দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও লক্ষণ

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে আপনি অনেক খোঁজাখুজি করেছেন কিন্তু আপনি ভালো কোন উত্তর খুঁজে পাননি। আজ আমি তা বিস্তারিত জানাবো। উক্ত বিষয় সহ দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে কেন,  প্রতিরোধে কী করণীয় সম্পর্কে জানতে আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।


এখানে আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন- দাঁত মাজতে কি ধরনের ব্রাশ প্রয়োজন, দাঁতের চিকিৎসা না নিলে কী হতে পারে সহ গুরুত্তপূর্ণ তথ্য জানতে আমার আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্রঃ দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও লক্ষণ 

.
গলা ব্যথা একটি সাধারন সমস্যা হলেও জটিল কোন সমস্যার রোগের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে। গলা ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, ঋতু পরিবর্তন এবং অনেকক্ষণ ধরে কথা বলার কারণে ওই সমস্যাটি হতে পারে। আজকে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও লক্ষণ,দাঁতের চিকিৎসা না নিলে কি হতে পারে এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।।

মানব দাঁত

মানব দেহের একটা অঙ্গের নাম হচ্ছে দাঁত। দাঁতের কাজ হল খাদ্য বা খাদ্য কণাকে কেটে চুন-বিচূর্ণ করে তা হজম বা গিলার উপযোগী করে তোলা। মানুষের দাঁত প্রায় পাঁচ রকমের হয়ে থাকে।
তার মধ্যে রয়েছে কর্তন দাঁত, ছেদন দাঁত, অগ্রপ্রেশন দাঁত, পেষন দাঁত ও আক্কেল দাঁত। এদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা কাজ রয়েছে।
কর্তন দাঁতের কাজ হচ্ছে খাদ্যকে কেটে ছোট করা। ছেদন দাঁত এর কাজ হচ্ছে খাদ্যকে ছিঁড়ে ফেলার জন্য বা ছেদন করা, ছেদন ও অগ্রপেশন দাঁতের কাজ হচ্ছে খাবার খেয়ে পিষ্ট করার জন্য। আমরা জানি যে উপরে পার্টিতে ১৬ টি দাঁত থাকে এবং নিচের পাটিতে ১৬ টি দাঁত থাকে।

দাঁত সাধারণত দুই রকমের হয়ে থাকে। একটা হচ্ছে দুধদাঁত এবং অন্যটি হচ্ছে স্থায়ী দাঁত।

দুধ দাঁতঃ জন্মের পর সাধারনত ছয় মাস পর থেকে দুধদাঁত উঠা শুরু করে। দুধ দাঁত সাধারনত মোট বিশটা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উপরে চোয়ালে থাকে দশটি দাঁত, নিচে চোয়ালে থাকে দশটি দাতঁ।

স্থায়ী দাতঁঃ দুধ দাঁত পড়ার পর যে দাঁত উঠে তাকে দুধ দাঁত বলে। আমরা জানি মানুষের দাঁত হচ্ছে মোট ৩২ টি। তার মধ্যে নিচের চোয়ালে থাকে ১৬টি দাঁত এবং উপরের চোয়ালে থাকে ১৬ টি দাঁত ।

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে কেন? প্রতিরোধে কী করণীয়

দাঁত হচ্ছে মানুষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। যার মাধ্যমে মানুষ খাবার খেয়ে থাকে। দাঁত শুধু খাবারের কাজ করে তা নয় দাঁত কিন্তু একটি মানুষের সৌন্দর্যের ও প্রতীক। প্রতিদিন আমরা দাঁতের যত্ন নিয়ে থাকি তার পরেও আমাদের দাঁত থেকে অর্থাৎ দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে। এ রক্ত পড়ার সমস্যা অনেকেরই। 


অনেক সময় দেখা যায় দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে বা শক্ত খাবার খাওয়ার  সময় মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে। এই ছোটখাটো সমস্যা কে অনেকে অবহেলা করে থাকে বা গুরুত্ব দেয় না। ফলে আস্তে আস্তে এই সমস্যাটা অনেক বড় আকার ধারণ করে। তাই আমরা মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে জানবো তার আগে আমরা জানি যে প্রতিরোধে কি করণীয়।

প্রতিরোধে কী করণীয়ঃ

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার জন্য নিম্নলিখিত প্রতিরোধগুলো আমাদের করতে হবে।
  • প্রতিদিন দুই বেলা সকালে নাস্তার পরে এবং রাত্রে খাবারে পরে ব্রাশ করতে হবে।
  • ব্রাশ করার সময় দাঁতের নিচের পার্টি এবং উপরের পার্টি, উপর নিচ করে ব্রাশ করে দাঁতের ফাঁকে সমস্ত খাদ্য কণা পরিষ্কার করতে হবে।
  • নিয়মিত ব্রাশ করার আগে দাঁতের মাঝখান থেকে খাদ্য কণা পরিষ্কার করার জন্য এক জাতীয় মাউথ ওয়াশ আয়োডিন দিয়ে কুলকুচি করতে হবে।
  • প্রতিদিন আমাদের খাবারের তালিকায় ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল যেমন- কামরাঙ্গা, আমলকি, কলা, কমলা, লেবু, মাল্টা ইত্যাদি খাবার খেতে হবে। তাছাড়াও প্রতিদিন খাবারের সাথে সালাত হিসেবে টমেটো, শসা ,লেবুর রস, গাজর ইত্যাদি খেতে হবে।
  • যদি কারো ধূমপান বা তামাক জাতীয় খাদ্য খাওয়ার অভ্যাস থাকে তা বর্জন করতে হবে।
  • যদি কারো ডায়াবেটিস থাকে তা নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করা, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও লক্ষণ 

দুইটি কারণে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে

স্থানীয় কারণঃ মাড়িতে ডেন্টাল প্লাক জমা থাকার কারণে মাড়িতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। ফলের মাড়ি ফুলে যায় এবং দাঁতের সঙ্গে সমস্ত সংযোগ নষ্ট হয়ে যায়। এমতবস্থায় কোন খাবার খেলে অথবা সামান্য কোন আঘাতেই মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়। এ অবস্থাকে বলা হয় পেরিওডেন্টাল ডিজিস। পেরিও ডেন্টাল হয়ে থাকে দুইটি স্তরে। প্রথম স্তরটি হচ্ছে জিনযেভাইটিস এবং দ্বিতীয় স্তরটি হচ্ছে প্রেরিওডন টাইটিস।


পদ্ধতিগত কারণঃ মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার জন্য পদ্ধতিগত কারণ অন্যতম যদি কারো ব্লাড ক্যান্সার থাকে, লিভার সমস্যা থাকে রক্তের প্লেটলেট বা হিমোগ্লোন কম থাকে যেমন ব্লাড ডিসঅর্ডার বা রক্তের বেটি তাদের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। এমন অনেক রোগী আছে যারা নিয়মিত ওষুধ খান । যেমন বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগের জন্য ওষুধ খাওয়া, রক্ত পাতলা পায়খানার জন্য ওষুধ খাওয়া, এসপেরিন অথবা ডিসপিরিন বা ক্লোফিট জাতীয় ওষুধ খান তাদের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। 
এছাড়া গর্ভকালীন মায়েদের এক ধরনের হরমোনের কারণে ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।
একজন বিশেষজ্ঞ ডেন্টিস্ট বলেন, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণকে খুব সহজভাবে দেখলে চলবে না। এর জন্য রোগীর ইতিহাস, বিভিন্ন রোগের উপস্থিতি ও ওষুধ সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে দেখতে হবে। প্রয়োজনের রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। এছাড়াও যারা ধূমপান করেন, যাদের ডায়াবেটিস আছে তারাও কিন্তু ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার লক্ষণ ঃ

বাড়ি থেকে রক্ত পড়ার বিভিন্ন লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
  • মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া ও ফুলে যাওয়া।
  • মাড়ি থেকে দাঁতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া।
  • দাঁতে ব্রাশ করলে বা শক্ত কোন খাবার খেলে দাঁত থেকে রক্ত বের হওয়া।
  • অনেক সময় দেখা যায় ঘুম থেকে উঠলে মুখে রক্ত দেখা যায় আবার অনেক ক্ষেত্রে লালার সঙ্গে রক্ত মিশে গিয়ে বিছানা বালিশেও রক্ত দেখা যায়।

দাঁতের চিকিৎসা না নিলে কী হতে পারে

আমরা জানি দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া অনেক বড় একটি সমস্যা। তাই নিয়মিত বাড়ি থেকে রক্ত পড়ার পরেও কেউ যদি চিকিৎসা না করে তবে মাড়ির প্রবাহের কারণে দাঁতের সাথে মাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, ধীরে ধীরে দাঁত নড়ে যায় এবং অনেক সময় দাঁত পরেও যেতে পারে। এছাড়াও দাঁতের বিভিন্ন ক্ষতির জন্য বিভিন্ন জীবাণু ব্যকটেরিয়া রক্তে মিশে যায়।
মিশে গিয়ে দাঁতের প্রধান অঙ্গসমূহ যেমন হার্ট হৃদযন্ত্রকেও আক্রান্ত করতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের মাড়ি থেকে ব্যাকটেরিয়া ভবিষ্যৎ শিশুর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, ফলে শিশুর ওজন কম হতে পারে। আবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থেকে ব্লাড সুগার বাড়িয়ে দিতে পারে।

দাঁত মাজতে কি ধরনের ব্রাঁশ প্রয়োজন

দাঁত কে সুস্থ এবং ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন যেমন দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন। তেমনি দাঁত ব্রাশ করার জন্য কি ধরনের টুথপেস্ট ব্যবহার করা প্রয়োজন তাও জানা আমাদের দরকার। 
একটি টুথব্রাশ ব্যবহার করার জন্য আমাদের ডেন্টিস্ট এর পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত। একটি টুথব্রাশের ব্যবহারকাল বা সময়সীমা রয়েছে। 

টুথব্রাশের ফাইবার যখন সোজা থাকে না বা বাকা হয়ে যায় তখন ব্রাশ টি ব্যবহার অনুপযুক্ত হয়ে যায়।
পেস্ট ব্যবহার করার জন্য আমাদের অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। যে সব টুথপেস্টে ফ্লোরাইড আছে এমন পেস্ট স্বাস্থ্যসম্মত। ফ্লোরাইড দাঁতের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অনেকেই টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখে এক ধরনের সেনসিটিভ টুথপেস্ট ব্যবহার করেন। কিন্তু সেনসিটিভ দাঁতের জন্য বিজ্ঞাপনে দেখানো টুথপেস্ট ব্যবহার করা উচিত নয় বলে জানান ড. অরূপরতন চৌধুরী।

চিকিৎসাঃ

দাঁতের মাড়িতে রক্তক্ষরণ হলে তার চিকিৎসা করা খুবই অপরিহার্য। তাই দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়লে দাঁতের উপর লেগে থাকা খাদ্য কণা পরিষ্কার করা। এর জন্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ডেন্টাল স্কেলিং করা যায়। আবার আধুনিক আল্ট্রাসনিক স্ক্যালার এর মাধ্যমে খুব সহজেই লেগে থাকা শক্ত আবরণ গুলো পরিষ্কার করা যায়।

উপযুক্ত এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের পরে ডাক্তারের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে,  বলা হয় রুট প্ল্যানিং। কিন্তু দাঁতে রুট প্ল্যানিং করার ফলে মাড়ি পরবর্তিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা এবং রক্ত ক্ষরণ হওযার সুযোগ থাকে না।

লেখকের মন্তব্য

আমাদের প্রত্যেকের দাঁতে মারাত্মক বা সাধারণ ব্যথা হতে পারে কিন্তু কোন ব্যথাকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। তবে আমাদের যদি দীর্ঘস্থায়ী দাঁতে ব্যথা, মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হয়, তবে সাথে সাথে অবশ্যই আমাদেরকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, তা না হলে যে কোন সময় বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

সে জন্য আমরা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ ও লক্ষণ, দাঁত মাজতে কি ধরনের ব্রাশ প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ভালো করে জানব এবং মানব। তার পরেও যদি এসব সমস্যা হয় তাহলে আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করব এবং সঠিকভাবে তার চিকিৎসা গ্রহন করবো।

এতক্ষণ আমার আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত জানতে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইট ফলো করতে থাকুন। কারণ আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। আমার এই আর্টিকেরটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার পরিচিত বন্ধু মহলে শেয়ার করে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url