এলার্জি জাতীয় খাবার, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
এলার্জি জাতীয় খাবার, প্রতিরোধ ও
চিকিৎসা সম্পর্কে যাদের এলার্জি আছে তাদের জেনে রাখা দরকার। কারণ এমন কিছু খাবার
রয়েছে যেগুলোতে এলার্জি জনিত সমস্যা বেড়ে যায়।
এলার্জি জনিত খাবার সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। নিজের এবং নিজের
পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এলার্জি জাতীয় খাবার কোনগুলো? এ বিষয়ে জানা
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূচিপত্রঃ এলার্জি জাতীয় খাবার, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
.
এলার্জি হলো একটি অস্বাস্থ্যকর প্রতিক্রিয়া, যা কোন বিশেষ খাবার, পরিবেশ, পুষ্টি
বা অন্য কোন উপাদানের সাথে মানব শরীরের প্রতিরোধ প্রকাশ করে। এই প্রতিক্রিয়া
আপনার শরীরের প্রতি অস্বাস্থ্যকর প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেটি আপনার চরম প্রতিরোধ
প্রণালী সংক্রান্ত কাজ করে। এলার্জির সাথে সম্পর্কিত সামান্য প্রতিক্রিয়া থেকে
লক্ষিত হতে পারে চুলকানি।
সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের এ অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে
এলার্জি বলা হয়। শরীরের ভেতরে প্রবেশকৃত বাইরের কোন বস্তুর বিরুদ্ধে দেহের
প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থার একটি প্রতিক্রিয়া হলো এলার্জি। কিছু বিধিনিষেধ
মেনে চললে এলার্জি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আজ আমি এলার্জি জাতীয খাবার
কোনগুলো, কোন খাবারে এলার্জি নাই, প্রতিরোধ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা
করবো।
এলার্জি জাতীয় খাবার কোনগুলো
সব খাবারে এলার্জি থাকেনা। কারও দুধ জাতীয় খাবার খেলে এলার্জির সমস্যা
দেখা দেয় তো কারও আবার চিংড়ি খেলে। এলার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা অনেক ব্যাপক
হতে পারে, কারণ এলার্জির প্রভাব ব্যক্তির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে, কিছু
সাধারণ খাবার যেগুলি এলার্জি হতে পারে তা নিম্নলিখিতঃ
গরুর দুধঃ ছোট কিংবা বড় সবার ক্ষেত্রে গরুর দুধের মধ্যে এলার্জি লক্ষ্য
করা যায়। তাই গরুর দুধকে এলার্জি জাতীয় খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
বেগুনঃ বেগুন একটি এলার্জি জাতীয় সবজি। যাদের এলার্জি রয়েছে তারা বেগুন
খাওয়ার বিষয়টা ভেবে দেখবেন।
ডিমঃ ডিম খেতে অনেকেই পছন্দ করে কিন্তু এই ডিমের ভিতর রয়েছে এলার্জি।
সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই ডিমকে এলার্জি হিসেবে
চিহ্নিত করা হয়েছে।
টমেটোঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে টমেটোতে এলার্জি রয়েছে। যাদের এলার্জি
রয়েছে তারা টমেটো খাওয়ার সময় চিন্তা ভাবনা করে খাবেন।
ইলিশ মাছঃ আমরা ছোট বড় সবাই ইলিশ মাছ খেতে পছন্দ করি। কিন্তু এই ইলিশ
মাছের রয়েছে এলার্জি। তাই ইলিশ মাছকে এলার্জি জাতীয় খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে
বোয়াল মাছঃ বোয়াল মাছ অনেকেরই পছন্দ। কিন্তু এই বোয়াল মাছ খেতে অনেক
সময় বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা যায়। তাই বোয়াল মাছকে এলার্জি জাতীয় মাছ
হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
চিংড়ি, কাঁকড়া, ওয়েস্টার, শামুকঃ চিংড়ি, কাকড়া, ওয়েস্টার এবং শামুকের
মধ্যে এলার্জি লক্ষ্য করা যায়। তাই এই সমস্ত খাওয়ার সময় যাদের এলার্জি রয়েছে
তারা দেখেশুনে খাবেন।
সয়া: সয়াবিনস, সয়াসস, সয়া মিল্কঃ অনেক শিশুদের ক্ষেত্রে সয়া, সয়াবিনস,
সয়াসস ও সয়া মিল্ক থেকে এলার্জি সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাই এইসব এলার্জি
শিশুদের একটা নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার পরে কমতে শুরু করে।
গরুর মাংসঃ যে সকল এলার্জি জাতীয় খাবার রয়েছে তার মধ্যে গরুর মাংস
অন্যতম। সাধারণত আমরা বেশিরভাগ সময় গরুর মাংস খেয়ে থাকি। আর তাই আমাদের শরীরে
এলার্জি সমস্যা দেখা যায়।
বাদামঃ কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাদামে এলার্জি পরিলক্ষিত হয়। তাই বাদাম
খাওয়ার সময় আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
গম বা গমের আটার তৈরি খাবারঃ যে সকল এলার্জি জাতীয় খাবার রয়েছে তার
মধ্যে গম বা গমের আটার তৈরি খাবার অন্যতম। সাধারণত আমরা বেশিরভাগ সময়ে গমের তৈরি
আটা রুটি খেয়ে থাকি। তাই আমাদের শরীরে এলার্জি সমস্যা দেখা যায়।
শেল ফিশঃ শেল ফিশ একটি সামুদ্রিক মাছ। শেল ফিশ মাছের অনেক সময় এলার্জি
পরিলক্ষিত হয়। তাই শেল ফিশ মাছকে এলার্জি জাতীয় খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ওলঃ যে সমস্ত এলার্জি জাতীয় খাবার রয়েছে তার মধ্যে ওল একটি অন্যতম খাবার।
সাধারণত ওল কে এলার্জি জাতীয় খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
কচুঃ কচু একটি এলার্জি জাতীয় খাদ্য। তাই কচু কে এলার্জি জাতীয় খাবার
হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অনেকের ক্ষেত্রে আম, আপেল, শসা খেলেও এলার্জির সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া শিশুদের
ক্ষেত্রে দুধেও এলার্জি হতে পারে।
একেকজন মানুষের একেক ধরনের খাবারে এলার্জি থাকতে পারে। তাই কোন ধরনের খাবার খেলে এলার্জির লক্ষণ দেখা দিচ্ছে সেই বিষয়ে
লক্ষ রাখা প্রয়োজন। এটি খুঁজে বের করতে পারলে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ
হয়ে যায়।
কোন কোন খাবারে এলার্জি নেই
কোন কোন খাবারে এলার্জি নেই? সাধারণত এই বিষয়টি সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই। যে
সমস্ত মানুষের মধ্যে এলার্জি রয়েছে তারা সবসময় খোঁজতে থাকে কোন কোন খাবারে
এলার্জি আছে এবং কোন কোন খাবারে এলার্জি নেই। তারা সাধারণত যে সমস্ত খাবারের
এলার্জি নাই সে সমস্ত খাবারগুলো খুঁজি থাকে এবং খাওয়ার চেষ্টা করে। যে সমস্ত
খাবারে এলার্জি নাই আমরা সবাই সেই সমস্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবো। তাই
এবার জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবারে এলার্জির সমস্যা নাই।
ভিটামিন সি জাতীয় ফলঃ ফল খেতে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে টক জাতীয় ফল খেতে সবাই পছন্দ করে বেশি। টক জাতীয় ফলের ভিতরে রয়েছে
কমলালেবু,। এই সমস্ত ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আমরা যদি
নিয়মিত এই খাবারগুলো খেয়ে থাকি তাহলে আমরা এলার্জি সমস্যা থেকে দূরে থাকবো।
লেবুঃ লেবু এমন একটি ফল যার ভিতরে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। লেবু এলার্জির সমস্যা দূর কারি একটি ফল হিসেবে বেশি পরিচিত। আমরা নিয়মিত পানি এবং মধুর সাথে লেবুর রস
মিশিয়ে খেতে পারি তাহলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী হবে। তাই
যাদের এলার্জির সমস্যা বেশি তারা বেশি বেশি করে লেবু পানি পান করতে পারেন।
কলাঃ কলা এমন একটি ফল যা খেতে সবাই পছন্দ করে। কলার মধ্যে রয়েছে অনেক
পুষ্টি উপাদান। কলার মধ্যে কোন ধরনের এলার্জিজনিত সমস্যা নেই। আমাদের স্বাস্থ্যগত
দিক বিবেচনা করে আমরা বেশি করে কলা খেতে পারি।
গ্রিন টিঃ বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত গ্রিন টি এর ভিতর কোন এলার্জি জাতীয়
উপাদান নেই। সাধারণত ওজন কমানোর জন্য আমরা খেয়ে থাকি। কিন্তু এ গ্রিন টির ভিতরে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত খুবই
উপকারী।
ক্যাস্টর অয়েলঃ আপনার পাকস্থলী এবং এলার্জি জাতীয় কোন খাবার খাওয়ার ফলে
শরীরে এলার্জির সমস্যা দেখা দিলে ক্যাস্টর অয়েল দারুণ কাজ করে।
শসা এবং গাজরের রসঃ যদি কোন ব্যক্তির শরীরে এলার্জি সমস্যা দেখা দেয়
তাহলে সে শসা এবং গাজরের রস একসাথে মিশিয়ে খেতে পারে তাহলে খুব দ্রুত তার সমস্যা
থেকে পরিত্রাণ পাবে।
আদাঃ আদা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল এবং এলার্জির সমস্যার ক্ষেত্রে খুব
ভালো কাজে দেয়। প্রদাহজনক বিরোধী এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট মূলক উপাদান আদাতে থাকায়
বমি ভাব, মাথা ঘোরানো, হজমের সমস্যার এমনকি ডায়েরিয়ার ক্ষেত্রেও খুব কাজে দেয়
আদা।
দইঃ দই স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। দই খেলে ত্বকের নানা
ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায়।
ভিটামিন ই-সম্পন্ন খাবারঃ বাদাম, আখরোট, সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে ভিটামিন ই। যা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং এলার্জি সমস্যা
দূর করে।
এলার্জি জাতীয় সবজির তালিকা
এলার্জি জাতীয় সবজি তালিকা সবার জানা জরুরী বিশেষ করে যাদের এলার্জি রয়েছে।
এলার্জি সকলের কাছে একটি পরিচিত রোগের নাম। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ এই
এলার্জি রোগে ভোগে থাকে। সব বয়সের মানুষেরই এই এলার্জি সমস্যা থাকতে পারে তবে
শিশুদের একটু বেশি।
আরো পড়ুনঃ কলা খাওয়ার অজানা উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রতিরোধ করাই হচ্ছে এলার্জি নিরাময় বা নিয়ন্ত্রন এর ভালো উপায়। তাই খুব
ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে কোন ধরণের খাবার থেকে এলার্জির তীব্রতা বেশি হচ্ছে।
পাশাপাশি এলার্জি জাতীয় সবজি তালিকা মনে রাখা জরুরী। নিম্নে এলার্জি জাতীয়
সবজির তালিকা উল্লেখ করা হলোঃ
- পুঁই শাক
- বেগুন
- কদু
- সিম
- কলা
- গাজর
- টমেটো
- বাঁধাকপি
- ফুলকপি
- লাল আলু
- কুমড়া
- পেঁপে
- পালং শাক
- কচু
- মিষ্টি কুমড়ার শাক
- লাল শাক
- লাউ শাক
এলার্জি রয়েছে এরকম মাছ কোনগুলো
এলার্জি জাতীয় খাবারের মধ্যে কিছু মাছ রয়েছে, যা এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি করতে
পারে। এই মাছগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেঃ
- ইলিশ মাছঃ ইলিশ মাছের ঘ্রান পেলে অনেকের জিভে জল চলে আসে। এলার্জি থাকলে ইলিশ মাছ খেলে এলার্জি দেখা দিতে পারে।
- চিংড়ি মাছঃ সামুদ্রিক মাছ চিংড়ি মাছে এলার্জি হতে পারে।
- খোসা জাতীয় মাছঃ খোসা জাতীয় মাছে এলার্জি হতে পারে।
- সালমন টুনাঃ সামুদ্রিক মাছে সালমন টুনা এলার্জির জন্য দায়ী হতে পারে।
এই মাছগুলি খেলে এলার্জি সমস্যা হতে পারে, তাই এই মাছগুলি এড়িয়ে চলা উচিত। আপনি
যদি এলার্জি সমস্যায় থাকেন, তাহলে এই মাছগুলি খেতে সতর্ক থাকতে পারেন।
এলার্জির কারণ
এলার্জির কারণ জানাটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এলার্জি খুব কমন
একটা সমস্যা। শিশুদের এলার্জি হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে
লক্ষণগুলো কমে যেতে পারে। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়ায় এলার্জির
লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন- চামড়া লাল হয়ে যাওয়া ও চুলকানি ইত্যাদি।
এলার্জি বিভিন্ন কারণে হতে পারে তবে যেসব জিনিসের সংস্পর্শে আসলে শরীরে এলার্জি
দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছেঃ
- গরম অথবা ঠান্ডা আবহাওয়া
- ধুলাবালি
- বিভিন্ন ঔষধ
- নির্দিষ্ট কিছু খাবার
- ঘাম
- কীটনাশক
- পরাগ রেণু ও ফুলের রেণু
- সূর্যরশ্মি
- ডাস্ট মাইট
- মোল্ড বা ছত্রাক
- গৃহপালিত পশু-পাখি
- স্ট্রেস বা মানসিক চাপ
- ডিটার্জেন্ট ও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ
- ল্যাটেক্স বা বিশেষ ধরনের রাবারের তৈরি গ্লাভস ও কনডম।
এলার্জির লক্ষণসমূহ
বিশ্বব্যাপী খাদ্য এলার্জির ওপর ইউরোপ্রেভাল একটি গবেষণা করে। সেই গবেষণায়
প্রকাশ হয়েছে কিছু খাবারের নাম, যেগুলো থেকে এলার্জি হতে পারে। শরীর এলার্জিক
উপাদানের সংস্পর্শে আসার পর খুব কম সময়ের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তাই
এলার্জির লক্ষণগুলো আমাদের জানা প্রয়োজন। এলার্জির লক্ষণগুলো হলোঃ
- চামড়ায় চুলকানি, র্যাশ বা ফুসকুড়ি হওয়া।
- শরীরের কিছু অংশ চাকা চাকা হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, ফোস্কা পড়া ও চামড়া ঝরে যাওয়া।
- ঠোঁট, জিহ্বা, চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া।
- চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, লাল হওয়া ও ফুলে যাওয়া।
- শুকনো কাশি, হাঁচি, নাকে ও গলায় চুলকানি ও নাক বন্ধ হওয়া।
- শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ চাপ লাগা ও শ্বাস নেওয়ার সময়ে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া।
- বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, পেট ব্যথা, পেট কামড়ানো ও ডায়রিয়া।
এলার্জি সমস্যা হলে আমাদের করণীয় কি
এলার্জি হলো শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া জনিত একটি রোগ, যেটি
এলার্জেন নামক বস্তুর প্রবেশের ফলে ঘটে। এলার্জির লক্ষণ হতে পারে হাঁচি, নাকে
পানি পড়া, চোখে পানি পড়া, সর্দি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি থেকে। অবশ্য এটি পরীক্ষা
করার জন্য একটি সন্দেহজনক খাবার একদিন খেয়ে তিনদিন পর্যন্ত দেখতে হবে কোনো খারাপ
প্রতিক্রিয়া আছে কিনা।
আরো পড়ুনঃ নিজেকে সুস্থ রাখার ৩১টি সহজ উপায়
একে বলা হয় ওরাল ফুড চ্যালেঞ্জ। তবে একাধিক খাবারে এলার্জি থাকলে নির্ণয় করা
কষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এর পরামর্শ নেয়া উচিত। এটি
কিছু নিদ্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমেও জানা যায়। এলার্জি থেকে মুক্ত থাকার জন্য কিছু
উপায় হলোঃ
এলার্জেন এড়িয়ে চলাঃ যেসব বস্তুতে এলার্জি রয়েছে, সেগুলো এড়িয়ে চলা।
উদাহরণস্বরূপ, ধুলাবালিতে অত্যন্ত অধিক এলার্জি থাকলে ধুলাবালিতে না যাওয়া।
এটি আপনার এলার্জি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
খাবারের সঙ্গে অত্যন্ত দূষিত পদার্থ পরিবর্তনঃ আধুনিক যুগে আমরা খাবারের
অভ্যাস পরিবর্তন করেছি, যার কারণে খাবারের সঙ্গে অত্যন্ত দূষিত কিছু পদার্থ
আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। এই পদার্থগুলি এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে।
মধুঃ ত্বকে এলার্জির সমস্যা থাকলে মধুকে কাজে লাগাতে পারেন। মধু
পরিবেশে উপস্থিত অ্যালার্জেনের সঙ্গে শরীরকে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া
মধুতে থাকা প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্য এলার্জির ফুসকুড়ি কমায়।
ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েলঃ ত্বকের এলার্জির সমস্যা থেকে মুক্তিতে
গোসলের সময়ও পানিতে ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন। পাশাপাশি
অবশ্যই রাতে শুতে যাওয়ার আগে একবার করে ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েলের ভাপ নিন।
অ্যালোভেরাঃ ত্বকের অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ উপায় হলো
অ্যালোভেরা। ত্বকের চুলকানি, শুষ্কতার সমস্যা, এলার্জির সমস্যায় অ্যালোভেরা
পাতার জেল কিংবা বাজারে পাওয়া অ্যালোভেরার জেল লাগিয়ে নিন। এর ঔষধি গুণ দ্রুত
জ্বালা এবং চুলকানি থেকে মুক্তি দেবে।
তিতা জাতীয় খাবারঃ খাবারে তিতাজাতীয় খাবার বাড়িয়ে তুলন। নিয়মিত খাবারের
তালিকায় রাখুন করলা ও নিমপাতা ভাজা। সকালে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার অভ্যাস করতে
পারেন, যা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণসহ এলার্জি প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলাঃ এলার্জি থেকে বাঁচতে ঠান্ডা মেঝেতে খালি পায়ে
হাঁটবেন না। গরমে মেঝেতেও শোবেন না। কোল্ড এলার্জির সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা গোসলের ক্ষেত্রে বেশি সময় নেবেন না।
হলুদঃ ভেষজ উপাদান হলুদ দারুণ কাজ করে এলার্জির সমস্যায়। গরম ভাতে তাই
হলুদের গুড়া মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
ওটমিলঃ ওটমিলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সহ
বিভিন্ন জৈবিকভাবে সক্রিয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো এলার্জিজনিত ত্বকের
প্রতিক্রিয়া ( বিশেষ করে চুলকানিকে) প্রশমিত করতে সহায়তা করতে পারে।
বেকিং সোডাঃ বেকিং সোডা ত্বকের pH ভারসাম্যহীনতাকে মোকাবেলা করতে পারে এবং
আপনার ত্বকের এলার্জি প্রশমিত করতে প্রদাহ বিরোধী হিসাবে কাজ করে। এজন্য আপনি
১২ চামচ পানিতে ৪ চামচ বেকিং সোডা নিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। অ্যালার্জির স্থানে
লাগিয়ে ১০ মিনিট পর স্বাভাবিক পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাঃ ত্বকের এলার্জির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত
গোসল, পোশাকের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করুন। বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই
মাস্ক ব্যবহার করুন।
উপরোক্ত নিয়মগুলো যদি আমরা নিয়ম মেনে চলতে পারি তাহলে সমস্ত রকমের এলার্জি ও চুলকানি থেকে রক্ষা পাব।
যে খাবারগুলো এলার্জি প্রতিরোধ করে
বিশেষজ্ঞদের মতে, নানা কারণে আমাদের এলার্জি দেখা দেয়। বিভিন্ন কারণে আমাদের
এলার্জি হতে পারে। এলার্জি না হওয়ার জন্য আমরা যে উপায় গুলো অবলম্বন করব তার
মধ্যে হচ্ছেঃ
দই- টক দইঃ সুস্বাস্থ্যের জন্য দই, টক দই একটি অত্যন্ত উপকারী খাদ্য
উপাদান। দই প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ খাবার। যেমন দই, টক দই, যা শরীরের অন্ত্রকে উন্নত করে এলার্জি প্রতিকার ও প্রতিরোধে সাহায্য করে। এলার্জির সমস্যা প্রতিরোধ করতে
দইয়ের কোন জুড়ি নাই।
ভিটামিন সি জাতীয় ফলঃ এলার্জি থেকে মুক্ত থাকতে আমাদের প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি জাতীয় ফল খেতে হবে। তার মধ্যে কমলালেবু, স্ট্রবেরি,
তরমুজের মত এরকম অনেক ফল আছে যেগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।
চুলকানি দূর করতে এই ফলগুলো দারুন কার্যকরী।
বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস সম্পন্ন খাবারঃ এলার্জি প্রতিরোধে অত্যন্ত উপকারী
একটি উপাদান এটি। আপেল, পেঁয়াজ, চা-এ রয়েছে এই বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস।
ভিটামিন ই সম্পূর্ণ খাবারঃ এলার্জি দূর করতে ভিটামিন ই সম্পূর্ণ খাবার
খুবই গুরুত্বপূর্ণ।, বাদাম সূর্যমুখী, আখরোট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই
রয়েছে। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের সাহায্য করে এবং এলার্জি সমস্যা দূর করে থাকে।
ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবারঃ এলার্জি দূর করতে মাছ, ফল, বাদাম ইত্যাদি খেলে
ভালো উপকার পাওয়া যায়।
ব্রোমালিন যুক্ত খাবারঃ এলার্জি দূর করতে আনারস হচ্ছে খুবই উপকারী ফল যা এলার্জির প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি ইনফ্লামেশন কমিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে
সাহায্য করে।
কুয়ারসেটিন গ্রুপের খাবারঃ যেমন পেঁয়াজ (লাল হলে ভালো), আপেল, ফুলকপি,
বাঁধাকপি, আঙুর ইত্যাদি। এসব খাবার অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যাতে ন্যাচারাল
অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টি প্রদাহ (অ্যান্টি–ইনফ্লামেটরি) কেমিক্যাল থাকায় এলার্জির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ওমেগা-৩ঃ ফ্যাটসমৃদ্ধ মাছ, তেল, কিছু বাদামজাতীয় খাবার এলার্জির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
এলার্জি সমস্যা কমানোর উপায় কি
এলার্জি থেকে মুক্ত থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যেসব বস্তুতে এলার্জি রয়েছে
সেগুলো এড়িয়ে চলা। এলার্জি সমস্যা কমাতে আপনি নিম্নলিখিত কিছু কার্যকারি উপায়
অনুসরণ করতে পারেনঃ
- গরম বা ঘাম থেকে এলার্জি হতে পারে। তাই খুব পরিশ্রম করার পর শরীর গরম হলে বা ঘেমে গেলে বাতাস চলাচল করছে এমন স্থানে থাকুন এবং ঢিলেঢালা কাপড় পরুন।
- ছত্রাক বা মোল্ড থেকে সুরক্ষার জন্য বাড়ির পরিবেশ শুষ্ক রাখুন। পাশাপাশি বাতাস চলাচলের ভালো ব্যবস্থা রাখুন। ঘরের ভেতর কাপড় শুকানো থেকে বিরত থাকুন।
- আপনার এলার্জির কারণ চিহ্নিত করতে চেষ্টা করুন। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
- ঠান্ডা থেকেও এলার্জির সমস্যা হতে পারে। এমন হলে বৃষ্টিতে ভেজা ও পুকুরে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন।
- খাবারের অভ্যাস পরিবর্তন করুন। অধুনিক যুগে আমরা খাবারের অভ্যাস পরিবর্তন করেছি, যা খাবারের সঙ্গে অত্যন্ত দূষিত পদার্থ আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
- মৌনতা বজায় রাখুন। যখন আপনি ধুলাবালিতে যাবেন না, তখন আপনার এলার্জি কমে আসতে পারে।
- বিভিন্ন প্রসাধনীতে থাকা কেমিক্যালে এলার্জি থাকতে পারে। যেমন: সাবান, শ্যাম্পু, ফেইসওয়াশ ও সুগন্ধিতে থাকা কেমিক্যাল। যেসব পণ্যে এলার্জি হয় সেগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
- ত্বকের এলার্জি সমস্যা থাকলে ত্বকের যত্ন নিন, যেমন এটোপিক ডার্মাটাইটিস বা অ্যাঞ্জিওয়েডা।
- গৃহপালিত পশু-পাখির বাসস্থান বাড়ির বাইরে তৈরি করুন এবং তাদের নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।
- ডাস্ট মাইট নামক এক প্রকার অতিক্ষুদ্র পোকা থেকে এলার্জি প্রতিরোধ করতে বাড়ির যে জায়গাগুলোতে বেশি সময় কাটানো হয় সেগুলো ধুলামুক্ত ও পরিষ্কার রাখুন।
- বিছানার চাদর, কাঁথা, বালিশ ও লেপের কভার, জানালার পর্দা—এগুলো সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
- বিছানা গোছানো ও ঝাড়া-মোছা করার সময়ে ভালো একটা মাস্ক পড়ুন। যেসব জিনিস ভেজা কাপড় দিয়ে মোছা যায় সেগুলো ভেজা কাপড় দিয়ে মুছুন। এতে ধুলা ছড়াবে না।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে কেবল বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, জন্মের পর অন্তত প্রথম চার মাস শিশুকে কোনো শক্ত খাবার না দিয়ে কেবল বুকের দুধ খাওয়ালে সেটি এলার্জি প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
এলার্জির চিকিৎসা
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে এলার্জি অনেকাংশেই
নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।যেসব খাবার ও ঔষধে এলার্জি হয় সেগুলো এড়িয়ে চলবেন।
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মোকাবেলায় শারীরিক ব্যায়াম, যোগব্যায়াম ও শ্বাসের
ব্যায়াম করা যেতে পারে।
নিচের তিনটি ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণঃ
- ঔষধ খাওয়ার পরেও লক্ষণ দূর না হলে।
- ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ খাওয়ার পর নতুন লক্ষণ দেখা দিলে কিংবা সমস্যা আরও বেড়ে গেলে।
- মারাত্মক এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে।
- বুক-গলা আঁটসাঁট হয়ে আসছে বা আটকে আসছে বলে মনে হওয়া।
- মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা অথবা গলা ফুলে যাওয়া।
- ঠোঁট ও ত্বক নীল হয়ে যাওয়া।
- শ্বাসকষ্ট অথবা শ্বাস নেওয়ার সময়ে শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া।
- বিভ্রান্তি ও দুশ্চিন্তা।
- চামড়ায় চুলকানিসহ লাল লাল ফুসকুড়ি বা র্যাশ হওয়া অথবা চামড়া ফুলে ওঠা।
- বুক ধড়ফড় করা কিংবা শরীর ঘামে ভিজে যাওয়া।
- মাথা ঘুরানো অথবা ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা।
প্রাথমিক অবস্থায় আপনি ত্বকের এলার্জিতে বিভিন্ন ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম ও মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলকানির সমস্যায় ক্যালামাইন লোশন ও ১% মেন্থল ক্রিম খুব ভালো কাজ করে। তোয়ালেতে বরফ পেঁচিয়ে চুলকানির স্থানে ঠান্ডা সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়।
এলার্জির ঔষধ বিভিন্ন রূপে পাওয়া যায়। যেমন: ট্যাবলেট, সিরাপ ও ড্রপ। উল্লেখ্য,
এলার্জির কিছু ঔষধ সেবনের পরে ঘুম ঘুম লাগা ও মাথা ঝিম ঝিম করার মতো
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে আপনার জন্য
উপযুক্ত ঔষধটি বেছে নিন।
লেখকের মন্তব্য
এলার্জি জাতীয় খাবার কোনগুলো এর প্রতিকার ও চিকিৎসা এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করে
বিস্তারিত ভাবে এলার্জি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি একজন
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে
জেনে রাখা প্রযোজন। আমি মনে করি যে, এলার্জি থেকে দূরে থাকতে আমাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমান পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার, যেমন: লেবু, কমলা, মাল্টা, স্ট্রবেরি, জাম্বুরা, কাঁচা মরিচ, পেয়ারা ইত্যাদি ফল ও তাজা শাকসবজি নিয়মিত খেতে হবে।
আশা করি আপনি আমার আর্টিকেল থেকে বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমার
aminulit.com ওয়েবসাইট এর সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং
তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত পড়তে হলে আমার ওয়েবসাইট ভিজিট করতে থাকুন।
aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url