ব্ল্যাক কফির ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

ব্ল্যাক কফির ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি। কিন্তু ভালো ভাবে তেমন কেউ জানি না। তাই যারা ব্ল্যাক কফি খেতে পছন্দ করেন বা অনেকে ব্ল্যাক কফি খেতে চান না তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা। 


আজকের এই পোষ্টটি পড়লে আপনারা কফি খাওয়ার উপকারিতা, কফি খাওয়ার অপকারিতা সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন।

কফি অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়। হালকা তিতকুটে এই পানীয় বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয়। অনেকেই চায়ের চেয়ে কফি বেশি পছন্দ করেন। এক কাপ কফি পান করলে তা আপনাকে সারাদিন চাঙ্গা রাখতে কাজ করবে। দিনভর আপনি থাকবেন কর্মক্ষম। এছাড়াও কফিকে ভালোবাসার জন্য রয়েছে আরও অনেক কারণ। কফির বিভিন্ন রকমভেদ রয়েছে। এর মধ্যে যারা ব্ল্যাক কফি পছন্দ করেন, তারাই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি লাভবান। কফির স্বাদ সবচেয়ে ভাল পাওয়া যায় কালো কফিতেই।

ব্ল্যাক কফির ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পানীয়ের মধ্যে অন্যতম কফি। অনেকের আবার এ কফির মধ্যে বেশি পছন্দ ব্ল্যাক কফি। কিন্তু কেন, জানেন কি? দেহের ক্লান্তি কাটিয়ে মন মেজাজ ফুরফুরে রাখতে কফি অনেকটাই সাহায্য করে। তাই অনেকেরই সারাদিনের সঙ্গী এক কাপ কফি। পুষ্টিকর ব্ল্যাক কফিকে পুষ্টির পাওয়ার হাউস বলা যেতে পারে। 

এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-৩, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ব্ল্যাক কফি (চিনি বা দুধ ছাড়া কফি) পান করার অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত এবং মডারেশনের মধ্যে থেকে ব্ল্যাক কফি পান করলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে। 


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কালো বা ব্ল্যাক কফিতে লুকিয়ে রয়েছে অনেক উপকারিতা। আসুন সে উপকারিতাগুলো একে একে জেনে নিই– নিচে ব্ল্যাক কফির ব্ল্যাক কফির ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা হলোঃ

ব্ল্যাক কফির ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
  • ক্যালরি কমঃ ব্ল্যাক কফিতে কোনো চিনি বা দুধ নেই, তাই এটি প্রায় ক্যালরিহীন। তাই ব্ল্যাক কফি ওজন কমাতে সহায়তা করে।
  • মেটাবলিজম বাড়ায়ঃ ব্ল্যাক কফিতে ক্যাফেইন থাকে, যা মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি করে এবং ক্যালরি কমাতে সাহায্য করে।
  • শরীরের শক্তি বৃদ্ধিঃ ক্যাফেইন শরীরকে উদ্দীপিত করে শক্তি বৃদ্ধি করে, যা ব্যায়াম বা দৈনন্দিন কাজ করার সময় সহায়তা করে।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়ঃ ব্ল্যাক কফি স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, যার ফলে মনোযোগ এবং ফোকাস বৃদ্ধি পায়। এটি স্মৃতিশক্তির জন্যও উপকারী।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভালো উৎসঃ ব্ল্যাক কফিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ফ্রি র‍্যাডিকাল থেকে শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণগুলো কমায়।
  • লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ নিয়মিত ব্ল্যাক কফি পান লিভারের বিভিন্ন রোগ, যেমন ফ্যাটি লিভার ও সিরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়ঃ ব্ল্যাক কফি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়, ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
  • মানসিক চাপ কমায়ঃ ব্ল্যাক কফি মানসিক চাপ দূর করতে সহায়ক হতে পারে এবং ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কমাতে পারে।
  • পারকিনসন রোগের ঝুঁকি কমায়ঃ ব্ল্যাক কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইন পারকিনসন রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। 
  • আলঝাইমার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ ব্ল্যাক কফি মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয় এবং আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়কঃ ব্ল্যাক কফি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • হজম প্রক্রিয়া উন্নত করেঃ ব্ল্যাক কফি পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপন্ন করে, যা খাবার হজম করতে সহায়ক।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ গবেষণায় দেখা গেছে, ব্ল্যাক কফি কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে, বিশেষত লিভার এবং কোলন ক্যান্সার।
  • হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ব্ল্যাক কফি নিয়মিত পান করলে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়তে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
  • অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যঃ ব্ল্যাক কফিতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
  • অপুষ্টি থেকে রক্ষা করেঃ ব্ল্যাক কফি ভিটামিন বি২, বি৩, এবং ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়ক।
  • গলব্লাডার পাথর প্রতিরোধঃ ব্ল্যাক কফি নিয়মিত পান করলে গলব্লাডারে পাথর জমার ঝুঁকি কমে।
  • শরীর ডিটক্সিফাই করেঃ ব্ল্যাক কফি প্রাকৃতিক ডায়ুরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেয়।
  • ত্বকের জন্য ভালোঃ ব্ল্যাক কফিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বকের বার্ধক্য রোধ করতে সহায়ক।
  • হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়ঃ ব্ল্যাক কফিতে ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সহায়ক।
ব্ল্যাক কফি পানের এই উপকারিতাগুলো আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে পান করা উচিত।

ব্ল্যাক কফির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

কফির দানার গুঁড়া ও পানি মিলিয়েই সাধারণত ব্ল্যাক কফি তৈরি করে পান করা হয়। কেউ কেউ আবার চিনি, দুধ ক্রিম মিলিয়ে থাকেন। ব্ল্যাক কফি, যদিও অনেক উপকারী, তবে অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণে পান করলে কিছু অপকারিতাও সৃষ্টি করতে পারে। নিচে ব্ল্যাক কফির কয়েকটি সাধারণ অপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ

অনিদ্রা সৃষ্টিঃ
  • ব্ল্যাক কফিতে থাকা ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে, যা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি পান করলে অনিদ্রা, ঘুম কম হওয়া, এবং ঘুমের মান কমে যেতে পারে।
অতিরিক্ত উদ্বেগ ও নার্ভাসনেসঃ
  • ব্ল্যাক কফির ক্যাফেইন মাত্রা অতিরিক্ত হলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বা নার্ভাসনেস বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশেষত, যারা উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি সমস্যা বাড়াতে পারে।
হৃদস্পন্দন বৃদ্ধিঃ
  • ব্ল্যাক কফি ক্যাফেইনের কারণে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করতে পারে। যাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যার ঝুঁকি আছে, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে এবং প্যালপিটেশন হতে পারে।
অ্যাসিডিটি এবং পেটের সমস্যাঃ
  • ব্ল্যাক কফির অ্যাসিডিক প্রকৃতি পেটে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত খালি পেটে কফি পান করলে। এটি গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি, বা অম্বল বাড়াতে পারে।
রক্তচাপ বৃদ্ধিঃ
  • ক্যাফেইনের প্রভাব রক্তচাপ সাময়িকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ডিহাইড্রেশনঃ
  • ব্ল্যাক কফি একটি প্রাকৃতিক ডায়ুরেটিক (মূত্রবর্ধক) হিসেবে কাজ করে, যার ফলে শরীরে পানির ঘাটতি হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথাঃ
  • অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি পান করলে মাইগ্রেনের সমস্যা বা তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে। যারা নিয়মিত মাইগ্রেন বা মাথাব্যথায় ভোগেন, তাদের জন্য ব্ল্যাক কফি সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ক্যালসিয়ামের শোষণ কমায়ঃ
  • ব্ল্যাক কফি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ক্যাফেইন আসক্তিঃ
  • নিয়মিত এবং অতিরিক্ত ব্ল্যাক কফি পান করলে ক্যাফেইনের ওপর নির্ভরশীলতা বা আসক্তি তৈরি হতে পারে। ফলে কফি না খেলে ক্লান্তি, মনোযোগহীনতা, এবং মাথাব্যথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করাঃ
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরের হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। এটি মাসিক চক্রে বা ফার্টিলিটির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
দাঁতে দাগ পড়াঃ
  • ব্ল্যাক কফির নিয়মিত পান দাঁতে হলদে দাগ বা কালচে ভাব সৃষ্টি করতে পারে, যা দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট করে।
পেটের আলসারের ঝুঁকিঃ
  • ব্ল্যাক কফি পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন করে, যা দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস্ট্রিক আলসার তৈরি করতে পারে।
মানসিক অস্থিরতাঃ
  • ক্যাফেইনের উচ্চ মাত্রা মুড সুইং বা মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে অতিরিক্ত কফি পান করার ফলে।
গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিঃ
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ব্ল্যাক কফির অতিরিক্ত ক্যাফেইন গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পাচনতন্ত্রের সমস্যাঃ
  • খালি পেটে ব্ল্যাক কফি পান করলে হজমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি বাড়তে পারে এবং পেটের অন্যান্য অস্বস্তি সৃষ্টি হতে পারে।
ব্ল্যাক কফির অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা থাকলেও, নিয়মিত ও অতিরিক্ত পান করলে এইসব সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। তাই মডারেশনের মধ্যে থেকে এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থার ওপর ভিত্তি করে কফি পান করা উচিত।

কফি খাওয়ার উপকারিতা

কফি পান করার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে মডারেশনের মধ্যে থেকে কফি পান করা উচিত, কারণ অতিরিক্ত কফি কিছু নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে। এখানে কফি খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

উদ্দীপনা বৃদ্ধি

কফিতে উপস্থিত ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে এবং ক্লান্তি দূর করে। এটি মস্তিষ্কে নিউরোট্রান্সমিটার অ্যাডেনোসিনের কার্যকারিতা কমিয়ে মানসিক সতর্কতা বাড়ায়।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি

কফি মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সহায়ক হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মডারেশনের মধ্যে কফি পান করার ফলে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা কমে আসতে পারে।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উৎস

কফিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিকাল থেকে রক্ষা করে। এটি বার্ধক্যের প্রভাব কমাতে এবং কিছু ক্রনিক রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নতি

কফি মেমোরি এবং সাধারণ কগনিটিভ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত কফি পান আলঝাইমার এবং পারকিনসন রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

মেটাবলিজম বাড়ায়

ক্যাফেইন মেটাবলিক হার বাড়িয়ে শরীরে ক্যালরি পোড়ানোর হার বাড়াতে সাহায্য করে। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হতে পারে।

শারীরিক পারফরম্যান্স উন্নতি

ক্যাফেইন অ্যাড্রেনালিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে শারীরিক শক্তি এবং সহনশীলতা বাড়াতে পারে, যা শারীরিক কাজ বা ব্যায়ামের সময় সহায়ক।

লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষা

নিয়মিত কফি পান লিভারকে সুরক্ষিত রাখতে পারে এবং লিভারের বিভিন্ন রোগ যেমন ফ্যাটি লিভার, সিরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

তবে অতিরিক্ত কফি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ তা উদ্বেগ, অনিদ্রা, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

কফি খাওয়ার অপকারিতা

যদিও কফি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, অতিরিক্ত কফি পান করা কিছু অপকারিতাও সৃষ্টি করতে পারে। এখানে কফি খাওয়ার কয়েকটি অপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

অনিদ্রা সৃষ্টিঃ
  • কফিতে থাকা ক্যাফেইন একটি উদ্দীপক যা স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে। অতিরিক্ত কফি পান করলে ঘুমের সমস্যা, বিশেষ করে অনিদ্রা তৈরি হতে পারে।
অতিরিক্ত উদ্বেগঃ
  • ক্যাফেইন উদ্বেগ এবং নার্ভাসনেস বাড়িয়ে তুলতে পারে। যারা ইতিমধ্যে মানসিক চাপ বা উদ্বেগের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য কফি এই অবস্থাগুলোকে খারাপ করতে পারে।
হৃদস্পন্দন বাড়ানোঃ
  • ক্যাফেইন হৃদস্পন্দনের হার বাড়াতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। হৃদপিণ্ডের অসুস্থতা থাকলে কফি পান নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
হজমে সমস্যাঃ
  • কফির অতিরিক্ত অ্যাসিডিক প্রকৃতি হজমের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক এবং পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ব্লাড প্রেসার বাড়ানোঃ
  • ক্যাফেইন সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়াতে পারে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে।
ডিহাইড্রেশনঃ
  • ক্যাফেইন প্রাকৃতিক ডায়ুরেটিক হিসেবে কাজ করে, যার ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি না খেলে এটি শরীরে পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ায়।
অতিরিক্ত কফি আসক্তি তৈরি করেঃ
  • অনেকেই ক্যাফেইনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়তে পারেন, যার ফলে কফি না পেলে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, এবং মনোযোগের অভাবের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
ক্যালসিয়াম শোষণে বাধাঃ
  • অতিরিক্ত কফি পান শরীর থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ কমিয়ে দেয়, যা হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিঃ
  • গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত কফি পান করা গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং শিশুর ওজন কম হতে পারে বা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
ইতর দাগ সৃষ্টি করতে পারেঃ
  • কফি পান করলে দাঁতের ওপর হলদে দাগ পড়তে পারে। কফির মধ্যে থাকা ট্যানিন দাঁতে জমে দাগ সৃষ্টি করে, যা দাঁতের সৌন্দর্য নষ্ট করে।
পেটে ব্যথা বা অস্বস্তিঃ
  • অনেক সময় খালি পেটে কফি পান করলে পেটে অস্বস্তি, ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
মাইগ্রেন বাড়ানোঃ
  • ক্যাফেইনের অতিরিক্ত সেবন মাথাব্যথা, বিশেষত মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়াতে পারে।
হরমোনের সমস্যাঃ
  • অতিরিক্ত কফি শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে।
হজমশক্তি কমানোঃ
  • কফি পাকস্থলীর অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ায়, যা হজমশক্তি কমিয়ে হজমজনিত অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।
তীব্র মুড পরিবর্তনঃ
  • ক্যাফেইন মানসিক অবস্থার ওপর প্রভাব ফেলে, যা মুড পরিবর্তন, উত্তেজনা বা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
শরীরে ভিটামিন এবং খনিজের অভাবঃ
  • অতিরিক্ত কফি পান শরীর থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শোষণ করতে বাধা দেয়।
কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেঃ
  • বেশি পরিমাণে কফি পান কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
ত্বক শুষ্ক হওয়াঃ
  • ডিহাইড্রেশনের কারণে ত্বক শুষ্ক এবং প্রাণহীন হয়ে যেতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের ঝুঁকিঃ
  • অতিরিক্ত কফি পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে আলসার তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
মিসক্যারেজের ঝুঁকি বাড়ায় (গর্ভাবস্থায়):
  • গর্ভবতী নারীরা বেশি কফি পান করলে মিসক্যারেজ বা অন্যান্য গর্ভকালীন সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

দুধ দিয়ে কফি খাওয়ার কিছু উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে। কফিতে দুধ মেশানোর ফলে এর পুষ্টিগুণ কিছুটা বাড়ে, তবে এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। নিচে দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ

দুধ কফি খাওয়ার উপকারিতা
  • ক্যালসিয়ামের উৎসঃ দুধে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড় ও দাঁতের জন্য ভালো। দুধ কফি পান করলে শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বাড়ে এবং হাড়ের ঘনত্ব বজায় থাকে।
  • প্রোটিনের উৎসঃ দুধ প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। দুধ কফি শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিন সরবরাহ করে, যা পেশি গঠনে সাহায্য করে।
  • পেটের জন্য কোমলঃ দুধ কফির অম্লতা কমিয়ে দেয়, ফলে যারা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি সহনশীল হতে পারে। এটি পাকস্থলীর ওপর কম চাপ ফেলে।
  • শক্তি প্রদানঃ দুধে ল্যাক্টোজ থাকে, যা শরীরের জন্য তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করতে পারে। এটি ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক।
  • চামড়া এবং ত্বকের জন্য ভালোঃ দুধের মধ্যে ভিটামিন বি২ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। দুধ কফি পান করলে ত্বক মসৃণ এবং উজ্জ্বল হতে পারে।
  • উদ্দীপনা বাড়ায়ঃ কফিতে থাকা ক্যাফেইন মানসিক সতর্কতা বৃদ্ধি করে এবং দুধের কারণে এটি একটু ধীরে শোষিত হয়, ফলে দীর্ঘমেয়াদে উদ্দীপনা বজায় থাকে।
  • মেটাবলিজম উন্নত করেঃ ক্যাফেইন মেটাবলিক রেট বাড়িয়ে শরীরের ফ্যাট পোড়াতে সহায়ক হতে পারে, বিশেষ করে নিয়মিত ব্যায়ামের সময়।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের উৎসঃ কফির মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি র‍্যাডিকাল থেকে শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমায়।
  • ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণঃ দুধ কফি পান করলে ক্ষুধার পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
  • হজমশক্তি উন্নতঃ দুধ কফিতে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারে এবং হজমশক্তি বাড়াতে পারে
  • স্বাদের উন্নতিঃ দুধ যোগ করলে কফির তিক্ততা কমে এবং স্বাদ অনেকটাই উন্নত হয়, যা অনেকের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে।
  • মাংসপেশীর পুনর্গঠনঃ দুধে থাকা প্রোটিন শরীরের মাংসপেশী পুনর্গঠন এবং শক্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।
দুধ কফি খাওয়ার অপকারিতা
  • ক্যালরি বেশিঃ দুধ কফি বিশেষত পুরো দুধ ব্যবহার করলে ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যায়। এটি অতিরিক্ত ওজন বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যারা নিয়মিত বা বড় পরিমাণে দুধ কফি পান করেন।
  • ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতাঃ অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে, যার ফলে দুধ কফি খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, ডায়রিয়া বা হজমের সমস্যা হতে পারে।
  • অতিরিক্ত চিনির প্রয়োজনঃ দুধ কফির স্বাদ বাড়াতে অনেকেই চিনি যোগ করে থাকেন। অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হলে ওজন বাড়া, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  • ক্যাফেইনের প্রভাব কমে যায়ঃ দুধ যোগ করার ফলে কফির ক্যাফেইনের কার্যকারিতা কিছুটা কমে যেতে পারে, যা অনেকের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত উদ্দীপক প্রভাব দেয় না।
  • অতিরিক্ত ফ্যাটঃ যদি পুরো দুধ ব্যবহার করা হয়, তবে এটি ফ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
  • অ্যাসিডিক প্রভাব কিছুটা থাকতে পারেঃ যদিও দুধ কফির অ্যাসিডিক প্রভাব কম, তবে যারা অতিরিক্ত সংবেদনশীল, তাদের জন্য এটি এখনও কিছুটা অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • ত্বকের সমস্যাঃ অনেকের ক্ষেত্রে দুধ, বিশেষত পুরো দুধ, ত্বকের ব্রণ বা অন্যান্য ত্বক সংক্রান্ত সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • পুষ্টি শোষণ ব্যাহত হতে পারেঃ দুধ কফি নিয়মিত বেশি পরিমাণে খেলে কিছু খনিজ উপাদানের শোষণ, যেমন আয়রন, বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
দুধ কফি সঠিক পরিমাণে খেলে এর থেকে পুষ্টি এবং শক্তি পাওয়া যায়, তবে অতিরিক্ত পান করলে ক্যালরি, ফ্যাট এবং চিনির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই মডারেশনের মধ্যে থেকে দুধ কফি পান করা সবচেয়ে ভালো।

চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার উপকারিতা

চিনি ছাড়া কফি, সাধারণত ব্ল্যাক কফি, অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে, বিশেষ করে যেহেতু এতে অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয় না। নিচে চিনি ছাড়া কফি খাওয়ার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ
  • ক্যালরি কমঃ চিনি ছাড়া কফিতে প্রায় কোনো ক্যালরি থাকে না, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ওজন কমানোর জন্য আদর্শ। এটি যাদের কম ক্যালরিযুক্ত খাবার প্রয়োজন, তাদের জন্য উপকারী।
  • রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণঃ চিনি ছাড়া কফি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে, বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে।
  • মেটাবলিজম বাড়ায়ঃ ক্যাফেইন মেটাবলিক রেট বাড়ায় এবং শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট পোড়াতে সহায়ক হয়। চিনি ছাড়া কফি পান করলে এই প্রভাব আরও কার্যকর হয়, কারণ এতে অতিরিক্ত শর্করা থাকে না যা মেটাবলিজম প্রক্রিয়াকে ধীর করতে পারে।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভালো উৎসঃ চিনি ছাড়া কফিতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র‍্যাডিকাল থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্যজনিত সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
  • ওজন কমাতে সহায়কঃ চিনি ছাড়া কফি ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে এবং মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে পারে। এতে চিনি না থাকায় অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ হয় না, যা ওজন বাড়ার ঝুঁকি কমায়।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ চিনি ছাড়া কফি পান করলে শরীরে ফ্যাট জমার প্রবণতা কম থাকে এবং রক্তনালী সুস্থ থাকে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়ঃ ক্যাফেইন মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং ফোকাস বাড়ায়, যা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক। চিনি ছাড়া কফি পান করলে চিনির নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং মস্তিষ্কের সজাগতা বজায় থাকে।
  • পাচনতন্ত্রের জন্য ভালোঃ চিনি ছাড়া কফি পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদন বাড়ায়, যা খাবার হজমে সহায়ক হয়। তবে এটি অতিরিক্ত পান করা উচিত নয়, কারণ এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • লিভারের জন্য ভালোঃ চিনি ছাড়া কফি লিভারের প্রদাহ কমাতে এবং লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং ফ্যাটি লিভারের সমস্যা কমায়।
  • ডিপ্রেশন কমাতে সহায়কঃ নিয়মিত মডারেশনের মধ্যে থেকে চিনি ছাড়া কফি পান করলে মস্তিষ্কে ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা কমাতে সহায়ক হতে পারে।
  • শক্তি যোগায়ঃ চিনি ছাড়া কফি শরীরকে দ্রুত উদ্দীপিত করে, যা ক্লান্তি দূর করে এবং মানসিক এবং শারীরিক কাজের ক্ষমতা বাড়ায়।
  • কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করেঃ চিনি ছাড়া কফি শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন বের করে কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি কমায়।
  • ত্বকের জন্য ভালোঃ চিনি ছাড়া কফিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল ও টানটান রাখতে সহায়ক এবং বার্ধক্যের লক্ষণগুলোকে কমায়।
  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ গবেষণায় দেখা গেছে, চিনি ছাড়া কফি নিয়মিত পান করলে কিছু ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে, বিশেষ করে লিভার এবং কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে।
  • ইনফ্লেমেশন কমায়ঃ চিনি ছাড়া কফির অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ শরীরের প্রদাহ এবং সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
চিনি ছাড়া কফি খাওয়া স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হিসেবে বিবেচিত, বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। এতে চিনি না থাকায় ক্যালরি কম থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

সকালে কফি খাওয়ার উপকারিতা

সকালে কফি খাওয়া অনেকের জন্য একটি রিফ্রেশিং এবং উদ্দীপক অভ্যাস। এটি শরীরকে সজাগ করে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক উপকারও প্রদান করে। নিচে সকালে কফি খাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো:


শরীরে উদ্দীপনা আনে:

সকালে ঘুম থেকে উঠে কফি পান করলে শরীরে দ্রুত উদ্দীপনা আসে এবং ক্লান্তি দূর হয়। কফিতে থাকা ক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করে এবং মস্তিষ্কে উদ্দীপনা আনে, যা আপনাকে সক্রিয় এবং ফোকাসড রাখে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়:

সকালে কফি পান মস্তিষ্কের সজাগতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। ক্যাফেইন মনোযোগ ও মেমোরি বাড়ায়, যার ফলে কাজ করার সময় কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে:

ক্যাফেইন শরীরের মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি করতে সহায়ক। সকালে কফি পান করলে শরীরের ক্যালরি পোড়ার হার বাড়ে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।

ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে:

সকালের কফি শরীরের ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, বিশেষ করে যদি কোনো শারীরিক কার্যকলাপের আগে কফি পান করা হয়। এটি বিশেষভাবে ব্যায়ামকারীদের জন্য উপকারী হতে পারে।

শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়ায়:

ক্যাফেইন অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা বাড়ায়, যা শরীরকে শারীরিক কাজের জন্য প্রস্তুত করে। সকালে কফি পান করলে শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা শারীরিক কার্যকলাপের জন্য সহায়ক।

মুড উন্নত করে:

ক্যাফেইন মস্তিষ্কে ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ায়, যা মুড উন্নত করতে এবং বিষণ্ণতা দূর করতে সাহায্য করে। সকালে কফি পান করলে মন ভালো থাকে এবং ইতিবাচকভাবে দিন শুরু হয়।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভালো উৎস:

কফি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের একটি ভালো উৎস, যা শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিকাল থেকে রক্ষা করে এবং কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। এটি বার্ধক্যজনিত সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

পাচনতন্ত্র সক্রিয় করে:

সকালে কফি পান করার ফলে পাকস্থলীর কার্যক্রম শুরু হয় এবং হজম প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। এটি হজমে সাহায্য করতে পারে এবং সকালে খাবার হজমে সহায়ক।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়:

গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মডারেশনের মধ্যে কফি পান টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। কফির মধ্যে থাকা উপাদান ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।

লিভারের স্বাস্থ্য রক্ষা করে:

সকালে কফি পান লিভারের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে এবং লিভারের সিরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ফোকাস এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে:

সকালে কফি পান মনোযোগ বাড়াতে সহায়ক এবং এটি দিনের কাজগুলোতে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা মেন্টাল ওয়ার্ক করেন তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী।

ব্যায়াম করার আগের শক্তির উৎস:

অনেকেই সকালে ব্যায়াম করার আগে কফি পান করেন, কারণ ক্যাফেইন শরীরকে উদ্দীপিত করে এবং ব্যায়ামের সময় শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি ব্যায়ামের সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে:

সকালের কফি স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক হতে পারে, কারণ ক্যাফেইন শরীরে নির্দিষ্ট নিউরোট্রান্সমিটারগুলোর কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:

কফিতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে লিভার এবং কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এর প্রতিরোধমূলক ভূমিকা রয়েছে।

দেহের টক্সিন বের করে:

কফি প্রাকৃতিক ডায়ুরেটিক হিসেবে কাজ করে, যার ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন এবং পানি বের হয়ে যায়, যা শরীরকে পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।

সকালে কফি খাওয়া আপনাকে সারা দিনের কাজের জন্য প্রস্তুত করে এবং শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। এটি ক্লান্তি দূর করে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে, এবং শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে। তবে মডারেশনের মধ্যে থেকে কফি পান করা উচিত, কারণ অতিরিক্ত কফি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

লেখকদের দৃষ্টিতে কফি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অনুপ্রেরণাদায়ক পানীয়। এটি একদিকে সৃষ্টিশীলতাকে জাগিয়ে তুলতে সহায়ক, আবার অন্যদিকে এর অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে সাবধান থাকা উচিত বলে অনেকে মনে করেন।

প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ব্ল্যাক কফির ২০ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। আর হ্যাঁ, এসকল তথ্য পেতে অবশ্যই নিয়মিত ভিজিড করুন এই www.aminulit.com ওয়েবসাইটটি। ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url