লাল চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি

লাল চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? আমি মনে করি আপনি ঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমি আপনার জন্য চায়ের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


চা খাওয়ার নিয়ম কি, চিনি ছাড়া চা খাওয়ার উপকারিতা সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে, সারাদিনে কয়েকবার কিংবা রাতে ঘুমানোর আগেও অনেকে পান করেন চা।  আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যানসার ইন্সটিটিউটের একটি গবেষণা বলছে, যারা একেবারেই চা খান না তাদের তুলনায় প্রতিদিন দুই বা তার বেশি কাপ চা যারা খান, তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৯ থেকে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত কম। 

নিয়মিত চা খেলে কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। পানির পর সবচেয়ে জনপ্রিয়, সহজলভ্য, সস্তা পানীয়র নাম হলো চা। চায়ের মধ্যে এমন বহু উপকরণ রয়েছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। চলুন এবার মূল বিষয়ে আসা যাক। প্রথমে লাল চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

লাল চা খাওয়ার উপকারিতা কি

দিনের শুরুতে এক কাপ চা না পেলে কেমন যেন হাঁপিয়ে ওঠে শরীরটটা। তাই না? লাল চা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য জনপ্রিয়। এটি পুষ্টি ও স্বাদে সমৃদ্ধ, এবং দৈনন্দিন জীবনেও অনেক সুবিধা প্রদান করতে পারে। নিচে লাল চা খাওয়ার উপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ 

লাল চায় উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ফ্রি র‍্যাডিক্যালস থেকে কোষগুলোকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

লাল চায় থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমাতেও লাল চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

স্ট্রেস কমায় 

লাল চায়ে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা স্ট্রেস কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে মনকে চনমনে করে তুলতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক 

লাল চা বিপাকক্রিয়া বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। তাহলে আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন এই পানীয়।

মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

লাল চায়ে ক্যাফিনের পরিমাণ কম থাকায় এই পানীয়টি মস্তিষ্কে রক্তচলাচলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে স্ট্রেস কমে।

পাচনতন্ত্রের উন্নতি

লাল চা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং পেটের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

নিয়মিত লাল চা পান করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।

ক্যাফেইন উপকারিতা 

লাল চায় ক্যাফেইন থাকে, যা মানসিক সতেজতা বাড়ায় এবং ঘুমের সমস্যা কমাতে সহায়ক।

হাড়ের স্বাস্থ্য 

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, লাল চা হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে, যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। লাল চায়ে উপস্থিত ফাইটোকেমিকালস হাড়কে শক্ত করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি 

লাল চায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এখানেই শেষ নয়, এই পানীয়তে টেনিস নামে একটি উপাদান রয়েছে, যা নানা ধরনের ক্ষতিকর ভাইরাসের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে।


ক্যান্সার প্রতিরোধ করে 

একদম ঠিক শুনেছেন। প্রতিদিন কয়েক কাপ লাল চা আপনাকে এই মারণ রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। শুধু তাই নয়, লাল চা শরীরের যে কোনও অংশে ম্যালিগনেন্ট টিউমারের বৃদ্ধি আটকাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য 

লাল চা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে, যা শরীরকে সুস্থ রাখে।

হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় 

প্রতিদিন লাল চা খেলে হজম ক্ষমতা ভাল হতে শুরু করে। আসলে এতে রয়েছে টেনিস নামে একটি উপাদান, যা হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশপাশি গ্য়াস্ট্রিক এবং নানা ধরনের ইন্টেস্টিনাল রোগ সরাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ডায়াবেটিস কমাতে 

গবেষণায় দেখা গেছে, চা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। গবেষণা অনুসারে, চা ইনসুলিনের সক্রিয়তা বাড়ায় যা রক্তে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

মাথা ব্যাথা কমাতে 

এক কাপ চা ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি মাথা ব্যাথাও কমিয়ে দিতে পারে ম্যাজিকের মতো। আসলে এতে ক্যাফিন সামগ্রী রয়েছে, যা মাথা ব্যথার প্রভাবকে হ্রাস করতে পারে। লাল চা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও সিস্টেমের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়ক। এটি সাধারণ স্বাস্থ্য বজায় রাখতে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে, এবং শক্তি বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। তবে, পরিমিত পরিমাণে লাল চা পান করা উচিত এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ এড়ানো উচিত।

লাল চা খাওয়ার অপকারিতা কি

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় পানীয়ের তালিকায় একেবারে উপরের দিকে রয়েছে চায়ের নাম। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের এক কাপ চা না খেলে সকালের ঘুমই ভাঙতে চায় না। সকাল হোক কিংবা বিকেল, কারও কারও আবার কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর চা খাওয়ার জন্য মনটা আনচান করে। মনে রাখবেন, দিনে ২ থেকে ৩ কাপের বেশি চা খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত মাত্রায় চা খেলে নিম্নলিখিত শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে –
  • অতিরিক্ত ক্যাফেইনঃ লাল চায় ক্যাফেইনের পরিমাণ বেশি থাকে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে মাথা ব্যথা, উদ্বেগ বা অনিদ্রা সৃষ্টি করতে পারে।
  • পেটের সমস্যাঃ আমাদের প্রত্যেকেরই শরীরের জন্য প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় খাবারের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকে। তার থেকে বেশি খেয়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে লাল চা অতিরিক্ত পান করলে পেটে গ্যাস বা অম্লতা তৈরি হতে পারে। তাই পেট খারাপ থেকে দূরে থাকতে চাইলে চা খাওয়ার পরিমাণ সীমিত করতে হবে।
  • আয়রন শোষণে বাধাঃ চায়ে ট্যানিন নামে একটি যৌগ পাওয়া যায়। এটি শরীরের আয়রন গ্রহণ করার ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। লাল চা আয়রনের শোষণ প্রক্রিয়াকে বাধা দিতে পারে, বিশেষ করে যখন খাবারের সঙ্গে পান করা হয়।
  • দাঁতের ক্ষতিঃ লাল চা দাঁতের এনামেলের উপর পীতাভ দাগ ফেলে এবং দাঁতের রঙ পরিবর্তন করতে পারে। এতে দাঁত হলদে হয়ে যেতে পারে।
  • পানিশূন্যতাঃ অতিরিক্ত লাল চা পান করলে শরীরে পানিশূন্যতার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে, কারণ ক্যাফেইন একটি মৃদু মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
  • ক্ষুধা নষ্ট হয়ঃ খাবারের প্রতি আকর্ষণ নষ্ট হয়ে যাওয়াও কিন্তু একটি বড় ধরনের সমস্যা। আপনি যখন দিনের পর দিন অতিরিক্ত চা খেতে থাকবেন, তখন স্বাভাবিক খাবারের প্রতি আপনার রুচি বা আগ্রহ চলে যাবে। ফলে আপনার শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়। তাই অতিরিক্ত চা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারেঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে চা খেলে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফিনের প্রভাবে গর্ভপাতের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে এবং জন্মের সময় শিশুর ওজন কম হতে পারে।
  • অনিদ্রার জন্য দায়ীঃ অতিরিক্ত চা খাওয়ার কারণে ঠিকভাবে ঘুম আসে না। তাই দিনের বেলা চা কম খান। সন্ধ্যার পর চা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে অনিদ্রার সমস্যা কাছে ঘেঁষতে পারবে না।
  • হজমে সমস্যাঃ অতিরিক্ত চা খেলে হজমের সমস্যার পাশাপাশি হতে পারে বুকে ব্যথাও। হজমে সমস্যা ও অনিদ্রার কারণে আপনার মেজাজ একটুতেই খিটখিটে হয়ে যাবে।
  • উদ্বেগ এবং স্ট্রেস তৈরি করতে পারেঃ চায়ের মধ্যে ক্যাফিন থাকে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফিন গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। অতিরিক্ত চা খেলে উদ্বেগ, অস্বস্তি এবং স্ট্রেস বাড়তে পারে।
  • বমি বমি ভাবঃ চা এবং গ্রিন টিতে ক্যাফিন থাকে, যার কারণে অত্যধিক পরিমাণে চা খেলে বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে।
  • হাড়ের ঘনত্ব কমাতে পারেঃ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত লাল চা পান করলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে পারে, যা হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণের ঝুঁকিঃ যদি লাল চায় অতিরিক্ত চিনি বা অন্যান্য মিষ্টি উপাদান মেশানো হয়, তাহলে এটি অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি এবং শর্করা গ্রহণের কারণ হতে পারে, যা ওজন বৃদ্ধি এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
লাল চা সাধারণত স্বাস্থ্যকর হলেও এটি পরিমিত পরিমাণে পান করা উচিত। অতিরিক্ত লাল চা পান করলে এর কিছু ক্ষতিকর দিক শরীরের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সচেতনভাবে লাল চা পান করা উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি উপরে উল্লেখিত কোনো ঝুঁকিতে থাকেন বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে দুইবার চা খাওয়া যেতে পারে। এই অভ্যাস শরীরের জন্য উপকারীও। কিন্তু অতিরিক্ত চা খাওয়ার অভ্যাস আপনাকে অসুস্থ করে দিতে পারে।

চিনি ছাড়া লাল চা খাওয়ার উপকারিতা কি

চিনি ছাড়া লাল চা খাওয়ার উপকারিতা কি? চিনি ছাড়া লাল চা খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। লাল চা নিজেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, এবং যখন এটি চিনিমুক্তভাবে পান করা হয়, তখন এর উপকারিতা আরও বেড়ে যায়। চিনি ছাড়া চা খাওয়া স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়। 


সকালে ঘুম থেকে উঠে চিনি ছাড়া লাল চায়ের কাপে চুমুক দিলেই সারাদিনের এনার্জি পেয়ে যাবেন একবারেই। শরীর চাঙ্গা। কারণ, লাল চা-এ রয়েছে ক্যাফেইন, কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম, মিনারেল, ফ্লোরাইড, ম্যাঙ্গানিজ ও পলিফেনল। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ট্যানিন, গুয়ানিন, এক্সাথিন, পিউরিনে ভরপুর লাল চা। তবে বেশি পরিমাণে নয়। 

প্রতিদিন মাত্র ৩ কাপ লাল চা। আর তাতেই অনেক উপকার পাবেন এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে আমরা জেনেছি লাল চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি, এবার  চিনি ছাড়া লাল চা খাওয়ার উপকারিতা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
  • ক্যালোরি মুক্ত পানীয়ঃ চিনি ছাড়া লাল চা প্রায় ক্যালোরি মুক্ত, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এটি পান করে আপনি অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ থেকে বাঁচতে পারেন।
  • রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণঃ চিনি ছাড়া লাল চা রক্তে শর্করার স্তর স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়ঃ চিনি ছাড়া চা ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে চা খান।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ লাল চাতে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। যখন চা চিনি ছাড়া পান করা হয়, তখন এটি হৃদপিণ্ডের জন্য আরও উপকারী হয়।
  • ব্রেনের ক্ষমতা বাড়ায়ঃ চিনি ছাড়া চায়ে এমন অনেক গুন রয়েছে যা খেলে ব্রেনের ক্ষমতা বাড়ায়।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকারিতা বৃদ্ধিঃ চিনি ছাড়া লাল চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকারিতা বাড়ায়, যা শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • পাচনতন্ত্রের উন্নতিঃ চিনি ছাড়া লাল চা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং পেটের অস্বস্তি কমায়।
  • স্ট্রেস কমায়ঃ লাল চায়ে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা স্ট্রেস কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে মনকে চনমনে করে তুলতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
  • মানসিক সতেজতা বৃদ্ধিঃ লাল চা ক্যাফেইন সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে এবং মানসিক সতেজতা বৃদ্ধি করে। চিনি ছাড়া এটি পান করলে মস্তিষ্কে ক্যাফেইনের প্রভাব আরও কার্যকর হয়।
  • হজমশক্তি বাড়ায় লাল চাঃ লাল চা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং পেটের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
  • দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষাঃ চিনি ছাড়া লাল চা দাঁতের ক্ষয় রোধ করে এবং দাঁতের ফাঁকিতে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি কমায়, ফলে দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
  • ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোঃ চিনি ছাড়া চা রক্তে শর্করার স্তর স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
  • পানিশূন্যতার ঝুঁকি কমানোঃ চিনি ছাড়া লাল চা পান করলে শরীরের পানিশূন্যতার ঝুঁকি কম থাকে এবং শরীর সুস্থ থাকে।
চিনি ছাড়া লাল চা পান করা একটি স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যা দীর্ঘমেয়াদে আপনার শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ, রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণ, এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। তাই প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে চিনি ছাড়া লাল চা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, দিনে একবার লাল চা খেলে গ্লুকোমার মতো চোখের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে প্রায় ৭৫ শতাংশ। গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হলে চোখের ভেতরে চাপ বাড়তে শুরু করে। ফলে, অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে। লাল চায়ের সঙ্গে দৃষ্টিশক্তির ভালো-মন্দের সরাসরি যোগ আছে।

দুধ চা খেলে যে উপকার পাওয়া যায়

প্রচণ্ড মনখারাপ হোক কিংবা বিগড়ে যাওয়া মেজাজ, এক লহমায় ঠিক হয়ে যাবে চায়ের কাপে চুমুক দিলে।বন্ধুদের সঙ্গে দেদার আড্ডা হোক কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে নিভৃতে গল্পগুজব— চা ছা়ড়া জমে না। সারা দিন কয়েক কাপ চা খাওয়ার অভ্যাস অনেকেরই আছে। চা  এর  সঙ্গে দুধ মিশিয়ে দুধ চা তৈরি করে খেতে বরং বেশি ভালোলাগে। নিয়মিত দুধ চা খেতে থাকলে তা আপনার স্বাস্থ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। দুধ চা খেলে যে উপকার পাওয়া যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

শক্তি বৃদ্ধিঃ দুধ চায় ক্যাফেইনের পাশাপাশি দুধের পুষ্টিগুণ থাকে, যা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

ক্যালসিয়াম সরবরাহঃ দুধ চা হাড় এবং দাঁতের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস।

আরামদায়ক স্বাদঃ দুধ চা সাধারণত বেশি মসৃণ এবং ক্রিমি, যা অনেকের জন্য আরামদায়ক এবং মনকে শান্ত করার জন্য উপকারী হতে পারে।

স্ট্রেস কমাতে সাহায্যঃ এটি স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

যদি উপযুক্ত হয়ঃ যদি আপনি শক্তি বৃদ্ধি করতে চান, দুধের পুষ্টিগুণ উপভোগ করতে চান, বা বেশি মসৃণ এবং আরামদায়ক স্বাদের চা পছন্দ করেন, তবে দুধ চা আপনার জন্য ভালো বিকল্প।

দুধ চা খাওয়ার অপকারিতা

দুধ চা পান করার কিছু অপকারিতাও রয়েছে, বিশেষত যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে বা অস্বাস্থ্যকর উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। নিচে দুধ চা খাওয়ার কিছু অপকারিতা উল্লেখ করা হলোঃ

অতিরিক্ত ক্যালোরিঃ 

দুধ চা, বিশেষ করে যদি এতে চিনি বা অন্যান্য মিষ্টি উপাদান যোগ করা হয়, উচ্চ ক্যালোরি সরবরাহ করতে পারে। এটি অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা তৈরি করতে পারে।

পেটের সমস্যাঃ 

অনেকেরই দুধ হজম করার সমস্যা থাকে (ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স), যা দুধ চা পান করার পরে পেটে ফাঁপা, গ্যাস, এবং অম্লতা তৈরি করতে পারে। এই ধরনের চা টানা বহু বছর খেলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কারণ খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করার ক্ষমতা কমে যায়।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকারিতা কমানোঃ 

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে দুধ চায় দুধ মেশালে চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা শরীরের ফ্রি র‍্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।

অতিরিক্ত ক্যাফেইনঃ 

দুধ চায় চা পাতার কারণে ক্যাফেইন থাকে। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ করলে অনিদ্রা, মাথাব্যথা, উদ্বেগ, এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে।

দাঁতের সমস্যাঃ 

দুধ চায় অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হলে, এটি দাঁতের ক্ষয় এবং ক্যাভিটি তৈরির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। অনেকে ঘুম কাটানোর জন্য এই চা খান। কিন্তু জানেন কি এই চা স্ট্রেস বা উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা বাড়ায়। এতে মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি হয়।

রক্তচাপ বাড়াতে পারেঃ 

কিছু মানুষের জন্য দুধ চা রক্তচাপ বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যদি অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা চিনি যোগ করা হয়। এটি উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। খুব অদ্ভুত শোনাতে পারে, কিন্তু এই চা দিনের পর দিন খেলে ব্রণ ওঠার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কারণ শরীর অম্ল হয়ে যায়। তাতেই বাড়ে ব্রণর প্রবণতা।

ডিহাইড্রেশনঃ 

চায়ে থাকা ক্যাফেইন মৃদু মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করতে পারে, যা শরীর থেকে জল বের করে দেয় এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। দুধ চা বছরের পর বছর খেলে ঘুমের সমস্যাও হতে পারে। এতে অনিদ্রা জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়। তাই ঘুমের সমস্যা থাকলে এই চা খাবেন না।

হাড়ের ঘনত্ব কমাতে পারেঃ 

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত চা পান করলে এবং যদি এটি দুধ সহ হয়, তবে হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে পারে, যা হাড়ের ভঙ্গুরতা বাড়াতে পারে। দুধ চা কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আসলেও, এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে, বিশেষ করে যদি এটি অতিরিক্ত পরিমাণে পান করা হয় বা যদি এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি যোগ করা হয়। তাই, দুধ চা পরিমিত পরিমাণে এবং চিনিসহ অন্যান্য মিষ্টি উপাদান কমিয়ে পান করা উচিত, যাতে এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব কমানো যায়।

চা খাওয়ার নিয়ম কি

পানির পর সবচেয়ে জনপ্রিয়, সহজলভ্য, সস্তা পানীয়র নাম হলো চা। বিশ্বের দুই–তৃতীয়াংশ মানুষ চা পান করে থাকেন। চা খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চললে এর উপকারিতা ভালোভাবে পাওয়া যায় এবং ক্ষতিকর দিকগুলো এড়ানো সম্ভব হয়। চা পান করার জন্য উপযুক্ত সময় কখন? যেকোনো সময় কি চা পান করা যায়? চলুন জেনে নেওয়া যাক। চা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানতে আমাদের নিচের বিষয়গুলোর দিকে।
  • পরিমাণ বজায় রাখাঃ প্রতিদিন ২-৩ কাপ চা পান করাই ভালো। অতিরিক্ত চা পান করলে শরীরে ক্যাফেইনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা ক্ষতিকর হতে পারে।
  • খালি পেটে চা পান না করাঃ খালি পেটে চা পান করা এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি পেটে অম্লতা বা গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। খাবারের পরে বা হালকা স্ন্যাকসের সঙ্গে চা পান করা ভালো।
  • রাতে চা পান এড়ানোঃ চায়ে ক্যাফেইন থাকে যা রাতে অনিদ্রা সৃষ্টি করতে পারে। তাই রাতের দিকে চা পান না করাই ভালো, বিশেষ করে ঘুমানোর আগে।
  • চিনি এড়িয়ে চলুনঃ চায়ে চিনি বা অন্যান্য মিষ্টি উপাদান কম বা একেবারে ব্যবহার না করাই ভালো, কারণ অতিরিক্ত চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • গরম চা এড়ানোঃ অতিরিক্ত গরম চা পান করা খাদ্যনালী এবং গলায় ক্ষতি করতে পারে। চা একটু ঠাণ্ডা করে পান করা ভালো।
  • সঠিক সময় নির্বাচনঃ চা পান করার জন্য সকালে বা বিকেলের সময় সবচেয়ে উপযুক্ত। সকালের চা মস্তিষ্ককে সতেজ করে এবং বিকেলের চা কাজের পর বিশ্রাম দিতে সহায়ক।
  • সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে চাঃ চা খাওয়ার সময় এটি একটি সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে পান করুন। শুধু চা দিয়ে পেট ভরানো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
  • মশলাযুক্ত চাঃ আদা, এলাচ, দারুচিনি ইত্যাদি মশলা দিয়ে চা বানিয়ে পান করতে পারেন, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে এবং শরীরে তাপমাত্রা বজায় রাখে।
  • সঠিক চা নির্বাচনঃ বিভিন্ন ধরনের চা রয়েছে, যেমন লাল চা, গ্রিন টি, উলং চা ইত্যাদি। আপনার স্বাস্থ্যের উপযোগী চা নির্বাচন করে পান করুন।
  • খাবারের সঙ্গে চা পান এড়ানোঃ চা খাবারের সঙ্গে না পান করাই ভালো, কারণ এটি আয়রন শোষণে বাধা দিতে পারে। খাবারের অন্তত ৩০ মিনিট পরে চা পান করুন।

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি লাল চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। চা খাওয়ার নিয়ম মেনে চললে এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। তাই চা পান করার সময় উপরের নিয়মগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন, যাতে চায়ের সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে পারেন এবং এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাবগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন।

এতক্ষণ আমার আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত জানতে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন। কারণ আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে আপনার পরিচিত বন্ধু মহলে শেয়ার করে দিবেন।ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং সুন্দর থাকবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url