নবজাতক শিশুর যত্নে যে ১৮টি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন
নবজাতক শিশুর যত্নে যে ১৮টি বিষয় অবশ্যই জানা আপনার জন্য প্রয়োজন। আপনার জন্য
আজকে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
এখানে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন শীতে যেসব শিশুর জন্ম, তাদের যত্ন নেয়ার
উপায় কি নহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
একজন নবজাতক শিশুর বিষয়ে আপনি কী করছেন সে সম্পর্কে আপনার কোনও ধারণা নেই বলে
মনে হওয়া স্বাভাবিক। কিছু টিপস এর মাধ্যমে, আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনার
নবজাতক সর্বোত্তম যত্ন পায়, নবজাতকের যত্নের গুরুত্বের উপর জোর দেয়। নতুন
বাবা-মায়েদের জন্য নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়াটা চ্যালেঞ্জিংও বটে। আজ আমি নবজাতক শিশুর যত্নে যে ১৮টি বিষয়, শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম কি? শিশুর সু-স্বাস্থ্যের জন্য কি-কি খাওয়া প্রয়োজন এরকম অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
নবজাতক শিশুর যত্নে যে ১৮টি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন
পরিবারে যখন নতুন অতিথি আসে আমাদের খুশির সীমা থাকে না। সবাই প্রস্তুতি নিতে থাকে নতুন শিশুর আগমন উপলক্ষে। এতকিছুর মাঝেও থাকে হাজার রকমের চিন্তা। কীভাবে যত্ন নিব, কখন কী করবো, কী করলে ভাল হবে সহ হাজারো প্রশ্ন। চলুন আজকে জেনে নেওয়া যাক, নবজাতক শিশুর যত্ন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু
কথা।
প্রসবের সাথে সাথেই পরিস্কার শুকনা নরম কাপড় দিয়ে নবজাতককে মুছিয়ে,
আরেকটি শুকনো পরিষ্কার নরম কাপড়ে মুড়িয়ে মায়ের কোলে দিন। গর্ভফুল পড়ার অপেক্ষা না
করে নবজাতককে জন্মের সাথে সাথেই (১ ঘণ্টার মধ্যে) শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো শুরু
করুন।মায়ের দুধ ছাড়া নবজাতককে অন্য কোনো কিছুই (যেমন – মধু, পানি, চিনির পানি)
খাওয়াবেন না।
কারণ এগুলো নবজাতকের জন্য ক্ষতিকর। নবজাতককে গরম রাখুন ও জন্মের পর
৭২ ঘণ্টার আগে গোসল করাবেন না, কারণ গোসল করালে নবজাতকের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
নবজাতক স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে কিনা তা খেয়াল করুন। এছাড়াও
একজন নবজাতক শিশুর যত্নে যে ১৮টি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন তা নিম্নে আলোচনা
করা হলোঃ
শিশুকে খাওয়ানোর সময়
নতুন জন্ম মা হওয়া সময়ে শিশুকে খাওয়ানোর সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবজাতক
শিশুকে প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পরপরই খাওয়ানো উচিত। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে
আপনাকে ৮-১২ বার শিশুকে দুধ খাওয়াতে হতে পারে। নতুন জন্ম শিশুকে প্রথম ৬ মাস
পর্যন্ত শুধু মাত্র বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত, যা শিশুর বর্ধন এবং রোগপ্রতিরোধ
ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
অনেক সময় বাচ্চারা বিভিন্ন কারণে দুধ পায়না কিংবা খেতে পারেনা। সেক্ষেত্রে
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে শিশুকে ফর্মুলা দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে সঠিক সময়ে
খাওয়ানো উচিত। শিশুর পেট খালি থাকতে দেয়া যাবেনা, কারণ এটি সমস্যার কারণ হতে
পারে। আর যদি কেনা দুধ খাওয়ানোর ফলে শিশুর কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয় শিশুকে
ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
শিশুকে খাওয়ানোর সঠিক সময় ও পরিমাণ বয়স ভিত্তিক ভিত্তিক নির্দেশিকা অনুসরণ
করা গুরুত্বপূর্ণ। নিচে শিশুর বয়স অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ এবং সময় সম্পর্কে
কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছেঃ
- ০ থেকে ৪ মাসঃ বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতি ৮ থেকে ১০ বার অথবা চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে।
- ৪ থেকে ৬ মাসঃ বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতি ৬ থেকে ৮ বার অথবা চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে।
- ৬ থেকে ৮ মাসঃ বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতি ৪ থেকে ৬ বার অথবা চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে।
- ৮ থেকে ১০ মাসঃ বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতি ৩ থেকে ৪ বার অথবা চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে।
মায়ের জন্য এই সময়গুলি শিশুর সাথে সুখী এবং আরামদায়ক করার জন্য
গুরুত্বপূর্ণ। শিশুকে খাওয়ানোর সময়ে মা সঠিক অবস্থান নিতে যত্ন নেবেন, যাতে
উভয়ের জন্য সুখ এবং আরাম থাকে।
শিশুর কম ওজন
জন্মের পর নবজাতকের স্বাভাবিক ওজন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওজন যদি দেড় কেজিরও
কম হয়, তাহলে তাকে খুব কম ওজনের শিশু বা ভেরি লো বার্থ ওয়েট বেবি বলা হয়।
আবার ৭৫০ গ্রামের কম হলে সেই শিশুকে ওজনহীন শিশু বলা হয় চিকিৎসার ভাষায়। কম ওজন
নিয়ে জন্মানো ও স্বাভাবিক সময়ের পূর্বে
জন্মানো নবজাতকের বিশেষ যত্ন নিন , যেমন – ওজন কম হলে যত দ্রুত মায়ের
বুকের দুধ পান শুরু করানো যায় ততই মঙ্গল। দুধ টেনে খেতে না পারলে মায়ের দুধ
চেপে বের করে খাওয়াতে হবে, মায়ের বুকে রেখে গরম রাখতে হবে। শিশু বুকের দুধ পানে
অসমর্থ থাকে, তবে নলের সাহায্যে মায়ের দুধ
খাওয়াতে হবে, কিন্তু তোলা দুধ বা কেনা দুধ নয়। এতে ক্ষতির আশঙ্কা আরও
বেশি। এদের সংক্রমণ বেশি হয়, তাই শিশুর পরিচর্যাকারীর পরিচ্ছন্নতা জরুরি।
কেউ বাইরে থেকে এলে অবশ্যই পরিষ্কার হয়ে ধরবেন। ন্যূনতম ১২ মাস বয়স
পর্যন্ত এসব শিশুর বাড়তি ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও আয়রন দরকার হয়।
নিজের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা
নবজাতক শিশুর যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর সংস্পর্শে আসার আগে নিজের হাত
ভালোভাবে ধুয়ে নিন। নবজাতকের হাত সহজেই রোগজীবণু আক্রমণ করতে পারে। তাই আপনি
নিজের হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন অথবা হ্যান্ডওয়াশ বা ইনস্ট্যান্ট হ্যান্ড
স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। নতুন মা হিসাবে আপনি আপনার শিশুকে কোলে নিতে পারেন।
কিন্তু শিশুকে কোলে নেওয়ার আগে আপনি হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন। শিশুকে কোলে নেবার
আগে পরিবারের অন্যান্যদের হাত ধুয়ে নিতে বলুন।
শিশুর কতক্ষণ ঘুমানো প্রয়োজন
নতুন জন্মগ্রহণ করা শিশুর জন্য ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর জন্মের পর প্রথম
২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সাধারণভাবে ঘুমাতে হয়। এরপর শিশুর ঘুমের প্রয়োজন সময় কমে
যায় এবং সাধারণভাবে দিনে ১৬-১৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হয়। এটি শিশুর স্বাস্থ্য এবং
উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর রাতে ঘুমানো সহজ করার উপায় আছে। যেমন-
- একটি শান্ত এবং প্রশান্তিদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা।
- একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ শয়নকালের রুটিন স্থাপন করা।
- শিশুর ইঙ্গিতের প্রতি সাড়া দেওয়া ঘুমের মান উন্নত করতে অবদান রাখতে পারে।
- ধীরে ধীরে তাদের দীর্ঘ প্রসারিত ঘুমাতে সাহায্য করুন কারণ তারা বিকাশ অব্যাহত রাখে পারে।
বেবি বার্প বা শিশুকে ঢেঁকুর তোলানো
শিশুর ঢেঁকুর তোলা খাবার খাওয়া ও ঠিকমতো হজম করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি শিশুর
পেটে আটকে থাকা হাওয়া বের করার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন। শিশুদের প্রতিবার
খাওয়ানোর পর তাদের বিশেষ এক পদ্ধতিতে ঢেঁকুর তোলানো হয়। যাকে ইংরেজিতে “বেবি
বার্প” বলে। এটি শিশুর পেটে আটকে থাকা হাওয়া বের করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুনঃ গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও দৈনিক খাদ্য তালিকা
শিশুর পেটে আটকে থাকা হাওয়া বের করার জন্য শিশুকে আস্তে আস্তে আপনার বুকের কাছে
এক হাত দিয়ে ধরে রাখুন। তার চিবুক আপনার কাঁধে এলিয়ে দিন। আপনার অন্য হাত দিয়ে
খুব আস্তে আস্তে তার পিঠে টোকা দিন যতক্ষণ না পর্যন্ত শিশু ঢেঁকুর তুলছে।
শিশুর জিহ্বা পরিষ্কার রাখা
নতুন জন্মগ্রহণ করা শিশুর যত্নে খাওয়া থেকে শুরু করে গোসল, মালিশ, সব কিছুর
প্রতিই আমাদের যত্নশীল হতে হয়। শিশুর জিহ্বা পরিষ্কার করার জন্য নরম কাপড় ব্যবহার
করুন। এতে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবেনা। সপ্তাহে একদিন মুছে দিন আপনার ছোট্ট
সোনাবাবুর জিভ।
নবজাতকের নখ কাটা
নবজাতকের নখ কাটা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথা। এটি মায়ের জঠর থেকে নিয়ে আসা
গর্ভফুলের রক্ত বা অন্য কোন জীবাণু থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নিয়মিত যত্ন নেবেন এবং নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারেন। ছোট
শুিশুদের নখ খুব দ্রুত বড় হয়ে থাকে৷ আর নিজের নখের আঁচড়েই শিশুর ত্বকে লাগতে পারে
গভীর আঁচড়। নখ কাটতে বেবি নেইলকাটার বা কাঁচির মতো বেবি নেইল ক্লিপার ব্যবহার
করুন। বাচ্চাদের নখ সাধারণত নরমই থাকে তবে শক্ত মনে হলে গোসলের পরপরই নখ কাটুন৷
শিশুর চোখের যত্ন
শিশুর চোখের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর চোখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন
পুরো ঘুম নিন। শিশুর উপায়ে চোখের মাঝে পানি আসতে পারে যা চোখের স্বাস্থ্য উন্নত
করে। শিশুদের চোখের প্রায়ই ময়লা দেখা যায়। বাচ্চার চোখের ময়লা পরিষ্কার করতে
ভুলেও খালি হাত ব্যবহার করা যাবে না। কুসুম গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে নিন। এবার
হালকা করে চেপে পানি ঝরিয়ে বাচ্চার চোখ আলতোভাবে মুছে নিতে হবে। যদি শিশুর চোখে
কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তা সঙ্গে সঙ্গে একটি চক্ষু চিকিৎসকে দেখানো উচিত।
শিশুদের কান ও নাক পরিষ্কার রাখা
শিশুদের কান ও নাক পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কাজটি সহজ এবং
নিরাপদভাবে করা যেতে পারে। বাচ্চাদের কান ও নাক পরিষ্কার করার জন্য কটন বাডস
ব্যবহার করুন। বাচ্চা ঘুমিয়ে গেলে সতর্কতার সাথে কান ও নাক পরিষ্কার করুন। নাসাল
স্প্রে ব্যবহার করে শিশুর নাক পরিষ্কার করা সহজ এবং নিরাপদ।
এটি মিউকাসকে পাতলা করতে সাহায্য করবে, নাক বন্ধ ভাব দূর করবে এবং নাক পরিষ্কার
করবে। খেয়াল রাখুন কানের পর্দায় বা নাকের খুব বেশি ভেতরে যেন আঘাত না লাগে।
পরিষ্কার করার আগে কটন বাডসে হালকা অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন। কানের পর্দা ফেটে
যাওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হোন।
নবজাতকের মলত্যাগ
নব জন্ম শিশুর মলত্যাগ নিয়ে প্রত্যেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন থাকে। নবজাতকের মল নিয়ে
কিছু তথ্য আছে, যা আপনার উদ্বেগ নিরসনে সাহায্য করতে পারেঃ
- পায়খানা শুরু করার সময়ঃ শারীরিক অন্য সব দিক দিয়ে সুস্থ নবজাতকের প্রথম পায়খানা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে করা উচিত। প্রসাবের জন্য আটচল্লিশ ঘণ্টা দেখা যেতে পারে। তবে, অনেক সুস্থ বাচ্চা চব্বিশ ঘণ্টার কিছু পরেও মল ত্যাগ করতে পারে।
- পায়খানার রংঃ নবজাতকের পায়খানা অনেক রঙের হতে পারে। সাদা পায়খানা স্বাভাবিক হলেও অন্য রঙের পায়খানা হতে পারে, যেমন লাল বা কাল। সাদা পায়খানা যকৃতের খুব জটিল কয়েকটি রোগে (বিলিয়ারি এট্রেসিয়া, নিওনেটাল হেপাটাইটিস) হতে পারে, তাই অন্য রঙের পায়খানা দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- পায়খানা সংখ্যাঃ নবজাতকের পায়খানা অনেক সময় ধরে পানির মত হয়ে যাওয়ার কথা। এটা স্বাভাবিক এবং অযথা চিন্তা না করে সাধারণত বেশি বেশি পায়খানা করতে পারে। মায়ের করনীয় হচ্ছে, একবারে সময় নিয়ে একদিকের স্তনের দুধ পুরোটা খাওয়াতে হবে, তাহলেই পায়খানা ঘন হয়ে যাওয়ার কথা।
মালিশ করা
বিশেষজ্ঞ দ্বারা নির্দেশিত করা সামগ্রী দিয়ে শিশুর মালিশ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ
প্রথা। এটি শিশুর শারীরিক এবং মানসিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শিশুটি একটি
শান্ত এবং নির্ভরযোগ্য জায়গায় মালিশ করা উচিত। এটি সাধারণভাবে একটি প্রাসাদ,
বাথরুম বা শিশুর ঘুমানোর জায়গা হতে পারে। মালিশ করার আগে আপনার হাতের তাপমাত্রা
পরীক্ষা করুন।
আপনার হাত শিশুর ত্বকের সাথে ম্যাসেজে উপযুক্ত তাপমাত্রা থাকতে হবে। শিশুর
শারীরিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্থিতির জন্য উপযুক্ত তেল বা ক্রিম ব্যবহার করে
ম্যাসেজ করুন। এতে শিশুর শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন ভালো হয় এবং আরাম অনুভব করে।
এতে শিশুদের ঘুমেও ভালো প্রভাব পড়ে। মালিশ করার সময় শিশুর সুস্থতা এবং সুখের
জন্য সতর্ক থাকুন। যদি আপনি কোনও সন্দেহ অনুভব করেন, তবে একটি চিকিৎসকের পরামর্শ
নিন।
সূর্যের সংস্পর্শে আনা
সূর্যের সংস্পর্শে আনা একটি সুস্থ প্রথম প্রাকৃতিক উপায় যা আপনার শিশুর চর্ম
স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। সূর্যের আলো আপনার শিশুর ত্বকে ভিটামিন ডি প্রদান করে, যা
ত্বকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। সূর্যের সংস্পর্শে আনা সময়ে সুর্যের আলো সবচেয়ে
শক্তিশালী থাকে, যা আপনার শিশুর ত্বকে সুস্থ করতে সাহায্য করে। এটি শিশুদের
হাড়ের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। আর এতে আছে ক্যালসিয়াম, যা শিশুদের হাড় গঠনে
সহায়তা করে।
গোসলের সময়
নবজাতককে গোসল করানোর কাজটি খুবই সাবধানতার সাথে করতে হয়। কেননা শিশু যদি নড়াচড়া
করে তাহলে কানে কিংবা চোখে পানি অথবা সাবান চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নবজাতককে
গোসলের পূর্বে প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। সকালে গোসল করা উচিত,
যাতে শিশুর দেহের প্রথম প্রদূষণ দূর হয়।
শিশুর দেহের সাথে প্রদূষণ দূর করতে প্রতিদিন গোসল করা উচিত। শীতকালে গোসল করা
উচিত, যাতে শিশু ঠান্ডা না পায়। গোসলের জন্য পানির তাপমাত্রা সহনীয় হতে হবে।
শিশুর স্কিন সান্নিধ্যে পানির তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন। শীতকালে গোসলে শিশুর স্কিন
সেরে রাখতে সাবান এবং ক্রিম ব্যবহার করুন।
আলতো ভাবে শিশুর ত্বক পরিষ্কার করুন এবং গোসল শেষে নরম তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে নিন।
এরপর বেবি অয়েল কিংবা শিশুদের বিশেষ বডি লোশন হালকা মাস্যাজ করে নিন। চেষ্টা
করবেন দুপুর ১২টার মাঝেই বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ফেলতে। এছাড়া, শিশুর গোসলের সময়
নির্ধারণ করার জন্য আপনার শিশুর বয়স, আপনার সময়সূচি, এবং আপনার পরিবারের সময়সূচি
মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, শিশুর গোসল করার সময় তার সুস্থতা, ত্বকের ধরণ,
আবহাওয়া, এবং অন্যান্য পরিস্থিতি মনে রাখতে হবে। যদি কোনও সমস্যা অথবা
অস্বাস্থ্যকর অবস্থা দেখা দেয়, তা তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডায়পার পরানো
ডায়পার শিশুকে বেশি সময় পরানো সতর্কতা প্রয়োজন। শিশুরা যেহেতু দুধ বা ফর্মুলা
খেয়ে থাকে, তাই দিনে কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ টি ডায়পার চেঞ্জ করা লাগে। তাই খেয়াল করে
সময় মতো ডায়পারটি বদলে দিন। ভেজা কিংবা নোংরা ডায়পার শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর।
ডায়পার ভেজা থাকলে শিশুদের ঠান্ডা লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
এছাড়া অপরিষ্কার ডায়পার শিশুর ত্বকে র্যাশ কিংবা ফুসকুড়ির মতো সমস্যা তৈরি করতে
পারে। এই জন্য ডায়পার পরানোর পর পরিষ্কার করুন। ডায়পার বদলানোর সময় ভেজা কাপড়,
তুলার তৈরি বল অথবা বেবি ওয়াইপস (ভেজা টিস্যু) ব্যবহার করে পরিষ্কার করা যেতে
পারে।
ডায়পার যেন বেশি ভারী না হয়। এতে শিশুর অস্বস্তি হতে পারে। ডায়পার শিশুকে খুব
আঁটসাঁট করে পরানো উচিত নয়। এতে পায়ে ও কোমরের আশপাশে দাগ বসে যেতে পারে। ডায়পার
ব্যবহারের সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।
বেবি ওয়াইপস
শিশুর যত্নে বেবি ওয়াইপস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি ন্যাপি পরিবর্তন এবং
খাবারের পরে মুখ পরিস্কারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্র্যান্ড যেমন Pampers
এর সাদা ও সেন্সিটিভ ত্বকের জন্য বিশেষভাবে নরম ও বিষমুখ ওয়াইপস পাওয়া যায়।
এছাড়া, আপনি বাচ্চার জন্য অন্যান্য ব্র্যান্ডের ওয়াইপস সহজেই অনলাইনে কিনতে
পারেন।
আরো পড়ুনঃ ওজন কমানোর ১৫টি ঘরোয়া সহজ উপায়
আপনি যদি নতুন জন্ম শিশুর জন্য বেবি ওয়াইপস খুঁজছেন, তবে Water Wipes একটি ভাল
বিকল্প হতে পারে। এটি সম্পূর্ণ প্লাস্টিক মুক্ত এবং সেন্সিটিভ ত্বকের জন্য
উপযুক্ত। আপনি এছাড়া অল্ডি Mamia এর মূল্যবান ওয়াইপস ব্যবহার করতে পারেন। আপনি
যদি প্রাকৃতিক ও সেন্সিটিভ ত্বকের জন্য Huggies Pure Extra Care একটি ভাল বিকল্প
হতে পারে।
এটি অত্যন্ত নরম ও সেন্সিটিভ ত্বকের জন্য উপযুক্ত। আপনি যদি সংবেদনশীল ত্বকের
জন্য Pampers এর সেন্সিটিভ ওয়াইপস একটি ভাল বিকল্প হতে পারে। খেয়াল রাখবেন বেবি
ওয়াইপসের কারণে শিশুর কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না।
নবজাতকের পোশাক
নবজাতকের পোশাক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নবজাতক শিশুর পোশাক আরামদায়ক হওয়া খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে তার নরম ও কোমল শরীরটাকে উষ্ণতা দিতে এবং ভালোবাসায় সাজিয়ে
তুলতে দরকার। নবজাতকের পোশাকের কাপড়, রং, নকশা, জমিন নির্বাচনের কাজটি বেশ
গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর মনোবিকাশ, শারীরিক গঠন, ঋতু—এসবই ভাবনায় রাখতে হয়।
পোশাকের মূল উদ্দেশ্য দেহের তাপমাত্রার সমন্বয় করা এবং শীত ও গরম আবহাওয়া থেকে
রক্ষা করা। ধুলাবালি ও জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করতে পোশাক পরানো হয় বলেই
ভেবেচিন্তে শিশুর পোশাক বেছে নিতে হয়। শিশুদের পোশাকের ধরন হওয়া উচিত ঢিলেঢালা,
স্নিগ্ধ সুন্দর রঙের হয়। প্রতিটি শিশুর সৌন্দর্যপ্রীতি গড়ে ওঠে তার পোশাক ও
পরিচ্ছদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে।
কোমল ডিটারজেন্ট
শিশুদের জন্য সঠিক ডিটারজেন্ট বেছে নিতে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর জন্য নতুন কেনা
পোশাক এবং চাদর ব্যবহারের আগে সব সময় ধুয়ে নিন। জীবাণুমুক্ত করার জন্য মৃদু এবং
কোমল ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন। নবজাতকের আবহাওয়া থেকে শুরু করে অনেক কারণে
শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই না ঘাবড়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আশা করি, আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী ছিল। আর অবশ্যই খেয়াল রাখবেন,
শিশুর ব্যবহারের প্রোডাক্টটি যেন অথেনটিক হয়। শিশুর ত্বকের ভাল পরিষ্কার এবং
যত্নের জন্য আপনি নিম্নলিখিত ডিটারজেন্টগুলি ব্যবহার করতে পারেনঃ
- Seventh Generation Free & Clear Laundry Detergent: এটি সাবানের মতো যৌগ, যা খর পানিতে বেশি দ্রবণীয় এবং শিশুর ত্বকের জন্য কোমল।
- All Free Clear Detergent: এটি একটি অ্যালার্জি বা একজন সেন্সিটিভ শিশুর জন্য উপযুক্ত।
- Tide Free & Gentle Liquid Laundry Detergent: নতুন শিশুর জন্য এটি উপযুক্ত, যা স্টেইন দূর করতে সাহায্য করে।
- The Honest Company Baby Laundry: এটি কোমল ডিটারজেন্ট এবং ত্বক আলার্জি বা একজন সেন্সিটিভ শিশুর জন্য উপযুক্ত। এই ডিটারজেন্টগুলি শিশুর ত্বকের যত্ন নেওয়ার সাথে সাথে স্টেইন দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
টিকা এবং নিয়মিত চেক আপ
আপনার শিশুকে প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য টিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ
অংশ। আপনার শিশুর টিকাদানের সাথে আপ-টু-ডেট আছে তা নিশ্চিত করতে আপনার
স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর দেওয়া প্রস্তাবিত টিকাদানের সময়সূচী অনুসরণ করুন।
উপরন্তু, আপনার শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের নিরীক্ষণ, যেকোনো উদ্বেগ দূর করতে এবং
উপযুক্ত মাইলফলক ও যত্নের বিষয়ে নির্দেশনা পেতে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে নিয়মিত
চেক-আপ করা অপরিহার্য।
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম কি
শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর নিয়ম কি? নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ান, এমন নারীরা
প্রায়ই ঘাড়ে বা কোমরে ব্যথা অনুভব করেন। অথচ সঠিক নিয়মে ও সঠিক ভঙ্গিতে বুকের
দুধ খাওয়ানো হলে এ ধরনের সমস্যা হয় না। নবজাতকের বয়স ছয় মাস পর্যন্ত বুকের
দুধই একমাত্র ও আদর্শ খাবার।
ছয় মাস পর থেকে শিশুর পুষ্টিচাহিদা পূরণে, তথা স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য
বুকের দুধের পাশাপাশি পরিপূরক খাবার খাওয়ানো দরকার। তবে দুই বছর বয়স পর্যন্ত
বুকের দুধ ছাড়া অন্য কোনো দুধ বা কৌটার দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। মায়ের
দুধে সব ধরনের খাদ্য উপাদানই থাকে। এ ছাড়া জন্মের পরপর যে হলুদ রঙের শালদুধ
নিঃসরিত হয়, তা নবজাতকের রোগ প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে শিশুর বয়স
অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ এবং সময় সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছেঃ
- ০ থেকে ৪ মাসঃ বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতি ৮ থেকে ১০ বার অথবা চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে।
- ৪ থেকে ৬ মাসঃ বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতি ৬ থেকে ৮ বার অথবা চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে।
- ৬ থেকে ৮ মাসঃ বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতি ৪ থেকে ৬ বার অথবা চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে।
- ৮ থেকে ১০ মাসঃ বুকের দুধ অথবা ফর্মুলা খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতি ৩ থেকে ৪ বার অথবা চাহিদা অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে।
গরমে নবজাতক শিশুর ত্বকের যত্নে যা করবেন
কোমলমতি শিশুরা এই গরমে সবচেয়ে বেশি নাজুক হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ঘাম, র্যাশ, ঘামাচির
কারণে এ গরমের সময়ই বেশি কষ্ট সহ্য করে কোমলমতি শিশুরা। গরমে নবজাতক শিশুর যত্ন
নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে মা-বাবা অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে হবে।
‘হিটস্ট্রোক’ এটা বেশ খারাপ জিনিসই বলা যায় শিশুর ক্ষেত্রে।
অন্তর্নিহিত তাপমাত্রা যখন আরও বেড়ে যায়, তখন এর নেতিবাচক প্রভাব লিভার, কিডনি,
ফুসফুসে পড়ে। এসব অঙ্গের কার্যকারিতা কমে যেতে শুরু করে। কেউ কেউ অজ্ঞানও হয়ে
যেতে পারে। এটি একটি জটিল অবস্থা। ঋতুর পালা বদলের নিয়ম মেনে প্রকৃতিতে এসেছে
গ্রীষ্ম ঋতু। কনকনে শীত আর পরিবর্তিত আবহাওয়ায় বসন্তের পর হঠাৎ গরমের দাবদাহে
বড়দেরই মানিয়ে নেয়া বেশ কষ্টসাধ্য। তাই শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিতে গ্রীষ্মে
অভিভাবকদের কিছু বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন-
- গরমে পানি শূণ্যতার লক্ষণ শিশুর মধ্যে দেখা দিলে প্রথমেই শিশুদের প্রচুর পানি পান করাতে হবে। খাবার স্যালাইন খাইয়ে বা পানি বেশি আছে, এমন ফল দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
- বাইরে গরমে শিশুকে কম বের করতে হবে। রোদে যাওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজন হলে ছাতা ব্যবহার করতে হবে।
- যদি কোন শিশু রোদে থাকে তাকে দ্রুত ছায়ায় নিয়ে আসতে হবে। ফ্যানের নিচে আনতে হবে, শরীরের আঁটসাঁট কাপড় ঢিলে করে দিতে হবে। শরীরে ঘাম শুকানোর পর পানি দিয়ে গা মুছে দিতে হবে। তাতে ঘাম পরিষ্কার হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। শিশুকে ঠান্ডা করা, ছায়ায় নিয়ে আসা এবং পানি পান করানো দরকার।
- শিশুর গরম অবস্থায় চিনিজাতীয় খাবার না দেওয়াই ভালো। কারণ, চিনিতে শরীরে দ্রুততার সঙ্গে তাপ তৈরি হয়। এনার্জি তৈরি হয়।
- শিশুর গরম অবস্থায় জাঙ্ক ফুডও দেওয়া যাবে না। বেশি প্রোটিনজাতীয় খাবার না দেওয়াই ভালো। যেমন মাংসজাতীয় বা তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।
- শিশুর গরম অবস্থায় শসা বা পানিজাতীয় যেসব খাবার এনার্জি তৈরি করবে, সেসব খাবার দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- প্রতিদিন সকালে, বিকেল ও রাতে তিনবার পোশাক বদলে দিন। এতে ঘাম ও জীবাণু থেকে সুরক্ষিত থাকবে শিশুর ত্বক।
- শিশুর পোশাক হিসেবে সব সময় সুতি পাতলা কাপড়ের নরম পোশাক প্রাধান্য দিন।
- গরমের সময় শিশুকে কখনই বাসী খাবার খাওয়াবেন না। এ অভ্যাসে শিশুর ডায়রিয়া সহ পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সুস্থতা নিশ্চিতে চেষ্টা করুন শিশুকে টাটকা ও ঘরের খাবার খেতে দিতে।
- সব সময় হাতের কাছে সুতি রুমাল রাখুন। এতে ত্বকে জমে থাক ঘাম সহজেই মুছে নিতে পারবেন।
- সপ্তাহে দুইদিন চুল শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করুন।
- ২ বছরের নিচের বাচ্চারা মায়ের বুকের দুধ ঠিকমতো খাচ্ছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চাদের বাইরের তৈলাক্ত খাবারের বদলে তরমুজ, শসাজাতীয় ফল, বাড়িতে তৈরি হালকা খাবার খেতে দেওয়া দরকার।
শিশুর সু-স্বাস্থ্যের জন্য কি-কি খাওয়া প্রয়োজন
শিশুর সু-স্বাস্থ্যের জন্য কি-কি খাওয়া প্রয়োজন? শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য সঠিক
খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন মায়ের জন্য সুষম, স্বাস্থ্যকর ও
পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভের শিশুর উপযুক্ত গঠন ও
বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধে একটি সুষম খাবার
তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা
নিম্নলিখিতঃ
- ফল ও সবজি শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শিশুর সু-স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।
- দুধ, দই, পনির দুধ, পনির দই শিশুর ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন সরবরাহ করে।
- মাংস এবং মাছ শিশুর জন্য প্রোটিন এবং আমিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে।
- ওটমিল এবং পুষ্টিকর সিরিয়াল শিশুর জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে।
- ড্রাই ফ্রুট এবং নাটস শিশুর জন্য প্রোটিন, ফাইবার এবং ভিটামিন প্রচুর পরিমানে থাকে।
শীতে যেসব শিশুর জন্ম, তাদের যত্ন নেয়ার উপায় কি
শীতে যেসব শিশুর জন্ম, তাদের যত্ন নেয়ার উপায় কি? শীত আসছে। এ সময় শিশুকে
কীভাবে সুস্থ রাখা সম্ভব, কী করলে রোগব্যাধির আক্রমণ কম হবে তা সবারই জানা
দরকার। নবজাতকের শরীর অল্পতেই কাবু হয়ে পড়ে। শীত হলে তো কথাই নেই, বিশেষ করে
সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে।
শীতের পরিবর্তিত আবহাওয়ায় জন্ম নেয়া শিশুদের প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। শীতে
যেন সদ্য জন্ম নেয়া শিশুরা বেশি ক্ষতির শিকার না হয় তার জন্য মায়েদের
বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে সন্তানদের প্রতি। ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি-কাশি কোনোটাই
যেন আপনার শিশুকে স্পর্শ করতে না পারে তার জন্য মেনে চলুন বিশেষ কিছু টিপস।
- শিশুকে ঘরের বাইরে নেয়ার সময় ওর মাথা, গলা, কান শীতের পোশাকে ঢেকে তবেই বাইরে বের হন।
- ঠান্ডা পরিবেশে শীতের পোশাক পরিয়ে শিশুকে গরম রাখতে হবে।
- গোসল আর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ম্যাসাজ হয়ে গেলে শিশুকে প্রতিদিন ২০ মিনিটের জন্য সূর্যস্নানে অভ্যস্ত করে তুলুন।
- এই সময় শিশুর গোসল কোনোভাবেই বন্ধ করবেন না; বরং নিয়মিত হালকা গরম পানিতে শিশুকে নির্দিষ্ট সময়ে ৫ মিনিটের মধ্যে দ্রুত গোসল করান। নিয়মিত গোসল করাতে না চাইলে সপ্তাহে অন্তত তিন দিন গোসল করান। বাকি দিন কুসুম গরম পানিতে সুতির কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে নিন। এতে শরীরে কোনো ময়লা জমতে পারবে না শিশুর।
- শিশুর ঘরে যেন সূর্যের আলো পর্যাপ্ত থাকে সেদিকে লক্ষ রাখুন।
- শিশুকে গরম কাপড় পরানোর আগে অবশ্যই একটি সুতির জামা পরিয়ে নিন। শীতের পোশাকগুলো যেন মোলায়েম হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- শীতে শিশুকে হাতে দস্তানা এবং পায়ে অবশ্যই মোজা পরিয়ে রাখুন।
- শিশুকে সব সময় মায়ের কাছে রাখার চেষ্টা করতে হবে। নবজাতককে মায়ের বুকের ওপর রাখতে হবে।
- শীতকালে বাচ্চাকে দোলনায় বা আলাদা মশারির নিচে না রেখে মায়ের কোলঘেঁষে শোয়াতে হবে।
- বাচ্চার নাভি না শুকানো পর্যন্ত তাকে গোসল না করানোই ভালো। সপ্তাহে দুদিন গোসল করানোই যথেষ্ট।
- ডায়াপার ছয় ঘণ্টার বেশি কোনোভাবেই রাখা উচিত না। ডায়াপার থেকে র্যাশ হতে পারে, তাই আগে থেকে ভেসলিন বা জিংকসমৃদ্ধ ক্রিম লাগাতে হবে।
- শীতকালে নবজাতকের মাথা কামানো যাবে না। চুল মাথার তাপমাত্রা ধরে রাখে, চুল কামিয়ে দিলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক নবজাতক শিশুর যত্নে যে ১৮টি বিষয় সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত জানতে
পেরেছেন নিশ্চয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবজাতক শিশুর ঠান্ডা লাগা সমস্যা থেকে
শুরু করে শিশুর চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন শ্বাস নেয়া, ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া,
নাক দিয়ে পানি পড়া, কান চুলকানো, ডায়রিয়া, বমিসহ নানা সমস্যা দেখা
দেয়।
তাই এ সময় বিচলিত না হয়ে শিশুর সঠিক পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। একজন
নবজাতক মায়ের পাশাপাশি একজন পিতার অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ভালবাসা, যত্ন এবং
মনোযোগ সহ, আপনি পিতৃত্বের একটি সুন্দর যাত্রা শুরু করবেন এবং আপনার শিশুকে
একজন সুস্থ ও সুখী ব্যক্তিতে পরিণত হতে দেখবেন।
এতক্ষণ আমার আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের
গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত জানতে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইট ফলো
করতে থাকুন। কারণ আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করে আপনার পরিচিত
বন্ধু মহলে শেয়ার করে দিবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং সুন্দর
থাকবেন।
aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url