গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও দৈনিক খাদ্য তালিকা

গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও দৈনিক খাদ্য তালিকা সম্পর্কে আপসি জানতে চান? তাহরে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। আজ আমি গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও খাদ্য তালিকা নিয়ে আলোচনা করবো।


এছাড়াও আরো অনেক বিষয় যেমন গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস মায়ের স্বাস্থ্য এবং শিশুর উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, এই সময়ে প্রসূতি নারীর খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, অনেক ক্ষেত্রে ওজন কমে যাওয়া ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। তাই পরিবারের সদস্যদের হবু মায়ের সুস্বাস্থ্য এবং সুষম খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। 

বিশেষ করে পাঁচ মাস থেকে ভ্রূণের যথাযথ বৃদ্ধির জন্য মায়ের খাবারটা হওয়া চাই সুষম। সঙ্গে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং পর্যাপ্ত পানি যাতে থাকে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিশ্চিত করতে হবে। চলুন এবার মূর আলোচনায় আসা যাক গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও দৈনিক খাদ্য তালিকা। প্রথমে গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও পরে তার  দৈনিক খাদ্য তালিকা নিয়ে আলোচনা করবো।    

গর্ভবতী মায়ের যত্ন

মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বৃদ্ধিতে মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই গর্ভধারণের পর থেকেই গর্ভবতী মায়ের শারীরিক ও মানসিক বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। গর্ভকালীন সময়ে একজন মাকে যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয় তাই গর্ভকালীন সেবা। গর্ভধারণের সময় হতে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত সময়কালে মা ও শিশুর যত্নকে গর্ভকালীন যত্ন বা Antinatal Care বলে।

এই গর্ভকালীন যত্নের লক্ষ্য হলো মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং গর্ভজনিত কোনো জটিলতা দেখা দিলে তার প্রতিরোধ বা চিকিৎসা করা। এক কথায় মায়ের স্বাস্থ্যের কোনো অবনতি না করে সমাজকে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেয়া। একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ প্রসব এবং প্রসব পরবর্তী স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা গর্ভবতীর স্বামীসহ পরিবারের সকলের সমান দায়িত্ব।
গর্ভধারণের পরপরই একজন গর্ভবতী মহিলার গর্ভকালীন যত্নের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে অথবা ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। নিম্নে গর্ভবতী মায়ের যেসব স্বাস্থ্য পরিচর্যা মেনে চলতে হবে তা উল্লেখ করা হলোঃ
  • একজন গর্ভবতীকে সাধারণত ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিমাসে একবার, ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ১৫ দিনে একবার এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার এই গর্ভকালীন যত্নের জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হয়।
  • অতিরিক্ত আবেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, ভয়, রোগ-শোক ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তাই এসব এড়িয়ে ভালো চিন্তা করতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না।
  • চার থেকে আট মাসের মধ্যে অবশ্যই টিটেনাসের টিকা দিতে হবে।
  • গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস ও শেষ তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণে না যাওয়াই ভালো। উঁচু-নিচু পথ কিংবা ঝাঁকির আশঙ্কা আছে এমন যানবাহনে ভ্রমণ করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
  • গর্ভকালীন সময়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম করা শরীরের জন্য ভালো। গর্ভকালীন সময় ভারি কোনো কাজ করা যাবে না। যেমন: কাপড় ধোয়া, পানি ভর্তি কলস কাঁখে নেয়া, ভারি বালতি বা হাঁড়ি তোলা উচিত নয়।
  • গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক, সহজে পরিধানযোগ্য ও ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত।
  • হাসিখুশি থাকতে হবে এবং দিনে কমপক্ষে ২ ঘন্টা বিশ্রাম ও রাতে অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে ।
  • পরোক্ষ ধূমপান (সেকেন্ড-হ্যান্ড স্মোক) এড়িয়ে চলুন।
  • মায়ের খাবারে সমৃদ্ধ পুষ্টি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ভিটামিন এ ও সি সহ সমস্ত পুষ্টি মৌখিক যত্নের সময় মায়ের খাবারে থাকতে হবে।
  • ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার জন্য উৎসাহিত করা।
  • পানিশূন্যতা রোধে স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
  • স্বাস্থ্যকর ব্যায়াম করা মায়ের শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং শিশুর জন্মের সময় সাহায্য করে। সকাল-সন্ধ্যা ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।
  • গর্ভকালীন সময়ে কোনো ধরনের জটিলতা দেখা দিলে অতি দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

একজন গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাদ্য তালিকা

গর্ভধারণের পর থেকেই নিজের এবং গর্ভের সন্তানের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ যত্ন নিতে হবে। এই বিশেষ যত্নের অন্যতম প্রধান অংশ হলো খাদ্যাভ্যাস। গর্ভাবস্থায় সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মায়ের দৈনিক খাদ্য তালিকা প্রাথমিকভাবে তিন মাসের প্রথম দিনে সাধারণত বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। 


তবে এর পরের মাসগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি খাবার খেতে হবে। একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালীন সময়ে আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি গর্ভকালীন বাড়তি পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করে আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। 
গর্ভের শিশুর উপযুক্ত গঠন ও বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধে একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় খাবার তালিকা কেমন হওয়া দরকার? গর্ভকালীন সময়ে খাবার তালিকায় একই ধরনের খাবার বেশি রাখা ঠিক নয়। 

প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে সব ধরনের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সহজ হবে। পাশাপাশি কোনো খাবারের প্রতি একঘেয়েমিও আসবে না। গর্ভবতী মাকে একটি সুস্থ বাচ্চা জন্মদানের জন্য নিম্নলিখিত খাবার নিয়মিত ও পরিমানমত গ্রহণ করতে হবে।

ফলিক অ্যাসিড

গর্ভাবস্থায় প্রথম ১৩ সপ্তাহে ফলিক এসিড বা ফোলেট সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফলিক এসিড হলো এক ধরনের বি ভিটামিন। ফলিক অ্যাসিড শিশুর নিউরোটিক ডেভেলপমেন্টে গুরুত্বপূর্ণ। পালংশাক, মূলা, কাঁচা মরিচ, মটরশুঁটি, মসুর, আখরোট, পেস্তা বাদাম, ডিম, ছোলা, মুগ, ব্রকলি, সূর্যমুখী বীজ, চিয়া সিড, শতমূলী, কমলালেবু ইত্যাদি।

আয়রন

আমাদের দেশে মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি খুব বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। আয়রনের ঘাটতি হলে গর্ভের শিশুর শরীরে অক্সিজেন কম পৌঁছায়। ফলে শিশুর গঠন ও বৃদ্ধি বিঘ্নিত হয় এবং সময়ের আগেই শিশু জন্ম নেওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হতে পারে। হেমোগ্লোবিন উৎপাদনে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ। শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডাল, ডিম, ছোলা, খেজুর, কলা ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

ক্যালসিয়াম

হাড় এবং দাঁতের গড়নে ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ। দুধ, দই, পানির মাছ, সুজি, পানির সবুজ শাক এই উৎসে পাওয়া যায়।

ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শিশুর বুদ্ধি ও স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করলে শিশুর শৈশবে চোখের দৃষ্টিশক্তি, বুদ্ধি ও ভাষার বিকাশ খুব ভালোভাবে হয়। মাছ, তেল, বাদাম, চিৎলম এই অ্যাসিডের উৎস।

জিংক

শিশুর স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির জন্য জিংক গুরুত্বপূর্ণ। ডাল, ছোলা, ডিম, আমন্ড, কাজু, চিনা বাদাম, শিমের বিচি, মুরগির মাংস, গরুর মাংস,দুধ ইত্যাদি রাখতে হবে।

আঁশ জাতীয় খাবার

কোষ্ঠকাঠিন্য এই সময় খুবই কমন ব্যাপার। তাই এই সমস্যা কমাতে উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাদামি ভাত, ওটস, ছোলা, মুগ, সবুজ মটর, ভুট্টা, ব্রকলি, শাক-সবজি ইত্যাদি খাবেন।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

গর্ভবতী মায়ের প্রায় ৭০ থেকে ১০০ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন হয়। তাই প্রোটিনযুক্ত খাবার ডিম, মাংস, মাছ, ডাল ইত্যাদি খেতে হবে।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা

গর্ভকালীন প্রথম তিন মাসে সাধারণত বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাসে খাদ্য তালিকায় ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবাুর রাখতে হবে। এসব পুষ্টি উপাদান আপনার ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন জন্মগত ত্রূটি রোধে সহায়তা করে। 
তিন মাসের পরের মাসগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি খাবার খেতে হবে। এক্ষেত্রে একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালে আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভকালের বাড়তি পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করে আপনার ও গর্ভের শিশুর সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে। এই সময়ে আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম, স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার রাখা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

গর্ভবতী নারীর সারাদিনের খাবার তালিকা একটি নমুনা নিচে দেওয়া হয়েছে:
  • মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ
  • মওসুমি ফল ও শাক-সবজি
  • পর্যাপ্ত পানি
  • অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার না খাওয়া
  • আপনি এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারেন এবং সঙ্গে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং প্রোটিন সেবন করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় যে খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা

আমারা জানি একজন গর্ভবতী মাকে প্রচুর পরিমানে সুষম খাদ্য, পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া যেমন প্রয়োজন তেমনি কিছু খাবার আছে যেগুলো তার জন্য খাওয়া ঝুকিপূর্ণ। তাই যে সমস্ত খাবার গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবেনা তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

অ্যালকোহল 

গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল পান বিপজ্জনক। অ্যালকোহলের সংস্পর্শে আসা শিশুদের প্রতিবন্ধীতা বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হয় এবং তাদের স্নায়ুজনিত রোগ হতে পারে। এর ফলে তাদের শেখা ও আচরণগত গুরুতর সমস্যা হয়। তাই গর্ভাবস্থায় আপনার সন্তানের স্বার্থে অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান থেকে বিরত থাকুন।

ধূমপান

আপনার ছোট্ট শিশুকে জীবনের একটি সুস্থ সূচনা দেওয়ার জন্য তামাকের ধোঁয়া থেকে তাকে রক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিগারেট আপনার গর্ভে থাকা শিশুর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ সীমিত করে দিতে পারে। এটি তার কম ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ায়। যেসব শিশুর বাবা-মা ধূমপান করেন তাদেরও হাঁপানি এবং অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই তামাক ছাড়তে সাহায্যের জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে পরামর্শ করুন।

ক্যাফিন

গর্ভধারনের সূচনা থেকে পরবর্তী নয় মাস আপনাকে ক্যাফিন গ্রহণের দিকে নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রচুর পরিমাণে ক্যাফিন গ্রহণ গর্ভে ভ্রূণের বিকাশ ব্যাহত করে। তাই গর্ভবতী নারীদের প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফিন গ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। খাবার ও পানীয়তে ক্যাফিনের পরিমাণ পরিবর্তন হয়, তাই পুষ্টির মাত্রা সম্পর্কে পড়াশোনা করে ভালোভাবে জানতে ভুলবেন না।

সামুদ্রিক মাছ

গর্ভাবস্থার সময় সামুদ্রিক মাছ কম খেয়ে মিঠা পানির মাছ খাবেন৷ কারণ সামুদ্রিক মাছে পারদের পরিমাণ বেশি থাকায় ভ্রুণের মস্তিষ্কের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

ডিম

আধা সেদ্ধ ডিম বা মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে৷ ডিম ও মাংসে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া, লিস্টেরিয়া, ইত্যাদি থাকতে পারে যা গর্ভাবস্থার প্রাথমিক দিকে গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। ডিমের পোচ, হাফ বয়েলড ডিম বা আধসেদ্ধ মাছ, মাংস একদমই খাবেন না।

কিভাবে বুঝবেন গর্ভের সন্তান সুস্থ আছে

কিভাবে বুঝবেন গর্ভের সন্তান সুস্থ আছে? গর্ভের শিশু যদি সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে তাহলে সে মায়ের পেটে স্বাভাবিক নড়াচড়া করবে। যা অন্ত:স্বত্ত্বা অনুভব করতে পারেন। পেটের মধ্যে শিশুর নড়াচড়া শুরু হয় প্রসবের বহু আগ থেকেই। দশ সপ্তাহ বা বার সপ্তাহ থেকেই পেটের মধ্যে শিশু নড়াচড়া করতে থাকে। কিন্তু মা তখন সেটা বুঝতে পারেন না।


যিনি প্রথম বারের মতো মা হচ্ছেন তিনি এই নড়া চড়া বুঝতে পারেন তার গর্ভকালীন সময়ের ছ’মাসের পর। এর আগে তার মধ্যে একটা অনুভূতি কাজ করে। কিন্তু বাচ্চার নড়াচড়ার পরিমাণ গুনতে সক্ষম হয় না। যার আগের গর্ভধারনের অভিজ্ঞতা আছে, যিনি আগে মা হয়েছেন, অর্থাৎ যিনি দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো মা হচ্ছেন তিনি হয়তো আরো আগে পেটে বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে বা গুনতে পারেন।
তবে সেটাও অন্তত পাঁচমাস সময়ে। একটা বাচ্চা পেটে নড়াচড়া করছে কী করছে না, কতবার নড়াচড়া করছে এটা মা কখন থেকে গোনা শুরু করবে? ডাক্তারের মতে গর্ভধারণের ১৮-২০ সপ্তাহ পর হতে একজন মা, বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে পারেন। পেটে বাচ্চার নড়াচড়া বাচ্চার সুস্থতা সম্বন্ধে ধারণা দিয়ে থাকে। একটি সুস্থ বাচ্চা স্বাভাবিক পরিমাণ নড়াচড়া করে থাকে।

এই নড়াচড়ার সংখ্যা হলো ১২ ঘন্টায় ১০ বার। আপনি ১২ ঘন্টায় ১০ বার নড়াচড়া পেয়ে থাকলে আপনার বাচ্চা সুস্থ আছে মনে করতে পারবেন। আপনি যদি ১২ ঘন্টায় ১০ বার না পেয়ে ৬-৮ বার নড়াচড়া পেয়ে থাকেন তাহলে ভাবনে গর্ভে থাকার শিশুর লক্ষণ খারাপ হওয়ার প্রথম লক্ষণ হচ্ছে পেটে নড়া চড়া কমিয়ে দেওয়া। তথন অবশ্যই আপনি ডাক্তারের সাথে দেখা করবেন।

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা-চেকআপের সময়সূচি

গর্ভবতী মা এবং তার পেটের বাচ্চাকে সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই নিচে উল্লেখিত নিয়ম অনুযায়ী চেকআপ করতে হবে।
  • ১মঃ ৪র্থ মাসের মধ্যে (১৬ সপ্তাহ)
  • ২য়ঃ ৬ষ্ঠ মাসে (২৪ সপ্তাহ)
  • ৩য়ঃ ৯ম মাসে (৩৬ সপ্তাহ)
তবে সম্ভব হলে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র কাছে থাকলে প্রতি মাসে চেকআপ করানো উত্তম।

গর্ভকালীন চেকআপে যা যা করা হয়

একটি বাচ্চাকে সুস্থভাবে জন্ম দিতে হলে গর্ভবতী মায়ের নিম্নে লিখিত পরিক্ষা বা চেক আপ করা একান্ত প্রয়োজন। এর মাধ্যমে বুঝা যাবে মা এবং তার বাচ্চা কেমন আছে।
  • গর্ভকালীন ইতিহাস নেয়া হয়
  • শারীরিক পরীক্ষা করা
  • স্রাব পরীক্ষা
  • চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা
  • ওজন বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ
  • মাকে পরামর্শ প্রদান করা
  • স্বাস্থ্য শিক্ষা
  • গর্ভবতী মায়ের ব্লাড প্রেশার
 গর্ভবতী মায়ের বর্তমানে কোনো জটিলতা আছে কি-না তা যাচাই করে দেখা।
 যেমনঃ
  • যমজ গর্ভ
  • গর্ভস্থ শিশু ও প্ল্যাসেন্টা (গর্ভফুল) এর অবস্থান
  • উচ্চ রক্তচাপ
  • ডায়াবেটিস
  • জন্ডিস
  • হৃদরোগ

গর্ভাকালে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন

আপনি এবং আপনার শিশু, উভয়ের জন্য একটি সুস্থ গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করতে নিরাপদ পুষ্টি গ্রহণ অপরিহার্য। এই সময়ে ক্ষতিকর সংক্রমণ প্রতিরোধে নিচে কিছু সুপারিশ তুলে ধরছি যা গর্ভাবস্থায় খাবেন নাঃ
  • মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার
  • কাঁচা পাস্তুরিত দুধ
  • কাঁচা মাংস
  • পাস্তুরিত দুধ থেকে তৈরি নরম পনিররান্না না করা অঙ্কুরিত বীজ, শস্য ও মটরশুটি
  • রান্না না করা মাছ এবং সামুদ্রিক খাবার
  • যথাযথ রান্না না করা মাংসের খাবার, যেমন সসেজ ও কোল্ড কাট
  • স্মোকড ফিস বা পোড়া মাছ
  • কাঁচা ডিম।

গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন কয়টি

গর্ভবতী মায়ের শরীরে পাঁচটি বিপদ চিহ্ন দেখা যেতে পারে। এগুলো হলঃ
  • রক্তস্রাবঃ গর্ভবতী মায়ের যদি রক্তস্রাব দেখা দেয়, তা একটি বিপদ চিহ্ন হতে পারে।
  • ভীষণ জ্বরঃ অত্যন্ত জ্বর অথবা তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
  • মাথাব্যথা ও ঝাপসা দেখাঃ মাথা ব্যথা অথবা ঝাপসা দেখা যেতে পারে।
  • খিঁচুনিঃ গর্ভবতী মায়ের যদি খিঁচুনি অনুভব করা যায়, তা একটি বিপদ চিহ্ন হতে পারে।
  • বিলম্বিত প্রসবঃ যদি প্রসবে বিলম্ব হয়, তা গর্ভবতী মায়ের জন্য একটি বিপদ চিহ্ন হতে পারে।
গর্ভবর্তী মায়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। জেলা হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।

প্রসব-পূর্ব পরিকল্পনা

  • কোথায় প্রসব করাতে চান, বাড়িতে নাকি হাসপাতালে—এ বিষয়ে মনে মনে একটি পরিকল্পনা রাখা।
  • জরুরি অবস্থায় বাহনের ব্যবস্থা, যেমন—অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়ি অথবা রিকশা বা ভ্যানচালকের নম্বর রাখা উচিত এবং তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা উচিত, যাতে জরুরি অবস্থায় তিনি সহযোগিতা করতে পারেন।
  • প্রসবকালীন শেষ দিকে যেকোনো জরুরি অবস্থার জন্য কিছু খরচ হতে পারে। এ জন্য আগে থেকেই কিছু সঞ্চিত অর্থ কাছে রাখা ভালো।
  • গর্ভবতী মায়ের জটিলতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রক্তক্ষরণ। এ ধরনের জটিলতা যে কারো হতে পারে। এর পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে একই গ্রুপের এক বা একাধিক রক্তদাতার মোবাইল নম্বর সংগ্রহে থাকা উচিত।

গর্ভবতী মায়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা আছে কি-না 

একজন গর্ভবতী মা সুস্থ্য থাকার অনেকগুলো কারণ আমরা জানি কিন্তু কখন সে ঝুকির মধ্যে আছে সেটা আমরা নিচের অবস্থা দেখে বুঝতে পারবো।
  • গর্ভবতী মায়ের বয়স – ১৮ এর কম অথবা ৩৫ বছর এর বেশি
  • গর্ভবতী মায়ের উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চির কম হলে
  • গর্ভবতী মায়ের প্রথম গর্ভ বা ৪ এর অধিক সন্তান
  • পূর্ববর্তী প্রসবে–প্রসবপূর্ব রক্তক্ষরণ, প্রসবোত্তর রক্তক্ষরণ অথবা জরায়ুতে গর্ভফুল আটকে থাকার ইতিহাস
  • গর্ভবতী মায়ের দীর্ঘায়িত বা বাধাপ্রাপ্ত প্রসবের ইতিহাস
  • গর্ভবতী মায়ের সময়ের পূর্বে পানি ভেঙে যাওয়া
  • গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু বা নবজাতকের মৃত্যুর ইতিহাস
  • গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা
  • গর্ভবতী মায়ের যৌনবাহিত রোগ

গর্ভবতী মায়ের সাধারণ শারীরিক পরীক্ষা 

একজন গর্ভবতী মা কি অবস্থায় আছে সুস্থ না অসুস্থ তা জনার জন্য আপনাকে নিচে উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো করে দেখতে হবেঃ
  • রক্তচাপ কত, হাত-পা ফোলা আছে কি-না
  • গর্ভবতী মায়ের ওজন বাড়ছে কি-না
  • গর্ভবতী মায়ের রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা
  • গর্ভবতী মায়ের রক্তস্বল্পতা আছে কি-না
  • রক্তস্বল্পতা, রক্তের গ্রুপ ও প্রস্রাব পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করা হয়
  • পেট পরীক্ষার মাধ্যমে জরায়ুর উচ্চতা, বাচ্চার অবস্থান ও বাচ্চার হৃদস্পন্দন ঠিক আছে কি-না জানা

গর্ভবতী মায়ের টিকা বা ভ্যাকসিন

গর্ভবতী মায়ের টিকা বা ভ্যাকসিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থার আগে যদি পাঁচবার টিটেনাস টিকা নিয়ে থাকেন, তাহলে আর কোনো টিকার প্রয়োজন নেই। যদি এ রকম না হয়, তাহলে পাঁচ থেকে ছয় মাসে টিটেনাস টিকার প্রথম ডোজ নিতে হবে। এর এক মাস পর আরো একটি টিটেনাস টিকা নিতে হবে। পরবর্তী গর্ভধারণ পাঁচ বছরের মধ্যে হলে শুধু পঞ্চম মাসে একটি টিটেনাস টিকা দিলেই হবে। তবে দ্বিতীয় গর্ভধারণের বিরতি পাঁচ বছরের বেশি হলে পরবর্তী গর্ভধারণেও দুইবার টিকা নিতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

গর্ভবতী মায়ের জন্য সঠিক খাবার নিতে গুরুত্ব দিন। প্রোটিন, ফল, সবুজ শাক-সবজি, দুধ, ডাল, মাছ, মাংস এবং অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার নিন। ফলের মধ্যে আপেল, কেলা, কমলা, আম, পেয়ারা, পাপয়া, আমড়া এবং পাইনাপল অত্যন্ত উপকারী। গর্ভবতী মায়ের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আপনার স্বাস্থ্য এবং শিশুর উন্নতির জন্য ডাক্তার আপনাকে সঠিক যত্ন নেওয়ার সময় সুপারিশ করবেন। 

 প্রিয় পাঠক আশা করি আপনি গর্ভবতী মায়ের যত্ন ও দৈনিক খাদ্য তালিকা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমি নিয়মিত আমার সাইটে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল আপলোড করে থাকি। এ রকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমার সাইটটি ভিজিট করুন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url