মানসিক টেনশন ও চাপ দূর করার ১৫টি কার্যকরী উপায়

মানসিক টেনশন ও চাপ দূর করার ১৫টি কার্যকরী উপায় সম্পর্কে জানতে চান। আজ আমি আপনার জন্য মানসিক টেনশন ও চাপ দূর করার কার্যকরী উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


বর্তমানে মানসিক টেনশন বা চাপ প্রত্যেকের মাঝে মারাত্বক আকার ধারণ করেছে। মানসিক টেনশন মানুষের মস্তিষ্ককে কতটা দুর্বল করে সহ বিভিন্ন বিষয় জানতে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ মানসিক টেনশন ও চাপ দূর করার ১৫টি কার্যকরী উপায়

 
মানসিক টেনশন ও চাপ দূর করার কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করার আগে মানসিক টেনশন কি তা নিয়ে আলোচনা করি। মানসিক চাপ বা টেনশন হচ্ছে কর্মসংক্রান্ত ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক পীড়ন সৃষ্টিকারী উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, ক্রোধ ও হতাশা। এটি একটি ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া, যা ঘটনা বা উত্তেজক বস্তুর প্রতি সাড়া দেওয়ার জন্য মানবজীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে একজন 
ব্যক্তিমানুষ কীভাবে তার করণীয় কাজ বা আচরণ করবে তা যুক্ত করে থাকে। আজ আমি মানসিক চাপের কারণ কী, মানুষের টেনশনের ভয়াবহতা কেমন, মানসিক টেনশন এর সূত্রপাত হয় কিভাবে, মানসিক টেনশন মানুষের মস্তিষ্ককে কতটা দুর্বল করে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

মানসিক চাপের কারণ কী

মানসিক চাপের কারণ কী? মানসিক চাপ কে আমরা জীবনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবেই বিবেচনা করি। আমাদের জীবনে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার মধ্যে মানসিক চাপ জন্মানোর সম্ভাব্য কারণগুলো লুকিয়ে থাকে। দৈনন্দিন জীবনে রান্না করা বা গাড়ি চালানোর মতো ঘটনা থেকে স্ট্রেসের জন্ম হতে পারে। 

মানসিক চাপের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো হল পরীক্ষার প্রস্তুতি, চাকরির ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকার অথবা পুরনো জায়গা ছেড়ে নতুন কোনও জায়গায় চলে যাওয়া, জীবনে ঘটে যাওয়া বড়সড় বিপর্যয় যেমন- প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ভয়াবহ অসুস্থতা, সহজে রেগে যাওয়া, কিংবা মন খারাপ ও উৎসাহ উদ্দীপনা কমে যাওয়া, বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়া অথবা কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া। 

এছাড়াও নিজেদের সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা বা অনুভূতি, বয়ঃসন্ধিকাল শুরুর মতো তাদের শরীরিক পরিবর্তন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্কুল থেকে পরীক্ষা ও বেশি বেশি হোমওয়ার্ক বা বাড়ির কাজের চাপ, স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে মনোমালিন্য ও সামাজিকতা, স্কুল পরিবর্তন, বা বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের মত বড় পরিবর্তন ইত্যাদি।

মানুষের টেনশনের ভয়াবহতা কেমন

মানুষের টেনশন অস্থির অবস্থা যা মানব মনোবিজ্ঞানে অনুশীলন করা হয়। এটি সাধারণভাবে কোনও অস্থিরতা, আশাঙ্কা, চিন্তা, অসুখ, ব্যক্তিগত সমস্যা, পেশাদার চাকরির চাপ বা অন্যান্য কারণে ঘটতে পারে। টেনশন সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা গুরুত্বপূর্ণ। 

যেকোনো টেনশন বা ভয়াবহতা অনুভব করলে, এটি একজন মনোবিজ্ঞানিক বা চিকিৎসকে দেখানো উচিত। ক্ষুধামান্দ্য থেকে শুরু করে নিদ্রাহীনতা, উচ্চরক্তচাপ, মাথাব্যথা, বহুমূত্র এমনকি হৃদ রোগও দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে। অনেকেরই 'টেনশন হেডেক' বা অতিরিক্ত মাথাব্যথা দেখা দেয়। যার ফলে আপনার ঘাড় ও চোখের ব্যথাও হতে পারে।

কিভাবে মানসিক টেনশন এর সূত্রপাত হয় 

কিভাবে মানসিক টেনশন এর সূত্রপাত হয়? মানসিক টেনশন হলো আমাদের শরীরের পরিস্থিতি, চাপ এবং জীবনের ঘটনাগুলির প্রতিক্রিয়া। মানসিক টেনশন বিভিন্ন কারণে হয় যেমন- সহজে রেগে যাওয়া, কিংবা মন খারাপ ও উৎসাহ উদ্দীপনা কমে যাওয়া, বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়া অথবা কারো সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়া। 
টেনশন এবং চাপের জন্য টেনশন বা চাপ একজন ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে আলাদা হয়। পরিস্থিতির উপর সামান্য বা কোন নিয়ন্ত্রণ না থাকা, অপ্রত্যাশিত বা নতুন কিছু নিয়ে কাজ করার সময় উদ্বেগ বোধ করার কারণে টেনশন হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী টেনশন এবং চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, 

স্থূলতা এবং ডায়াবেটিসের মত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি তৈরি করতে পারে। যার কারনে আমাদের স্নায়ুকে মানসিক চিন্তা টেনশন গ্রাস করতে থাকে। সাধারণত এভাবেই মানসিক টেনশন এর সূত্রপাত ঘটে আমাদের মাথায়। এগুলো হলো মানসিক টেনশন এর সূত্রপাত।

মানসিক টেনশন কি মৃত্যু ঝুঁকির কারণ

মানসিক টেনশন কি মৃত্যু ঝুঁকির কারণ? মানসিক টেনশন বা বিষণ্নতা হলো খুব কমন একটি মানসিক সমস্যা। এটি মন খারাপ থাকা, আনন্দ বা আগ্রহ না পাওয়া, অতিরিক্ত খাওয়া, পিঠে ব্যথা, ধূমপান, অতিরিক্ত ওজনের ঝুঁকি, এবং অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে পরিচিত। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে মনে ও শরীরে। 

মানসিক টেনশনের কারণ অনেকগুলি থাকতে পারে, যেমন ব্যক্তিগত, আর্থিক, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বিচ্ছেদ, ঘনিষ্ঠ মানুষের মৃত্যু এবং অন্যান্য ঘটনা মানসিক টেনশন মানুষের মৃত্যু ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আমরা যখন অতিরিক্ত টেনশন করি তখন আমাদের মাথায় অতিরিক্ত রক্ত চলাচল শুরু হয়। 

অতিরিক্ত রক্ত চলাচল করার কারণে অনেক সময় রক্ত নালিকা ফেটে যেতে পারে। মাথার মধ্যে রক্তনালিকা ফেটে যাওয়ার কারণে সেই মানুষকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই অতিরিক্ত টেনশন থেকে দূরে থাকতে হবে। তবেই আমরা প্রাণনাশ থেকে রক্ষা পাব। যদি আপনি মানসিক টেনশনের লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে দেরি না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

মানসিক টেনশন মানুষের মস্তিষ্ককে কতটা দুর্বল করে

মানসিক টেনশন মানুষের মস্তিষ্ককে কতটা দুর্বল করতে পারে আপনি কি জানেন? মানসিক টেনশন মানুষের মস্তিষ্ককে দুর্বল করতে পারে। যেহেতু আমরা ইতোমধ্যে জেনে গিয়েছি মানসিক টেনশন এর ভয়াবহতা কত এবং কেমন হতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক টেনশন করার ফলে ধীরে ধীরে আমাদের মস্তিষ্কের থাকা নিউরন গুলো অকেজো হয়ে যায়। নিম্নে মানসিক টেনশন মানুষের মস্তিষ্ককে কতটা দুর্বল করে তা উল্লেখ করা হলোঃ

অপর্যাপ্ত ঘুমঃ যুক্তরাষ্ট্রের প্রিমিয়ার নিউরোলজি অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, আমাদের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে। আপনি আপনার মস্তিষ্ককে রক্ষা করতে চান তাহলে সমাধান একটাই- প্রতি রাতে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমানো। আট ঘণ্টা হলে বেশি ভালো। আপনি কিছু মনে রাখতে পারেন না, মনোযোগ দিতে কষ্ট হয়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। ঘুমের অভাবে ডিমেনশিয়া অ্যালঝেইমার্সের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই নিয়ম করে ঘুমাতে হবে।

সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়াঃ সারা রাত না খেয়ে থাকার পর, দিনে কাজ করার শক্তি আসে সকালের নাস্তা থেকে। তাড়াহুড়া করে নাস্তা না করার ফলে যেটা হয় রক্তের শর্করা মাত্রা কমে যায়, যার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। দিনের পর দিন সকালে নাস্তা না করার ফলে মস্তিষ্কে ক্ষয় হতে থাকে এবং কোষগুলোর কার্যকারিতা হারায়। যার ফলে পুষ্টির অভাবে স্বাভাবিক কাজগুলো করা কঠিন হয়ে ওঠে। সে জন্য সকালে নিয়ম মত নাস্তা করতে হবে।

পর্যাপ্ত পানি পান না করাঃ আমরা সবাই জানি আমাদের মস্তিষ্কের ৭৫% পানি থাকে। তাই মস্তিষ্কের সবচেয়ে ভালো কাজ করার জন্য একে আদ্র রাখা বেশ জরুরী। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করার কারণে মস্তিষ্কের টিস্যু সংকুচিত হয়ে যায় এবং কোষগুলো কার্যক্ষমতা হারায়। এতে করে মস্তিষ্কের যৌথিক চিন্তা বা শিক্ষা নেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করতে হবে।

অতিরিক্ত চাপ এবং শুয়ে বসে থাকাঃ দীর্ঘসময় খুব চাপের মধ্যে কাজ করলে মস্তিষ্কের কোষ মারা যায় এবং মস্তিষ্কের সামনে থাকা ফ্রন্টাল কর্টেক্স সংকুচিত হয়ে পড়ে। এতে আমাদের স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যেকোনো উপায়ে অতিরিক্ত চাপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

মনে রাখতে হবে শরীর অসুস্থ থাকলে মস্তিষ্ক রোগ প্রতিরোধে ব্যস্ত থাকে। তাই এই সময় বাড়তি চাপ না দিয়ে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিন। অতিরিক্ত চাপ নেয়া যেমন খারাপ তেমনি দীর্ঘ সময় শুয়ে বসে থাকাও ক্ষতিকর। তাই মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন, প্রতি আধাঘণ্টা পর পর চেয়ার থেকে উঠে চলাফেরা করুন, এজন্য টাইমার সেট করে রাখতে পারেন।

গুগল সার্চঃ আজ আমরা সবাই প্রযুক্তির উপর নির্ভর হওয়ায় গুগলে বিভিন্ন বিষয়ে সার্চ করে থাকি। প্রযুক্তির উপর এই অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে আমাদের ব্রেইনের নিজস্ব ক্ষমতা কমে গিয়েছে। স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। মস্তিষ্ক শাণিত করতে সবকিছু গুগল সার্চ না করে মনে রাখার চেষ্টা করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

হেডফোন ব্যবহার, উচ্চ শব্দে জোরে গান শোনাঃ আমাদের মস্তিষ্ক নষ্ট হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে হেডফোন ব্যবহার, উচ্চ শব্দের জোরে গান শোনা। আমরা যদি প্রতিদিন হেডফোন বা এয়ারপড ব্যবহার করে সেটা ৩০ মিনিটেরও কম সময়ে ব্যবহার করি তাহলে শ্রবণ শক্তির ক্ষতি করতে পারে।
মার্কিন গবেষকদের মতে, শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের টিস্যুর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এতে তাদের আলঝেইমার্স হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় । ফলে লেখাপড়া করতে এবং মনোযোগ দিতেও কষ্ট হয়। তাই হেডফোন ব্যবহার করার সময় আমাদেরকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং উচ্চস্বরে গান শোনা থেকে বিরত থাকতে হবে।

একা একা থাকা, সামাজিক না হওয়াঃ মানুষের সাথে কথা বলা, আড্ডা দেয়া, এক কথায় সামাজিকীকরণ আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ জরুরি। একাকীত্ব থেকে বিষণ্নতা, উদ্বেগ ভর করে এবং এমনকি ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার্স রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে নিয়মিত কাছের কয়েকজন বন্ধু এবং পরিবারের সাথে সময় কাটাতে হবে। তবে হ্যাঁ তারা যেন অবশ্যই ইতিবাচক মন মানসিকতার মানুষ হন।

নেতিবাচক চিন্তা ও মানুষঃ মস্তিষ্ক নষ্ট হওয়ার আরেকটি কারণ হলো নেতিবাচক চিন্তা ও মানুষ।আপনার যদি প্রতিনিয়ত নেতিবাচক চিন্তার অভ্যাস থাকে যেমন- আপনাকে দিয়ে কিছুই হবে না, বিশ্বের অবস্থা খুব খারাপ, ভবিষ্যৎ অন্ধকার, আপনি অভাগা, এমন নেগেটিভ চিন্তার ক্ষতিকর প্রভাব মস্তিষ্কে গিয়ে পড়ে। আর তাই নেতিবাচক চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সেইসাথে নেতিবাচক সঙ্গ এড়িয়ে চলা খুব জরুরি।

অন্ধকারে সময় কাটানোঃ মার্কিন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা অন্ধকারে বেশি সময় কাটান। কিংবা দীর্ঘসময় এমন কোন আবদ্ধ স্থানে থাকেন যেখানে তেমন আলো বাতাস চলাচল করে না, এমন পরিবেশ মস্তিষ্কের ওপর ভীষণ চাপ তৈরি করে। আমাদের মস্তিষ্কের জন্য সূর্যের আলোর সংস্পর্শ পাওয়া বেশ জরুরি। আপনার মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সূর্যের আলোয় যেতে হবে।

খাদ্যাভাসঃ অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস, সেটা স্বাস্থ্যকর খাবার হলেও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। এতে স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি লোপ পায় যার প্রভাবে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্স হতে পারে। ফলে আমাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস, যেখানে স্মৃতি জমা হয়, সেটি বিকাশ হতে নাও পারে। তাই সঠিক খদ্য নিয়ম মেনে চলতে হবে।

মদপান ও ধূমপানঃ মদপান ও ধূমপান যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সবাই জানি। কিন্তু সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। এতে মস্তিষ্কের স্নায়ু সংকুচিত হয়ে যায়, কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে আমাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস, যেখানে স্মৃতি জমা হয়, সেটি বিকাশ হতে পারে না।

অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমঃ অত্যধিক স্ক্রিন টাইম মস্তিষ্কের আকার এবং বিকাশে ব্যাপক ক্ষতি করে। মোবাইলের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেকে যে বিকিরণ হয় তার সংস্পর্শে বেশি সময় থাকলে মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি, মস্তিষ্কে টিউমারের মতো ক্ষতি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম থেকে দূরে থাকতে হবে।

মানসিক টেনশন দূর করার উপায়

আপন মনের ইচ্ছার বাইরে খারাপ কোন কিছু ঘটলে বা ঘটতে থাকলেই মূলত আমরা মানসিক অস্থিরতায় ভুগি। টেনশন থেকে মুক্তি পেতে কিছু উপায় আছে, যা মানসিক চাপ কমিয়ে হৃদয়ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে। তাই সঠিক কৌশলে মানসিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারলে জীবনযাপন সহজ ও সুন্দর হয়। মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকার জন্য আপনি এই উপায়গুলো অনুসরণ করতে পারেনঃ

  • মেডিটেশন মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম। কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ২৫ মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানিই দূর করতে সহায়তা করে1।
  • যেকোন কিছু থেকে মুক্তি পেতে ঘুমের কোন বিকল্প হয়না। আপনার মানসিক অস্থিরতা কমাতেও তাই ঘুম খুব কাজের একটি উপায় হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। যখনই আপনি মানসিকভাবে অস্থিরতায় ভুগতে থাকেন তখন চেষ্টা করুন একটা ভালো ঘুম দিতে। একবার যদি আপনি একটা লম্বা ঘুম দিতে পারেন তাহলে দেখবেন অস্থিরতা আর আপনাকে ভোগাবে না।
  • আপনি মানসিকভাবে যখন অস্তিরতা বোধ করবেন তখন আপনার প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটানো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। পার্কে বেড়াতে যান, গাছের নিচে বসে বই পড়ুন বা সময় কাটানোর অন্য কোনো প্রাকৃতিক স্থানে যান।
  • অনেক সময় যে কারণে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেই বিষয়টি কারো সঙ্গে শেয়ার করলে অস্থিরতা কমে যায়। আপনার পরিবার, বন্ধু, বা প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ করুন। কাউকে আপনার সমস্যা বা চিন্তা বলার মাধ্যমে আপনি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য পেতে পারেন।
  • অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে অস্তিরতা কমাতে পারি, যেমন গেম খেলা বা হস্তশিল্প তৈরি করা ইত্যাদি। আপনার কখনো কারো প্রতি রাগ বা ক্ষোভ জমা হয় তাহলে তা ঝেড়ে ফেলুন। ক্ষমা করার পরিবর্তে ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায়।
  • আপনার চলার পথে জীবনে কিছু সমস্যা থাকবে, এবং সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। বাস্তব পরিস্থিতি মেনে নিয়ে তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার মানসিকতা গ্রহণ করুন। তাহলে দেখবেন আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
  • যেকোনো বিষয়ে অল্পতেই ঘাবড়ে যাবেন না। এতে করে আপনার মস্তিষ্কে হঠাৎ করে চাপ অনুভূত হতে পারে যার কারণে আপনি মানসিক টেনশনের দিকে ঢলে পড়তে পারেন।
  • অনেক সময় কোনো একটা নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে চিন্তাও আমাদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। তখন আপনার প্রাণীর সাথে সময় কাটানো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি প্রাণীর সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পেতে পারেন, তাহলে এটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।
  • অনেক সময় যে কারণে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সেই বিষয়টি কারো সঙ্গে শেয়ার করলে অস্থিরতা কমে যায়। তাই যাকে আপনি আস্থা মনে করেন এবং যার সঙ্গে শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তার সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করুন।
  • অস্থিরতা দেখা দিলে প্রথমে ব্রিদিং রিলাক্সেশন করুন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন। বুক ভরে ভেতরের সব খালি জায়গা বাতাসে ভরে ফেলুন। দমটা অল্পক্ষণ আটকে রাখুন। তারপর মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে পরপর তিনবার করুন।
  • ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও গান শোনা, গল্পের বই পড়া, কবিতা পড়া, বাগানে সময় কাটানো—এমন ধরনের নিজের ভালোলাগার কাজগুলো করুন। কাজগুলো মনটাকে অন্য দিকে সরিয়ে দিয়ে অস্থিরতা কাটাতে সাহায্য করবে।
  • মানসিক অস্থিরতা কমাতে আপনি প্রথমেই একগ্লাস পানি পান করুন। একগ্লাস ঠাণ্ডা পানি। মাত্র একগ্লাস ঠাণ্ডা পানিই আপনাকে অদ্ভুত মানসিক প্রশান্তি প্রদান করতে সক্ষম।
  • মানসিক অস্থিরতা দেখা দিলে ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করুন। ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করলে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • আপনি অনেকক্ষণ ধরে কাজ করছেন কিছুক্ষণের জন্য ব্রেক নিন, হাটতে বেড়িয়ে পড়ুন। কাজের মধ্যে ছোট ব্রেক নেওয়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

লেখকের শেষ মন্তব্য

মানসিক চাপ বাড়লে তা চোখে, মুখে স্পষ্ট ফুটে ওঠে। কথায় রয়েছে, মনের ছাপ মুখে পড়ে। সুতরাং আপনি যদি নিজের সমস্যা সম্পর্কে কিছু না বলেন, তবুও আপনার শরীরই জানান দেবে অনেক কিছুই। মানসিক চাপ বাড়লে শরীরে তার লক্ষণ দেখা দেয়।রাতে ঠিক করে ঘুম হয় না। বাড়ছে অনিদ্রার সমস্যা। ক্লান্ত থাকার সত্ত্বেও মাঝরাতে বার বার ঘুম ভেঙে যায়। এ লক্ষণকে অবহেলা করবেন না। এর কারণে ওজনও বেড়ে যায়। এগুলোর পিছনে দায়ী মানসিক চাপ।

আশা করি উপরের আলোচনা গুলো আপনার মানসিক অস্থিরতা কমিয়ে মুহুর্তগুলো আরো সুন্দর করতে সাহায্য করবে। যদি এই সকল বিষয় জানার মাধ্যমে উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে পোস্টের নিচের অংশে মন্তব্য করে পাশেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url