ব্যাকটেরিয়া কী? ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি?

আশাকরি আল্লাহ তায়ালার দয়ায় আপনারা ভালোই আছেন। ব্যাকটেরিয়া কী? ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি? বরাবরের মতো নিয়ে এসেছি শুধু আপনাদের জন্য একটি ভিন্নধর্মী আর্টিকেল।


ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের কারণ সমুহ সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কথা আকর্ষণীয় ভাবে আপনাদের জানানোর জন্যই আজকের এই লেখা। আশাকরি আপনারা মনোযোগী হয়েই আর্টিকেলটি পড়বেন।

ব্যাকটেরিয়া কী

ব্যাকটেরিয়া কী? গ্রিক Bacteria=little rod থেকে ব্যাকটেরিয়া শব্দটির উৎপত্তি। ব্যাকটেরিয়া এক ধরনের ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীব। ব্যাকটেরিয়া হলো এক প্রকারের আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত অসবুজ এককোষী অণুজীব (আণুবীক্ষণিক জীব)। সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন ধরনের আকৃতি হয়ে থাকে, দণ্ডাকৃতি থেকে গোলাকাকৃতি ও সর্পিলাকারের মত হয়ে থাকে। 
ব্যাকটেরিয়া জল, মাটি, তেজস্ক্রিয় বর্জ্য, আম্লিক উষ্ণ ঝরনা এবং ভূত্বকের গভীর জীবমণ্ডলে বসবাস করে। ব্যাকটেরিয়া প্রাণী ও উদ্ভিদের সাথে পরজীবী ও মিথোজীবী সংসর্গেও বসবাস করে। এইসব ব্যাকটেরিয়ার বেশির ভাগই আমাদের কোন ক্ষতি করে না বরং উপকার করে থাকে। তবে কিছু সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া মানুষের দেহে রোগ সৃষ্টি করে থাকে।

নিম্নে ব্যাকটেরিয়ার কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলোঃ
  • ব্যাকটেরিয়ার আকার বিভিন্ন হতে পারে, যেমন গোলাকার (কক্কি), দণ্ডাকার (ব্যাসিলাস), সর্পিল (স্পিরিলাম) ইত্যাদি। ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত ছোট আকারের জীব, সাধারণত ০.২ - ৫ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে, অর্থাৎ এরা আণুবীক্ষণিক (microscopic) । এরা এককোষী জীব, তবে একসাথে অনেকগুলো কলোনি করে বা দল বেঁধে থাকতে পারে ।
  • ব্যাকটেরিয়ার বেশিরভাগের কোষ প্রাচীর পেপটাইডোগ্লাইক্যান নামক পদার্থ দিয়ে গঠিত, যা কোষকে আকার ও কাঠামো বজায় রাখতে সহায়তা করে। কোষপ্রাচীরের মূল উপাদান হলো (C9H17NO7 +C39H70N2O13 +C11H19NO8 + C40H67N9O21 =C₉₉H₁₇₃N₁₃O₄₉)। 
  •  ব্যাকটেরিয়ার কোষে ডিএনএ অবস্থানের অঞ্চলকে নিউক্লিওয়েড বা সিউডোনিউক্লিয়াস বলা হয়। 
  • ব্যাকটেরিয়া সাধারণত বাইনারি ফিশন (Binary Fission) নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে দ্রুত সংখ্যাবৃদ্ধি করে। এদের বংশবৃদ্ধির প্রধান প্রক্রিয়া দ্বি-ভাজন (binary fission)।
  • ব্যাকটেরিয়া মাটিতে, পানিতে, বায়ুতে, খাদ্যে এবং মানবদেহসহ প্রায় সব স্থানে বাস করে।
  • ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন উপায়ে পুষ্টি সংগ্রহ করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে (ফটোসিনথেসিস), কিছু ব্যাকটেরিয়া রাসায়নিক বিক্রিয়া থেকে শক্তি পায় (কেমোসিনথেসিস), এবং কিছু ব্যাকটেরিয়া পচনশীল পদার্থ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে।
  • ব্যাকটেরিয়া আমাদের জন্য উপকারী হতে পারে যেমন দই তৈরি, নাইট্রোজেন সংশ্লেষণ, পুষ্টি পুনর্বিন্যাস ইত্যাদিতে। তবে কিছু ব্যাকটেরিয়া রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন কোলেরা, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি।

ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা

ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ক্ষতিকারক জীবাণু হিসেবে পরিচিত হলেও, প্রকৃতপক্ষে অনেক ব্যাকটেরিয়া আমাদের জন্য উপকারী। এরা আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো কিছুর ভালো দিক থাকলে আবার খারাপ দিকও থাকে। ঠিক তেমনি ব্যাকটেরিয়ার অপকার যেমন রয়েছে আবার উপকারও রয়েছে। তাই আমরা নিচে  ব্যাকটেরিয়ার  উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করি..


খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ
  • দই ও পনির তৈরি- কিছু ব্যাকটেরিয়া (যেমন ল্যাক্টোব্যাসিলাস) দুধে ল্যাকটোজকে ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত করে যা দই ও পনির তৈরি করতে সাহায্য করে।
  • আচার ও ফার্মেন্টেড খাবার- বিভিন্ন ফার্মেন্টেড খাবার, যেমন আচার, সয়া সস, কিমচি ইত্যাদি তৈরি করতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
  • কফি, চা, তামাক সহ প্রভৃতি প্রক্রিয়াজাতকরণে "Bacillus megaterium" নামক ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়।
  • ভিনেগার, ল্যাকটিক অ্যাসিড, অ্যাসিটোন প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুত করার জন্য ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়।
পরিপাকতন্ত্রের সহায়তা
  • প্রোবায়োটিকস- আমাদের অন্ত্রে বিভিন্ন প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকারক জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
  • ভিটামিন উৎপাদন- অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ভিটামিন কেপি এবং কিছু বি-ভিটামিন উৎপাদনে সহায়তা করে যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য প্রয়োজনীয়।
  • ব্যাকটেরিয়া জীব-জন্তুর অন্ত্রে খাবার হজম করতে সাহায্য করে থাকে।
  • আমাদের অন্ত্রে Escherichia coli (E. coli) ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা ফোলিক অ্যাসিড, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-কে, বায়োটিন ইত্যাদি পদার্থ প্রস্তুত ও সরবরাহ করতে সাহায্য করে থাকে।
পরিবেশগত ভূমিকা
  • পুষ্টি পুনর্বিন্যাস- ব্যাকটেরিয়া মৃতজীব এবং পচনশীল পদার্থকে ভেঙে মাটি ও পরিবেশে পুনর্ব্যবহৃত পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে, যা উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জীবের জন্য অপরিহার্য।
  • নাইট্রোজেন সংশ্লেষণ- কিছু ব্যাকটেরিয়া (যেমন রাইজোবিয়াম) বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে উদ্ভিদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নাইট্রোজেন যৌগ তৈরি করে, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়ক।
প্রতিষেধক টিকা তৈরি ও ঔষধের ব্যবহার
  • সাবটিলিন (Bacillus sutilis হতে), পলিমিক্সিন (Bacillus polymyxa হতে), পেনিসিলিন, স্ট্রেপ্টোমাইসিনের মতো অনেক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হয়, যা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • কতিপয় ব্যাকটেরিয়া থেকে যক্ষা, ডিপথেরিয়া, কলেরা, টাইফয়েড রোগের টীকা বা ঔষধ তৈরি হয়। ডি.পি.টি. (ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি ও ধনুষ্টংকার) রোগের ঔষধ ও ব্যাকটেরিয়া থেকে সৃষ্টি হয়।
  • ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন জৈবিক গবেষণা ও জিন প্রকৌশল প্রক্রিয়ায় যেমন ইনসুলিন উৎপাদন, যেটি ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
  • ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি ও ধনুষ্টংকার (ডি.পি.টি.) রোগের প্রতিষেধক টিকা ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি করা হয়।
  • ব্যাকটেরিয়া থেকে অ্যাসপিরিন নামক একটি ব্যথানাশক ঔষধ তৈরি হয়। যা বিভিন্ন ধরনের ব্যথা ও জ্বরের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
 শিল্পক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার
  • দুগ্ধজাত শিল্পে দুগ্ধ বৃদ্ধি করতে। পাটশিল্পে পাটের ফলন বৃদ্ধি করতে। চামড়াশিল্পে এর অবদান কম নয়। চা কফি ও তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে। জৈব গ্যাস তৈরিতে। টেস্টিং লবণ তৈরিতে।
পরিবেশগত দূষণ নিয়ন্ত্রণ
  • বায়োডিগ্রেডেশন- ব্যাকটেরিয়া তেল, প্লাস্টিক, এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ ভেঙে পরিবেশ থেকে সরিয়ে দিতে সাহায্য করে।
  • আবর্জনা পচনে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়। তেল নিস্কাশনে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়। বায়োগ্যাস উৎপাদনে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
  • বায়োরেমেডিয়েশন- ব্যাকটেরিয়া পরিবেশগত দূষণ, যেমন তেল ছড়িয়ে পড়া, ভারী ধাতু দূষণ ইত্যাদি দূর করতে ব্যবহৃত হয়।
  • প্রাণীর মৃতদেহ, উদ্ভিদ, বর্জ্য পদার্থ ও অন্যান্য আবর্জনা পচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে কারণে ব্যাকটেরিয়াকে "প্রকৃতির ঝাড়ুদার" বলা হয়।
কৃষিক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহার
  • ব্যাকটেরিয়া সরাসরি বায়ু থেকে নাইট্রোজেন গ্রহণ করে "নাইট্রোজেন যৌগ পদার্থ হিসেবে মাটিতে স্থাপন করে"। এতে করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং ফলন ভালো হয়।
  • মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে। নাইট্রোজেন সংবন্ধনে। পতঙ্গনাশক হিসেবে। ফলন বৃদ্ধিতে।
  • বিজ্ঞানীরা কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে গমের উৎপাদন শতকরা ২০.৮ শতাংশ এবং ধানের উৎপাদন শতকরা ৩১.৮ শতাংশ বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।
  • ব্যাকটেরিয়ার মাটির জৈব পদার্থ সঞ্চয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাটির উপাদান হিসেবেও ব্যাকটেরিয়া কাজ করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব সার ও জৈব গ্যাস প্রস্তুত করতে সাহায্য করে থাকে।

ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা

ব্যাকটেরিয়া হলো এক প্রকারের আদি নিউক্লিয়াসযুক্ত অসবুজ এককোষী অণুজীব (আণুবীক্ষণিক জীব)। সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন ধরনের আকৃতি হয়ে থাকে, দণ্ডাকৃতি থেকে গোলাকাকৃতি ও সর্পিলাকারের মত হয়ে থাকে। মানব দেহে যতগুলো কোষ রয়েছে তার থেকে ১০ গুণ বেশি ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। মানুষের ত্বক ও অন্ত্রেও অধিকতম সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। 
যদিও ব্যাকটেরিয়া অনেক ক্ষেত্রে উপকারী, কিছু ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকারক এবং মানুষের, প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।ব্যাকটেরিয়ার যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে ঠিক তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা সমূহ-

রোগ সৃষ্টি

মানবদেহে কিছু ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। যেমন-
  • ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট রোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক রোগ হলো যক্ষা। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।
  • স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।
  • কোলেরা- ভিব্রিও কোলেরি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট, যা মারাত্মক ডায়রিয়া এবং ডিহাইড্রেশন ঘটায়।
  • ব্যাকটেরিয়া অন্যান্য প্রানীদেহেও যক্ষা, আনডিউলেটেড ফিভার, এনথ্রাক্স, প্লেগ,কলেরা, গিলাফোরা ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে থাকে।
  • নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যেমন নিসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস, মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের সুরক্ষা স্তরে সংক্রমণ ঘটায়।
খাদ্য সংক্রমণ ও বিষক্রিয়া
  • সালমোনেলা, ই. কোলাই, লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনেস ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া খাদ্যকে সংক্রমিত করে, যা খেলে খাদ্য বিষক্রিয়া, ডায়রিয়া, বমি, পেটব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।
  • বোটুলিজম- ক্লোস্ট্রিডিয়াম বোটুলিনাম নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি মারাত্মক বিষক্রিয়া যা সংরক্ষিত খাবারে পাওয়া যেতে পারে এবং এটি পক্ষাঘাত বা মৃত্যু ঘটাতে পারে।
উদ্ভিদের রোগ
  • Xanthomonas oryzae নামক ব্যাকটেরিয়া ধানের পাতা ধবংসা রোগ সৃষ্টি করে থাকে। এছাড়াও তামাকের ব্লাইট, গমের টুন্ডুরোগ, আখের আঠা ঝরা রোগ, আলুর স্ক্যাব, টমেটো ও লেবুর ক্যাংকার, ভুট্টার বোটা পঁচা রোগ, আপেলের ফায়ার ব্লাইট, সিমের লিফ স্পট রোগ ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে থাকে।
  • ব্ল্যাক রট- এটি কপি, ফুলকপি এবং অন্যান্য ব্রাসিকাস জাতীয় ফসলের মধ্যে সংক্রমণ ঘটায়, যার ফলে ফসলের ক্ষতি হয়।
  • Bacillus denitrificans জাতীয় কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ায় মাটিস্থ নাইট্রেটকে ভেঙে মুক্ত নাইট্রোজেনে পরিণত করে। ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং ফসলের উৎপাদন কমে যায়। 
পরিবেশগত ক্ষতি
  • কিছু ব্যাকটেরিয়া মৃত্তিকায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং মৃত্তিকার পুষ্টিগুণ নষ্ট করতে পারে, যা কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
  • কিছু ব্যাকটেরিয়া বর্জ্য পদার্থ থেকে বিষাক্ত গ্যাস বা যৌগ উৎপাদন করতে পারে, যা পরিবেশে দূষণ সৃষ্টি করে।
অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা 
  • অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: কিছু ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে, যা চিকিৎসায় সমস্যার সৃষ্টি করে। এর ফলে সাধারণত চিকিৎসাযোগ্য সংক্রমণও প্রাণঘাতী হতে পারে।
 শিল্প ও গৃহস্থালী ক্ষতি
  • কিছু ব্যাকটেরিয়া কাঠ, চামড়া, এবং অন্যান্য জৈব পদার্থের ক্ষয় ঘটায়, যা নির্মাণ বা শিল্প খাতে ক্ষতি সৃষ্টি করে।
  • Clostridium sp. নামক ব্যাকটেরিয়া বিমানের জ্বালানিতে তৈরি হলে, বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে।
  • ব্যাকটেরিয়া জ্বালানির মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে তা দূষিত করতে পারে, যা ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে।
সংক্রমণ ছড়ানো
  • হাসপাতালের পরিবেশে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে পারে এবং রোগীর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়, যা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জটিল করে তোলে।
ব্যাকটেরিয়া, বিশেষত ক্ষতিকারক বা প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া, মানুষের স্বাস্থ্য, কৃষি, এবং পরিবেশের জন্য একটি বড় হুমকি হতে পারে। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া জনিত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের লক্ষণ

ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের লক্ষণ বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং আক্রান্ত অঙ্গ বা সিস্টেমের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। তবে, সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়। এখানে কিছু সাধারণ ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের লক্ষণ এবং তাদের বিবরণ তুলে ধরা হলো:
  • শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হওয়ার লক্ষণ। জ্বর সাধারণত ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের একটি সাধারণ লক্ষণ।
  • মাথাব্যথা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের কারণে হতে পারে, বিশেষ করে যদি সংক্রমণটি সাইনাস, মেনিনজাইটিস বা অন্য কোনো স্নায়বিক ক্ষেত্রে হয়।
  • রোগীর শরীরে ক্লান্তি, দুর্বলতা বা শক্তিহীনতা দেখা দেয়। এটি শরীরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রচেষ্টার ফলে ঘটে।
  • ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে (যেমন নিউমোনিয়া) শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে  শরীরে রক্তচাপ কমে যায়।
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে সর্দি, ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া হলে কাশি হতে পারে, যা শুষ্ক বা কফসহ হতে পারে।
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে রোগীর প্রচণ্ড পিপাসা পায়।
  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের (যেমন ফুড পয়জনিং, সালমোনেলা, ই. কোলাই) ফলে পেটব্যথা, ডায়রিয়া, বমি হতে পারে।
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে দেহে মাংসপেশীর সংকোচন (cramp) এ রোগের একটি প্রধান লক্ষণ। 
  • কিছু ব্যাকটেরিয়া ত্বকের সংক্রমণ ঘটায় যা ফুসকুড়ি, পুঁজভর্তি ফোস্কা বা ত্বকের লালচে ভাবের মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, স্ট্যাফাইলোকক্কাস বা স্ট্রেপ্টোকক্কাস সংক্রমণ।
  • মেনিনজাইটিসের মতো ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ক্ষেত্রে ঘাড় শক্ত হয়ে যেতে পারে, যা সাধারণত মাথাব্যথা এবং জ্বরের সাথে দেখা যায়।
  • সংক্রমণ আক্রান্ত স্থানে ব্যথা এবং ফোলাভাব হতে পারে, যেমন কান সংক্রমণ, গলা ব্যথা (টনসিলাইটিস), বা সংক্রমিত গাঁটে ব্যথা।
  • বারবার প্রস্রাবের অনুভূতি, প্রস্রাবে জ্বালা, ব্যথা, মেঘলা বা রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব ইত্যাদি মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।
  • ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে শরীরে খিঁচুনি দেখা দেয়। 
ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের লক্ষণগুলি কোনটি দেখা যায় তা সম্পূর্ণভাবে রোগের ধরণ, আক্রমণের জ্বরের ধরণ, এবং আক্রান্ত অবস্থার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের লক্ষণগুলো যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা তীব্র হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ নিরাময় করা সম্ভব, তবে সঠিক চিকিৎসা অত্যাবশ্যক।

ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের কারণ সমুহ

ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের কারণ হলো বিভিন্ন প্রকারের ব্যাকটেরিয়া, যা মানবদেহে প্রবেশ করে এবং সংক্রমণ ঘটায়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বা সিস্টেমে সংক্রমণ ঘটিয়ে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের কারণগুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:

অপ্রতুল ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি
  • অপরিষ্কার হাত- হাত না ধোয়া বা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা ব্যাকটেরিয়া ছড়াতে পারে, যা খাদ্য গ্রহণ বা মুখ, চোখ, নাকের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
  • ময়লা বা দূষিত জিনিসপত্র স্পর্শ করা- দূষিত জিনিস বা পৃষ্ঠ স্পর্শ করার পর মুখ, নাক, বা চোখে হাত দিলে ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
দূষিত খাদ্য ও পানি
  • ফুড পয়জনিং- দূষিত বা সংক্রমিত খাদ্য গ্রহণ করলে সালমোনেলা, ই. কোলাই বা লিস্টেরিয়া মনোসাইটোজেনেসের মতো ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশ করে খাদ্যবাহিত রোগ সৃষ্টি করতে পারে।
  • দূষিত পানি- দূষিত পানি পান করলে কোলেরা বা টাইফয়েডের মতো রোগ হতে পারে, যা ভিব্রিও কোলেরি বা সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার কারণে ঘটে।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
  • অপরিষ্কার বাসস্থান- অপরিষ্কার বা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে, যা শ্বাসতন্ত্র বা ত্বকের সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্য প্রস্তুতি- খাদ্য প্রস্তুত করার সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বা অপরিচ্ছন্ন সরঞ্জাম ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটতে পারে।
আঘাত বা কাটা-ছেঁড়া
  • অরক্ষিত ক্ষতস্থান- কাটা-ছেঁড়া বা আঘাতের কারণে ত্বকের সুরক্ষা ভেঙে গেলে ব্যাকটেরিয়া সহজেই শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যেমন টিটেনাস।
অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক
  • যৌনবাহিত রোগ- নিসেরিয়া গনোরিয়া বা ট্রেপোনেমা পালিডাম ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট গনোরিয়া ও সিফিলিসের মতো যৌনবাহিত রোগ অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ
  • হাঁচি, কাশি বা সংক্রমিত পৃষ্ঠ স্পর্শ- মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, বা হুপিং কাশির মতো ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা তাদের স্পর্শ করা জিনিসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
দূষিত বায়ু বা জলাশয়
  • ফুসফুস সংক্রমণ- দূষিত বায়ু বা পরিবেশের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করতে পারে, যা নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিসের কারণ হতে পারে।
  • জলাশয় সংক্রমণ- পুকুর, নদী বা অন্য জলাশয়ে স্নান বা খেলাধুলা করলে কিছু ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
  • অর্ধেক রান্না করা বা কাঁচা খাবার- যথাযথভাবে রান্না না করা খাবার, বিশেষত মাংস বা ডিম, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও দুর্যোগ
  • বন্যা বা ভূমিকম্প- প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং দুর্যোগে পানির দূষণ, খাদ্য সংরক্ষণে অসুবিধা, এবং পরিবেশগত অবনতি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
কম প্রতিরোধ ক্ষমতা
  • ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা- কম ইমিউন সিস্টেমের কারণে ব্যাকটেরিয়া শরীরে সহজে সংক্রমণ ঘটাতে পারে, যেমন শিশু, বয়স্ক বা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড ব্যক্তিরা।
এগুলো ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের কারণগুলির মধ্যে কয়েকটি। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ব্যাকটেরিয়ার গঠন ও কাজ

ব্যাকটেরিয়া হল এককোষী প্রাণী যা প্রোক্যারিওটিক কোষ হিসেবে পরিচিত। এদের কোন সুনির্দিষ্ট নিউক্লিয়াস থাকে না, এবং এরা সাধারণত মাইক্রোস্কোপিক অর্থাৎ চোখে দেখা যায় না। ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন আকার ও গঠনের হয়, যেমন গোলাকার (কক্কি), দণ্ডাকার (ব্যাসিলাস), সর্পিল (স্পিরিলাম), ইত্যাদি।

ব্যাকটেরিয়ার গঠন তন্ত্র নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
  • কোষ প্রাচীরঃ ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর পেপটাইডোগ্লাইক্যান দিয়ে তৈরি যা কোষের আকার বজায় রাখে এবং এদেরকে বাইরের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
  • সাইটোপ্লাজমঃ কোষের ভেতরের তরল অংশ যেখানে কোষের অঙ্গাণুসমূহ থাকে।
  • ডিএনএঃ ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ সাধারণত একটি বৃত্তাকার ক্রোমোজোম আকারে কোষের সাইটোপ্লাজমে মুক্ত অবস্থায় থাকে।
  • রাইবোজোমঃ এটি প্রোটিন সংশ্লেষণ করে।
  • কোষ ঝিল্লিঃ এটি সাইটোপ্লাজমকে ঘিরে রাখে এবং কোষের ভেতরে ও বাইরে পদার্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • ফ্ল্যাজেলাঃ কিছু ব্যাকটেরিয়ার কোষে ফ্ল্যাজেলা থাকে যা এদের চলাচলে সহায়তা করে।
  • পিলিঃ এটি ব্যাকটেরিয়ার পৃষ্ঠে থাকে এবং অন্যান্য কোষের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।
ব্যাকটেরিয়া কি ধরনের কাজ করে তা নিম্নে উলেখ করা হলোঃ 
  • পুষ্টি উপাদান পুনর্বিন্যাসঃ ব্যাকটেরিয়া মৃতজীব পদার্থ ভেঙে নতুন পুষ্টি উপাদান তৈরি করে যা পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  • জীবাণু উৎপাদনঃ কিছু ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন রকমের রোগ সৃষ্টি করে, যেমন যক্ষ্মা, কোলেরা, প্লেগ ইত্যাদি।
  • পুষ্টি সংশ্লেষণঃ কিছু ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন সংশ্লেষণ করে যা উদ্ভিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
  • খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণঃ দুগ্ধজাত খাদ্য যেমন দই, পনির ইত্যাদি প্রস্তুত করতে কিছু ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
  • জীববিজ্ঞান গবেষণায় সহায়তাঃ ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন জৈব প্রক্রিয়া বোঝার জন্য মডেল অর্গানিজম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ব্যাকটেরিয়া কোন কোন কাজে ব্যবহার করা হয়

ব্যাকটেরিয়া যেসব কাজে ব্যবহার করা হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
  • অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ তৈরীতে
  • প্রতিষেধক টিকা তৈরীতে
  • নাইট্রোজেন সংবদ্ধকরণে-এ
  • পতঙ্গ নাশকরণে
  • পাট শিল্পে
  • চামড়া শিল্পে
  • রাসায়নিক পদার্থ তৈরীতে
  • ভিটামিন তৈরীতে
  • চা,কফি প্রক্রিয়াজাতকরণ।

ব্যাকটেরিয়া জনিত কি কি রোগ হয় 

ব্যাকটেরিয়া জনিত কি কি রোগ হয়? ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের তালিকা এবং তাদের কারণ বর্ণনা করা হলোঃ


১. যক্ষ্মাঃ মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ দীর্ঘস্থায়ী কাশি, জ্বর, রাতে ঘাম, ওজন কমে যাওয়া।

২. নিউমোনিয়াঃ স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া বা হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকের ব্যথা, জ্বর।

৩. কোলেরাঃ ভিব্রিও কোলেরি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ তীব্র ডায়রিয়া, ডিহাইড্রেশন, বমি।

৪. টিটেনাসঃ ক্লোস্ট্রিডিয়াম টিটানি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণ: পেশীতে শক্ত হওয়া, জ্বর, চোয়ালে ব্যথা।

৫. লেপ্রোসিঃ মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ ত্বকে ক্ষত, স্নায়বিক ব্যথা, অঙ্গহানি।

৬. ডিপথেরিয়াঃ করাইনেব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরিয়া ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ গলায় সাদা স্তর জমা, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, জ্বর।

৭. গনোরিয়াঃ নিসেরিয়া গনোরিয়া ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ প্রস্রাবে ব্যথা, যৌনাঙ্গে পুঁজ, পেলভিক ব্যথা।

৮. সিফিলিসঃ ট্রেপোনেমা পালিডাম ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ ত্বকে ক্ষত, ফুসকুড়ি, স্নায়বিক সমস্যা।

৯. স্কারলেট ফিভারঃ স্ট্রেপ্টোকক্কাস পায়োজেনস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ গলায় ব্যথা, লাল ফুসকুড়ি, জ্বর।

১০. উরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনঃ ই. কোলাই এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ প্রস্রাবে জ্বালা, ঘন ঘন প্রস্রাবের অনুভূতি, মেঘলা বা রক্ত মিশ্রিত প্রস্রাব।

১১. মেনিনজাইটিসঃ নিসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস বা স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ ঘাড় শক্ত হওয়া, তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, বমি।

১২. স্ট্যাফ সংক্রমণঃ স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ ত্বকে ফোঁড়া, পুঁজভর্তি ফোসকা, ত্বকের লালচে ভাব।

১৩. প্লেগঃ ইয়েরসিনিয়া পেস্টিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ ফোলা লিম্ফ নোড, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ কমে যাওয়া।

১৪. হুপিং কাশিঃ বোর্ডেটেলা পার্টুসিস ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট।

লক্ষণঃ তীব্র কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলায় সংক্রমণ।

ব্যাকটেরিয়া জনিত এই রোগগুলো সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই রোগ নির্ণয় এবং সময়মতো চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি ব্যাকটেরিয়া কী? ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো কি? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। তো এই ছিলো আজকের আর্টিকেল। ভালো লাগলে  👍 দিতে ভুলবেন না। মন্তব্য থাকলে কমন্টে 🖌️ এ জানতে ভুলবেন না। এতক্ষন সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url