মাঙ্কিপক্স কী, লক্ষণ কী? এমপক্স কীভাবে ছড়ায়?

মাঙ্কিপক্স কী, লক্ষণ কী? এমপক্স কীভাবে ছড়ায় আপনি কি জানতে চান? আজ আমি এই সম্পর্কে
 বিস্তারিত আলোচনা করবো।


এছাড়াও এমপক্স রোগে বেশি ঝুঁকিতে কারা আছে সে বিষয় ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

মাঙ্কিপক্স কী

মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাস জনিত প্রাণিজাত (Zoonotic) রোগ। মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক উৎস হলো বন্য প্রাণী, বিশেষ করে রডেন্টস (ইঁদুর জাতীয় প্রাণী) এবং প্রাইমেটস (বানর জাতীয় প্রাণী)। সংক্রমিত প্রাণীর সংস্পর্শে আসা, কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে মানুষ সংক্রমিত হতে পারে।

মাঙ্কিপক্স (Monkeypox) একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মূলত পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় এবং পরে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে। এটি প্রথম ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের একটি গবেষণাগারে বানরের মধ্যে শনাক্ত হয়েছিল, তাই এর নাম মাঙ্কিপক্স। ভাইরাসটি প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্ট অঞ্চলে পাওয়া যায়। মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি প্রধানত পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়, বিশেষ করে সংক্রমিত প্রাণীর রক্ত, শরীরের তরল, বা ত্বকের ক্ষত থেকে। এটি মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে, যা সাধারণত ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ, শ্বাসযন্ত্রের ফোঁটা, বা সংক্রমিত ব্যক্তির ত্বকের ক্ষতের মাধ্যমে ঘটে।

লক্ষণ ও উপসর্গ

সংক্রামিত ব্যক্তির শারীরিক তরল থেকে ফোমাইটস (স্পর্শযোগ্য পৃষ্ঠ) এর সংস্পর্শে ফোঁটা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। মাঙ্কিপক্সের লক্ষণগুলো সাধারণত সংক্রমণের ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে দেখা দেয়। প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
  • জ্বর
  • মাথাব্যথা,
  • পিঠে এবং পেশিতে ব্যথা,
  • ফোলা লসিকা গ্রন্থি,
  • ক্লান্তি,
  • ত্বকে ফুসকুড়ি, যা সাধারণত মুখ থেকে শুরু হয়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায়।.ফুসকুড়ি বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত পুঁজভর্তি ফোস্কা হয়ে যায়, যা পরে শুকিয়ে যায় এবং পড়ে যায়,
  • এই রোগটি সাধারণত ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে নিজে নিজেই সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর হতে পারে, বিশেষ করে শিশু এবং ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য।

রোগ নির্ণয়

মাঙ্কিপক্স নির্ণয়ের জন্য সাধারণত ক্লিনিক্যাল লক্ষণ এবং উপসর্গের উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক ধারণা করা হয়। নিশ্চিতকরণের জন্য ল্যাবরেটরি পরীক্ষা, যেমন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (PCR) পরীক্ষা এবং ভাইরাস আইসোলেশন করা হয়।

জটিলতা

মাঙ্কিপক্স সাধারণত স্বল্পমেয়াদী এবং নিজে নিজেই সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে, যেমন:
  • সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ
  • শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা
  • চোখের সংক্রমণ যা দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
  • সংক্রমিত প্রাণী এবং ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা
  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা
  • সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র এড়িয়ে চলা
  • সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ এড়ানো

কোন কোন দেশে এমপক্স ছড়িয়ে পড়েছে

কোন কোন দেশে এমপক্স ছড়িয়ে পড়েছে? গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মতো পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট সমৃদ্ধ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে এমপক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এখানে প্রথম এমপক্স শনাক্ত হয়েছিল এবং এখন পর্যন্ত ২৭ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয় আর শত শত মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়াও বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা, উগান্ডা, সুইডেন, কেনিয়া এবং পাকিস্তানে এমপক্স শনাক্ত হয়েছে। আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ এমপক্সে আক্রান্ত হয়েছে আর এতে ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এমপক্স ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

এমপক্স কীভাবে ছড়ায়

এমপক্স কীভাবে ছড়ায়? এমপক্স বিভিন্নভাবে ছড়াতে পারে। যা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
  • এমপক্স (আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত) একটি সংক্রামক রোগ যা প্রধানত ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকের স্পর্শ, যৌন সম্পর্ক, কাছাকাছি থেকে কথা বলা বা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।
  • বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির মতো কোনো প্রাণী যদি এতে সংক্রমিত হয় আর কেউ যদি ওই সংক্রমিত প্রাণীর সঙ্গে বেশি কাছাকাছি আসে তবে তিনিও আক্রান্ত হতে পারেন।
  • এছাড়াও, এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানাপত্র বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের সংস্পর্শেও ছড়াতে পারে।

এমপক্স রোগে বেশি ঝুঁকিতে কারা

কে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সে সম্পর্কে আরও বুঝতে বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা করছেন।
  • রোগের উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির স্বাস্থ্যকর্মী , ল্যাবরেটরি কর্মী এবং পরিবারের সদস্যসহ তার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা যে কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন।
  • এমপক্স রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে ছোট শিশুরা, বিশেষ করে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা।
  • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, যেমন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি বা যারা অন্য কোনো গুরুতর রোগে ভুগছেন, তারাও বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
  • যারা অতীতে স্মলপক্স টিকা পাননি, কারণ স্মলপক্স টিকা এমপক্সের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করতে পারে।
  • এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকলে বা তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র স্পর্শ করলে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

ভ্যাকসিন

স্মলপক্স ভ্যাকসিন মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করতে পারে। কিছু দেশে মাঙ্কিপক্সের জন্য নির্দিষ্ট ভ্যাকসিনও উন্নয়ন করা হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, যাদের প্রয়োজন তাদের সবার কাছে টিকা পৌঁছানোর মতো পর্যাপ্ত তহবিল নেই। যারা ঝুঁকিতে আছে বা সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকছে কেবল তারাই এটি পেতে পারে।

চিকিৎসা

মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে কিছু ভ্যাকসিন কার্যকর হতে পারে, যেমন স্মলপক্স ভ্যাকসিন, যা মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করতে পারে।

মাঙ্কিপক্সের জন্য নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণগুলো উপশম করার জন্য সহায়ক চিকিৎসা দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত না হলেও জরুরি ব্যবহারের জন্য এমপক্সের টিকাগুলো দেওয়ার জন্য সম্প্রতি ওষুধ প্রস্তুতকারকদের নির্দেশ দিয়েছে ডব্লিউএইচও।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আপনি  মাঙ্কিপক্স কী, লক্ষণ কী? এমপক্স কীভাবে ছড়ায়? সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তবে অবশ্যই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধবী ও পরিচিতদের মাঝে নিচের যেকোনো শেয়ার অপশন থেকে শেয়ার করে দিতে পারেন। আজকের আর্টিকেলটি সম্পর্কে যদি আপনার কোনো মতামত বা তথ্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিবেন। aminulit.com   এর সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url