সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়, ২৩ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়, ২৩ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? তাহলে আপনার জন্য আমার এই আর্টিকেলটি লেখা।
এছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন এলার্জি বা চর্মরোগ সারাতে নিম পাতা রসের উপকারিতা সহ বিভিন্ন জানতে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচিপত্র: সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়, ২৩ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
.
কোনো উদ্ভিদের রোগ নিরাময় ক্ষমতা থাকলে তাকে ‘ভেষজ উদ্ভিদ’ বলে। যেমন নিমগাছ।
খ্রিষ্টপূর্ব আনুমানিক ৪০০ সালে বৈদিক যুগে নিম জীবাণু ধ্বংসকারী হিসেবে প্রয়োগ
হতো। দূষিত বায়ু বা অন্য কোনো কীটের উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে এর ভূমিকা আছে।
নিম এমনই এক আশ্চর্য উপাদান যার প্রতিটি অংশই কোনো না কোনো রোগের প্রতিষেধক। ভেষজ
এ উপাদানটির মানব শরীরের প্রতিটি অংশকে সুরক্ষিত রাখার প্রাকৃতিক ক্ষমতা রয়েছে।
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়? খালি পেটে নিম পাতার রস খাওয়ার কিছু
উপকারিতা রয়েছে। নিম পাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ভাইরাল এবং
অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান। এটি শরীরের রক্তে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলো ধ্বংস করে।
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১০-১৫টি নিমের পাতা ভালো করে ধুয়ে ব্লেন্ড করে রস তৈরি
করে পান করলে যে উপকার পাওয়া যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- নিম পাতার রস শরীরের টক্সিক উপাদান দূর করতে সাহায্য করে।
- নিম পাতার রস ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
- নিম পাতার রসে রয়েছে অনেক ঔষধিগুন যা ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে।
- পেটের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- নিম পাতার রস নিয়মিত খেলে চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
- নিম পাতার রসে রয়েছে এমন সব গুনাবলী যা খেলে রক্ত পরিষ্কার করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে নিম পাতার রস।
- নিম পাতার রস হজমশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- নিম পাতার রস নিয়মিত গ্রহণের ফলে সার্বিকভাবে দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও নিমের পাতার রস মধু বা লেবুর রসের সাথে মিশিয়েও পান করলে বেশ ভালো উপকার
পাওয়া যেতে পারে। তবে, গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের এবং কিডনি রোগীদের নিম
পাতার রস খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এটি সবার
জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
নিম পাতার ২৩ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
নিম ঔষধি গাছ যার ডাল, পাতা, রস সবই কাজে লাগে। শুধু নিম দিয়েই নিরাময় হয়
অনেকগুলো রোগ। নিমের পাতা থেকে আজকাল প্রসাধনীও তৈরি হচ্ছে। সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়, ২৩ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা নিম্নে তুলে ধরা হলো:
ত্বকের যত্ন
বহুদিন ধরে রূপচর্চায় নিমের ব্যবহার হয়ে আসছে। নিম পাতা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার
জন্য খুবই কার্যকর। এটি ব্রণ এবং অন্যান্য ত্বকের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।ঘরে
তৈরি নিমের বড়িও খাওয়া যেতে পারে। বড়ি তৈরি করতে নিমপাতা ভালোভাবে ধুয়ে বেটে নিন।
এবার হাতে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করুন। বড় বাটিতে ফ্যানের বাতোসে একদিন রেখে
দিন।
পরদিন রোদে শুকোতে দিন। নিমের বড়ির জল একেবারে শুকিয়ে এলে এয়ারটাইট বয়ামে সংরক্ষণ
করুন। মাথার ত্বকে অনেকেরই চুল্কানি ভাব হয়, নিমপাতার রস মাথায় নিয়মিত লাগালে এই
চুলকানি কমে। নিয়মিত নিমপাতার সাথে কাঁচা হলুদ পেস্ট করে লাগালে ত্বকের উজ্জলতা
বৃদ্ধি ও স্কিন টোন ঠিক হয়। নিমপাতা সিদ্ধ পানি গোসলের পানির সাথে মিশিয়ে গোসল
করলে যাদের চুল্কানি আছে তাদের এতে আরাম হবে।
চুলের যত্ন
উজ্জ্বল, সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন চুল পেতে নিম পাতার অবদান অপরিসীম। নিম পাতা চুলের
খুশকি দূর করতে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। মাথার চুলের খুসকি
দূর করার জন্য শ্যাম্পু ব্যবহার করার সময় সিদ্ধ পানি দিয়ে মিশিয়ে গোসল করলে ভালো
ফলাফল পাওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহে ১দিন নিমপাতা ভালো করে বেটে চুলে ১ ঘন্টা লাগিয়ে
রেখে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুন: কালোজিরার ৪২টি স্বাস্থ্য উপকারিতার উপায়
দেখবেন চুল পড়ার সাথে চুল নরম ও কমল হবে। চুল ঝলমল সুন্দর করার জন্য সপ্তাহে ২
দিন ১ চামচ আমলকির রস, ১চামচ নিমপাতার রস, ১ চামচ লেবুর রস ও প্রয়োজন অনুযায়ী
টকদই মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
খোস পাচড়া বা চুলকানি
নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে খোসপাচড়া চলে যায়। নিম পাতা ভেজে
গুড়া করে সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে চুলকানিতে লাগালে যাদুর মতো কাজ হয়। নিম পাতা
এবং কাঁচা হলুদ মিশ্রণ করে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ৭-১০ দিন ব্যবহার করলে
খোস-পাঁচড়া ও পুরনো ক্ষতের উপশম হয়। পাতা বেটে গায়ে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি
ভালো হয়।
মুখের যত্নে
নিম পাতা দাঁতের মাড়ি এবং মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক কীটনাশক
নিম পাতা প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা ফসলের ক্ষতিকারক
পোকামাকড় দূর করতে সাহায্য করে।
স্বাস্থ্যকর পানীয়
নিম পাতা দিয়ে তৈরি পানীয় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য
করে।
কৃমিনাশক
বাচ্চাদের পেটের কৃমি নির্মূল করতে নিমের পাতার জুড়ি নেই। নিমপাতা পেটের কৃমি দূর
করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ নিম গাছের মূলের ছালের
গুড়া দিন ৩ বার সামান্য গরম পানি সহ খেতে হবে। আবার ৩-৪ গ্রাম নিম ছাল চূর্ণ
সামান্য পরিমাণ লবণসহ সকালে খালি পেটে খেলে কৃমির উপদ্রব হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
নিয়মিত এক সপ্তাহ সেবন করে যেতে হব। ১-২ গ্রাম মাত্রায় সেব্য বাচ্চাদের জন্য।
দাঁতের রোগ
কচি নিম ডাল দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত ভাল থাকে। নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাত মাজলে
দাঁত হবে মজবুত, রক্ষা পাবেন দন্ত রোগ থেকেও। দাঁতের আক্রমণ, দাঁতের পচন, রক্তপাত
ও মাড়ির ব্যথা কমাতে নিম পাতার নির্যাস পানিতে মিশিয়ে বা নিম দিয়ে মুখ আলতোভাবে
ধুতে হবে।
উকুন বিনাশ
নিমের পেস্ট তৈরি করে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করতে হবে তারপর মাথা শ্যাম্পু দিয়ে
ধুয়ে ফেললে উকুনের সমস্যা দূর হবে। সপ্তাহে ২-৩ বার এবং ২ মাস ব্যবহার করতে হবে।
রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ
নিম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চমৎকার ভাবে কাজ করে। নিমের পাতা রক্তের সুগার লেভেল
কমতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিম পাতা বেটে খেলে তা
ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
খুশকি বিনাশ
নিমের ব্যাকটেরিয়া নাশক ও ছত্রাক নাশক উপাদানের জন্য খুশকির চিকিৎসায় কার্যকরী
ভূমিকা রাখে। নিম মাথার তালুর শুষ্কতা ও চুলকানি দূর করে। খুসকি দূর করার জন্য
চার কাপ পানিতে এক মুঠো নিমের পাতা সবুজ বর্ণ ধারণ না হওয়া পর্যন্ত গরম করে পানি
ঠান্ডা হলে চুল শ্যাম্পু করার পর এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিলে কন্ডিশনারের মত কাজ
করবে। সপ্তাহে ২-৩বার ব্যবহার করুন যতদিন না খুশকি দূর হয়।
ওজন কমাতে
ওজন কমাতে নিমপাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম ফুল মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে
শরীরের চর্বি ভাংতে সাহায্য করে। একমুঠো নিম ফুল চূর্ণ করে তার সাথে ১ চামচ মধু,
আধা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরী করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করলেওজন
কমবে।
রক্ত পরিষ্কার করে
নিমপাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে ও রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। এছাড়াও রক্ত চলাচল
বাড়িয়ে হৃৎপিণ্ডের গতি স্বাভাবিক রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও নিমপাতা রসের
জুড়ি নেই।
ঠাণ্ডাজনিত বুকের ব্যথা
ঠাণ্ডাজনিত বুকের ব্যথা কমাতে নিমপাতা খুব ভালো কাজ করে। এ জন্য ৩০ ফোটা নিম
পাতার রস সামান্য গরম জলতে মিশিয়ে দিতে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমবে।
ভাইরাস রোগ
ভারতীয় উপমহাদেশে ভাইরাল রোগ নিরাময়ে নিম ব্যবহৃত হয়। চিকেন পক্স, হাম ও অন্য
চর্মরোগ হলে নিমপাতা বাটা লাগানো হতো। এছাড়াও নিমপাতা পানিতে সিদ্ধ করে সে পানি
দিয়ে গোসল করলে ত্বকের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি দূর হয়।
পোকা-মাকড়ের কামড়
পোকা মাকড় কামড় দিলে বা হুল ফোঁটালে নিমের মূলের ছাল বা পাতা বেটে ক্ষত স্থানে
লাগালে ব্যথা উপশম হবে।
ম্যালেরিয়া
গ্যাডোনিন উপাদান সমৃদ্ধ নিম ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও নিমপাতা
সিদ্ধ পানি ঠাণ্ডা করে স্প্রে বোতলে রাখে প্রতিদিন ঘরে স্প্রে করলে মশার উপদ্রব
কমে যাবে।
জন্ডিস
নিমপাতা জন্ডিস সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জন্ডিস হলে এক চামচ রসের
সাথে একটু মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২৫-৩০ ফোঁটা খেতে হবে। পুরোপুরি
নিরাময় হতে এক সপ্তাহ চালিয়ে যেতে হবে।
চোখ
চোখে চুলকানি হলে নিমপাতা পানিতে দশ মিনিট সিদ্ধ করে ঠাণ্ডা করে সেই পানির ঝাপটা
চোখে দিলে আরামবোধ করবেন।
ছত্রাকের ইনফেকশন
নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগালে নিরাময় লাভ করা যায়। আক্রান্ত
স্থানে কয়েক ফোঁটা নিমের তেল দিনে তিনবার লাগালেও ভালো ফল পাওয়া যায়। আপনার পায়ে
কোন ফাঙ্গাল ইনফেকশন থাকলে নিমপাতার পেষ্ট ব্যবহার করুন।
বাত
বাতের ব্যথায় নিমের তেলের ম্যাসাজও বেশ উপকারী। নিমপাতা, নিমের বীজ ও বাকল বাতের
ব্যথা সারাতে ওষুধ হিসেবে কাজ করে।
ব্রণ দূর করতে
নিমপাতার গুঁড়ো পানিতে মিশিয়ে মুখ ধুলে ব্রণ দূর হবে এবং ব্রণ থেকে তৈরি
জ্বালাপোড়া ভাবও দূর হবে। এটা ব্রণ দূর করার একটি কার্যকর পদ্ধতি।
অ্যালার্জি
অ্যালার্জির সমস্যায় নিম পাতা ফুটিয়ে গোসল করলে অ্যালার্জি যাবে ১০০ হাত দূরে।
তাছাড়া কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা একসাথে বেঁটে শরীরে লাগালে অ্যালার্জি কমবেই।
এলার্জি বা চর্মরোগ সারাতে নিম পাতা রসের উপকারিতা
নিম পাতা এলার্জি বা চর্মরোগ চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত একটি প্রাকৃতিক উপাদান।
নিম পাতার রস এলার্জি বা চর্মরোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। নিমের
মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-হিস্টামিন, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল,
অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলী রয়েছে, যা চর্মরোগ বা এলার্জির লক্ষণগুলো কমাতে এবং
ত্বকের প্রদাহ কমাতে, চুলকানি ও লালচে ভাব দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে। নিম্নে এর উপায়গুলোেআলোচনা করা হলো:
নিম পাতা পেস্ট: তাজা নিম পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করে এবং এটি সরাসরি
ত্বকের আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। এটি চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং অন্যান্য
চর্মরোগের উপশমে কাজ করে।
নিম পাতার তেল: নিম পাতার তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। এটি ত্বকের
সংক্রমণ, ব্রণ এবং অন্যান্য চর্মরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে। নিম
তেল সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ বা অন্য কোনো তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে
পারে।
নিম পাতা দিয়ে গোসল: কয়েকটি নিম পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি
দিয়ে গোসল করলে এটি ত্বকের সংক্রমণ এবং এলার্জি দূর করতে সাহায্য করে।
নিম পাতা ও হলুদ পেস্ট: নিম পাতা এবং হলুদ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে
এটি ত্বকের ক্ষতস্থানে লাগালে এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ক্ষত দ্রুত
নিরাময় করতে সহায়তা করে।
এটি মেনে চলার আগে অবশ্যই সরাসরি বিশেষজ্ঞ/চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিম পাতা
ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকুন এবং যদি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে
ব্যবহার বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নিম পাতার রস খাওয়ার নিয়ম:
নিম পাতার রস খাওয়ার কিছু নিয়ম ও উপকারিতা রয়েছে। নিমপাতা রোগপ্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন কয়েকটি নিমপাতা গুঁড়া করে
এক গ্লাস পানির সাথে পান করলে রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- নিয়মিত খালি পেটে পান করা: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস পান করা ভালো। এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- মধু ও লেবুর সাথে মিশিয়ে পান করা: নিম পাতার তেতো স্বাদ কমানোর জন্য মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন।
- সিদ্ধ করে পান করা: নিম পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি ঠান্ডা করে পান করতে পারেন। এটি ত্বকের জন্যও উপকারী।
- নিম পাতার রস: নিম পাতা পিষে রস বের করে পান করতে পারেন। তেতো স্বাদ কমানোর জন্য মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন।
- নিম পাতা গুঁড়া: শুকনো নিম পাতা গুঁড়া করে এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। এটি রক্ত পরিশোধন এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- নিম পাতার ট্যাবলেট: বাজারে নিম পাতার ট্যাবলেট পাওয়া যায়, যা সহজেই খাওয়া যায়।
- খালি পেটে চিবিয়ে খাওয়া: সকালে খালি পেটে ২-৩টি নিম পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। এটি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
নিম পাতার চা বানানোর পদ্ধতি
নিমপাতার চা অনেক রোগের মহাঔষধ হিসেবে কাজ করে। নিম পাতার চা যদি আমরা নিয়মিত পান
করি তাহলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে। চা তৈরীর নিয়ম নিম্নে আলোচনা করা হলো:
উপকরণ:
১০-১২টি তাজা নিম পাতা
২ কাপ পানি
মধু বা লেবুর রস (স্বাদ অনুযায়ী)
পদ্ধতি:
প্রথমে নিম পাতা ভালো করে ধুয়ে নিন। একটি পাত্রে ২ কাপ পানি নিন এবং তা ফুটতে
দিন। পানি ফুটে উঠলে তাতে নিম পাতা যোগ করুন। নিম পাতাগুলো পানিতে ৫-৭ মিনিট ধরে
ফুটতে দিন। এরপর চা ছেঁকে নিন এবং একটি কাপ বা মগে ঢালুন। স্বাদ অনুযায়ী মধু বা
লেবুর রস যোগ করতে পারেন।
এই চা নিয়মিত পান করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং ত্বকের জন্যও
উপকারী।
নিম পাতা মুখে দিলে কি হয়
নিম পাতা মুখে দিলে বেশ কিছু উপকারিতা পাওয়া যায়। নিম পাতার মধ্যে
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল, এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ
রয়েছে। এটি মুখের বিভিন্ন সমস্যা যেমন দাঁতের মাড়ি ফোলা, মুখের দুর্গন্ধ, এবং
দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও, নিম পাতা চিবালে মুখের ভেতরের ক্ষত
দ্রুত সেরে যায়।
তবে, নিম পাতা ব্যবহারের আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি
আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে।
নিম পাতার বড়ি খেলে কি হয়
নিম পাতার বড়ি খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি সাধারণত বিভিন্ন স্বাস্থ্য
সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হয়। নিম্নে নিম পাতার বড়ি খাওয়ার উপকারিতা উল্লেখ করা
হলো:
- রক্ত পরিশোধন: নিম রক্ত পরিশোধনে সহায়তা করে।
- ত্বকের সমস্যা: ব্রণ, ফুসকুড়ি এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যার জন্য নিম কার্যকরী।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: নিম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- পাচনতন্ত্রের সমস্যা: নিম হজমে সহায়ক এবং পেটের সমস্যা কমাতে পারে।
তবে, নিম পাতার বড়ি খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
উচিত।
কাঁচা হলুদ ও নিম পাতার গুনাগুন
কাঁচা হলুদ এবং নিম পাতা উভয়ই প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এদের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।কীভাবে তৈরি করবেন নিম-হলুদের মিশ্রণকাঁচা হলুদ
- প্রদাহনাশক: কাঁচা হলুদে থাকা কারকিউমিন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: এটি শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে।
- প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: কাঁচা হলুদ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ত্বকের যত্ন: এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধ: কারকিউমিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে এবং আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
- হজমশক্তি বৃদ্ধি: কাঁচা হলুদ হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমায়।
- রক্ত পরিশোধন: নিম পাতা রক্ত পরিশোধন করতে সাহায্য করে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
- পেটের সমস্যা: নিম পাতা পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
- ইনফেকশন প্রতিরোধ: নিম পাতা বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধে কার্যকর।
- অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল: নিম পাতার রস ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর।
- ত্বকের যত্ন: এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, একজিমা ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: নিম পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- ডিটক্সিফিকেশন: এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
- চুলের যত্ন: নিম পাতা চুলের খুশকি দূর করতে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।
- ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ: নিম পাতা ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কার্যকর।
- দাঁতের যত্ন: নিম পাতা দাঁতের মাড়ি শক্ত করতে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
কখন কখন ব্যবহার করবেন
রাতে শোয়ার আগে এটি ত্বকের যেই অংশে সমস্যা হয়েছে, সেখানে লগাতে হবে। সারারাত ঔষধটি কাজ করবে। এছাড়াও গোসল করার পর শরীরের গোপন এলাকাগুলিতে সমস্যা হলে ব্যবহার করতে পারেন এই মিশ্রণ।
লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়, ২৩ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানলেন। নিমগাছ যে বাড়ির আঙিনায় থাকে, সে বাড়িতে রোগ-বালাই কম থাকে বলে ধারণা করা হয়। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ, সেপটিক ঘা, সংক্রমিত পোড়া এমন কি ত্বকে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর নিমপাতা। একজিমা, পেটের আলসার কিংবা ত্বকে দাদের মতো চর্মরোগেও চিকিৎসকরা নিমপাতার ওপর ভরসা করেন।এতক্ষণ আমার সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল যদি আপনি নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করতে থাকুন। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিত বন্ধু মহলে শেয়ার করে দিবেন।
aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url