাম
শীতকালীন খাবার হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। ইউরোপীয়রা বাদামকে নতুন উপায়ে রান্না ও
ব্যবহারের চেষ্টা শুরু করে।
ইউরোপীয়রা বাদামের চাষ উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় শুরু
করে। বাদামের বাণিজ্য বৃদ্ধি পায় এবং বিভিন্ন দেশে পৌঁছায়। আজকাল বাদাম
বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পণ্য। বাদাম উৎপাদন এবং বাণিজ্য
বর্তমানে একটি বৃহৎ শিল্প হয়ে উঠেছে। আমেরিকা, ইরান, স্পেন, ইসরায়েল এবং ভারত
বাদামের প্রধান উৎপাদনকারী দেশ।
বাদামের ব্যবহারঃ
- খাদ্যঃ বাদামকে বিভিন্ন ধরণের খাদ্যপ্রস্তুতে ব্যবহৃত হয়, যেমন কেক, কুকিজ, বারফি, হালুয়া, স্মুদি, এবং স্ন্যাকস হিসেবে।
- ঔষধিঃ প্রাচীনকাল থেকেই বাদামকে বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রাচীন গ্রিস এবং রোমে বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানা ছিল।
- কৃষিঃ বাদাম গাছের তেলও বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়, যেমন প্রসাধনী এবং ঔষধে।
বাদাম কত প্রকার ও কি কি
বাদাম বিভিন্ন ধরনের হয় এবং প্রতিটি ধরনের বাদাম ভিন্ন পুষ্টিগুণ এবং
স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে। সাধারণত বাদামকে দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করা
যায়: গাছের বাদাম এবং মাটির বাদাম। এখানে প্রধান বাদামের প্রকারভেদ এবং তাদের
নাম উল্লেখ করা হলোঃ
১. গাছের বাদাম (Tree Nuts)
গাছের বাদাম গাছ থেকে পাওয়া যায় এবং এর মধ্যে অনেক ধরনের বাদাম অন্তর্ভুক্ত।
- আখরোটঃ এতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- কাজু বাদামঃ কাজুতে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- পেস্তা বাদামঃ এতে প্রোটিন, ফাইবার, এবং ভিটামিন বি৬ থাকে। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং হজমের জন্য উপকারী।
- আলমন্ড বা কাঠবাদামঃ এটি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ, যা ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী।
- হ্যাজেলনাটঃ এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার রয়েছে, যা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
- পাইন বাদামঃ এতে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা মস্তিষ্কের কার্যক্রম উন্নত করে।
- ব্রাজিল বাদামঃ এতে সেলেনিয়াম থাকে, যা হরমোন ব্যালেন্স এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
২. মাটির বাদাম (Groundnuts)
মাটির নিচে জন্মানো বাদামগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত হলোঃ
- কাঁচা বাদামঃ এটি মাটির নিচে জন্মায় এবং প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ফাইবারের ভালো উৎস। এছাড়াও এটি সস্তা ও সহজলভ্য।
- বঙ্গ বাদামঃ আফ্রিকায় বেশি পাওয়া যায়, এটি মাটির নিচে জন্মায় এবং প্রচুর প্রোটিন ও ফাইবার রয়েছে।
৩. তৈলাক্ত বাদাম (Oilseeds)
এই ধরনের বাদাম থেকে সাধারণত তেল তৈরি করা হয় এবং এদের মধ্যে প্রোটিন ও
ফ্যাটের ভারসাম্য থাকে।
- চিয়া সিডঃ এতে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে এবং এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর।
- সিসেমি সিড বা তিলঃ এটি প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের উৎস এবং হাড়ের জন্য উপকারী।
- সানফ্লাওয়ার সিডঃ এতে ভিটামিন ই এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা ত্বকের জন্য উপকারী।
৪. কোকো বাদাম (Cocoa Beans)
- কোকো বাদামঃ এটি চকলেট তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
৫. বিরল ও অন্যান্য বাদাম
- ম্যাকাডামিয়া বাদামঃ এতে উচ্চ মাত্রার মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে এবং এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
- বেতাল বাদামঃ সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার কিছু অঞ্চলে পাওয়া যায়, এটি পান খাওয়ার সময় ব্যবহৃত হয়।
প্রতিটি ধরনের বাদাম ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে,
তাই সুষম ডায়েটে বিভিন্ন ধরনের বাদাম অন্তর্ভুক্ত করা স্বাস্থ্যকর।
বাদামের ১৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ
বাদাম অনেক রকমের হয়ে থাকে। এক একটি বাদামে এক এক রকম ভাবে গুনাগুন এবং পুষ্টি
থেকে থাকে। তাছাড়া বাদাম খেলে শরীরে মিলে বিভিন্ন রকমের উপকারিতা এবং
পুষ্টিগুণ। বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী এবং এটি বিভিন্ন
পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ।
বাদামে প্রচুর প্রোটিন, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ভিটামিন-খনিজ রয়েছে, যা
শরীরের বিভিন্ন অংশকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। নিচে বাদাম খাওয়ার প্রধান
উপকারিতা এবং গুণাগুণ উল্লেখ করা হলোঃ
প্রোটিনের ভালো উৎস
বাদামে প্রচুর প্রোটিন থাকে, যা পেশি গঠনে, শরীরের ক্ষয় মেরামতে এবং শক্তি
বৃদ্ধিতে সহায়ক। যারা মাংস খান না বা কম খান, তাদের জন্য বাদাম প্রোটিনের ভালো
বিকল্প।
স্বাস্থ্যকর চর্বি
বাদামে থাকা মোনো-আনস্যাচুরেটেড এবং পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে খারাপ
কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে
এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী
বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদপিণ্ডের
কার্যক্রম উন্নত করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হার্ট অ্যাটাক বা
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
বাদামে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার এবং প্রোটিন থাকায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে
এবং ক্ষুধা কমায়। নিয়মিত বাদাম খেলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ কম হয়, যা ওজন
নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
বাদামের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি উপকারী খাদ্য উপাদান।
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী
বাদামে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিষ্কের
কার্যক্রম উন্নত করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি আলঝেইমার বা
ডিমেনশিয়া প্রতিরোধেও সহায়ক।
ত্বক ও চুলের যত্নে উপকারী
বাদামে ভিটামিন ই এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং চুলের
স্বাস্থ্য উন্নত করে। নিয়মিত বাদাম খেলে ত্বকের বার্ধক্যজনিত সমস্যা কম হয়
এবং চুল মজবুত ও স্বাস্থ্যকর হয়।
হাড়ের গঠন ও শক্তি বৃদ্ধি
বাদামে প্রচুর ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং ফসফরাস থাকে, যা হাড়ের গঠন ও
শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধ করতে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
বাদামে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যালস থেকে কোষগুলোকে
সুরক্ষা দেয়, যা বার্ধক্য প্রতিরোধ করে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
বাদামে থাকা ভিটামিন বি৬, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায়। এটি শরীরকে ইনফেকশন ও ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়।
রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে
বাদাম রক্ত সঞ্চালনের ক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তের অভ্যন্তরে সঠিকভাবে অক্সিজেন
পরিবহণে সহায়ক। ফলে হৃদযন্ত্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ
করে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
বাদামে থাকা ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, যা
হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
হজমে সহায়ক
বাদামে ফাইবার থাকে, যা হজমের জন্য ভালো। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং পাকস্থলী
পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
বিরক্তি ও স্ট্রেস কমায়
বাদামে থাকা ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম, এবং ট্রিপটোফান মানসিক চাপ কমাতে এবং
মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক।
ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ
বাদামের গুণাগুণঃ
- প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ওমেগা-৩: পেশি ও হৃদপিণ্ডের যত্ন
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই: ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য
- ফাইবার: ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হজম শক্তি বৃদ্ধি
- ভিটামিন বি, ম্যাগনেসিয়াম: মানসিক সুস্থতা
এছাড়া বাদাম সঠিক পরিমাণে খেলে শরীরের জন্য বেশ উপকারী এবং এটি দৈনন্দিন খাদ্য
তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মতো একটি পুষ্টিকর খাবার।
ওজন বাড়াতে বাদাম খাবেন যেভাবে
ওজন বাড়ানোর জন্য বাদাম খাওয়া একটি চমৎকার উপায়, কারণ এতে প্রচুর ক্যালোরি,
স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে যা শরীরের পেশী
গঠনে সহায়ক। তবে, সঠিক পদ্ধতিতে ওজন বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ও সঠিক পরিমাণে
বাদাম খাওয়া জরুরি। এখানে কিছু টিপস দেওয়া হলো কিভাবে বাদাম খেলে ওজন বাড়ানো
যেতে পারেঃ
আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেজুর খাওয়ার ১৬টি উপকারিতা
প্রতিদিন বাদাম খান
প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ৩০-৫০ গ্রাম (এক মুঠো) বাদাম খাওয়া শুরু করুন। বাদামের
মধ্যে প্রচুর ক্যালোরি থাকে যা ধীরে ধীরে ওজন বাড়াতে সহায়ক। কাজু, আখরোট,
কাঠবাদাম, পেস্তা এবং কাঁচা বাদাম ওজন বাড়ানোর জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
বাদাম ভিজিয়ে খান
কিছু বাদাম যেমন আলমন্ড বা কাঠবাদাম, কাঁচা বাদাম ও কাজু বাদাম ভিজিয়ে খেলে তা
সহজে হজম হয় এবং এর পুষ্টিগুণ শরীরে ভালোভাবে শোষিত হয়। রাতের বেলা বাদাম জলে
ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে পেটও ভালো থাকে এবং ওজন বাড়ানো সহজ হয়।
স্মুদি ও শেকে বাদাম ব্যবহার করুন
বাদাম দিয়ে স্মুদি বা প্রোটিন শেক তৈরি করে খেতে পারেন। এর জন্য বাদাম, দুধ,
ফল, ওটস এবং মধু দিয়ে একটি পুষ্টিকর ও উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত স্মুদি বানানো যায়,
যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। প্রোটিন পাউডার বা বাদাম বাটারও যুক্ত করা যেতে
পারে।
বাদামের মাখন (Nut Butter)
বাদামের মাখন (পিনাট বাটার বা আলমন্ড বাটার) ওজন বাড়ানোর জন্য কার্যকর। এটি
পাউরুটি, টোস্ট, স্মুদি বা দইয়ের সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে। পিনাট বাটারে উচ্চ
পরিমাণে ক্যালোরি, প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা দ্রুত ওজন বাড়াতে
সহায়ক।
নিয়মিত খাবারের সাথে বাদাম মেশান
আপনার প্রতিদিনের খাবারের সাথে বাদাম মেশাতে পারেন, যেমন সকালে ওটসের সাথে,
দুপুরের খাবারের স্যালাডে, কিংবা রাতে ডেজার্ট হিসেবে। বাদাম ছড়িয়ে খাবারের
স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বাড়ানো যায়।
স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম খান
ক্ষুধা পেলে অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে বাদামকে স্ন্যাকস হিসেবে
খেতে পারেন। কাজু বাদাম, আখরোট, কাঠবাদাম, পেস্তা ইত্যাদি স্ন্যাকস হিসেবে খেলে
ক্যালোরি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে পুষ্টি যোগায়।
মধু ও বাদামের মিশ্রণ
বাদামের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে এটি দ্রুত ক্যালোরি যোগায় এবং ওজন বাড়াতে
সহায়ক হয়। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাবার, যা পেশী গঠনেও সহায়ক।
বাদাম দিয়ে ডেজার্ট তৈরি করুন
বাদাম দিয়ে বিভিন্ন ডেজার্ট যেমন হালুয়া, পায়েস, বা লাড্ডু তৈরি করতে পারেন।
এটি একটি উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার, যা মিষ্টি ও পুষ্টিকর।
বিভিন্ন ধরনের বাদাম একসাথে খান
শুধু এক ধরনের বাদাম নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের বাদাম (যেমন কাজু, আখরোট, পেস্তা,
আলমন্ড) একসাথে খেলে পুষ্টির ভারসাম্য ভালো হয় এবং ওজন দ্রুত বাড়ে।
রাতের খাবারের পর বাদাম খান
রাতে খাবারের পর বাদাম খাওয়া ওজন বাড়ানোর জন্য উপকারী হতে পারে। এটি দীর্ঘ
সময়ে পেট ভরা রাখে এবং শরীরে ক্যালোরি যোগায়।
বাদামের কিছু উপকারী বৈশিষ্ট্য যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করেঃ
- ক্যালোরি ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট- বাদামে প্রচুর ক্যালোরি এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে, যা শরীরের শক্তি যোগায় এবং ওজন বাড়ায়।
- প্রোটিন- বাদামে প্রোটিন থাকে, যা পেশী গঠনে সহায়ক এবং শরীরের ওজন বাড়ায়।
- ফাইবার- বাদামে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যাতে শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া যায়।
সতর্কতাঃ
অতিরিক্ত বাদাম খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ অতিরিক্ত বাদাম খেলে পেটের সমস্যা
হতে পারে। বাদাম খাওয়ার আগে যদি বাদামের প্রতি কোনো অ্যালার্জি থাকে, তবে তা
নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এই নিয়মগুলো মেনে বাদাম খেলে ধীরে ধীরে
ওজন বাড়ানো সম্ভব।
বাদাম খেয়ে কি ওজন কমে
বাদাম খেয়ে কি ওজন কমে? ওজন কমানোর জন্য বাদাম খাওয়া একটি চমৎকার পন্থা হতে
পারে, যদি সঠিকভাবে এবং নিয়মিতভাবে খাওয়া হয়। বাদামে থাকা পুষ্টি উপাদান
যেমন ফাইবার, প্রোটিন, এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং এটি
দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সহায়ক। এখানে কিছু টিপস রয়েছে কিভাবে বাদাম খেয়ে
ওজন কমানো যেতে পারেঃ
সঠিক পরিমাণে বাদাম খাওয়াঃ দিনে ২০-৩০ গ্রাম বাদাম খাওয়া যথেষ্ট।
এটি একটি মুঠো পরিমাণ, যা শরীরের জন্য উপকারী এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ
এড়ায়।
বাদাম স্ন্যাক হিসেবে খাওয়াঃ ক্ষুধা পেলে বাদামকে স্ন্যাকস
হিসেবে গ্রহণ করুন। এটি আপনাকে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখতে সহায়ক
হতে পারে।
স্মুদি বা সালাদে বাদাম মেশানোঃ বাদামকে স্মুদি বা সালাদের সাথে
যোগ করতে পারেন। এটি খাবারের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য
করে।
বাদাম ভিজিয়ে খাওয়াঃ রাতে বাদাম ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে তা সহজে
হজম হয় এবং ফাইবার বেশি শোষিত হয়। এটি শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
করতে পারে।
মাঠের বাদাম না, প্রক্রিয়াজাত বাদাম এড়িয়ে চলাঃ বাদাম খাওয়ার
সময়, মিষ্টি বা লবণাক্ত প্রক্রিয়াজাত বাদাম এড়িয়ে চলুন। কারণ এগুলো
অতিরিক্ত ক্যালোরি এবং সোডিয়াম যোগ করতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করাঃ বাদাম খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম
করুন। ব্যায়াম ও ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ সমন্বয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
বিভিন্ন ধরনের বাদাম খাওয়াঃ বাদামের মধ্যে আলমন্ড, কাজু, পেস্তা
ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের বাদাম অন্তর্ভুক্ত করুন। এটি পুষ্টিগুণ এবং স্বাদ
বাড়ায়, যা আপনাকে সুষম খাদ্য গ্রহণে সাহায্য করবে।
স্মার্ট স্ন্যাকস তৈরি করাঃ বাদামকে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর উপাদান
যেমন ফল, দই বা ওটসের সাথে মিশিয়ে স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন। এটি পুষ্টিকর
এবং ওজন কমাতে সহায়ক।
পানি খাওয়াঃ বাদামের সাথে প্রচুর পানি খান। পানি শরীরের
ডিটক্সিফিকেশন এবং মেটাবলিজম উন্নত করে, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
প্রোটিনের জন্য বাদাম ব্যবহার করাঃ বাদামে থাকা প্রোটিন শরীরের
ক্ষুধা কমায় এবং মেটাবলিজম বাড়ায়। এটি শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট পোড়াতে
সহায়ক।
বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা যা ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
- ফাইবার- বাদামে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং ক্ষুধা কমায়, যা অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ কমাতে সাহায্য করে।
- প্রোটিন- প্রোটিন পেশী গঠনে সাহায্য করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়, যা অতিরিক্ত ফ্যাট পোড়াতে সহায়ক।
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট- বাদামে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
বাদাম খাওয়ার সময় অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এড়িয়ে চলুন। সঠিক পরিমাণে বাদাম
খাওয়া নিশ্চিত করুন। বাদামের প্রতি অ্যালার্জি থাকলে, বাদাম খাওয়ার আগে
নিশ্চিত হয়ে নিন। এই টিপসগুলো মেনে চললে বাদাম খাওয়ার মাধ্যমে ওজন কমানো
সম্ভব। তবে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়ামও গুরুত্বপূর্ণ। আর
যারা ধীরে ধীরে বাড়াতে চান তারা শুধুমাত্র রাতে ঘুমানোর আগেই খাবেন। তবে আমার
মতে ধীরে ধীরে ওজন বাড়ানোটাই বেশি ভালো হয়।
কাচা বাদাম খাওয়ার উপকারিত
কাঁচা বাদাম অনেকেই খেতে চায় না কিন্তু কাঁচা বাদাম খেলে ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবেন খুব তাড়াতাড়ি। বাদামে রয়েছে ভিটামিন ই
ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম। কাঁচা বাদাম খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা
রয়েছে। এটি একটি পুষ্টিকর খাবার যা শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। কাঁচা
বাদামের কিছু প্রধান উপকারিতা হলোঃ
- প্রোটিনের উৎসঃ কাঁচা বাদামে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা শরীরের পেশি গঠন এবং মেরামতে সাহায্য করে।
- স্বাস্থ্যকর চর্বিঃ বাদামে মোনো-অ্যানস্যাচুরেটেড এবং পলি-অ্যানস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণঃ কাঁচা বাদামে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন ও ফাইবার থাকে, যা ক্ষুধা কমায় এবং বেশি খাওয়ার প্রবণতা কমায়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ কাঁচা বাদাম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে পারে। এতে থাকা স্বাস্থ্যকর চর্বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃ কাঁচা বাদামে ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের কোষকে সুরক্ষিত রাখে এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করে।
- ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধঃ বাদামে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স রয়েছে, যা শক্তি বৃদ্ধি করে, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিকভাবে কার্যকর করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ কাঁচা বাদাম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে।
- ত্বকের যত্নঃ এতে থাকা ভিটামিন ই এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের বার্ধক্যজনিত লক্ষণগুলো প্রতিরোধ করে।
- কোলেস্টেরল কমাতে সহায়কঃ কাঁচা বাদামে থাকা ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
কাচা বাদাম খাওয়ার নিয়মাবলী
বাদামে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন সহ ক্যালসিয়াম এবং
ম্যাগনেসিয়াম। কিন্তু বাদাম শুধু তো খেলেই হবে না বাদাম খাওয়ার নিয়মাবলী
সম্পর্কেও জানতে হবে। কাঁচা বাদাম খাওয়ার কিছু নিয়মাবলী মেনে চললে এর
সর্বাধিক উপকারিতা পাওয়া যায় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। নিচে কাঁচা
বাদাম খাওয়ার কিছু সাধারণ নিয়মাবলী উল্লেখ করা হলোঃ
- পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাঃ কাঁচা বাদামে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে, তাই দিনে ৩০-৫০ গ্রাম বাদাম খাওয়া যথেষ্ট। অতিরিক্ত বাদাম খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
- সঠিক সময়ে খাওয়াঃ সকালবেলা বা স্ন্যাকস হিসেবে বাদাম খাওয়া উপকারী, কারণ এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং শক্তি যোগায়। এছাড়া, দুপুর বা বিকালে ক্ষুধা মেটানোর জন্যও বাদাম ভালো একটি খাবার।
- জলে ভিজিয়ে খাওয়াঃ অনেক সময় কাঁচা বাদাম হজম করা কঠিন হতে পারে। জলে ৬-৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর বাদাম খেলে হজম ভালো হয় এবং এতে থাকা ফাইটো-অ্যাসিড কমে যায়, যা পুষ্টির শোষণ বাড়ায়।
- বেশি লবণ বা মশলা মিশিয়ে না খাওয়াঃ কাঁচা বাদামে অতিরিক্ত লবণ বা মশলা মিশিয়ে খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের লবণ এড়িয়ে চলা উচিত।
- অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলাঃ কাঁচা বাদামে অনেক পুষ্টি উপাদান থাকলেও অতিরিক্ত খাওয়া হলে বদহজম, পেটের গ্যাস বা এলার্জি হতে পারে। তাই সঠিক পরিমাণে এবং নিয়মিত খাবেন।
- বিভিন্ন খাবারের সাথে মিলিয়ে খাওয়াঃ বাদাম স্যালাড, স্মুদি, ওটস বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এতে পুষ্টিগুণ আরও বৃদ্ধি পায় এবং স্বাদেও পরিবর্তন আনা যায়।
- অ্যালার্জি পরীক্ষা করাঃ বাদামের প্রতি অ্যালার্জি আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। বাদাম খাওয়ার পর যদি ত্বকে র্যাশ, শ্বাসকষ্ট বা অস্বস্তি অনুভূত হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- অ্যাঙ্গারিজ বা লালচে বাদাম এড়িয়ে চলাঃ যদি বাদাম ভেতর থেকে লালচে বা অ্যাঙ্গারিজ হয়ে থাকে, তবে তা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এতে ফাঙ্গাল সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকতে পারে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি বাদামের ১৫টি
স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। পোস্টটি যদি
আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। আর হ্যাঁ, এসকল
তথ্য পেতে অবশ্যই নিয়মিত ভিজিড করুন এই www.aminulit.com ওয়েবসাইটটি।
ধন্যবাদ।
aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url