কালোজিরার ৪২টি স্বাস্থ্য উপকারিতার উপায়
আপনি কি কালোজিরার ৪২টি স্বাস্থ্য উপকারিতার উপায় সম্পর্কে জানতে চান? আজকে এই
আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
এখানে আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়, কালোজিরা
চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি, সহ বিভিন্ন বিষয় জানতেে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
পড়ুন।
সূচিপত্রঃ কালোজিরার ৪২টি স্বাস্থ্য উপকারিতা জেনে নিন
.
কালোজিরা যা ইংরেজিতে “Black Seed” বা “Black Cumin” নামে পরিচিত একটি প্রাচীন
ঔষধি উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম (Nigella Sativa)। কালোজিরার বীজকে মসলা, খাদ্য,
এবং ঔষধি গুণাবলীর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি একটি মাঝারি আকৃতির মৌসুমী
গাছ, যা একবার ফুল ও ফল আসে। কালোজিরা দক্ষিণ এশিয়া, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং
মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় দেশে ব্যাপকভাবে চাষ ও ব্যবহৃত হয়।
কালোজিরায় ভিটামিন, স্ফটিকল নাইজেলোন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, স্যাপোনিন, ক্রুড
ফাইবার, প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ওলিক অ্যাসিড, আয়রন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও
ক্যালসিয়াম রয়েছে। আজ আমি কালোজিরার উপকারিতা, ক্ষতি, কালোজিরা খাওয়ার
নিয়ম হাদিস কি বলে সহ কালোজিরার ৪২টি স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
কালোজিরার ৪২টি স্বাস্থ্য উপকারিতার উপায়
কালোজিরার ৪২টি স্বাস্থ্য উপকারিতার উপায় কি? কালোজিরা একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ জাতীয়
ফলের অভ্যন্তরীণ বীজ। এই বীজ থেকে কালোজিরার তেল উৎপাদন করা হয়, যা অনেক উপকারি।
কালোজিরা তেলে প্রায় ২১% আমিষ, ৩৮% শর্করা, এবং ৩৫% ভেষজ ফ্যাট রয়েছে। এটি
স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে, যেমন- রোগ প্রতিরোধ করা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
করা, পাচন সাহায্য করা, এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক হতে পারে।
সুস্থ থাকার জন্য সকালে খালি পেটে এক চামচ মধুর সঙ্গে ১০টি কালোজিরা মিশিয়ে খাওয়া
উপকারী হতে পারে। কালোজিরায় ভিটামিন, স্ফটিকল নাইজেলোন, অ্যামাইনো অ্যাসিড,
স্যাপোনিন, ক্রুড ফাইবার, প্রোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড, ওলিক অ্যাসিড, আয়রন, সোডিয়াম,
পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। নিম্নে কালোজিরার ৪২টি স্বাস্থ্য উপকারিতার উপায়
আলোচনা করা হলোঃ
হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগ প্রতিরোধঃ
কালোজিরাতে রয়েছে অনেক গুন। শুধু কালোজিরা খেলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দূর হয়ে
যায়। নিয়মিত কালোজিরার ভর্তা খেলে হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট দ্রুত উপশম হয়।
সর্দি-কাশি দূরঃ কালোজিরাতে রয়েছে বহু ওষুধী
গুন। সর্দি-কাশির সময় আরাম পেতে এক চা চামচ কালোজিরার তেলের সঙ্গে এক চা চামচ
মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালোজিরা বেঁধে শুঁকলে শ্লেষ্মা
তরল হয়।
বিভিন্ন ব্যথা ও মুখের দাগ দূরঃ কালোজিরা
তেল সরিষার তেলের সঙ্গে মিশিয়ে হাঁটু বা অন্যান্য জয়েন্টে ম্যাসাজ করলে হাঁটু ও
জয়েন্টের ব্যথা দূর করা হয়। লেবুর রস কালোজিরা তেল একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে মুখের
ব্রণ ও দাগ দূর হবে।
ডায়েটঃ রুটি ও যেকোনো তরকারির সঙ্গে
কালোজিরা খেলে ডায়েটে উপকার পাওয়া যায়। তবে ওটমিল ও টক দইয়ের সঙ্গে কালোজিরা
খেলে আরও ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
ডায়েবেটিস প্রতিরোধঃ পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল
ডায়েবেটিস রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কালোজিরার তেলে রয়েছে পুষ্টি উপাদান।
প্রতিদিন সকালে এক চা চামচ তেলের সঙ্গে কালোজিরা মিশিয়ে খেলে ডায়েবেটিস নিরাময়
করা সম্ভব।
যৌন দুর্বলতাঃ কালোজিরার সর্ব গুনের মধ্কাযে
রয়েছে যৌন র্দূবলতা দূর করা। কালোজিরা চুর্ণ ও অলিভ অয়েল, ৫০ গ্রাম হেলেঞ্চার
রস ও ২০০ গ্রাম খাঁটি মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে খাবারের পর এক চামুচ করে খান।
এতে গোপন শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ে ও অ্যাজমায় উন্নতি ঘটেঃ
কালোজিরা হালকা উষ্ণ পানিতে মিশিয়ে ৪৫ দিনের মতো খেলে অ্যাজমার সমস্যার উন্নতি
ঘটে। নিয়ম করে এক চামচ মধুতে একটু কালোজিরা দিয়ে খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।
উচ্চ রক্তচাপঃ গরম খাদ্য বা ভাত খাওয়ার
সময় পরিমানমত এবং নিয়মিত কালোজিরার ভর্তা খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে।
স্ত্রীরোগঃ কালোজিরার মহাগুন হচ্ছে
স্ত্রীরোগ ভালো করা। প্রসব ও ভ্রুণ সংরক্ষণে কালোজিরার মৌরী ও মধু একসঙ্গে
মিশিয়ে দৈনিক ৪ বার খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
দাঁত শক্ত করেঃ কালোজিরার ব্যবহার দাঁতকে
শক্ত করে। দই ও কালোজিরার মিশ্রণ প্রতিদিন দুবার দাঁতে ব্যবহার করুন। এতে দাঁতে
শিরশিরে অনুভূতি ও রক্তপাত বন্ধ হবে।
ওজন কমায়ঃ বর্তমান সময়ে মানুষের ওজন এমন
পর্যায়ে বেড়েছে তার ওজন কমানোর উপায় খোঁজে থাকে। কালোজিরা মহা ওষুধ হিসেবে
কাজ করে। আর তাই ওজন কমাতে খাদ্য তালিকায় উষ্ণ পানি, মধু ও লেবুর রসের মিশ্রণ
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এখন এই মিশ্রণে কিছু কালোজিরা পাউডার ছিটিয়ে দিন। পান
করলে দারুণ উপকার পাবেন।
বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ সারাতেঃ কালোজিরা
বিভিন্আন রোগ সারাতে ব্যবহার হয়ে থাকে। আক্রান্ত স্থান ধুয়ে পরিষ্কার করে তাতে
মালিশ করে এক চা-চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরার তেল সমপরিমান
মধু বা এককাপ রং চায়ের সাথে দৈনিক ৩বার করে ২-৩ সপ্তাহ সেবন করলে উপকার পাওয়া
যায়।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রনঃ কারোজিরা ব্লাড
প্রেসার নিয়ন্ত্রনে ভালো কাজ করে। প্রতিদিন সকালে রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে
খেয়ে এবং সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করে সূর্যেরতাপে কমপক্ষে আধাঘন্টা
অবস্থান করতে হবে এবং এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ প্রতি সপ্তাহে
২-৩ দিন খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখে।
অর্শ রোগ নিরাময়েঃ কালোজিরার ওষুধী গুন
অর্শ রোগ সারাতে কাজ করে। এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তেল চুরনবা তিলের তেল এক
চা-চামচ কালোজিরার তেল সহ প্রতিদিন খালি পেটে ৩-৪ সপ্তাহ খেতে হবে।
জৈব শক্তি বৃদ্ধিঃ কালোজিরার অনেক গুনের
মধ্যে জৈব শক্তি বৃদ্ধি আরেকটি গুন। কালোজিরা নারী- পুরুষ উভয়ের যৌনক্ষমতা
বাড়ায়। প্রতিদিন কালোজিরা খাবারে সাথে খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি
পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে।
অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রেঃ অধিকাংশ কবিরাজ
বিভিন্ন রোগ সারাতে কালোজিরা ব্যবহারে থাকেন। অনিয়মিত মাসিক স্রাববা মেহ বা
প্রমেহ রোগের ক্ষেত্রে কালোজিরা ব্যবহার করা হয়। এক কাপকাঁচা হলুদের রস বা
সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক কাপ চা-চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক
৩বার করে নিয়মিত খেলে শতভাগ কাজ করবে।
দুধ বৃদ্ধির জন্যঃ যেসব মায়েদের বুকে
পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের মহৌষধ কালিজিরা। মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০
গ্রাম কালিজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেলে মায়েদের বুকে দুধ বৃদ্ধি পাবে।
হজমের সমস্যায দূরীকরণেঃ কালোজিরা হজমের
সমস্যায় ভালো কাজ করে। হজমের সমস্যায় এক-দুই চা-চামচ কালিজিরা বেটে পানির
সঙ্গে খেতে থাকুন।
লিভারের সুরক্ষায়ঃ লিভারকে ভালো রাখতে
কালোজিরা ওষুধের কাজ করে। লিভারের সুরক্ষায় ভেষজটি অনন্য। লিভার ক্যান্সারের
জন্য দায়ী আফলাটক্সিন নামক বিষ ধ্বংস করে কালিজিরা।
শান্তিপূর্ণ ঘুমঃ কালোজিরা শান্তিপূর্ণ
ঘুমের প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। কালোজিরার তেল ব্যবহারে রাতভর প্রশান্তিপর্ন
নিদ্রা হয়।
কিডনির পাথর ও ব্লাডারঃ ২৫০ গ্রাম কালোজিরা
ও সমপরিমাণ বিশুদ্ধ মধু। কালোজিরা উত্তমরূপে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশ্রিত করে
দুই চামচ মিশ্রণ আধাকাপ গরমপানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন আধাকাপ তেল সহ পান করতে
হবে। তাহলে কিডনির পাথর ও ব্লাডার ভালো থাকবে।
ডায়রিয়াঃ মুখে খাবার স্যালাইন ও
হোমিও ওষুধের পাশাপাশি ১ কাপ দই ও বড় একচামচ কালোজিরা তেল দিনে ২ বার খেলে
ডায়রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
উচ্চরক্তচাপঃ কালোজিরা উচ্চরক্তচাপ কমাকে
ভালো কাজ করে। যখনই গরম পানীয় বা চা পান করবেন তখনই কালোজিরা কোন না কোন ভাবে
সাথে খাবেন।
স্নায়ুবিক উত্তেজনাঃ কালোজিরা ব্যবহারের
ফলে স্নায়ুবিক উত্তেজনা ভালো হয়ে যায়। তাই আপনি যদি কফির সাথে কালোজিরা সেবন
করেন তাহলে স্নায়ুবিক উত্তেজনা দুরীভুত হয়ে যাবে।
আঁচিলঃ আঁচিল সারাতে কালোজিরা ম্যজিকের মত
কাজ করে। আর তাই আপনি হেলেঞ্চা দিয়ে ঘষে কালোজিরা তেল লাগান। হেলেঞ্চা মুল আরক
মিশিয়ে নিলেও হবে। সাথে খেতে থাকুন হোমিও ওষধ।
চোখের ব্যথা দূর করতেঃ রাতে ঘুমোবার আগে
চোখের উভয়পাশে ও ভুরুতে কালোজিরা তেল মালিশ করুন এবং এককাপ গাজরের রসের সাথে
একমাস কালোজিরা তেল সেবন করুন।
পারকিনসন্স রোগের প্রতিকারেঃ কালোজিরায়
থাইমোকুইনিন থাকে যা পারকিনসন্স ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্তদের দেহে উৎপন্ন
টক্সিনের প্রভাব থেকে নিউরনের সুরক্ষায় কাজ করে। নিয়ম করে কালোজিরা খান তাহলে
এই রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ কালোজিরা রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। নিয়মিত কালোজিরা খেলে শরীরের প্রতিটি
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সতেজ থাকে।
দেহের সাধারণ উন্নতিঃ অরুচি, পেটে ব্যথা,
ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, জ্বর, শরীর ব্যথা, গলা ও দাতে ব্যথা, পুরাতন মাথা
ব্যথা, মাইগ্রেন, চুলপড়া, খোসপঁচড়া, শ্বেতি, দাদ, একজিমা, সর্দি, কাশি,
হাঁপানিতেও কালোজিরা অব্যর্থ ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিঃ দুই বছরের
অধিক বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক
বৃদ্ধি ঘটে। শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অনেক কাজ করে
কালোজিরা। তাই নিয়ম করে কালোজিরা শিশুদের খাওয়ান।
জন্ডিস বা লিভারের বিভিন্ন সমস্যার দূরীকরণেঃ
কালোজিরা জন্ডিস বা লিভারের বিভিন্ন সমস্যার দূরীকরণে খুবই ভালো কাজ করে। তাই
একগ্লাস ত্রিপলার শরবতের সাথে এক চা-চামচ কালোজিরার তেল দিনে ৩বার করে ৪-৫
সপ্তাহ খেলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
চর্বি নিয়ন্ত্রণঃ কালোজিরা শুধু খেলেই
উপকার হয় তা নয় এর তেলে যথেষ্ট কার্যকারী আমাদের মানব শরীরের জন্য
কালোজিরা তেলে অমেগা-৩ ফ্যাট থাকে, যা চর্বি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
হৃদয়ের স্বাস্থ্যঃ কালোজিরা তেলে অমেগা-৩
ফ্যাট ও অমেগা-৬ ফ্যাট থাকে, যা হৃদয়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে
পারে।
পাচন সাহায্যঃ কালোজিরা তেলে আন্তরিক
স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে, যেমন পাচন সাহায্য করা।
ত্বকের স্বাস্থ্যঃ কালোজিরা তেলে ভিটামিন ই
থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। এতে বিদ্যমান
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
চুলের স্বাস্থ্যঃ কালোজিরা তেলে প্রোটিন,
ভিটামিন এ, এবং অন্যান্য উপাদান থাকে, যা চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে
সাহায্য করতে পারে। তাই আপনি নিয়ম করে কালোজিরার তেল ব্যবহার করতে পারেন।
মাথাব্যথাঃ মাথাব্যথায় কপালে উভয় চিবুকে ও
কানের পার্শ্ববর্তী স্থানে দৈনিক ৩-৪ বার কালোজিরার তেল মালিশ করুণ। তিন দিন
খালি পেটে চা চামচে এক চামচ করে তেল পান করুন উপকার পাবেন।
চুলপড়াঃ লেবু দিয়ে সব মাথার খুলি ভালোভাবে
ঘষুণ। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ও ভালোভাবে মাথা মুছে ফেলুন। তার
পর মাথার চুল ভালোভাবে শুকানোর পর সম্পূর্ণ মাথার খুলিতে কালোজিরার তেল মালিশ
করুন। এতে এক সপ্তাহেই চুলপড়া কমে যাবে।
কফ ও হাঁপানিঃ বুকে ও পিঠে কালোজিরার
তেল মালিশ করলে কফ ও হাঁপানি রোগ নিরাময় হয়। নিয়মিত কালোজিরা ব্যবহার করুন কফ ও
হাঁপানির সমস্যা থেকে দূরে থাকুন।
অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্টিকঃ এক কাপ দুধ ও এক টেবিল চামুচ কালোজিরার তেল
দৈনিক তিনবার ৫-৭ দিন সেবন করতে হবে। এতে গ্যাস্টিক কমে যাবে।
জ্বরঃ কালোজিরা জ্বর সারাতে খুব ভালো কাজ
করে। সকাল-সন্ধ্যায় লেবুর রসের সঙ্গে এক টেবিল চামুচ কালোজিরা তেল পান করুণ। আর
কালোজিরার নস্যি গ্রহণ করুন। তাহলে আপনি খুব তাড়াতাড়ি জ্বর সেরে যাবে।
বাতঃ পিঠে ও অন্যান্য বাতের বেদনায়
কালোজিরার তেল মালিশ করুন। নিয়ম মাফিক ও পরিমিতভাবে আপনি যদি কালোজিরার তেল
মাখেন তাহলে ভালো উপকার পাবেন।
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ কালোজিরা সর্ব সমস্যার সমাধান করে। কালোজিরা
নিয়মিত খাওয়ার জন্য এলার্জি নিয়ন্ত্রণে থাকে। অ্যান্টিহিস্টামিন হিসাবে কাজ
করে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে বিশেষভাবে উপযোগী।
কালোজিরার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আশ্চর্যজনক ভাবে অতুলনীয়, আর তা কালোজিরার রস বা
তেলের মধ্যেই বিদ্যমান। ফলে কালোজিরার তেল ব্যবহার ও সেবন শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে এবং রোগ মুক্ত রাখে। কালোজিরা আয়ুর্বেদিক, ইউনানী,
কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় বহুমূত্র রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার
হয়। কালোজিরার ৪২টি স্বাস্থ্য উপকারিতার উপায় সম্পর্কে আপনি যদি ভালো করে জানতে
পারেন তাহলে আপনার বেশ উপকারে আসবে।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম হাদিসে কি বলে
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম হাদিসে কি বলে? কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম হাদিস
সম্পর্কে আপনি জানতে চান। আইনদানের দৃষ্টিতে, কালোজিরা একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ জাতীয
ফলের অভ্যন্তরীণ বীজ। কালোজিরা তেলে প্রাচীন সভ্যতা থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি
মৃত্যু ছাড়া সব রোগের উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ এলার্জি জাতীয় খাবার, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
আপনি এটি তেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এবং এর উপকারিতা পেতে হাদিসের নির্দেশানা
অনুসরণ করতে পারেন। হাদিসে আছে, “তোমরা কালোজিরা ব্যবহার করবে, কেননা এতে একমাত্র
মৃত্যু ব্যতীত সর্ব রোগের মুক্তি রয়েছে” (তিরমিযি, বুখারি, মুসলিম শরীফ)।
এই তেলে প্রায় ১০০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যেমন ক্যান্সার
প্রতিরোধক কেরোটিন, শক্তিশালী হরমোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ
প্রতিরোধকারী উপাদান। তাই আমরা যদি ইলামিক নিয়ম অনুযায়ী কালোজিরা ব্যবহার করি
তাহলে বিভিন্নরোগ হতে উপশম পাবো।
রাতে কালোজিরা খেলে কি হয়
রাতে কালোজিরা খেলে আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে বাড়ানোর সাথে সাথে শরীরে
এন্টি অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়,
পেট ফাঁপাভাব কমে যায়, গ্যাস্ট্রিক ও আমাশয় নিরাময় করা যায়, চুল পড়া রোধ
করে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে,
অ্যালার্জির সমস্যা সমাধান করে। এছাড়া, কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা
অ্যান্টিসেপটিক হতে পারে।
প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত
কালোজিরা খাওয়া উচিত কারণ তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কালোজিরা ভিটামিন,
মিনারেল, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহ অনেক উপাদান রয়েছে। এটি ডায়াবেটিস,
কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ইনসুলিন প্রতিরোধ, উচ্চ কোলেস্টেরল, স্থূলতা, ফ্যাটি
লিভার ডিজিজ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তাই কালোজিরা সঠিক
পরিমাণে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে, প্রতিদিন ১-২ গ্রাম কালোজিরা খাওয়া
উচিত গবেষকদের মতে।
কালোজিরা খেলে কি গ্যাস হয়
কালোজিরা খেলে গ্যাস হয় এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে, আপনি সকালে খালি
পেটে খুব বেশি পরিমাণে কালোজিরা খেলে ওজন কমাতে সাহায্য পাতে পারেন। কালোজিরা
চিবিয়ে খাওয়া যায় এবং চুলের যত্নে মেথির সাথে কালোজিরা ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া, কালোজিরা আয়ুর্বেদিক, ইউনানী, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় বহুমূত্র রোগ
নিরাময়ের জন্য ব্যবহার হয়।
প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়
কালোজিরা একটি মহা ঔষধি, যা আমাদের শরীরের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে সাহায্য
করে। এটি প্রায় শতাধিক পুষ্টি এবং উপকারী উপাদান রয়েছে। কালোজিরা
খাদ্যাভাসের ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রোগ প্রতিরোধে সহায়ক, ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে সাহায়ক, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়,
ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক, হজম উন্নত করে, শ্বাসকষ্টের সমস্যা উপশম করে,
ত্বকের যত্নে উপকারী, চুল পড়া রোধে সাহায্য করে এবং গাঁটের ব্যথা উপশম
করে। তাই নিজেকে সুন্দর ও ফিট রাখতে সব সময়ইর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন।
এত উপকারের পরেও কিছূ ক্ষতি বা সমস্যা পরিলক্ষিত হয় যা নিম্নে আলোচনা করা
হলোঃ
- প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কালোজিরা খেলে রক্ত জমাট বাধতে সমস্যা হয়।
- অকিরিক্ত কালোজিরা খেলে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় ফলে সমস্যা ডায়াবেটিকস রোগীর সমস্যা
- গর্ভাবস্থায় কালোজিরা খেলে গর্ভবতী মায়ের সমস্যা হয়।
- পাকস্থলী প্রদাহ, বুক জ্বালাপোড়া করা, প্রসবের রাস্তা জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে অতিরিক্ত কালিজিরা সেবনে।
- দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত নয়।
কালোজিরা চিবিয়ে খাওয়ার উপকারিতা কি
কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি! এই ছোট ছোট বীজগুলি আপনার
স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। নিচে কিছু উপকারিতা উল্লেখ
করা হলোঃ
- প্রসব কালীন ব্যথা কমাতেঃ প্রসূতির স্তনে দুধ বৃদ্ধির জন্য প্রসবের পরে কালোজিরার ভর্তা খাওয়া বেশি উপকার পাওয়া যায়।
- মাথাব্যথা কমাতেঃ মাথা ঝিমঝিম করা, মাইগ্রেন নিরাময়ে কালোজিরা যথেষ্ট উপকারী।
- পেটফাঁফা নিরাময়েঃ কালোজিরা পেটফাঁপা নিরাময়ে খুবই উপকারী।
- ডায়রিয়া নিরাময়েঃ ডায়রিয়া নিরাময়ে কালোজিরা যথেষ্ট উপকারী।
- স্মরণশক্তি বৃদ্ধিঃ মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণশক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে কালোজিরা।
- হার্টের স্বাভাবিকতা রক্ষাঃ উচ্চ রক্তচাপকে কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে রক্তের স্বাভাবিকতা রক্ষা করে কালোজিরা।
আপনি চাইলে কালোজিরা মধু, রসুন, তুলসী পাতা সহ খেতে পারেন। তবে মুখ দিয়ে
চিবিয়ে খেলে আরো বেশি উপকার পাবেন। এছাড়াও চামড়ার ফুসকুরি,
ব্রঙ্কাইটিস, এলার্জি, একজিমা, এজমা আরোগ্য করে কালোজিরা।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক, আশা করছি কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা, ইসলামী নিয়ম, প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয় এবং কালোজিরার ৪২টি স্বাস্থ্য উপকারিতার উপায় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।কালোজিরা সঠিক মাত্রায় এবং নিয়মিত খেলে এর পুষ্টিগুণ আমাদের স্বাস্থ্যগত উন্নীততে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাজেই নিয়মিত ইসলামিক নিয়ম মেনে কালোজিরা গ্রহণ করুন।এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমার আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ। এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পেতে আমার ওয়েবসাইটটি ফলো করুন এবং কমেন্ট বক্সে আপনার মতামত দিন।
aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url