মানব কান, কানের গঠন এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে জানুন
মানব কান, কানের গঠন, এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে আপনি অনেক খুুঁজাখুজি করেছেন কিন্তু উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন
না। মানব কান, কানের গঠন, এবং এর কার্যকারিতা ও কান পাকলে বা পর্দা ফেটে গেলে কি করবেন জানতে আমার এই আর্টিকেলটি খুব
মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কর্ণ বা কান প্রানিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যে এই কানের মাধ্যমে সমস্ত
প্রাণি কুল শুনে থাকে। কান ছাড়া আমরা সবাই এক রকম অচল। তাই কান কি, কান
কত প্রকার, কানের কাজ কি, কান পাকা, চিকিৎসা এরকম অনেক গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় নিয়ে
আলোচনা করা হলো।
কানের প্রকারভেদ
কান বা কর্ণ প্রাণীদেহের একটি শ্রবন অঙ্গ। কান মাথার দুই দিকে অবস্থিত। এর
সাহায্যে আমরা বাইরের শব্দ শুনে থাকি তাই এটিকে শ্রবণেন্দ্রিয় বলে। কান ছাড়া
মানব দেহকে অসম্পূর্ণ বলা চলে। মানুষের কান প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত। যা
নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
বহি:কর্ণঃ বহি কর্ণ কর্ণসত্ত্ব এবং কানের খাল নিয়ে গঠিত যা
শ্রবণতন্ত্রের দ্বারা প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। এর কাজ হল শব্দকে বাইরে থেকে
মধ্যকণে প্রবাহিত করা।
মধ্যঃকর্নঃ মধ্যঃকর্ণ হলো কানের পর্দা। যা তিনটি অস্থি মেলিকাস, ইনকাস ও
স্টেপিস দ্বারা গঠিত। এদের কাজ হল শব্দতরঙ্গকে কর্ণপটহ থেকে অন্তঃকরণে প্রবাহিত
করা।
অন্তঃকর্ণঃ বহিঃকর্ন অডিটরি মিটাসের শেষ প্রান্তে এবং মধ্য কর্ণের মুখে
আড়াআড়িভাবে অবস্থিত ডিম্বাকার স্থিতিস্থাপক পর্দাকে অন্তঃকর্ণ বলে। এর সাথে
মধ্যকরণের ম্যালিয়াস অস্থি যুক্ত থাকে। বহিঃ কর্ণকে মধ্যঃকর্ন থেকে পৃথক করে
রাখা, শব্দ তরঙ্গ কিভাবে উঠা এবং শব্দ তরঙ্গ কে সমতলে মধ্যকরণে পরিবহন করা
অন্তঃকরণের পর্দার কাজ।
কান পাকা বলতে আমরা কী বুঝি? কানের কাজ সমূহ
আমরা জানি কানের তিনটি অংশ আছে। একটি বাইরের অংশ ,মাঝখানের অংশ এবং অন্যটি
হচ্ছে ভিতরের অংশ বা অন্তঃকর্ণ। মাঝখানের অংশ বা মধ্যকর্ণে যখন কোন ঘা হয় বা
পর্দা ফেটে গিয়ে পুঁজ বের হয়, তখন তাকে আমরা কানপাকা রোগ বলি।
কানের কাজ সমূহ:
কান দেহের ভারসাম্য রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করে।
কান পাকলে বা পর্দা ফেটে গেলে কি করবেন?
বিভিন্ন কারণে কান পাকতে পারে। গোসলের সময় কানে পানি ঢুকলে। আবার দীর্ঘদিন
সর্দি কাশি লেগে থাকলে কানে পানি জমতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় কানের
পর্দা ফুটো হয়ে যেতে পারে আবার কানে পুজ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক
জটিল রোগের কারণেও কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে বা কান দিয়ে পানি পড়তে
পারে।
শিশুদের ক্ষেত্রে সর্দি কাশি বা ইনফেকশন থেকেও কানে সমস্যা হতে পারে। অনেক সময়
সুষ্ঠু চিকিৎসার মাধ্যমে ইনফেকশন সম্পূর্ণ ভালো হয়। আর যদি সুষ্ঠু চিকিৎসা না
হয় তাহলে ইনফেকশন থেকে কর্ণের পর্দা ফেটে যেতে পারে।
কান পাকা রোগের কারণ কি
অবহেলা, সচেতনতার অভাব এই রোগের প্রধান কারণ। বারবার ঠাণ্ডা লাগলে অনেকে
সেটিকে অবহেলা করে। এর থেকে কানপাকার সমস্যা হতে পারে। আমাদের দেশের মায়েরা
শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় অনেক অবহেলা করেন। অনেক মা জানে না
কীভাবে বাচ্চাদের দুধ খাওয়াতে হয়।
এটিও একটি বড় কারণ। কেননা নাক এবং গলার সংযোগ নালিতে ইউসটিশন টিউব থাকে। এই
টিউবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়। তাদের টিউবটি মোটা, ছোট এবং আনুভূমিক
থাকে। তাই দুধ খাওয়ানোর সময় মায়েদের অসাবধানতা বশতঃ কখনো কখনো
বাচ্চাদের কানেও চলে যেতে পারে। ফলে তখন কানে ঘা হতে পারে। বেশি করে কটন বাড
ব্যবহারের ফলেও কান ছিদ্র হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কান পাকা রোগের লক্ষণঃ
- কানে কম শোনা বা মারাত্মক পর্যায়ে পর্যন্ত হতে পারে।
- কান দিয়ে পুঁজ বা পানি বের হয়।
- মাথার ভেতরে হুহু শব্দ করে।
- অনেক সময় সর্দি-কাশি হলেও কান দিয়ে পানি পড়ে।
- গান ব্যাথা হতে পারে।
কান না পাকার জন্য কি করবেনঃ
- কানের ভিতরে যেন পানি না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- কানের পর্দা ফাটলে অবশ্যই কান শুকনা রাখতে হবে।
- গোসল করার সময় কানে তুলো ব্যবহার করতে হবে।
- পানিতে সাঁতার কাটা যাবে না বা পানিতে ঝাঁপ দেওয়া যাবে না।
- বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে কান পরিষ্কার করা জরুরি।
- বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
কান থেকে পানি বের করার চারটি পন্থা
- যে কানে পানি প্রবেশ করেছে সেই পাস নিচে রেখে এক পায়ে লাফাতে হবে ফলে কানের পানি বের হয়ে আসবে।
- পানি বের হতে পারে।
- যেখানে পানি ঢুকেছে সেইখানে গরম পানির ভাব বা তাপ দিয়ে পানি বের করা যেতে পারে।
- এয়ার টপ ব্যবহার করে কানের পানি বের করা সম্ভব।
- কানের ব্যথার লক্ষণ ও উপসর্গঃ
- কানের ব্যথা শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্ক উভয়ের মধ্যে ঘুরতে পারে। এটি কানের বাইরে বা ভিতরে উভয় থেকে ব্যথা হিসেবে প্রকাশ পেতে পারে। ব্যথা এক কানে বা উভয় কানে হতে পারে।
কানের ব্যথা বিভিন্ন উপসর্গ দ্বারা হতে পারেঃ
- জ্বর
- মাথা ব্যথা
- চোয়াল ব্যথা
- কান থেকে নিষ্কাশন
- শুনতে অসুবিধা
- জীবাণু এবং খাবার অসুবিধা
লক্ষণ সমূহঃ
কানের ব্যথায় বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে যে লক্ষণ গুলো দেখা যায় তা হলঃ
- বেশি বেশি কান্না করা
- ক্ষুধা মন্দ
- অস্থিরতা
- খিটখিটে স্বভাব
কানের ব্যথার কারণঃ
কানের মধ্যে পানি ঢোকার ফলে কানের সংক্রমণ হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের
তুলনায় শিশুদের মধ্যে কানের সংক্রমণ বেশি হয়। সর্দির কারণেও কানে ব্যথা হতে
পারে।
নিম্নে কানের ব্যাথার কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
- দাঁত সংক্রমণ
- গলা সংক্রমণ
- সাইনাস প্রদাহ
- কানে পানি আটকে থাকার কারণে সংক্রমণ
- ছিদ্রযুক্ত কান
- এলার্জি
- কানের মধ্যে থাকা বস্তু
কানের ব্যথার চিকিৎসা
বিভিন্ন কারণে কানের ব্যথা পরিলক্ষিত হয় এবং তা বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে উপশম
করা যেতে পারে। যেমন
- বাইরের কানে ঠান্ডা বা ভেজা কাপড় লাগালে অস্বস্তি কমতে সাহায্য করে।
- কানের সংক্রমণে চুইংগাও উপকারী হতে পারে।
- কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার কারণে কানের ব্যথা না হলে কাউন্টার ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
- কানের ড্রপ ব্যবহার করলে ব্যথা উপশম হয়।
- শুয়ে থাকার পরিবর্তে সোজা অবস্থায় বিশ্রাম নিলে কানের ব্যথা কম হয়।
লেখকের মন্তব্য
কান মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটাকে কোন ভাবে অবহেলা করা যাবে না।
কেননা কানের মাধ্যমে মানুষ পুরো শবীরটাকে নিয়ন্ত্রন করে। তাই আমাদের সবার উচিত
গুরুত্ব সহকারে কানের যত্ন করা। তা না হলে মারাত্বক দূর্ঘটনা হতে পারে। অনেক
রকম সমস্যা । যেমন- কান পাকার ফলে মুখের গুরুত্বপূর্ণ ফেসিয়াল নার্ভ আক্রান্ত
হয়ে মুখ বেঁকে যেতে পারে।
মধ্যঃকর্ণের হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং এর ফলে ফোঁড়া ও হতে পারে। এ ছাড়াও
মস্তিস্ক আক্রান্ত হয়ে রোগী মারা যেতে পারে। তাই আসুন আমরা সবাই কান থাকতে
কানের মযার্দা দেই। কানের যে কোন সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা
করি।
এতক্ষণ আমার আর্টিকেলের সঙ্গে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি এই ধরনের
গুরুত্বপূর্ণ এবং তথ্যমূলক আর্টিকেল নিয়মিত জানতে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইট
ফলো করতে থাকুন। কারণ আমার ওয়েবসাইটে নিয়মিত এ ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করে
থাকি। আমার এ লেখা যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে কমেন্ট করবেন এবং আপনার
পরিচিত বন্ধুদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করে দিবেন ।
aminulit নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url