সকালে খালি পেটে কি খেলে ওজন বাড়ে
আপনারা অনেকেই জানেন না সকালে খালি পেটে কি খেলে ওজন বাড়ে। আপনারা হয়তো অনেক
খোঁজাখুঁজি করে এই বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাননি। আজ আমি এ বিষয়ে আলোচনা
করবো।
আমার এই আর্টিকেলটিতে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো সেগুলো হলো
১৫ দিনে মোটা হওয়ার উপায় কি? সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে মনোযোগ
সহকারে পড়ুন।
আজকাল আমরা সবাই আমাদের শারীরিক ওজন নিয়ে অনেক চিন্তিত থাকি।একদিকে অতিরিক্ত
ওজন আমাদের দেহের জন্য যেমন ক্ষতিকারক আরেক দিকে কম ওজনও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য
অনেকটাই ক্ষতিকারক।তাই আমাদের সকলেরই উচিত আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি
যত্নবান হওয়া।আমাদের ওজনের দিকে যত্নবান হতে হবে। আজ আমি সকালে খালি পেটে
কি খেলে ওজন বাড়ে, কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে, ১৫ দিনে মোটা হওয়ার উপায়
কি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
সকালে খালি পেটে কি খেলে ওজন বাড়ে
অতিরিক্ত ওজন যেমন আমাদের শরীরের জন্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে।
ঠিক তেমনি কম ওজন হওয়া শরীর এবং স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত খারাপ দিক। অতিরিক্ত
ওজন এবং কম ওজন এই দুটিই প্রতিটি ব্যক্তির জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে।
সবারই যে ওজন কমানো জরুরি তা কিন্তু নয়।
অনেকেই আছেন যাদের কাঙ্ক্ষিত ওজন পাওয়ার জন্য ওজন বাড়াতে হয়। সুষম খাবারের অভাবে
তারা কাঙ্ক্ষিত ওজনে পৌঁছাতে পারে না। উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্যকর
ওজন পাওয়ার জন্য তাই খাবারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। একজন পূর্ণ বয়স্ক
মানুষের দৈনিক ২০০০-২৫০০ খাদ্য ক্যালোরি প্রয়োজন হয়।
আরো পড়ুনঃ লাল চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি
তবে পরিশ্রমের মাত্রা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে এই সংখ্যাটি একটু বাড়াতে বা কমাতে
হয়। ওজন বাড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হল স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। অনেকে আবার
মোটা হওয়ার জন্য ঔষধ খেয়ে থাকে। ওজন বাড়াতে ওষুধের প্রয়োজন নেই। ডায়েট এবং
ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন বাড়ানো সম্ভব।
সকালে খালি পেটে কোন খাবার খেলে ওজন বাড়বে, সেটা নির্ভর করে খাবারের পরিমাণ এবং
ক্যালোরির ওপর। সাধারণত, সকালের নাস্তার জন্য বেশ কিছু স্বাস্থ্যকর অপশন রয়েছে
যেগুলো ওজন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক
সকালে খালি পেটে কি খেলে ওজন বাড়ে সে খাবার গুলো সম্পর্কে।
কিশমিশ
ওজন বাড়ানোর জন্য অন্যতম কার্যকরী খাবার হলো কিশমিশ। আঙুর ফল শুকিয়ে তৈরি করা হয়
কিশমিশ। এতে থাকে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, জিংক, লৌহ,
ফ্লোরাইড, পটাশিয়াম, ফোলাট, নিয়াসিন, কোলিন, ভিটামিন বি-৬ এবং রিবোফ্লাবিন
জাতীয় পুষ্টিগুণ। েএগুলো নিয়মিত খেলে ওজন বাড়ে।
ওটস
এটি ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখে। তবে অতিরিক্ত চিনি বা
ক্রীম যুক্ত করলে ক্যালোরি বেড়ে যেতে পারে। প্রাতঃরাশ বা স্ন্যাকস হিসাবে
খাওয়া যেতে পারে। ওটস নিয়মিত খেলে ওজন বাড়ে।
অ্যাভোকাডোস
স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ক্যালোরিতে উচ্চ, অ্যাভোকাডোগুলি খাবারের জন্য একটি
দুর্দান্ত সংযোজন বা তাদের বহুমুখীতার কারণে স্প্রেড হিসাবে।
সালাদ
ওজন কমানোর জন্য সালাদ পরিচিত হলেও উচ্চ ক্যালরিযুক্ত উপাদান সালাদে যোগ করে ওজন
বাড়াতে পারেন। এক্ষেত্রে বাদাম, মাছ, মাংস, ভিনেগার, ডিম সালাদে ব্যবহার করতে
পারেন।
কুইনোয়া
একটি পুষ্টিকর-ঘন শস্য যা কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফাইবার এবং বিভিন্ন ভিটামিন
এবং খনিজ সরবরাহ করে। এটা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
তাজা ফলমূল
সকালের নাশতায় ফলমূল রাখতে পারেন। ফল স্বাস্থ্যকর হলেও এমন কিছু ফল রয়েছে,
যেগুলোতে শর্করার মাত্রা বেশি। যেমন কলা, আপেল, আম,আনারস, পেঁপে এগুলো
স্বাস্থ্যকর এবং ক্যালোরি যুক্ত। তাই এফল গুলো খেলে ওজন বাড়ে।
গমের রুটি
সকালের নাস্তায় গমের রুটি আপনাকে যেমন শক্তি যোগাবে তেমনি ওজন বাড়াতে সাহায্য
করবে। নিয়মিত গমের রুটি খেলে ওজন বাড়ে।
খিচুড়ি
সুস্বাদু খাবার খিচুড়ি। এতে থাকা কার্বোহাইড্রেড ও প্রোটিন স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন
বাড়াতে কাজ করে। এতে থাকা ডালে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি, ফসফরাস, পটাসিয়াম,
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, খাদ্যআঁশ ও অ্যামাইনো এসিড। তাই ওজন বাড়াতে চাইলে
খিচুড়িও খেতে পারেন।
আলু
আমাদের বেশিরভাগ রান্নার সঙ্গেই যোগ করা হয় আলু। সেদ্ধ আলুতে পাবেন শর্করা,
তন্তু, খনিজ লবণ, ভিটামিন ও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। আপনি যদি প্রতিদিনের খাবারে আলু
যোগ করেন তবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানো সহজ হবে। প্রতিদিন দুটি করে সেদ্ধ আলু
খেতে পারেন।
মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার
সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে অর্থাৎ সকালের নাস্তায় মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার
খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। চিনিযুক্ত খাবারের তালিকায় রয়েছে; মিষ্টি, কেক,
বিস্কিট, ফলের জুস, চিনি দিয়ে তৈরি নাস্তা ইত্যাদি। ১ চা চামচ চিনিতে রয়েছে ১৬
শতাংশ ক্যালরি, যা দ্রুত ওজন বাড়াতে পারে।
ডিম
প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। ডিমে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান,
যা ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তাই, সকলের নাস্তায় একটি করে ডিম রাখা
উচিত। তবে ডিম খাওয়ার ফলে পেট ভরে যায়, যার ফলে অন্য কিছু আর খেতে ইচ্ছা করে
না। তাই, ঘন ঘন খাবার খেতে হবে।
দুধ
শরীরের ওজন বাড়াতে দুধ অনেক কার্যকরী। এতে ভিটামিন এবং প্রচুর ক্যালসিয়াম
রয়েছে যা শরীরের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে। তাই, সকালের
নাস্তায় অন্যান্য খাবারের সাথে এক গ্লাস দুধ রাখা উচিত।
শুকনো ফল
খেজুর, আখরোট, নারকেল, খোরমা খেলে আপনার ওজন দ্রুত বাড়বে। শুকনো কাজুবাদাম,
কিশমিশ, খেজুর খেলে আপনার মোটা হওয়ার ইচ্ছা খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণ হবে। নিয়মিত সকালে
নাশতার সময় ১০-১২টি কাজু, কিশমিশ বা খেজুর খাওয়া শুরু করুন। যদি দিনে কমপক্ষে
তিনবার খাওয়া যায়, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ওজন বাড়বে।
পিনাট বাটার
পিনাট বাটার উচ্চ ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার। তাই প্রতিদিন একবার করে পাউরুটির
সঙ্গে অথবা বিস্কুটে খানিকটা পিনাট বাটার মেখে খেয়ে ফেলুন। এতে কিন্তু খুব
তাড়াতাড়ি ওজন বাড়ে।
ভাত ও ভাতের মাড়
আমাদের বেশিরভাগেরই প্রতিদিনের খাবারে এক বেলা হলেও ভাত থাকে। ভাতে থাকে প্রচুর
কার্বো-হাইড্রেড। এটি আমাদের ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভাতের পাশাপাশি ভাতের মাড়ও ওজন বাড়াতে কাজ করে।
স্মুদি
ফলের জুস, দুধ, দই, আইসক্রিম একত্রে মিশিয়ে এক ধরণের পানীয় তৈরি হয় যার নাম
স্মুদি।অধিক পরিমাণে শর্করা থাকায় এটি দেহের ওজন বাড়ায়।
মাছ
প্রতিদিনের খাবারে মাছ রাখুন। এটি আপনাকে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে কার্যকরী
ভূমিকা রাখবে। এতে থাকে প্রচুর প্রোটিন। এছাড়াও থাকে প্রচুর আ্যমাইনো এসিড,
ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, পটিশিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ ও ‘বি’। এসব উপাদান
ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে।
গ্রিক দই
প্রোটিন ও প্রোবায়োটিক্স সমৃদ্ধ, তবে এটি যদি অতিরিক্ত চিনির সাথে খাওয়া হয়, তবে
ক্যালোরি বেড়ে যেতে পারে সাথে ওজনও বৃদ্ধি পাবে।
ফলের জুস
ওজন বাড়ানোর আরেকটি উপায় হলো ফলের জুস। ফলের জুস সাধারণ ভাবেই স্বাস্থ্যকর,
বাজারের জুসে অধিক পরিমাণে শর্করা থাকে যা ক্যালরি বাড়াতে সহায়ক।
তরমুজ
তরমুজ খেতে চাইলে পরিমাণটা দেড় শ-দুই শ গ্রামের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখুন, যদিও এতে
পর্যাপ্ত আঁশ এবং পানি আছে। প্রযৈাজনের তুলনায় বেশি তরমুজ খেলে ওজন বাড়ে।
আখরোট
রোগা থেকে মোটা হওয়ার জন্য আখরোট খাওয়া খুব ভালো অপশন। কারণ এর মধ্যে
আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এটি অত্যন্ত ভালো। যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
চর্বিহীন লাল মাংস
গরুর মাংস এবং শুয়োরের মাংস প্রোটিন, আয়রন এবং জিঙ্কের চমৎকার উৎস, যা পেশী
বৃদ্ধি এবং ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ড্রাগন ফল
ওজন বাড়ানোর আরেকটি উপায হলো ড্রাগন ফল খাওয়া। দেশে এখন মিষ্টি ড্রাগন ফলের চাষ
হয়। এ ফলেও ওজন বাড়ে।
বাদাম
প্রতিদিনের খাবারে এক মুঠো বাদাম রাখার চেষ্টা করবেন। বাদামে প্রচুর পরিমাণে
ক্যালরি, ফাইবার রয়েছে যা আপনার ওজন বাড়াবে। আজকাল বাজারে বিভিন্ন কম্পানির
বাদাম, চকলেটের তৈরি কুকিজ কিনতে পাওয়া যায়।
ওজন বাড়ানোর জন্য মূল বিষয় হল খাবারের পরিমাণ এবং খাদ্যের গুণমান ঠিক রাখা। তাই
সুস্থভাবে ওজন বাড়াতে চাইলে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত এবং শরীরচর্চা করা
উচিত।
কোন ভিটামিন খেলে ওজন বাড়ে
বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির ওজন স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ কম হলে
তাকে কম ওজনের অধিকারী বলা হয়। যাদের বয়স অনুযায়ী শরীরের ওজন অনেক কম, তাদের
চিন্তার শেষ থাকে না। ওজন কম হওয়ায় অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ
খাচ্ছেন।
কিন্তু ভিটামিন সরাসরি ওজন বাড়ানোর কাজ করে না, এর কিছু ভিটামিন ও খনিজ
শরীরের সঠিক কার্যক্রমে সাহায্য করতে পারে, যা পরোক্ষভাবে ওজন বাড়াতে সহায়ক হতে
পারে। এখানে কিছু ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে যা আপনার ওজন বাড়ানোর সহায়ক হতে পারেঃ
ভিটামিন এ
এটি সেলের বৃদ্ধি এবং পুনর্নিমাণে সহায়তা করে। যদিও এটি সরাসরি ওজন বৃদ্ধি না
করলেও, সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুধ, চিজ, কড লিভার অয়েল,
অ্যাপ্রিকট, যকৃত, ডিম, পেঁপে, গাজর, মিষ্টি, আলু, রঙিন শাকসবজি, সবুজ শাকসবজি,
আম, মিষ্টি কুমড়া খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ পাওয়া যায়।
ভিটামিন বি কমপ্লেক্স
বিশেষ করে ভিটামিন বি১২ এবং ভিটামিন বি৬ মেটাবলিজমকে সমর্থন করে এবং শক্তির
স্তর বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আপনার যদি ভিটামিন বি 1 বা থায়ামিনের
অভাব থাকে তবে এটি আপনার ওজন হ্রাস করতে পারে। তবে B12 বা B9 এর অভাব
রক্তাল্পতার কারণ হতে পারে, যা আপনার ক্ষুধা হারাতে পারে এবং ওজন হ্রাস করতে
পারে। ভিটামিন বি গ্রহণ আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটি
আপনাকে আরও ভাল স্বাস্থ্য দিতে পারে এবং আপনার পেশীর স্বন বাড়াতে পারে।
ভিটামিন সি
একটি ভিটামিন যা আপনার বিপাককে ধীর করার ক্ষমতা রাখে, ভিটামিন সি আপনাকে ওজন
বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটি আপনার শরীরকে রক্ষা করার জন্য একটি
প্রয়োজনীয় ভিটামিন, তবে আপনাকে কিছু ওজন বাড়াতেও সাহায্য করে। ধীরগতির
বিপাক থেকে আপনি কিছুটা ওজন বাড়াতে পারলেও ভিটামিন সি আপনাকে অতিরিক্ত
খাওয়া থেকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।
ভিটামিন ডি
এটি শরীরের ক্যালশিয়ামের শোষণ উন্নত করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি অভাব শরীরের মেটাবলিজমে প্রভাব ফেলতে পারে। এই ভিটামিন
আপনার ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে এবং আপনাকে ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করতে পারে।
এটি আপনার হাড় ও দাঁতকেও মজবুত করে। শুধুমাত্র ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে আপনার ওজন
বাড়বে না, এই ভিটামিনের অভাব স্বাস্থ্যকর ওজন বাড়াতে কঠিন করে তুলতে পারে।
লোহা
আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাতু, আয়রন আপনাকে
ওজন বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটি আপনার শরীরের কোষে অক্সিজেন স্থানান্তর
করতে ভূমিকা পালন করে। নিজে থেকে আয়রন গ্রহণ করলেও আপনার ওজন বাড়বে না, তবে
এটি স্বাস্থ্যকর ওজনকে সহজ করে তুলতে পারে।
ম্যাগনেসিয়াম
এটি মাংসপেশির কার্যক্রম ও শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। ম্যাগনেসিয়াম এর অভাব
শরীরের ওজন বাড়ানোর প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
জিঙ্ক
এটি ক্ষুধা বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এর অভাব শরীরের ওজন
বৃদ্ধির প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে পারে।
যদিও এই ভিটামিন ও খনিজগুলো শরীরের কার্যক্রমে সহায়তা করে, সরাসরি ওজন বাড়ানোর
জন্য সুষম খাদ্য এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পুষ্টি,
পর্যাপ্ত ক্যালোরি গ্রহণ, এবং নিয়মিত ব্যায়াম ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
কোন সিরাপ খেলে ওজন বাড়ে
ওজন বাড়ানোর জন্য সিরাপ ব্যবহার করার আগে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপত্তা
নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশ কিছু সিরাপ এবং ওষুধ আছে যা ক্ষুধা বাড়ানোর
উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু তাদের ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
উচিত। কিছু পরিচিত সিরাপ যা ক্ষুধা বাড়াতে সহায়তা করতে পারেঃ
- অ্যাপেটাইট (Appetite) সিরাপঃ এই ধরনের সিরাপ ক্ষুধা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, এটি ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- মাল্টিভিটামিন সিরাপঃ কিছু মাল্টিভিটামিন সিরাপ যেমন ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের উপস্থিতি শরীরের মেটাবলিজম ও ক্ষুধার অনুভূতি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
- পেটাপাজম সিরাপঃ এই সিরাপটি সাধারণত ক্ষুধা কমে যাওয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এটি ক্ষুধা বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
- নির্দিষ্ট ডায়েটারি সিরাপঃ কিছু সিরাপ রয়েছে যা ক্যালোরি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে, তবে এগুলো ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হতে হবে যে এটি আপনার জন্য নিরাপদ।
সতর্কতাঃ
চিকিৎসকের পরামর্শ: সিরাপ বা অন্য কোন ওষুধ ব্যবহারের আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ
নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি আপনি অন্য কোন স্বাস্থ্য সমস্যা বা অ্যালার্জির শিকার
হন। কিছু সিরাপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যা শরীরের অন্যান্য অংশে প্রভাব
ফেলতে পারে।
ওজন বাড়ানোর জন্য প্রাকৃতিক উপায় যেমন স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম,
এবং পর্যাপ্ত ঘুম অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুত ওজন বৃদ্ধির চেষ্টা করার
পরিবর্তে ধীরে ধীরে সুষম খাদ্য গ্রহণ ও জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা বেশি কার্যকরী ও
নিরাপদ হতে পারে।
কোন ধরনের ব্যায়াম করলে ওজন বৃদ্ধি পায়
ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মাংসপেশী বৃদ্ধি এবং শরীরের
সুষম বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এখানে কিছু কার্যকর ব্যায়াম দেওয়া হলো যা
আপনার ওজন বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হতে পারেঃ
ওজন উত্তোলন (Weight Lifting)
- ডেডলিফটঃ পূর্ণ শরীরের মাংসপেশী কাজ করে, বিশেষ করে পিঠ ও লেগের মাংসপেশী।
- স্কোয়াটঃ লেগ, হিপ ও কোর পেশী শক্তিশালী করে।
- ব্যাংচ প্রেসঃ বুক, কাঁধ ও ট্রাইসেপসের জন্য।
মাল্টি-জয়েন্ট এক্সারসাইজ (Compound Exercises)
- পুল আপসঃ পিঠ ও বাইসেপসের জন্য।
- চিন আপসঃ পিঠ ও বাইসেপসের জন্য।
- লঞ্জেসঃ লেগের শক্তি বৃদ্ধির জন্য।
ডাম্বেল এক্সারসাইজ (Dumbbell Exercises)
- ডাম্বেল রোঃ পিঠের পেশী শক্তিশালী করতে।
- ডাম্বেল কোল্টঃ বাইসেপস বৃদ্ধি করতে।
- ডাম্বেল শোল্ডার প্রেসঃ কাঁধের পেশী উন্নত করতে।
বডিওয়েট এক্সারসাইজ (Bodyweight Exercises)
- পুশ আপসঃ বুক, কাঁধ এবং ট্রাইসেপসের জন্য।
- বডিওয়েট স্কোয়াটঃ লেগ ও হিপের জন্য।
- ডিপস ঃ ট্রাইসেপস ও কাঁধের জন্য।
অন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
- নিয়মিত ব্যায়ামঃ সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যায়াম করা সবচেয়ে ভালো।
- প্রতিরোধ এবং পুনরুদ্ধারঃ মাংসপেশীর সঠিক বৃদ্ধির জন্য প্রতিরোধ এবং পুনরুদ্ধারের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিন।
- সঠিক পুষ্টিঃ প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও স্বাস্থ্যকর চর্বির সঠিক মিশ্রণ নিশ্চিত করুন।
পুষ্টি ও বিশ্রাম
- উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাদ্যঃ মাংসপেশী তৈরি করতে সাহায্য করে।
- পর্যাপ্ত ঘুমঃ মাংসপেশী পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সমর্থন করে।
- ক্যালোরি বৃদ্ধিঃ খাদ্যে ক্যালোরির পরিমাণ বাড়ানো উচিত।
সুস্থ ও কার্যকরভাবে ওজন বৃদ্ধি করতে ব্যায়াম, পুষ্টি এবং বিশ্রামের সমন্বয়
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ব্যায়াম শুরু করার আগে একজন ফিটনেস বিশেষজ্ঞের
সাথে পরামর্শ করা ভালো। তবে, ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সুষম খাবার এবং নিয়মিত
ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১৫ দিনে মোটা হওয়ার উপায় কি
১৫ দিনে মোটা হওয়ার উপায় কি? ১৫ দিনে দ্রুত মোটা হওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে
পারে, কারণ স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বৃদ্ধি একটি ধীর প্রক্রিয়া। তবে, কিছু বিশেষ
পদক্ষেপ গ্রহণ করে আপনি এই সময়ের মধ্যে কিছুটা ওজন বাড়াতে পারেন। এখানে কয়েকটি
উপায় দেওয়া হলো:
খাবার এবং ক্যালোরি বাড়ানো
- উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার যেমন- আম, কলা, বাদাম, মাখান, তরমুজের বীজ, অ্যাভোকাডো, মিষ্টি আলু, স্যামন মাছ, চর্বিযুক্ত দুধ, পনির, নারকেল তেল ইত্যাদি খাদ্যে যোগ করুন।
- উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন- ডিম, চিকেন, মাছ, লেন্টিলস, ডাল, মাংস, পনির ইত্যাদি।
- ডিম প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি সরবরাহ করে।
- কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার ওটস, ব্রাউন রাইস, পুরো শস্যের রুটি, পাস্তা ইত্যাদি।
খাবারের পরিমাণ বাড়ানো
- দিনে ৫-৬ বার খাবার ছোট ছোট পোর্টশনে বেশি খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস যেমন বাদাম, শুকনো ফল, প্রোটিন বার ইত্যাদি।
উচ্চ ক্যালোরি পানীয়
- মিল্কশেক ও স্মুথি যুক্ত খাবার দুধ, ফলমূল, ওটস এবং মধু দিয়ে তৈরি স্মুথি ক্যালোরি বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
- আপনি ওয়েই প্রোটিন শেকও চেষ্টা করতে পারেন।
শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম
- ওজন উত্তোলন ব্যায়াম মাংসপেশী বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ডেডলিফট, স্কোয়াট, ব্যাংচ প্রেস ইত্যাদি।
- মাল্টি-জয়েন্ট এক্সারসাইজব্যায়াম যেমন- পুল আপস, লঞ্জেস, ডিপস ইত্যাদি।
- যোগব্যায়াম ও ব্যায়াম শরীরের শক্তি ও মাংসপেশী উন্নয়নে সহায়তা করে।
স্বাস্থ্যকর চর্বি
- অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল। এসব চর্বি ক্যালোরি বাড়াতে সহায়তা করে।
সঠিক ঘুম এবং বিশ্রাম
- পর্যাপ্ত ঘুম মাংসপেশী পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং শরীরকে পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
- শরীরের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে।
পুষ্টি পরামর্শ
- একটি পুষ্টি বিশেষজ্ঞ বা ডায়েটিশিয়ানের সাহায্য নিতে পারেন, যারা আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে খাদ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবেন।
সতর্কতা
- দ্রুত ওজন বৃদ্ধি কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, কোনো নতুন খাদ্য বা ওজন বৃদ্ধি পরিকল্পনা শুরু করার আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- খাবারের পরিমাণ ও ক্যালোরি বাড়ানোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত না করার চেষ্টা করুন, কারণ এটি শরীরের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এই পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে, আপনি ১৫ দিনের মধ্যে কিছুটা ওজন বাড়াতে সক্ষম হতে
পারেন। তবে মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বৃদ্ধি একটি ধীর প্রক্রিয়া এবং
দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল পেতে সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়ামের পরামর্শ দেওয়া হয়।
রাতে কি খেলে ওজন বাড়ে
বাড়তি ওজন যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর তেমনই স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজনও শরীরের
জন্য চিন্তার বিষয় বিষয়। রাতে যদি সঠিক খাবার বেছে না নেওয়া হয়, তাহলে তা
ওজন বাড়াতে পারে। যাদের বিএমআই ১৮ এর থেকে একটু কম তারা এরকম খাদ্য গ্রহণের
মাধ্যমে ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন।
তবে যাদের ওজন অনেক কম সেক্ষেত্রে অবশ্যই পেশাদার পুষ্টিবিদের কাছ থেকে
পরামর্শ নিতে হবে। তবে, রাতের খাবারের সময় কী খাচ্ছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
চিনি ও ফ্যাটে ভরা খাবার যেমন- কেক, পেস্ট্রি, বা চকলেট এই ধরনের খাবার রাতে খেলে
ওজন বাড়াতে পারে।
আপনি যদি বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খাবার যেমন- পিৎজা, পাস্তা এসব খাবার রাতে
খেলে শরীর সেগুলোকে অধিক পরিমাণে চর্বি হিসেবে সঞ্চয় করতে পারে। ভারি খাবার রাতে
বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়া হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং এটি ওজন বৃদ্ধির কারণ
হতে পারে।
কিন্তু যদি আপনি রাতের খাবার স্বাস্থ্যকর এবং ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খান, যেমন
সালাদ, গ্রিলড মাংস, বা লাইট স্যুপ, তাহলে তা আপনার ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা কমাতে
সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া, খাবার খাওয়ার সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। অতঃপর খাবার খাওয়ার
পর কিছু সময় ঘুমানোর আগে পেট সম্পূর্ণ হওয়া উচিত।
অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, কিছু অভ্যাস,
অস্বাস্থ্যকর খাবার বাড়তি ওজনের জন্য দায়ী। ওজন বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল,
ব্লাড প্রেশার থেকে শুরু করে নানা অসুখ জেঁকে বসে। তাই ওজন যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে
রাখা উচিত।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি সকালে খালি পেটে কি খেলে ওজন বাড়ে সে
সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমি মনে করি একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শে
খাদ্য-পরিকল্পনা মেনে চলা উচিত। কারণ তিনি দেহের সার্বিক চাহিদা হিসাব করে কী
খেতে হবে সে বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলতে পারবেন।
শক্তির জন্য কার্ব, পেশির জন্য প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি- এভাবে উপাদানগুলো
বাছাই করা জরুরি। আবার ভিটামিন ও খনিজের কথা ভোলা যাবে না। যে কারণে নানান ধরনের
ফল, পূর্ণ শষ্য, চর্বিহীন মাংস বাদাম ও বীজ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
এতক্ষণ আমার আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের
গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত জানতে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইট
ফলো করতে থাকুন। কারণ আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে
থাকি। আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে আপনার
পরিচিত বন্ধু মহলে শেয়ার করে দিবেন। আপনি ভালো থাকবেন, সুস্থ
থাকবেন এবং সুন্দর থাকবেন।
aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url