ডায়াবেটিস কি? ডায়াবেটিস এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার এর উপায় জানতে চান? আজ আমি
আপনার জন্য ডায়াবেটিস সম্পর্কে আলোচনা করবো।
এখানে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয় সহ অনেক
গুরুত্ব জানতে আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস একটি কমন রোগ। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কোনো
বয়সের মানুষেরই এই রোগ হতে পারে। আমাদের দেশে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
অনেক বেশি। আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খেয়ে থাকি, আমাদের দেহ প্রথমে বেশিরভাগ
খাবারকে চিনিতে (গ্লুকোজ) ভেঙ্গে ফেলে এবং তারপর রক্তপ্রবাহে ছেড়ে দেয়।
বাংলাদেশে বসবাসরত ৮ জনের মধ্যে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক টাইপ ২ ডায়াবেটিস-এ ভোগে যাদের
মধ্যে বেশিরভাগ এ বিষয়ে অজ্ঞ। টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর রোগীদের রক্তে সুগার বা
গ্লুকোজের মাত্রা অতিরিক্ত থাকে। আজ আমি ডায়াবেটিস কি? ডায়াবেটিস এর কারণ, লক্ষণ
ও প্রতিকার সহ আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিস কি? ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যের অবস্থা, যা প্রভাবিত করে
কিভাবে শরীর খাদ্যকে শক্তিতে পরিণত করে এবং উচ্চ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা সৃষ্টি
করে। এটি ঘটে যখন শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করে না অথবা ইনসুলিনকে সঠিকভাবে
ব্যবহার করতে পারে না। ইনসুলিন আপনার রক্তে গ্লুকোজ তথা সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
করে থাকে এবং শক্তি উৎপাদন করে।
রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেলে এটা রক্তনালী, স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, হৃদপিন্ড,
লিভার, এবং কিডনি ড্যামেজ বা ক্ষতিগ্রস্থ করে। শরীরে ‘ইনসুলিন’ নামের
হরমোনের সমস্যার কারণে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগ দেখা দেয়। টাইপ-২ ডায়াবেটিস
দৃষ্টিশক্তি হারানো, এবং হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত বিভিন্ন মারাত্মক রোগের
ঝুঁকিও বাড়াতে পারে।
পরিমিত ডায়েট, নিয়মিত শরীরচর্চা, এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ গ্রহণ রক্তে
গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।
প্রয়োজন অনুযায়ী ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্রহণ, ডায়াবেটিস স্ব-ব্যবস্থাপনা শিক্ষা
এবং সহায়তা গ্রহণ করা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা আপনার জীবনে ডায়াবেটিসের প্রভাব
কমাতে সাহায্য করতে পারে। ডায়াবেটিস এর কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ কি
ডায়াবেটিস হলো এমন একটি অবস্থা যখন শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না
অথবা উৎপাদন ইনসুলিন যতটা কার্যকরভাবে ব্যবহার করা উচিত ততটা ব্যবহার করে না।
অপর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকলে বা কোষগুলি যখন ইনসুলিনের প্রতি সাড়া দেওয়া বন্ধ করে
দেয় এবং সময়ের সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, হৃদরোগ এবং কিডনি রোগের মতো গুরুতর
স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
ডায়াবেটিস হওয়ার মূল কারণ হলো শরীরে ইনসুলিন হরমোনের ঘাটতি, যা দেহের কোষে
গ্লুকোজ পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং ঘন ঘন
প্রস্রাব, তৃষ্ণা এবং দুর্বলতা দেখা দেয়। যেকোনো বয়সেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস হতে
পারে তবে শিশু বা তরুণদের তুলনায় মধ্য-বয়সী এবং তুলনামূলক বয়স্করা এ রোগের
ঝুঁকিতে বেশি থাকে।
উপরোক্ত কারণ ছাড়াও নিম্নের বিষয়গুলো ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ হিসেবে দেখা হয়ঃ
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম কারণ হল শারীরিকভাবে নিস্ক্রিয় থাকা অর্থাৎ
ব্যায়াম না করা। নিকট জনের কারো টাইপ ২ ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স
থাকলে প্রি-ডায়াবেটিস অর্থাৎ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি
কিন্তু ডায়াবেটিসের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম থাকলে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে
ডায়াবেটিস হতে পারে।
শারীরিক পরিশ্রম কম করলে।
পূর্বে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে।
আমাদের দৈনন্দিন পরিশ্রমের পর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়।
ন্যাশনাল স্লিপ ফাউণ্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ঘুম কম হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ
বেড়ে যায়।
তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ করলে।
খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত চিনি এবং কম ফাইবারযুক্ত খাবার থাকলে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে।
যদি আপনার পরিবারে কারো ডায়াবেটিস থাকে, তবে আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে
যাতে পারে।
গবেষণা বলছে, রাতে বেশি খাওয়া, খাবার পর পরই ঘুমাতে যাওয়ার ফলে রক্তে শর্করার
পরিমাণ বেড়ে যায়।
চাইনিজ খাবারে রয়েছে অনেক বেশি ফ্যাট, ক্যালরি, সোডিয়াম, কার্বোহাইড্রেট। যা
দেহের সুগারের মাত্রা অনেক বেশি বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে অরেঞ্জ, সুইট অ্যান্ড
সাওয়ার ধরণের খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর।
বয়স বাড়া ব্যক্তির ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অতিরিক্ত মিষ্টি, মধু, মসলা, তেল, কার্বোহাইড্রেট, এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি
ডায়াবেটিসের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ, অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরল মাত্রা, হৃদ রোগ, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
বাড়াতে পারে ।
ডায়াবেটিস প্রোর্গনোজিস কি
ডায়াবেটিস প্রোর্গনোজিস হলো একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তির রক্তে গ্লুকোজের
মাত্রা বেড়ে যায়, কিন্তু এখনও ডায়াবেটিস রোগের সময় পৌঁছেনি। এই অবস্থাটি
ডায়াবেটিসের প্রাক-স্থিতি বলা হয়। এটি সাধারণভাবে প্রকাশ পায় যখন শরীর ইনসুলিন
তৈরি করতে বন্ধ করে এবং গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা হয়। ডায়াবেটিস
প্রোর্গনোজিস সম্পর্কে আরও জানতে আপনি একজন চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে পারেন।
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ কি
ডায়াবেটিস একটি শারীরিক অবস্থা যা সারা জীবনের জন্যে বয়ে বেড়াতে হয় এবং সারা
বিশ্বে এর কারণে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়া যে কোন
ব্যক্তিই এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীর যখন রক্তের সব চিনিকে
(গ্লুকোজ) ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই ডায়াবেটিস হয়। এই জটিলতার কারণে মানুষের
হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হতে পারে।
নিম্নে ডায়াবেটিসের কিছু লক্ষণ তুলে হলোঃ
দুর্বল লাগা, ঘোর ঘোর ভাব আসা
ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো
হওয়া
মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
অনেক ওজন কমে যাওয়া
শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা চামড়ায় শুষ্ক,
খসখসে ও চুলকানি ভাব বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা
চোখে কম দেখতে শুরু করা।
অতিরিক্ত পিপাসা
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
অতিরিক্ত ক্ষুধা, ক্লান্তি
চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
স্পর্শ ও ব্যথার অনুভূতি কমে যাওয়া।
ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়
ডায়াবেটিস একটি মহামারি রোগ যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। এটি শরীরে ইনসুলিন
হরমোনের ঘাটতির ফলে গ্লুকোজ পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা
বেড়ে যায়। এর ফলে যে সমস্ত অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
তৃষ্ণা বেড়ে যায়
প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যায়
দুর্বলতা দেখা যায়
হৃদয়ন্ত্র
চোখের সমস্যা
কিডনি সমস্যা
অন্ধত্ব
স্নায়ু সিস্টেম এবং দাঁত
এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিচ্ছেদ
বিশ্বের উচ্চ-আয়ের দেশগুলিতে এটি কার্ডিওভাস্কুলার রোগ,
অতএব, রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের স্তরকে স্বাভাবিক
পরিসীমার মধ্যে রাখা খুবই জরুরি। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে, সঠিক
ডায়েট, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং সচেতনতা দ্বারা ডায়াবেটিসের এই সমস্ত
জটিলতাগুলি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার জন্য আপনি কি করবেন
ডায়াবেটিস মানব শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও প্রণালীকে প্রভাবিত করে তাই এর সময়মত
চিহ্নিতকরণ, নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড্রাগ মানে
ডায়াবেটিসের ঔষধের সঠিক এবং নিয়মিত গ্রহণ এবং ডিসিপ্লিন হল নিয়মিত ব্যায়াম
এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অনুশীলন। ডায়াবেটিস পূর্ণ নিরাময় সম্ভব
নয়।
তবে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে, যা সুস্থ ও
সক্রিয় জীবনযাপনে সহায়ক। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ
রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ওষুধ সেবন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এমন কিছু খাবার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাকঃ
স্বাস্থ্যকর খাবার সিদ্ধান্তঃ আপনার খাবারের সময়সূচি স্থির রাখতে
হবে। নিম্নের খাবারগুলো আপনি যদি নিয়মিত খান তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
সাহায্য করবে।
খেজুরঃখেজুরে থাকা উচ্চ ফাইবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
সহায়ক। ফাইবার শরীরে গ্লুকোজের শোষণ ধীর করে, যা রক্তে সুগারের মাত্রাকে স্থির
রাখতে সাহায্য করে। খেজুরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে, যা শরীরে
ক্ষতিকারক মুক্ত র্যাডিকেলগুলি নির্মূল করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নতি
সাধন করে।
দুধঃদুধের পুষ্টি উপাদানগুলি ডায়াবেটিস আক্রান্তদের
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী, কারণ এগুলি হাড়ের স্বাস্থ্য এবং শরীরের
সামগ্রিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারগুলি সকালের
নাস্তায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যা দিনের শুরুতে পুষ্টির একটি ভালো উৎস
সরবরাহ করে।
তিসিঃ তিসি বীজে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার,
ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড থাকে। এই বীজগুলি বিশেষ করে ডায়াবেটিস
ম্যানেজমেন্টে খুবই কার্যকর। তিসি বীজ খাওয়ার একটি ভালো উপায় হল বীজগুলিকে
গুঁড়া করে নিয়ে তা পানিতে মিশিয়ে পান করা। প্রতিদিন দুই গ্লাস পানিতে তিন চা
চামচ তিসি বীজের গুঁড়া মিশিয়ে সেবন করলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
তুলসীঃ গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে তুলসীপাতা
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য
করে। এ জন্য তুলসীপাতার রস খালি পেটে সেবন করলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যায়।
তুলসি পাতার রস আপনি চা এর সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
মটরশুঁটিঃ মটরশুঁটি যা ডায়াবেটিস ও
হৃদরোগের প্রতিরোধে একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। রক্তের গ্লুকোজ
মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনে সহায়তা করে।
মটরশুঁটি প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, এবং খনিজের ভালো উৎস হিসেবে কাজ করে, যা
স্বাস্থ্যকর ডায়েটের একটি অংশ হতে পারে। এই সবজির নিয়মিত সেবন শরীরের
মেটাবলিজম উন্নত করে, রক্তে চিনি ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে সুষম খাবারের গুরুত্ব
সুষম খাদ্য আমাদের শরীরকে পুষ্ট ও সক্রিয় রাখে এবং দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা
পূরণে সাহায্য করে। এটি শারীরিক কার্যকলাপের দক্ষতা বৃদ্ধি করে, অপুষ্টি ও
অতিরিক্ত ওজন এড়াতে সহায়ক। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সুষম খাদ্যের গুরুত্ব অনেক
বেশি। বৃদ্ধাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অল্পবয়সীদের মধ্যে
অকালমৃত্যু রোধে সহায়ক।
হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা সহ অন্যান্য নানা রোগের ঝুঁকি কমাতে সুষম
খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত কার্যকর। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সুষম খাদ্যের মানদণ্ড
অনুযায়ী তাদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ও ফ্যাটের সুষম
বন্টন অপরিহার্য। নিম্নে তা আলোচনা করা হলোঃ
কার্বোহাইড্রেটঃ মানব দেহের শক্তির মূল উৎস
হচ্ছে কার্বোহাইড্রেট। কার্বোহাইড্রেট দ্রুত এবং কার্যকরী শক্তি যোগান দেয় এবং
শরীরের কোষের গঠনে সহায়তা করে। তাই আমাদের সবজি, ফল এবং সম্পূর্ণ শস্য জাতীয়
খাবার গ্রহণ করা উচিত। বিশেষজ্ঞরা সকালের নাস্তায় ডায়াবেটিস রোগীদের
নিয়মিত ডিম, মাশরুম , টমেটোর মতো কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ
দিয়েছেন।
প্রোটিনঃ প্রোটিন মানব শরীরের কোষ গঠনে ও মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে। ডায়াবেটিস রোগীরা উদ্ভিদ এবং প্রাণীজ উৎস থেকে প্রোটিন গ্রহণ করতে
পারেন। ভালো প্রোটিন উৎস হল লিন মিট, মাছ, ডাল, টক দই এবং নাটস।
ফ্যাটঃ চর্বি শরীরের ক্রিয়াকলাপের জন্য
অপরিহার্য এবং এটি শক্তির দীর্ঘস্থায়ী উৎস। ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যকর
ফ্যাট যেমন অলিভ ওয়েল, বাদাম এবং ফ্যাটি মাছ খাওয়া উচিত।
পানীয়ঃ পানি মানব দেহের জন্য জীবনের উৎস
এবং এটি দেহের সব কোষের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ডায়াবেটিস রোগীদের পর্যাপ্ত
পানি পান করা উচিত, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডিহাইড্রেশন
এড়াতে সাহায্য করে।
ব্যায়ামঃ ব্যায়াম প্রায় অনেক রোগের মহা ওষধ হিসাবে কাজ করে। আর
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই গুরুত্কপূর্ণ । নিয়মিত ব্যায়াম করা ডায়াবেটিস
প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। যেমন, হাঁটা, জগিং, সাইকেল চালানো, যোগাসন করা
ইত্যাদি।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টঃ ডায়াবেটিস রোগীর জন্য স্ট্রেস
ম্যানেজম্যান্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করুন, কারণ স্ট্রেস
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুমঃ প্রতিটি মানুষ সুস্থ্য থাকার জন্য ঘুম অত্যান্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর ডায়াবেটিস রোগীর জন্য তো আরো বেশি
গুরুত্বপূর্ণ । তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এ কারণে নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমানো উচিত।
ওজন নিয়ন্ত্রণঃ ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি ওজন বাড়তে থাকেন, তবে ওজন কমাতে
চেষ্টা করুন। বেশি ওজন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণঃ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
রাখতে চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল শিখুন। খুব বেশি মানসিক চাপে থাকলে কিছুক্ষণ
হাঁটাহাটি করুন অথবা লম্বা করে শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ার অভ্যাস করুন এবং তা
প্রতিনিয়ত করার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনি সুস্থ্য থাকতে পারবেন।
নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শঃ ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। ডাক্তারের সাথে
নিয়মিত যোগাযোগ করুন এবং প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করে চলুন।
পাশাপাশি আপনার শারীরিক চাহিদা এবং অবস্থানুযায়ী একটি কাস্টমাইজড ডায়েট
প্ল্যান তৈরির জন্য একজন পেশাদার ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
এছাড়া সুস্থ শারীরিক অবস্থা বজায় রাখতে এবং সঠিক ফিটনেস লেভেল অর্জনের জন্য
একজন পেশাদার ফিজিওথেরাপিস্ট বা এক্সারসাইজ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে আপনার প্রকৃত পরিবেশের সাথে সাথে আপনার স্বাস্থ্য
সম্পর্কে সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, ডায়াবেটিস
প্রতিরোধে এই পদক্ষেপগুলি মাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের পরামর্শ। যদি আপনি
ডায়াবেটিস সংক্রান্ত কোনও সমস্যা অনুভব করেন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে
যোগাযোগ করতে হবে।
কি খেলে ডায়াবেটিস ভালো হয়
কি খেলে ডায়াবেটিস ভালো হয়? ডায়াবেটিস ভালো হওয়ার কোন খাবার এখন পর্যন্ত
আবিস্কার হয়নি। তবে ডায়াবেটিস হলে সঠিক খাবার পরিবর্তন করা
গুরুত্বপূর্ণ। এই রোগে খাওয়ার সময় নিম্নলিখিত কিছু প্রাকৃতিক উপায়ের মাধ্যমে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলোঃ
সবজি ও শাকঃগোল আলু বা যতটা পারা যায় কম খাওয়া উচিত। আলু
খেতে হলে অবশ্যই তা ভাত বা রুটি ইত্যাদির পরিবর্তে হবে, সবজি বা শাকের বিকল্প
হিসেবে নয়।
ময়দার রুটি বা ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাতঃময়দার রুটি আর মিলে
ছাঁটা চালের বদলে লাল আটার রুটি বা ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত খেলে ভালো।
আঁশযুক্ত গোটা শস্যঃ সয়া প্রোটিন, আমলকী, করলা, জামবীজ, আলফালাফা পাতা, রসুন, মেথি, চিরতা ও কালো
জিরা যুক্ত খাবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
ডায়াবেটিস রেঞ্জ
প্রতিটি মানুষের জন্য ডায়াবেটিস রেঞ্জ থাকে যা জানা প্রত্যেকেরজানা
প্রয়োজন। ডায়াবেটিসের নরমাল রেঞ্জ বিভিন্ন ধরনের ডায়াবেটিসের জন্য ভিন্ন হতে
পারে। যাদের ডায়াবেটিস কখনো হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে একটি নরমাল রেঞ্জ আছে এবং
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের ক্ষেত্রে আরেকটি নরমাল রেঞ্জ আছে।
আমেরিকার ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার জন্য সময়
মধ্যে গত তিন মাস অথবা গত ছয় মাসের ডায়াবেটিসের পরিমাণ নির্ণয় করার জন্য
HBA1C পরীক্ষা আছে। যদি এই পরীক্ষার মানখালি পেটে আপনার রক্তে সুগারের মাত্রা
৫.৫ পয়েন্টের আশেপাশে থাকা ভালো। যদি ৫.৫ থেকে ৬.৯ পয়েন্টের মধ্যে থাকে, এই
অবস্থাকে বলে প্রি-ডায়াবেটিস।
যদি ৭ পয়েন্টের উপরে চলে যায়, আমরা তাকে ডায়াবেটিস বলি।আপনি যদি ডায়াবেটিস
পরীক্ষা করাতে চান, তাহলে সঠিক প্রস্তুতি মেনে নিতে হবে, যাতে আপনার রক্তের
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে। আপনি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সতর্ক থাকুন এবং
নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে সুস্থ থাকুন।
মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয় কি
মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয় কি? চিনি বেশি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার
সরাসরি কোনও যোগসূত্র নেই। তবে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার ডায়াবেটিস হবার
ক্ষেত্রে পরোক্ষ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। “চিনি খাওয়ার সঙ্গে ডায়াবেটিস
হওয়ার যেমন সরাসরি সম্পর্ক নাই- এটা যেমন সত্য, আপনি যদি বেশি মিষ্টি খেতে
অভ্যস্ত হন, তাহলে মুটিয়ে যেতে পারেন।
চিকিৎসা
রক্তে গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসক রোগীকে মুখে
খাওয়ার মেডিসিন দিয়ে থাকেন।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস সাধারণত কিছু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়।
রক্তে গ্লুকোজকে নিয়ন্ত্রণ করতে চিকিৎসকেরা রোগীদের চামড়ার নিচে ইনজেকশনের
মাধ্যমে ইনসুলিন ব্যবহার করতে দিয়ে থাকেন।
যদিও আমরা জানি যে এই রোগের কোনো নিরাময় নেই, তবে ডাক্তারের নির্দেশিত
জীবনধারা মেনে চললে সুস্থ থাকা সম্ভব।
শারীরিক কার্যকলাপ ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ
ক্ষমতা কমাতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য
ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
নিজের অথবা আপনজনকে নিয়ে চিন্তিত? প্রাভার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে ভিডিও
কনসালটেশন বা সরাসরি পরামর্শ নিয়ে সম্ভাব্য ডায়াবেটিস নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রনে
সহায়তা নিন।
লেখকের শেষ মন্তব্য
সমীক্ষায় দেখা গেছে, হলুদ, পেয়াজ, রসুন, মেথি খুব ভালো ইনসুলিন হরমোনের
কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে যার ফলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে
উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, তাই দৈনিক খাদ্য তালিকায় এগুলো রাখা ভালো।
পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা ও চিকিৎসকের পরামর্শ আপনাকে ডায়াবেটিস নামক নীরব
ঘাতক থেকে নিরাপদ থাকতে সাহায্য করবে।
এতক্ষণ আমার সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং
তথ্যমূলক আর্টিকেল যদি আপনি নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করতে
থাকুন।
aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url