শসা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই
শসা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? আজ আমি শসা খাওয়ার
উপকারিতা সম্পর্কে
আলোচনা করবো।
শসা খাওয়ার উপকারিতা ছাড়াও খালি পেটে শসা খাওয়ার উপকারিতা সহ আরো
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
শসাকে আমরা অনেকেই সবজি মনে করি। তবে আদতে এটি সবজি নয়, এটি হচ্ছে ফল। বাড়তি ওজন
কমাতে চাইলে খাদ্য তালিকায় শসা রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। উচ্চমাত্রার পানি
মেলে ফলটি থেকে। এটি প্রায় ৯৫% পানি ধারণ করে, যা আপনার শরীরের হাইড্রেশন বজায়
রাখতে সাহায্য করে।
শসা রক্তে শর্করা কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
শসায় রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন বি, কপার, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ম্যাঙ্গানিজ।
এই উপাদানগুলি আপনার শরীরের প্রচুর পরিমাণে পানি পূরণ করে এবং বিভিন্ন রোগ থেকে
দূরে থাকতে সাহায্য করতে পারে।
শসা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা
শসা হালকা, সতেজ স্বাদ এবং উচ্চ পানির সামগ্রী রয়েছে। এটি ডিহাইড্রেশন উপশম করতে
সাহায্য করতে পারে এবং গরম আবহাওয়ায় খেতে মনোরম। বিষাক্ততা দূর করে শসায়
যে পানি থাকে, তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য
ঝাটার মতো কাজ করে। চলুন এবার জানা যাক শসা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা
সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ভিটামিন এবং খনিজ
শসা শুধু একটি ফল নয় এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও খনিজ। মাত্র এক কাপ শসায়
প্রতিদিনের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন কে এর ১৪ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশ পাওয়া যায়।
এছাড়া কপার, ফসফরাস, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজগুলোর সাথে ভিটামিন
বি এবং সি পাওয়া যায় ফলটি থেকে। শসা খেলে তাই বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা
পূরণ হবে।
গেঁটেবাত থেকে মুক্তি
শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা আছে। গাজরের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে খেলে দেহের
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নেমে আসে। এতে গেঁটেবাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ত্বকের যত্নে শসা
শসা ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। এটি ত্বক হাইড্রেট করে এবং প্রাকৃতিক
আর্দ্রতা বজায় রাখে। এর নির্যাস ময়েশ্চারাইজার, টোনার এবং মাস্ক হিসেবে ব্যবহার
করা যায়। শসা ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এতে
প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে, যা ত্বককে পুষ্টি জোগায়। ত্বকের অক্সিডেটিভ ক্ষতির
বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং মেলানিন উৎপাদনে বাধা দেয়, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
শসা একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য উন্নত করতে সাহায্য
করে।
ক্যানসার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
শসায় সিকোইসোলারিসিরেসিনোল, ল্যারিসিরেসিনোল ও পিনোরেসিনোল—এ তিনটি আয়ুর্বেদিক
উপাদান আছে। জরায়ু, স্তন ও মূত্রগ্রন্থিসহ বিভিন্ন স্থানে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি
কমানোর সঙ্গে এই তিন উপাদানের জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেয়,
কোলস্টেরল কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
চোখের যত্ন
চোখের যত্ন নিতে শসা খেলে সৌন্দর্যচর্চার অংশ হিসেবে অনেকে শসা গোল করে কেটে
চোখের পাতায় বসিয়ে রাখেন। চোখের প্রদাহপ্রতিরোধক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকায়
ছানি পড়া ঠেকাতেও এটি কাজ করে। চোখের জ্যোতি বাড়ানোর জন্য শসা খাওয়ার মধ্যে অনেক
গুণাবলি আছে, যা আপনার চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
ফাইবার সমৃদ্ধ
শসা ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা পেটের মধ্যে অবশিষ্ট খাবার সাথে মিশে যায় এবং পাচনে
সাহায্য করে।
দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর
নিয়মিত শসা খেলে কোষ্ঠের কাঠিন্য দূর হয়। শসাতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে যা
হাইড্রেশন বাড়ায়। নিয়মিত শসা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকা যায়। তাছাড়া
শসায় রয়েছে ফাইবার, যা হজমের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
চুল ও নখ সতেজ করা
শসায় সিলিকা থাকার কারণে চুল ও নখ সতেজ ও শক্তিশালী হয়। শসার মধ্যে যে খনিজ
সিলিকা থাকে তা আমাদের চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে।
মাথাব্যথা কমায় শসা
মাথা ব্যথা দূর করতে শসার গুরুত্ব অনেক। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক স্লাইস শসা খেয়ে
নিলে রাতে ঘুম ভালো হয়। ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর মাথা হালকা লাগে। শসায় থাকা প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন বি ও সুগারের ফলে এটি ঘটে।
ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ
শসা একটি মজাদার সবজি, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। শসায় ভিটামিন এ, সি ও
ফলিক এসিড রয়েছে। এটি আমাদের হাড়, চুল, নখ, মাংস ও চোখের স্বাস্থ্যকে উন্নত
করে। শসা পাকা, ভাজা, বয়স্ত অথবা রোস্ট করে খাওয়া যায়। এটি হালুয়া, সুপ, সবজি
চাটনি, কেক এবং বিভিন্ন পানীয় পদার্থে ব্যবহার করা হয়।
ওজন কমাতে শসা
শসা প্রায় শতকরা ৯৫% পানি ধারণ করে, যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শসায়
উচ্চমাত্রায় পানি ও নিম্নমাত্রার ক্যালরিযুক্ত উপাদান রয়েছে। ফলে যাঁরা দেহের ওজন
কমাতে চান, তাঁদের জন্য শসা আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করবে। যাঁরা ওজন কমাতে চান,
তাঁরা স্যুপ ও সালাদে বেশি বেশি শসা ব্যবহার করবেন।
শসা খেলে পেট ভরে কিন্তু ওজন বাড়ে না। দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের সময় বেশি
করে শসা খান। এতে পেটও ভরবে এবং ওজনও কমবে না। শসায় উচ্চমাত্রায় পানি ও
নিম্নমাত্রার ক্যালরিযুক্ত উপাদান রয়েছে, তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।
প্রচুর পানি
শসা খেলে আপনি প্রায় ৯৫% পানি পূরণ করতে পারেন, যা আপনার শরীরের হাইড্রেশন বজায়
রাখতে সাহায্য করে।
চোখের জ্যোতি বাড়ানো
চোখের জ্যোতি বাড়ানোর জন্য শসা খাওয়া উপকারী হতে পারে। শসা গোল করে কেটে চোখের
পাতায় বসিয়ে রাখলে চোখের ময়লা অপসারিত হয়। এতে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা যেমন
অপসারিত হয়, তেমনি চোখের জ্যোতি বাড়াতেও কাজ করে। চুল ও নখ সতেজ করে শসার মধ্যে
যে খনিজ সিলিকা থাকে তা আমাদের চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে।
হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা
শসাতে আছে ফসফরাস যা হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী মূল পুষ্টি উপাদান। শসাতে প্রায় চার
শতাংশ ফসফরাস থাকে যা প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রয়োজন। ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিদিনের
খাবার তালিকায় শসা রাখুন।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
শসা পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফাইবার থাকার কারণে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
সাহায্য করে। শসা একটি স্বাস্থ্যকর ফল, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে
পারে। শসায় নিম্নলিখিত উপকারিতা পাওয়া যায়ঃশসা ফাইবারে অমিলিত এবং পানির পরিমাণ
বাড়ায়, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
শসাতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
করে।হৃদযন্ত্রের সুস্থতা
শসাতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন কে। এই তিনটি উপাদান হৃদযন্ত্রের
সুস্থতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম ও পটাসিয়াম গ্রহণের মাধ্যমে
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত শসা খাওয়া কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং শর্করা
নিয়ন্ত্রণে রাখে। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধা এবং রক্তে ক্যালসিয়াম প্রবাহের
মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
খালি পেটে শসা খাওয়ার উপকারিতা কি
খালি পেটে শসা খাওয়ার উপকারিতা কি? শসা খাওয়ার খালি পেটে অনেক উপকারিতা রয়েছে।
এটি একটি কম ক্যালোরি সবজি, যা ভিটামিন এবং খনিজগুলির একটি ভাল উৎস। শসা
হাইড্রেটিং এবং উচ্চ জলের উপাদান রয়েছে, যা এটিকে খালি পেটে খাওয়ার জন্য একটি
আদর্শ খাবার করে তোলে। এটি হজমেও সাহায্য করে এবং শরীর থেকে টক্সিন পরিষ্কার করতে
সাহায্য করে।
শসা ক্যালোরি কম এবং ফাইবার বেশি থাকে, যা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়।
খালি পেটে শসার পানি বা জুস, সালাড খেলে শরীর ভালোভাবে হাইড্রেটেড থাকে। এটি
শরীরকে ডিটক্স করার জন্য সেরা পানীয় হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতাও বাড়ায়। ওজন কমানো শসার রসের অনেকগুলি স্বাস্থ্য উপকারের মধ্যে একটি।
শসা খাওয়ার অপকারিতা
কিছু লোকের শসা খেতে অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা তাদের জন্য এটি অপকারিতা হতে
পারে। শসা খাওয়ার সঠিক পরিমাণে এবং সঠিক সময়ে খাওয়া উচিত, যাতে আপনি এর সকল
উপকারিতা পান।অতিরিক্ত শসা খাওয়ার কিছু অপকারিতা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে,
অতিরিক্ত পরিমাণে শসা খাওয়ার কারণে দেহে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়তে পারে।
এ সমস্যার নাম হল হাইপারক্যালেমিয়া। এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর পেটে গ্যাস, পেট
ব্যথা এবং কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই শসা মেপে খাওয়াটাই
বুদ্ধিমানের কাজ। এছাড়া অত্যধিক শসা খেলে প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যায় এতে দেহে
জলের ঘাটতি হয়।
রাতে শুধু শসা খেলে কি হয়
রাতে শুধু শসা খেলে কি হয়? রাতে শশা খেলে হজমশক্তি খারাপ হতে পারে কারণ এতে
কিউকারবিটাসিন নামক যৌগ থাকে । সবাই সহজে হজম করতে পারে না যার কারণে পরে বদহজমের
সমস্যা হয় । এছাড়া রাতে শশা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, ফোলাভাব এবং বদহজমের মতো
সমস্যাও হতে পারে । আপনি যদি এটি এড়াতে চান তবে দিনের বেলা শশা খান ।
শসা খেলে কি ওজন কমে
শসা খেলে কি ওজন কমে? শসা খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি একটি প্রাকৃতিক
টনিক হিসেবে কাজ করে, যা আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। শসা খেলে পেট
ভরে কিন্তু ওজন বাড়ে না, কারণ এটি ফ্যাট, চর্বি, ক্যালোরি, এবং কার্বোহাইড্রেট
কম থাকে। এছাড়াও, শসা উচ্চমাত্রায় পানি এবং ফাইবার রয়েছে, যা আপনার পেটের হাল
ফিরতে সাহায্য করতে পারে। তাই রোজ শসা খেতে চেষ্টা করুন।
লেখকের শেষ মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি শসা খাওয়ার ১৫টি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে
পেরেছেন। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, শসা খেতে সতর্ক থাকুন যেন আপনি কোনো
অতিরিক্ত স্যাল্ট বা স্পাইসি ব্যবহার না করেন। স্বাস্থ্যকর খাবার সিলেক্ট করার
জন্য সবসময় ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিন।
আমি নিয়মিত আমার সাইটে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আপলোড করে থাকি। এ রকম
গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমার সাইটটি ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি ভালো
লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url