আমলকির অজানা উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিই

আমলকির অজানা উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি জানতে চান? আমলকি সম্পর্কে আপনাদেরকে আজকে জানাতে চলেছি যে, এটি কিভাবে মানুষের শরীরের রোগ নিরাময় করে থাকে।


আমলকি প্রাচীনকাল থেকে মানুষের শরীরের জন্য অনেক কার্যকরী একটি ফল। খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতাসহ বিভিন্ন বিষয় জানতে আমার আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ আমলকির অজানা উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিই।

.
আমলকি যা “আমলা” নামেও পরিচিত, এটি অত্যন্ত পরিচিত এবং জনপ্রিয় ফল যা ভারতীয় উপমহাদেশে বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি কেবল তার টক-মিষ্টি স্বাদের জন্যই নয়, বরং এর অসাধারণ স্বাস্থ্যগুণের জন্যও বিখ্যাত। আমলকি ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ পদার্থ 

এবং ফাইবার একটি সমৃদ্ধর উৎস। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হজমশক্তি উন্নত করা, ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া, এবং বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। আমলকি খাওয়ার অজানা উপকারীতা ও অপকারীতা সম্পর্কে জানাতে চলেছি। প্রথমে জানবো আমলকির উপকারিতা সম্পর্কে।

আমলকির উপকারিতাঃ

আমলকির উপকারিতায় অনেক রোগের জন্য চিকিৎসা প্রদান করে এবং এই কারণে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে এবং ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লোহা, ক্যারোটিন এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের মতো অনেক খনিজ ও ভিটামিন রয়েছে। শরীরে ভিটামিন-সির ঘাটতি মেটাতে আমলকীর জুড়ি নেই। 
ভিটামিন সি–এর অভাবে যেসব রোগ হয়, যেমন: স্কার্ভি, মেয়েদের লিউকেরিয়া, অর্শ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমলকি খেলে উপকার পাওয়া যায়। হৃদরোগীরা আমলকি খেলে ধড়ফড়ানি কমবে। টাটকা আমলকি তৃষ্ণা মেটায়, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বন্ধ করে, পেট পরিষ্কার করে। আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে। এ ছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী।

উপরে উল্লেখিত আমলকির উপকার ছাড়াও নিম্নলিখিত উপকার পরিলক্ষিত হয়।
  • রোগ প্রতিরোধঃ আমলকি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • হজমশক্তিঃ আমলকি অনেক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে হজমশক্তি উন্নত করে।
  • বয়সের ছাপ পড়তে দেয় নাঃ আমলকি শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে শরীরে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত হাইপারলিপিডেমিয়া বন্ধ করে। মুক্ত কোষগুলো যেমন বলিরেখা এবং বয়সের ছো্প পড়ে না।
  • ডায়াবেটিসঃ আমলকি বিচ্ছিন্ন গ্রুপের কোষকে উদ্দীপিত করে, যা হরমোনটি ইনসুলিনকে বেরতে দেয় না এবং ডায়াবেটিসে রক্তের গ্লুকোজ হ্রাস করে এবং শরীরকে সুষম ও সুস্থ রাখে। এতে উপস্থিত ক্রোমিয়াম শরীরের এলডিএল কোলেস্টেরলকে কমায় যা হৃদগত স্বাস্থ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা বিটা-ইনহিবিটারের প্রভাবকে বাড়ায়।
  • দাঁতের যত্নেঃ আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি দাঁতের মাড়ি শক্ত করে। দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে আমলকির উপকারিতা বহুলাংশে রয়েছে। কাঁচা আমলকি নুন দিয়ে প্রতিদিন একটা খান তাহলে দেখবেন আপনার দাঁত এর সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • পাচনতন্ত্রঃ আমলকি ফলে উচ্চ পাচনশক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে এটি পাচনে সাহায্য করতে পারে এবং অন্যান্য পাচনসম্পর্কিত সমস্যাগুলি কমাতে পারে।
  • মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যঃ কিছু গবেষণাতে প্রমাণিত করেছে যে, আমলকি ফলের ব্যবহার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে এবং মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ অবস্থা নিরাপত্তা প্রদান করতে সাহায্য করতে পারে।
  • মূত্র বৃদ্ধিতেঃ আমলকি প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। আমাদের কিডনি সুস্থ, মূত্রাশয় সংক্রমণ এবং গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ রাখতে আমলকি অপরিহার্য।
  • চোখের যত্নেঃ মধুর সঙ্গে আমলকির রস মিশিয়ে পান করলে দৃষ্টিশক্তি উন্নত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি চোখের ভিতরের চাপকে হ্রাস করে, দূরের জিনিস দেখতে পায় এবং ছানি পড়তে দেয় না। ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিনিক মেলাননিক রাতের অন্ধত্ব কমাতে এবং আপনার দৃষ্টিকে শক্তিশালী করে।
  • মাসিক ঋতুচক্রের জন্যঃ আমলকিতে উপস্থিত কিছু খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন মাসিক ঋতুচক্রের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যৌথভাবে উপকারী।
  • ভিটামিন সিঃ আমলকি ভিটামিন সির এক অত্যন্ত ভাল উৎস। এটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করতে পারে এবং আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
  • ফাইবারঃ আমলকি ফাইবারের এক ভাল উৎস। এটি আপনার পাচন প্রক্রিয়াকে সাহায্য করতে পারে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।
  • আন্তিক্রিয়ামূলক উপাদানঃ আমলকি আন্তিক্রিয়ামূলক উপাদানের এক উৎস, যা আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।
  • চুলের যত্নেঃ আমলকি চুলের শিকড়কে শক্তিশালী করে, চুলের রঙ বজায় রাখে, এবং চুল পড়া বন্ধ করে।
  • অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবারঃ আমলকি প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার ।
  • ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে আমলকিঃ আমলকির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ক্যান্সার প্রতিরোধী গুণ। গবেষণায় বলা হয়, আমলকি ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। প্রতিদিন সকালে আমলকির জুস খাওয়া পেপটিক আলসার প্রতিরোধে কাজ করে। আমলকি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমলকি খুব দ্রুত কাজ করে। আমলকির গুঁড়ো মধু দিয়ে প্রতিদিন খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
আমলকির অপকারিতাঃ

আমলকি হল টক জাতীয় রসালো এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। আমলকিতে থাকা ভিটামিন, মিনারেল ও নিউটিশন আমাদের দেহের বিভিন্ন রকম উপকার করে। কারন আমলকি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং পুষ্টিগুণ অনেক। যদিও গবেষণায় কোনো বিষাক্ত বা নেতিবাচক প্রভাবের উল্লেখ নেই তবুও আমলকি ব্যবহার সম্পর্কিত কিছু হালকা অপকারিতা রয়েছে।
  • হাইপারঅ্যাসিডিটি ট্রিগার করতে পারে। আপনার যদি হাইপার অ্যাসিডিটি বা ভিটামিন সি খাবারের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে কোন ইতিহাস থাকে বা আগে অসুবিধা থেকে থাকে তবে আপনাকে এই ফলটি খাওয়া উচিত নয়।
  • যদি আপনি বেশী পরিমাণে আমলকি খান, তাহলে মোটা হয়ে যেতে পারেন।
  • হাইপারগ্লাইসেমিক মানুষের জন্য পরামর্শ হল যে বীজযুক্ত ফল ব্যবহার এড়াতে, কারণ এটি তাদের স্বাস্থ্য অবস্থা খারাপ হতে পারে।
  • আমলকি খাওয়ার ফলে কিছু মানুষের মধ্যে যে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সেগুলি হল ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, লবনতা এবং মুখের চারপাশে ফুসকুড়ি, ত্বকের চামড়া এবং মুখ, শ্বাস প্রশ্বাস। মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, এবং হালকা অস্বস্তি হতে পারে।

আমলকি খাওয়ার নিয়ম

বিভিন্ন ফল মানুষের জন্য খুবই উপকারী। তাই আমরা নিয়ম ছাড়াই খেয়ে থাকি। কিন্তু আমলকি এমন একটি ফল যা নিয়ম মেনে খেতে হয়। আমলকি ফল খাওয়ার নিয়ম নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
  • গোটা আমলকি চিবিয়ে খেতে পারেন। আমলকি চিবিয়ে খাওয়ার ১০ মিনিট পর পানি খাবেন।
  • গোটা আমলকি গ্রেডারে গ্রেট করে তার থেকে রস বের করে নিয়ে এক চামচ রস খাবেন এর বেশি খাবেন না। এই আমলকির রসে কোনভাবেই পানি দেবেন না।
  • আমলকি কেটে শুকনো করে শুকিয়ে নিন। এই শুকনো করা আমলকি প্রতিদিন রাত্রে খাওয়ার পর হাফ চামচ করে খেয়ে পানি খেয়ে নিন।
  • আমলকি গরম পানিতে এক সপ্তাহ রেখে দিন সেই পানিটি প্রতিদিন হাফ চামচ করে খান।
  • একটি আমলকি কেটে রাতে এক গ্লাস পানিতে রেখে দিন, এই পানিটি প্রতিদিন সকালে উঠে খেয়ে নিন।
  • আমলকির মুরব্বা খাওয়া অন্যত্র আমলকির উপকারিতা পেতে সাহায্য করে। এটি মিষ্টি এবং স্বাদু এবং আমলকির গুনাগুন সংরক্ষণ করে।
  • আমলকির মুখোশ খাওয়ায়  উপকারিতা পেতে সাহায্য করে। এটি স্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর এবং যেহেতু এটি মিষ্টি নয়, তাই ডায়াবেটিক রোগীরা এটি খেতে পারে।
  • আমলকির চুটনি খাওয়ায় উপকারিতা পেতে সাহায্য করে। এটি স্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর এবং আমলকির গুনাগুন সংরক্ষণ করে।
  • আমলকি খাওয়ার উপায় নির্বাচন করার সময়, আপনি আপনার স্বাস্থ্য অবস্থা এবং প্রাকৃতিক পছন্দের উপর ভিত্তি করে খেতে পারেন।

খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমরা অনেকেই তারুণ্য রাখতে সকালে খালি পেটে লেবুর পানি খাই। লেবুতে আছে ভিটামিন 'সি' এবং 'অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট' যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আবার মেদও কমায়। তবে এর থেকেও বেশি উপকার মিলবে আমলকিতে। একটু অবাক লাগছে তাই না? কিন্তু এটিই সত্যি। কয়েকটি আমলকি প্রথমে টুকরো করে কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে নিন।

তারপরে এই পানি সকালে খালি পেটে খেয়ে নিন। সঙ্গে আমলকির টুকরোগুলোও খেতে পারেন। আমলকি খালি পেটে খেলে অনেক উপকারে আসে। এই সম্পূর্ণ ফলটি প্রাকৃতিক ভাবে প্রাপ্ত করে আমলকি খেতে হবে নিয়ম মেনে। খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা নিম্নলিখিতঃ
  • ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ আমলকি ভিটামিন সির অতিরিক্ত উৎস হিসেবে কাজ করে, যা আপনার শরীরকে দূষণ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সম্পৃক্তঃ আমলকির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে দূষণ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা ও মেদ কমিয়ে দেয়।
  • হজম সাহায্যঃ আমলকি হজমের এনজাইম থাকে, যা আপনার পাচনার প্রক্রিয়াকে সাহায্য করে।
  • শরীরের ডিটক্সিফিকেশনঃ আমলকির উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সামগ্রী ক্ষতিকারক ফ্রি র‌্যাডিকেলের প্রভাব দূর করে আরও ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ খালি পেটে আমলকির জুস পান করলে তা শরীরের বিপাক ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। ফলে আমাদের শরীর আরও দক্ষতার সঙ্গে ক্যালোরি বাড়াতে পারে। ফলে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে।
  • পুষ্টি শোষণ করেঃ খালি পেটে আমলকির রস খাওয়ার অভ্যাস পুষ্টির ভালো শোষণে সাহায্য করে, বিশেষ করে ভিটামিন সি শোষণে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখে।
আমলকি খাওয়ার জন্য কাঁচা আমলকি ছোট টুকরো করে অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। পরে আমলকির টুকরোগুলোও খেয়ে ফেলুন।

কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা আমলকি খেতে অনেক উপকার রয়েছে। এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুণগ্রাহী একটি ফল। কাঁচা আমলকিতে নিম্নলিখিত কিছু উপকারিতা রয়েছেঃ
  • প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্টঃ আমলকি একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা মুক্তি দেয় ক্যান্সার এবং অন্যান্য অসুস্থতার ঝুঁকি থেকে।
  • বিটামিন C এর সুপারস্টারঃ আমলকি অন্য কোন ফলের চেয়ে বেশি ভিটামিন C ধারণ করে।
  • শক্তিশালী প্রতিরোধকঃ আমলকি আপনার প্রতিরোধক সিস্টেমকে সমর্থন করে এবং আপনাকে স্বাস্থ্যবান রাখে।
  • পুষ্টিকরঃ আমলকি প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারে অমিল।
  • পাচনতন্ত্র উন্নতিঃ আমলকি পাচনতন্ত্র উন্নত করে এবং অসুস্থ প্রস্তুতি থেকে রক্ষা করে।
  • ডায়াবেটিসে সহায়তাঃ আমলকি ডায়াবেটিস প্রবৃদ্ধি থেকে সাহায্য করে।
  • মানসিক স্থায়িত্বঃ আমলকি মানসিক স্থায়িত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।
  • হৃদয়ের স্বাস্থ্যঃ আমলকি হৃদয়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে।

প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি, তাই নিয়মিত আমলকি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমলকি প্রাচীন ভারতবর্ষের একটি ফল যা সারা বিশ্বে gooseberry নামে পরিচিত। আমলকির পুষ্টিগত গুনাগুন বা নিউট্রেশনাল ফ্যাক্ট অনেক বেশি তাই আমলকি কে সুপার ফুড (super food) বলা হয়। 

প্রতিদিন কতটা আমলকী ফল খাওয়া উচিত তা সাধারণত ব্যক্তির বয়স, লেবেল ও শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। তবে, সাধারণত প্রাচীন আয়ুর্বেদিক গ্রন্থগুলি অনুসারে, প্রতিদিন প্রায় ২-৩ টা আমলকী ফল খাওয়া উচিত বলা হয়ে থাকে। এটা কেবল একটি সামান্য সংখ্যার উদাহরণ। 

তবে গবেষকরা বলেন, দৈনিক সামান্য পরিমাণ কাঁচা আমলকি খেলে বা গ্রহণ করলে আমাদের ব্লাড সুগার, কোলেস্টেরল এবং ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যেকোনো নতুন খাবার বা সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে পরার্মশ করা উচিত যাতে তারা আপনার স্বাস্থ্য অবস্থা এবং প্রতিদিনের খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে সাহায্য করতে পারেন।

কোন কোন ক্ষেত্রে আমলকি খাওয়া যাবে না

কোন কোন ক্ষেত্রে আমলকি খাওয়া যাবে না? অনেকের মতে সাধারণত কোনো খাবার বা ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সঠিক নির্দিষ্ট দিন বা ক্ষেত্র নেই। আমলকি একটি প্রাকৃতিক ফল হিসাবে পরিচিত হয়ে থাকে এবং প্রতিদিন খাওয়া উচিত । তবে কিছু পরিস্থিতিতে আমলকী ফল খাওয়া এড়াতে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
  •  অ্যালার্জি বা অন্যান্য সমস্যাঃ কোনও প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া, অ্যালার্জি বা অন্য কোনও স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে আমলকী ফল খাওয়া ঠিক নয়।
  • গর্ভাবস্থা বা লাক্টেশনঃ যে সমস্ত হবু মায়েদের ফলে সমস্যা আছে, তাদের মাতৃত্ব পর্যায়ে আমলকি ফল খাওয়া উপযুক্ত নয়।
  • মাত্রা ও সংক্রান্ত বিবেচনাঃ যে কোন ফল পরিমানমত খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণে আমলকি ফল খেয়ে ফেললে এটি আপনার শরীরে ভালো হওয়ার থেকে আরো খারাপ হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস বা অন্যান্য মেডিকেল কন্ডিশনঃ বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ করে মেডিকেল কন্ডিশনে প্রতিদিন আমলকি ফল সেবন করা এবং ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে।
উপরোক্ত পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত হতে পারে। যাতে তারা আপনার প্রতিদিনের জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী সঠিক সময়ে আমলকি ফল সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।

আমলকি যেসকল রোগের উপকার করে 

আমলকি একটি দুর্দান্ত উপকারী ফল। এটি সাধারণত ফিলান্টাস এমব্লিকা বা ইংরেজিতে “আমলা” নামে পরিচিত। এটার ফল ও পাতা উভয়ই ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। আমলকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সহায়ক এবং হৃদরোগের সেরা ঘরোযা প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। তাছাড়াও আমলকি আপনার চুলের যত্নেও বড় ভূমিকা পালন করে।


একটি ছোট আমলকিতে দুটি কমলালেবুর সমান ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকির ব্যবহার প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে এবং এর কারন আমলকির উপকারীতা এবং এর ব্যবহার সীমাহীন। আমলকি যেসকল রোগের উপকার করে তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ 
  • সর্দি-কাশি প্রতিরোধেঃ আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর ফলে বিভিন্ন ভাইরাল সংক্রমণ থেকে রক্ষা মিলে। সর্দি-কাশির সমস্যা থেকে বাঁচতে দিনে দুই চা চামচ আমলকির গুঁড়ো সামান্য মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ৩-৪ বার পান করুন। দেখবেন, দ্রুত স্বস্তি মিলবে।
  • দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়ঃ গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকির ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। পাশাপাশি লালচে চোখ, চুলকানি এবং চোখ দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা কমায়।
  • মেদ কমায়ঃ ওজন নিয়ন্ত্রণে আমলকি খুবই কার্যকরী। আমলকি নিয়মিত সেবনকারীদের অনেকরই মত, খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানিতে আমলার গুঁড়ো বা রস মিশিয়ে পান করলে পেট ভরে যায় এবং কম খাওয়া হয়। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ আমলকির অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যাস্ট্রিনজেন্ট বৈশিষ্ট্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • চুল সুন্দর করেঃ আমলকি পাতার মতো আমলকিও চুলের জন্য কার্যকরী এক টনিক। এটি চুল পড়া বন্ধ করে।
  • ত্বকের যত্নেঃ আমলকিতে অ্যান্টি-এজিং বৈশিষ্ট্য আছে। প্রতিদিন সকালে মধুর সঙ্গে আমলকির রস পান করলে দাগহীন, স্বাস্থ্যকর এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়।
  • কোলেস্টেরল দূর করেঃ আমলকি নিয়মিত গ্রহণের ফলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর হয়।
  • ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়ঃ জয়েন্টে ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় দুর্দান্ত কাজ করে আমলকি। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য শারীরিক বিভিন্ন প্রদাহ থেকে মুক্তি দেয়।

শুকনো আমলকী খাওয়ার নিয়ম

শুকনো আমলকি খাওয়ার উপকারিতা অনেক স্বাস্থ্যকর। এটি মস্তিষ্ক, চোখ, হৃদপিণ্ড, পেট, লিভার, ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী। এটি চোখের চাপ এবং চোখের ক্লান্তি দূর করে, ছানি, চোখের উচ্চ রক্তচাপ, ঝাপসা দৃষ্টি, দ্বিগুণ দৃষ্টি, চোখ লাল হওয়া এবং জ্বলন, দুর্বল দৃষ্টি এবং চোখের অন্যান্য অবস্থার ঝুঁকি হ্রাস করে। 
এটি চোখের কর্নিয়ায় পাওয়া কোলাজেন গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণেও সাহায্য করে। আমলকির উপকারিতা শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য গবেষণায় দেখা গেছে যে, গরুর ঘি এবং মধুর সাথে আমলকি রসায়ন দেড় মাসের জন্য দিনে ৩ বার গ্রহণ করলে দুর্বলতা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং শরীরের ভারীতা প্রভূত উপশম হয়। 

অন্যদিকে, অ্যানোরেক্সিয়া এবং ক্র্যাম্পে উল্লেখযোগ্য উন্নতি পাওয়া যায়। রক্ত সঞ্চালন, হজম এবং নির্মূল বৃদ্ধি করে। এটি হার্ট, মস্তিষ্ক, পেট এবং অন্যান্য শারীরিক অঙ্গগুলিকে শক্তি দেয় এবং পুরুষের প্রজনন তরলের অতিরিক্ত এবং অকাল ক্ষতির কারণে দুর্বলতা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সাহায্য করে।

আমলকির জুস খেলে কি কোলেস্টেরল ভালো হয়

আমলকির জুস খেলে কি কোলেস্টেরল ভালো হয়? আমলকির জুস খেলে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই ফলে ভালো পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমলকির জুস সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়া হলে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর আমলকির সঙ্গে লাউয়ের জুস মিশিয়ে খেতে পারেন লাউ আমাদের হাতের কাছে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। এটি প্রেশার এবং সুগারের মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

আমলকি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়া গর্ভবতী মা এর জন্য অত্যন্ত উপকারী। চিকিত্‍সকরা আমলকি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ভেষজগুণ সম্পন্ন এই আমলকি ফল ও পাতা দুটোই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় মায়েদের সুরক্ষায় আমলকি বেশ উপকারী। নিম্নে গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
  • আমলকি শিশুর স্মৃতিশক্তি ভালো করতে সাহায্য করে এবং সময়ের আগে প্রসব হওয়ার ঝুঁকি কমায়। 
  • আমলকি ভিটামিন-সি, ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে গর্ভাবস্থায় এটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। 
  • আমলকি খাওয়ায় সতর্কতা অবলম্বন করলে গ্যাস, বদহজম এবং টক টক জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। তাই আমলকি খাওয়া গর্ভবতী মায়ের জন্য নিরাপদ। 
  • কোষ্ঠকাঠিন্য, অর্শ্বরোগ, অন্তঃসত্ত্বাদের সাধারণ সমস্যা। আমলকিতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে সহজে। 
  • আমলকি আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি শোষণেও সহায়তা করে এবং সামগ্রিক হজমশক্তি বাড়ায়। 
  • গর্ভাবস্থায় হাত ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া খুবই সাধারণ লক্ষণ। আমলকি খেলে এ সমস্যা মিটবে। কারণ, আমলতকিতে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান।
  • আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় উপাদান থাকায় এটা দেহকে হাইড্ৰেট রাখতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার নিয়মঃ

গর্ভাবস্থায় আমলকি খাওয়ার নিয়ম জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভবতী মায়েরা কাঁচা আমলকি খেতে পারেন। এ ছাড়া আমলকির জুস করেও খাওয়া যায়। বাজারে আমলা ক্যান্ডি, জ্যাম, আচারও পাওয়া যায়। সেগুলো খেতে পারেন। তবে কতটা খাবেন সেটা জানা খুব জরুরি। প্রতিদিন একটি বা দুটি করে আমলকির টুকরো খেতে পারেন। আমলকির জুস ৫-১০ মিলি খেলেই যথেষ্ট। ক্যান্ডি বা আচার খেলে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন তাতে যেন অতিরিক্ত লবণ বা চিনি না থাকে।

লেখক এর শেষ মন্তব্য

আমলকির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। প্রতিদিন সকালে আমলকির জুস খাওয়া পেপটিক আলসার প্রতিরোধে কাজ করে। আমলকি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে এবং ওজন কমায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আমলকী খুব দ্রুত কাজ করে। আমলকির গুঁড়ো মধু দিয়ে প্রতিদিন খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

এতক্ষণ আমার সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল যদি আপনি নিয়মিত পড়তে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন। কারণ আমি আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Aminul IT
    Aminul IT July 26, 2024 at 8:03 PM

    খুব ভালো লাগলো

    • Md Aminul Islam
      Md Aminul Islam July 26, 2024 at 8:08 PM

      Thank you so much

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url