গলা ব্যথা দূর করার ৬টি ঘরোয়া উপায়
গলা ব্যথা দূর করার ৬টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আপনি অনেক খোঁজাখুজি করেছেন কিন্তু আপনি ভালো কোন উত্তর খুঁজে পাননি। আজ আমি উক্ত বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। গলা ব্যথা দূর করার ৬টি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেমন- গলা ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে আমার আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচিপত্রঃ গলা ব্যথা দূর করার ৬টি ঘরোয়া উপায়
.
গলা ব্যথা একটি সাধারন সমস্যা হলেও জটিল কোন সমস্যার রোগের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে। গলা ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, ঋতু পরিবর্তন এবং অনেকক্ষণ ধরে কথা বলার কারণে ওই সমস্যাটি হতে পারে। তাই আমরা প্রথমে জানবো যে গলা ব্যথার বিভিন্ন লক্ষণ, উপসর্গ এবং করণীয় কি, গলা ব্যথা দূর করার ৬টি ঘরোয়া উপায় সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জেনে নিই।
গলা ব্যথা কি? গলা ব্যথার কারণ
গলা ব্যথা বলতে আমরা ইংরেজিতে বুঝি ফ্যারিঞ্জাইটিস। গলা ব্যথা সাধারণত বিভিন্ন জীবানুর সংক্রমনে হয়। ঠান্ডা ও ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে গলা ব্যথা হতে পারে। আমাদের অনেক সময় গলা ব্যথার কারণে শুষ্ক চুলকানি, ঢোক গিলতে ব্যথা কিংবা খাবার খেতেও অনেক সময় ব্যথা হয়ে থাকে।
গলা ব্যথার কারণ ঃ
বিভিন্ন কারণে গলা ব্যথা হয়ে থাকে তার মধ্যে সবচেয়ে ভাইরাস জনিত সমস্যার কারণে গলা ব্যথাটা বেশি হয়। যেমন ঠান্ডা, নিউক্লিওসিস অন্যতম। ভাইরাসজনিত সমস্যা যেমন- হাম, চিকেন পক্স এর কারনেও গলা ব্যথা হতে পারে। ব্যাকটেরিয়াজনিত গলা ব্যথা হয়ে থাকে। যেমন- টনসিলের সমস্যা, ডিফথেরিয়ার সমস্যা ইত্যাদি।
এছাড়াও আরও বেশকিছু কারণে সমস্যা হয়ে থাকে এলার্জিজনিত সমস্যা বিশেষ কোনো কারণে শীতকালের ঘরের তাপমাত্রা কম বেশি হওয়া, শুষ্ক আবহাওয়া, অধিক মসলাযুক্ত খাবার, ধূমপান করা, গলার মাংসপেশীতে চাপ লাগা ইত্যাদি। এইচআইভি সংক্রমণ ও মধ্যপানের কারণেও গলায় টিউমার হওয়া ইত্যাদি।
গলা ব্যথার লক্ষণ ও উপসর্গ সমুহ
গলা ব্যথা হলে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন-
- ঠান্ডা লাগার জন্য গলা ব্যথা হতে পারে, সাথে শরীরে ব্যথা সহ সর্দি কাশি, হাঁচি ও জ্বরও থাকতে পারে।
- গলায় চুলকানো এমনকি গলা ফুলেও যেতে পারে।
- গলায় খসখসে ভাব।
- ঢোক গিলা কিংবা কথা বলার সময় গলা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- শ্বাস নেওয়ার সময় গলা ব্যথা হতে পারে।
গলা ব্যথার উপসর্গঃ
গলা ব্যথা বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে হতে পারে। তবে গলাব্যথা টনসিল ফুলে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখতে পাওয়া যায়। নিম্নলিখিত উপসর্গগুলো দেখামাত্র ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
- বারবার গলা ব্যথা হওয়া।
- বমি হওয়া অতিরিক্ত মাথা ব্যথা করা।
- গলাব্যথা মারাত্মক আকার ধারণ করা।
- ঢোক গিলতে বা খাবার খেতে অসুবিধা হওয়া।
- বমি হওয়া।
- গলার টনসিল ফুলে লালচে হয়ে যাওয়া।
- শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া।
- ছয় মাসের নিচে বয়সি শিশুদের জ্বর ১০১ ফারেনহাইট এবং বড়দের ক্ষেত্রে ১০৩ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়ে যাওয়া।
- অনেক সময় গলায় বা টনসিলে পুঁজও হতে পারে।
কাদের গলায় ব্যথার ঝুঁকি বেশি
নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের গলায় ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে
- ধূমপানকারী ব্যক্তি, যারা পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে এর সংস্পর্শে আসে।
- যারা দীর্ঘ সময় ধরে সাইনাসের সমস্যায় ভুক্ত ভুগি।
- শিশু কিশোর- কিশোরীরা যারা ধুলাবালি সংস্পর্শে বেশি থাকে।
- যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
- যারা ঘরে ব্যবহার করা জ্বালানি ও রাসায়নিক বস্তুর সংস্পর্শে থাকে।
- একসাথে গাদাগাদি করে থাকা। এখানে একজনার হলে আরেকজন হওয়া সম্ভাবনা থেকে যায়।
গলা ব্যথা দূর করার ৬টি ঘরোয়া উপায়
গলা যার আছে তার ব্যথা ও আছে । আর এই গলা ব্যথা প্রতিটি মানুষের সাধারন সমস্যা। এই গলা ব্যথা সাধারনত ঋতু পরিবর্তনের সময় বেশি হয়ে থাকে। গলা ব্যথা হলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।কিন্তু সহজে এটা ভালো হলেও ব্যথা অনেকটাই অস্বস্তিদায়ক এবং কষ্টদায়কও বটে। গলা ব্যথা সাধারণত কথা বলার সময় ও খাবার খেতে বেশি হয়ে থাকে।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস- এর মতে” গলা ব্যথা হলে ভালোভাবে হাইড্রেট থাকতে হবে অর্থাৎ শরীরে পানির ঘাটতি হতে দেয়া যাবে না। সেই সময় যে কোন পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। এর পরিবর্তে তারা নরমাল পানি একটু একটু খাওয়ার পরামর্শ দেন।
গলা ব্যথা দূর করার ৬টি ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো। যা নিম্নরূপঃ
কোল্ড থেরাপিঃ গলা ব্যথা দূর করার জন্য আইস্লোলি অথবা বরফের টুকরো চুষে খেলে গলা ব্যথা অনেকটা কম হয় এবং শরীরকে ভেতর থেকে আদ্র রাখে। গলা ব্যথা সারাতে কার্যকরী হতে পারে যেমন একটি আক্রান্ত শিশুদের শীতল প্রভাব ফেলে। গলা ব্যথা টনসিলের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকরা আইসক্রিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। ঠান্ডা আইসক্রিম গলা ব্যথা এবং অস্বস্তি দূর করা ছাড়াও টনসিলের ফোলা ভাব কমায়।
হলুদ ও দুধ মিশ্রিত পানীয়ঃ হলুদ একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকে যা সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। গলা ব্যথা দূর করার জন্য দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে এক প্লাস দুধ আমরা খেতে পারি। এই হলুদ মিশ্রিত দুধকে গোল্ডেন মিলক বলা হয়ে থাকে। এক কাপ দুধের সাথে এক চিমটি হলুদের গোঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা যায় এই মিশ্রণটি।
এর সঙ্গে সামান্য গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে নিলে এর উপকারিতা আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। তবে রাতে দুধ খাওয়ার কারণে যদি কারো পেট ফাঁপা সমস্যা হয় তারা অল্প অল্প করে খেতে পারে। অথবা দিনের বেলায় যেকোনো সময় তা খাওয়া যেতে পারে। এভাবে আপনি কয়েকদিন খেলে আপনার গলা ব্যথা সেরে যাবে।
লবন পানির মিশ্রণঃ আমরা জানি গলা ব্যথার কার্যকরী একটি উপায় হচ্ছে লবণ পানির মিশ্রণ। এই মিশ্রণ করার জন্য গ্লাসে অর্ধেক হালকা গরম পানি অর্ধেক স্বাভাবিক পানি এবং এর সঙ্গে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে নিলে তৈরি হয়ে যায়। এই মিশ্রণটি কয়েকবার মুখের মধ্যে নিয়ে গার্গল করে ফেলে দিলে গলা ব্যথা কমে যায়। এভাবে কয়েকদিন করুন দেখবেন গলা ব্যথা কমে যাবে।
মধু ও আদার রসঃ আদার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা অনেকটা উপকার পাওয়া যায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে আদার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে আমাদের শরীরে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল প্রভাব ফেলে যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। যা করতে হবে তা হলো প্রথমে আধা বেটে রস বের করে নিতে হবে তার সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে দিলে তৈরি হয়ে যাবে মিশ্রণ। মিশ্রণ টি নিয়মিত কয়েকদিন খেলে আমাদের গলা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করবে।
আদা চাঃ আমরা জানি আদা চা গলা ব্যথা দূর করতে একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। এবং এটি যে কোন ব্যথায় ভালো কাজ করে থাকে। আমরা যদি গরম পানিতে আধা ফুটিয়ে অল্প অল্প করে পান করি তাহলে ব্যথা কমে যাবে। আমরা যে প্রতিদিন চা খায় তার সঙ্গে মিশিয়ে খেলে গলা ব্যথা দ্রুত দূর করতে কাজ করবে। তাই আমরা সবাই চেষ্টা করব গলা ব্যথা হলে চায়ের সঙ্গে আধা মিশিয়ে খেতে।
বিশ্রামঃ যে কোন রোগের মহা ঔষধ হচ্ছে বিশ্রাম। যদি নিয়মিত বিশ্রাম করা যায় এবং পর্যাপ্ত ঘুমানো যায় তাহলে শরীর থেকে অনেক রকমের রোগ এবং এমনকি গলা ব্যথা ও সেরে যেতে পারে। ঘুম যদি কম হয় তাহলে শরীরে সেত রক্ত কণিকার পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। এই রক্তকণিকা গলা ব্যথার কারণে সৃষ্ট প্রদাহ দূর করতে খুবই দরকারী।
তাই আমরা চেষ্টা করব নিয়মিত বিশ্রাম করার জন্য তাহলে আমাদের গলা ব্যথা কম হবে। গলা ব্যথা হলে ঘরোয়া পদ্ধতি করার পাশাপাশি আমাদের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। বিশেষ করে যদি কোন উপসর্গ দেখা দেয় এবং এক সপ্তাহ পরেও যদি গলা ব্যথা ভালো না হয়।
গলা ব্যথা প্রতিরোধ
গলা ব্যথা যেমন খুব সহজে হয়ে থাকে এবং অনেক সমস্যা দেখা যায়। আবার আমরা আমাদের আচার-আচরণ চলাফেরার মাধ্যমে কিন্তু তা থেকে প্রতিরোধ করতে পারি। যেমন-
- অন্যের ব্যবহার করা খাবার জিনিসপত্র শেয়ার না করা।
- বেশি বেশি করে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া।
- অন্যজনার ব্যবহৃত টেলিফোন বা মোবাইল ব্যবহার না করা।
- একই পানির গ্লাস বা জগ সবাই মুখ দিয়ে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা।
- অসুস্থ ব্যক্তি হতে যতদুর সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করা।
- বাড়ির আবহাওয়া যদি শুষ্ক হয় তাহলে আদ্র রাখা ব্যবস্থা করা।
- কাশি বা হাচি দেওয়ার সময় অবশ্যই পরিষ্কার রুমাল ব্যবহার করা।
- ধূমপান করা কিংবা যারা ধূমপান করে তাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা।
- তরল জাতীয় খাবার বেশি না খাওয়া।
- ঠান্ডা জনিত সমস্যা হলে এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
- যতদূর সম্ভব কথা কম বলার চেষ্টা করা।
- সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে বাড়িতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
- নিয়মিত টেলিফোন, টিভি রিমোট এবং কম্পিউটার কি বোর্ড পরিষ্কার করে রাখা।
গলা ব্যথার চিকিৎসা
গলা ব্যথা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তার মধ্যে ভাইরাসজনিত সমস্যা বা ব্যাকটেরিয়া জনিত সমস্যায় বেশি হয়ে থাকে। কিছু কিছু গলা ব্যথা সাধারণত এক সপ্তাহ বা কিছুদিন পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে যদি এর ব্যথা প্রকোপ আকার ধারণ করে তাহলে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা যেমন গলা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
তাহলে আমরা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী ঔষধ সেবন গ্রহণ করলে আমাদের গলা ব্যথা সেরে যেতে পারে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম ও ঘুমের ব্যবস্থা করা। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক সেবনেরও প্রয়োজন হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ মুখের দাগ দূর করতে ঘরোয়া ৫টি সহজ উপায়
এছাড়াও আমরা যদি গলা ব্যথা দূর করার ৬টি ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চলি আমাদের অনেক কাজে আসবে। তবে যে ধরনেরই ব্যথা হোক না কেন আমরা প্রথমত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তার চিকিৎসা গ্রহণ করবো।
লেখকের মন্তব্য
গলা ব্যথা একটি শারীরিক সমস্যা। আমরা সবাই কম বেশি এই সমস্যায় ভোগে থাকি। বিভিন্ন কারণে-অকারণে আমাদের গলা ব্যথা হতে পারে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি আপনি যদি এই গলা ব্যথা দূর করার ৬টি ঘরোয়া উপায় মেনে চলেন তাহলে এই ব্যথা থেকে অনেকটা ভালো থাকতে পারবেন। আর তাই আমাদের জীবন যাপন করার জন্য আমরা সবাই সাবধানে থাকবো এবং এই সমস্যা যত দূরে রাখতে পারি সে চেষ্টা আমরা সবাই করব।আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে আপনার পরিচিত বন্ধু মহলে শেয়ার করে দিবেন এবং কমেন্ট করবেন।
aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url